ইসলামে পুরুষদের মসজিদে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। আর নারীদেরকে ছাড় দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘নারীদের জন্য সালাতের স্থান হিসেবে নিজ ঘর উত্তম’। (আবু দাউদ : ৫৬৭)
তবে নারীদেরকে মসজিদে যেতেও নিষেধ করা হয়নি। কুরআনে এমন কোনো দলিল নেই যা মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করে। এমনকি কোনো হাদীসেও এমন নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, মহিলারা মসজিদে যেতে পারবে না। হাদীস থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) এর সময়ে নারীরা নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়েছেন, মসজিদভিত্তিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। মায়ের সাথে থাকা শিশুর কান্না শুনে রাসূল (সা.) নামাজ সংক্ষিপ্ত করেছেন এমন দৃষ্টান্তও আছে।
কখনো কখনো বিশেষ প্রয়োজনে নারীদেরও নামাজের ওয়াক্তে বাসার বাইরে থাকতে হয়। তাই নারীদের জন্য মসজিদে নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা থাকা জরুরি। অফিস, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, স্টেশন, শপিংমল, হসপিটাল, বিনোদনকেন্দ্র, পর্যটন স্পট—এসব জায়গার আশেপাশের মসজিদগুলোতে মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা অবশ্যই থাকা উচিত। যাতে করে নামাজের ওয়াক্তে নামাজ কাজা না করে তারা সময়মত পড়তে পারেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন : “যদি নারীরা তোমাদের কাছে মসজিদে নামাজ আদায়ের অনুমতি চায়, তাহলে তোমরা তাদেরকে অনুমতি দিয়ে দাও।” (বুখারী : ৮৩২)
সে হিসেবে যদি কোনো দেশে কিংবা এলাকায় নারীদের জন্য মসজিদে নামাজ আদায়ে সুব্যবস্থা থাকে তবে সেক্ষেত্রে যাতায়াত নিরাপদ হলে মসজিদে গিয়ে নারীদের নামাজ পড়তে কোনো বাধা নেই, যদি তারা চায়। নারীরা মসজিদে আসলে তাদের সাথে বাচ্চারাও আসতে পারে। ফলে একটা মসজিদমুখী প্রজন্ম গড়ে উঠা সহজ হয়।
রাসুলুল্লাহ সা. এর যুগে মহিলাদের যে মসজিদে আসার অনুমতি যেসব শর্তসাপেক্ষে ছিল, সেগুলো হলো-
১. পরিপূর্ণ হিজাব পরে আসা যাতে কোনো প্রকার সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়।
২. সেজেগুজে বা পারফিউম লাগিয়ে বের না হওয়া।
৩. বাজনা বাজে এমন গয়না পরে আসতে পারবে না।
৪. অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না।
৫. রাস্তায় অথবা মসজিদে পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলবে।
৬. অপ্রয়োজনে কোনো পুরুষের সঙ্গে কথা বলবে না। (সুনানে আবু দাউদ : ৫৬৫)
এসব শর্ত মেইনটেইন করে বর্তমান নারীদেরও মসজিদে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া দরকার। মুসলিম নারী যদি তার পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে এবং ফিতনার আশঙ্কা না থাকে তবে তার মসজিদে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা থাকা উচিত নয়।
ঈদ এবং জুমা এই দুই নামাজে খুতবা দেয়া হয়। মুসলিমদের সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। ফলে এ দুই নামাজে অংশগ্রহণ করলে জ্ঞান আহরণ ও ইসলামী বিধান পালনে মহিলারাও পুরুষদের মতো নিজেদের এগিয়ে রাখার সুযোগ পাবে।
ঈদের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে ঈদগাহে উপস্থিত হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশনা ছিলো সকল নারীর জন্যই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে ঈদের নামাজে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হযরত উম্মে আতিয়া রা. বর্ণনা করেন : “রাসুলুল্লাহ সা. আমাদেরকে এ মর্মে আদেশ করেছেন, আমরা যেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের জন্য বের হই এবং নামাজে অংশগ্রহণ করি। প্রাপ্তবয়স্ক নারী, পিরিয়ড চলাকালীন নারী ও গৃহবাসিনীসহ সবাই। তবে পিরিয়ড চলছে এমন নারীরা (ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে কিন্ত তারা কল্যাণের কাজ এবং দুুআয় অংশগ্রহণ করবে।”
তখন উম্মে আতিয়া রা. রাসূল সা.কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে তো কারো কারো জিলবাব (ওড়না) নেই। যাদের জিলবাব নেই, তারা কীভাবে ঈদগাহে যাবে? তখন রাসূল সা. বললেন, “তাহলে তার কোনো বোন যেন তাকে নিজের একটি জিলবাব ধার দেয়।” (সহীহ বুখারী : ৩৫১, সহীহ মুসলিম : ৮৮৩)
এ হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, রাসূল সা. নারীদেরকে ঈদের নামাজে যাওয়ার জন্য এতটাই জোর তাগিদ দিয়েছেন যে, তাদের কোনো এক্সকিউজ তিনি গ্রহণ করেননি।
মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়া বাধ্যতামুলক নয়, কিন্তু মসজিদে যাওয়া তাদের জন্য নিষেধও নয়। একটা মেয়ে সব জায়গায় যেতে পারে অথচ আল্লাহর ঘরে ইবাদত করতে যেতে পারে না। এটা খুবই দুঃখজনক। যদি পরিপূর্ণ পর্দার সাথে একটা মেয়ে মসজিদে যেতে পারত তাহলে তার আশেপাশের আরও ১০টা মেয়ে পর্দার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠত। মসজিদ একজন নারীর সাথে আরেকজন নারীর পরিচয়ের একটা মাধ্যমে হতে পারে। যেখানে তারা দ্বীনি কথাবার্তারও সুযোগ পেত। কিন্তু এখন সে সুযোগটাও তারা পাচ্ছে না। বর্তমান ইয়াং জেনারেশনের মেয়েরা যারা ইসলামবিরোধী কালচারের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে, তাদেরকে ইসলামী কালচারের দিকে ফিরিয়ে আনতে মসজিদ অন্যতম সহায়ক হবে।
আল্লাহ আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দিন। দ্বীনের দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকুক নারী ও পুরুষ উভয়ই!