বাহারিস্তান-ই গায়বী : মির্জা নাথানের দাস্তান সমগ্র

কে এম হাবিবুল্লাহ

মুগল যুগে সমকালীন বাংলার ইতিহাসের একমাত্র প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বিবেচনা করা হয় বাহারিস্তান-ই গায়বীকে। এই গ্রন্থের লেখক আলাাউদদীন ইসফাহানী ওরফে মির্জা নাথান ছিলেন বাংলায় নিয়োজিত সমসাময়িক মুগল সেনাপতিদের একজন। তার বাল্যকাল কিংবা পরিবার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। বাহারিস্তান-ই গায়বী ও তুযুক-ই জাহাঙ্গীরী গ্রন্থে তার সম্বন্ধে লিখিত বিবরণ থেকে এতটুকু জানা যায় যে, ভারতে অবস্থানকারী এক সম্ভ্রান্ত পারসিক পরিবারে তার জন্ম। তার পিতার নাম মালিক আলী। তিনি ইহতিমাম খান নামে সুপরিচিত ছিলেন। আকবর ইহতিমাম খানকে আড়াই শ অশ্বারোহীর অধিনায়ক হিসাবে নিযুক্ত করেন। কিছুকাল তিনি আগ্রার কোতওয়ালে ছিলেন। জাহাঙ্গীর তাকে পাঠিয়েছিলেন বিদ্রোহী খসরুর বিরুদ্ধে। মির্জা শাহরুখের পুত্র মালবের বিদ্রোহী বদিউযযামানকে বন্দি করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৩০ জুন, ১৬০৭ সালে তাকে এক হাজার পদাতিক ও তিন শ অশ্বারোহী বাহিনীর অধিনায়ক পদে উন্নীত করা হয় এবং বাংলায় অবস্থিত মুগল নৌবহরের ‘মীরবহর’ বা নৌ-সেনাপতি পদে নিয়োগ করা হয়। মালিক আলী বাংলায় মুগল সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজে অভূতপূর্ব কর্মদক্ষতা ও নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। খাজা উছমানকে পরাস্ত করে সিলেট থেকে ঢাকা ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল নামক স্থানে মৃত্যুমুখে (১৬১২ খৃ.) পতিত হন। আধুনিক নারায়ণগঞ্জ শহরের পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদীর অপর তীরে অবস্থিত কদম রসুল নামক স্থানে তাকে দাফন করা হয়। এই মালিক আলীর পুত্রই হলেন বাহারিস্তান-ই গায়বীর লেখক মির্জা নাথান। জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বাংলা ও আসামের সমস্ত অভিযান ও যুদ্ধে এবং বাংলায় শাহজাহানের বিদ্রোহ দমনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি এই সমস্ত ঘটনার সঠিক ও সুস্পষ্ট বিবরণ তার গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। ‘গায়বী’ ছিল তার ছদ্মনাম। এ নামেই তিনি লিখতেন। তার এই ‘গায়বী’ ছদ্মনামানুসারেই তার গ্রন্থের নাম হয় বাহারিস্তান-ই গায়বী। উত্তর-পূর্ব ভারতে মুগল সাম্রাজ্য বিস্তারে তার কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাদশাহ জাহাঙ্গীর তাকে ‘সিতাব খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন ।

ভারতে মুসলিম শাসনের প্রাথমিক যুগে মুসলিম বিদ্বান ব্যক্তিগণ সমসাময়িক কালের ঘটনাসমূহের বিস্তারিত ইতিহাস রচনায় মনোযোগ নিবদ্ধ করেন। তদানীন্তন ভারতে ইতিহাস ও সংস্কৃতির সকল নিদর্শন, জ্ঞানতাপস ঐতিহাসিক আল-বীরুনীর তারীখুল হিন্দ (১০৩০ খৃ.) এবং পরবর্তীকালে মিনহাজুস-সিরাজ বিরচিত তাবাকাত-ই নাাসিরী এবং জিয়াউদ্দীন বারানী ও শামস-ই সিরাজ আফীফ রচিত তারীখ-ই ফীরুযশাহী নামক গ্রন্থদুটি এবং মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচিত আরও কতিপয় ইতিহাসগ্রন্থ ইতিহাসের পরিমণ্ডলে যুগ-যুগান্তরের অজ্ঞতা ও অনিশ্চয়তা দূর করে। মুগল শাসনামলে অসংখ্য মৌলিক ইতিহাসগ্রন্থ এবং তার পাশাপাশি বাদশাহ, আমীর-উমারাদের স্মৃতিচারণমূলক রচনাগ্রন্থও রচিত হয়। এই সমস্ত মূল্যবান ও তথ্যবহুল গ্রন্থ রচিত হওয়া সত্ত্বেও মুগল শাসনামলের সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের জটিল তথ্য, বিস্তারিত প্রামাণ্য সমালোচনা, বাস্তবধর্মী বিবরণসম্বলিত গ্রন্থ হিসাবে বাহারিস্তান-ই গায়বীর স্থান সর্বোচ্চ। গ্রন্থটি ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী ষোল বছরের বাংলা, বিহার, কোচবিহার এবং কামরূপ রাজ্যের বাস্তব ঘটনাবলির একটি শ্রেষ্ঠতম ও বাস্তব দলীলবিশেষ। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধে দাউদ খান কররানী পরাস্ত হওয়ার পর বাংলা নামেমাত্র মুগল সম্রাট আকবরের বশ্যতা স্বীকার করলে বাংলার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই সময় বাংলার স্বাধীনচেতা জমিদার ও ভূঁইয়াগণ যৌথ বা এককভাবে মুগল অধিকারের বিরুদ্ধে তাদের নিজ নিজ স্বাধীন রাজ্য রক্ষার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই যুগে মুগল সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে বিস্ময়কর প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রকৃত ও বিস্তারিত ইতিহাস এই বর্তমান সময়ে এসেও রচিত হয়নি। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ নামেমাত্র মুগলদের বশ্যতা স্বীকার করে, কিন্তু বাংলার ভাটি অঞ্চল, কোচবিহার ও কামরূপ রাজ্য মুগল আক্রমণ থেকে তখনও সম্পূর্ণ মুক্ত হয়নি এবং উল্লিখিত অঞ্চলগুলি অধিকারের দায়িত্ব আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীরের উপর অর্পিত হয় ।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বের প্রথম তিন বৎসর (১৬০৫-১৬০৮ খ্রি.) বাংলাদেশের আফগান শাসকগণ ও তাদের সহযোগী মিত্র জমিদারেরা মুগল বাহিনীকে এতদ্‌অঞ্চলে এমনভাবে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে যে, বাংলায় মুগল শাসনের অস্তিত্ব প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই সময় রাজা মানসিংহ, কুতব উদ্দীন খান কোকা, জাহাঙ্গীর কুলি খান পরপর বাংলার সুবাদার হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন। কিন্তু তারা বাংলায় মুগল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় জাহাঙ্গীর তরুণ বয়সের উৎসাহী ও কর্মঠ ইসলাম খান চিশতীকে বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করেন। পরবর্তীকালে এই সুযোগ্য সুবাদার তার নিয়োগের যথার্থতা প্রমাণও করেন। তিনি শুধু বাংলার স্বাধীনতাকামী, প্রতিরোধকারী জমিদার ও ভূঁইয়াদেরই মুগলদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন না; বরং পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও কাছাড়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কোচবিহার ও কামরূপ রাজ্যগুলিও তিনি মুগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।

জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের বাংলা ও আসামের সমকালীন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে তুযুক-ই জাহাঙ্গীরী ও ইকবাল নামা-ই জাহাঙ্গীরী উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। জাহাঙ্গীর তার জীবনস্মৃতি তুযুক-ই জাহাঙ্গীরী সতের বৎসর পর্যন্ত স্বহস্তে লিপিবদ্ধ করলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য লেখা ছেড়ে দেন এবং মু’তামিদ খানকে তার তত্ত্বাবধানে উক্ত জীবনস্মৃতি লেখার জন্য নির্দেশ করেন। তিনি জাহাঙ্গীরের উনিশ বছরের রাজত্বকালের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। শাহজাহানের রাজত্বকালে মীর বখশী হিসাবে নিয়োজিত মু’তামিদ খানই তিন খণ্ডে ইকবাল নামা-ই জাহাঙ্গীরী রচনা করেন। এর প্রথম খণ্ডে বাবুর ও হুমায়ূন, দ্বিতীয় খণ্ডে আকবর এবং তৃতীয় খণ্ডে জাহাঙ্গীর সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। তথ্য হিসাবে এর সাথে পাদিশা নামা, আলম-ই সালিহ ও মাআছিরুল উমারা গ্রন্থসমূহ যুক্ত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এই সকল গ্রন্থের রচিয়তাগণ মুগল সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় ঘটনাসমূহ উপেক্ষা করে গেছেন। তারা এই সময়ে সংঘটিত বিখ্যাত ও মূল ঘটনাসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেছেন কেবল। মুসলিম রাজত্বকালে বাংলা, বিহার ও আসামের ইতিহাসের অন্যতম উৎস হিসাবে মুনশী গুলাম হুসায়ন সালীম রচিত (১৭৮৭-৮৮ খ্রি.) রিয়াদুস-সালাতীন বিবেচিত হয়। অপেক্ষাকৃত আধুনিক এই গ্রন্থটি মৌলিক বা সমকালীন গ্রন্থ নয় এবং নানাবিধ ত্রুটি-বিচ্যুতিতে পরিপূর্ণ। রিয়াদুস-সালাতীনের উপর ভিত্তি করেই মেজর চার্লস স্টুয়ার্ট বাংলার ইতিহাস (১৮১৩ খ্রি.) রচনা করেন । এই গ্রন্থটি ততটা নির্ভরযোগ্য নয়। জাহাঙ্গীরের রাজত্বের সমসাময়িককালে বাংলা ও আসামের ইতিহাস লেখকদের প্রধানত এই সকল অসম্পূর্ণ এবং অনেকাংশে ত্রুটিপূর্ণ ফারসী গ্রন্থের উপর নির্ভর করে তাদের গ্রন্থ রচনা করতে হতো বলে অনেক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ঘটনা অজ্ঞাত থেকে যায়। বাহারিস্তান-ই গায়বী সেই শূন্যতা পূরণের একমাত্র প্রামাণিক গ্রন্থ।

বাহারিস্তান-ই গায়বীর আবিষ্কার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস পুনর্বিন্যাসের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের কৃতিত্বের অধিকারী সুপণ্ডিত স্যার যদুনাথ সরকার। তিনিই সর্বপ্রথম প্রবাসী পত্রিকায় এই সম্পর্কিত কয়েকটি প্রবন্ধ এবং Journal of Bihar and Orissa Research Society (১৯২১ খ্রি.)-তে প্রকাশ করে ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। উক্ত গ্রন্থের পাণ্ডুলিপির একমাত্র প্রাপ্তব্য কপি প্যারিসের Bibliotheque Nationale-এ বিদ্যমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি ফটোগ্রাফ কপি সংগ্রহ করে এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সী ও উর্দু বিভাগের প্রধান ড. এম. আই. বোরা গ্রন্থটি ইংরাজীতে অনুবাদ করেন (১৯৩৬ খৃ.)। আসাম সরকারের Department of Historical And Antiquarian Studies, Narayani Handiqui Historical Institute. Gauhati, Assam কর্তৃক ১৯৩৬ খৃস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন খালেকদাদ চৌধুরী। চার খণ্ডে যা বাংলা একাডেমী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত (১৯৭৮ খ্রি.)। এর ফলে বাংলা ভাষাভাষী ইতিহাস অনুরাগী পাঠক ও গবেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হয় যে, গ্রন্থটির প্যারিসে সংরক্ষিত কপিটি গ্রন্থাকারের জীবদ্দশাতেই প্রস্তুতকৃত। পাণ্ডুলিপির তথ্য থেকে জানা যায় যে, সিতাব খান উক্ত গ্রন্থ মহামান্য নওয়াব আসালত খানকে উপহার প্রদান করেন। নওয়াব মহোদয় গ্রন্থটি তার পালিত ভাই মহামান্য আকা মুহাম্মদ বাকিরকে ১০ জুন, ১৬৪১ সালে উপহার প্রদান করেন। কিন্তু তিনি আবার স্নেহপরবশবশত স্বেচ্ছায় তার ক্রীতদাস জিরাককে সেটা দান করে দেন। পরবর্তীতে জিরাক দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে লাহোরে গ্রন্থটি বিক্রির ইচ্ছা প্রকাশ করলে নওয়াবের কর্মচারীর ভৃত্য মুহাম্মদ মোসিন ইসপাহানীর পুত্র আমির উল্লাহ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্ধারিত নগদ মূল্যে সেটা কিনে নেন। এই ঘটনাটি ঘটে ৮ নভেম্বর, ১৬৪২ সালে।

চার খণ্ডে বিভক্ত গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বাংলার বিভিন্ন সুবাদারের শাসনকালের ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। প্রথম খণ্ডের নাম ইসলাম নামা। ইসলাম নামায় বারোটি অধ্যায় বা দাস্তান বা কাহিনীতে সুবাদার ইসলাম খানের শাসনকালের বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

আট দাস্তান বা অধ্যায়ে লিখিত দ্বিতীয় খণ্ডে আছে কাসিম খানের শাসনব্যবস্থার আলোচনা। তৃতীয় খণ্ডে ইব্রাহীম খান ফতেহ জংগের শাসনব্যবস্থার বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে। যাতে রয়েছে মোট ছয়টি অধ্যায় বা দাস্তান। লেখকের উদ্ধৃতি থেকে তৃতীয় খণ্ডের রচনাকাল সম্পর্কে জানা যায় যে, শাহজাহানের সিংহাসনারোহণের ৫ম বর্ষে, মে, ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে সেটা রচিত। চতুর্থ দফতর বা খণ্ডে শাহযাদা শাহজাহান কর্তৃক বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শাসনভার অধিকার করার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই খণ্ডের নাম ওয়াকিআতে জাহাানশাহী বা শাহজাহানের ইতিবৃত্ত। এতে মাত্র তিনটি দাস্তান বা অধ্যায় আছে। এই অংশটি শাহজাহানের রাজত্বের ৫ম বর্ষে রচিত বলে অনুমান করা হয়।

বাহারিস্তান-ই গায়বীতে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে এবং ইসলাম খানের বাংলায় সুবাদারী লাভের পর থেকে নিয়ে শাহযাদা শাহজাহানের বাংলায় অবস্থিতিকাল পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সমস্ত যুদ্ধ, সমস্ত ঘটনা, মুগল সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের কার্যকলাপ ও মানসিকতার যে বিবরণ পেশ করা হয়েছে, বাস্তবিকই তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। এই গ্রন্থের বর্ণিত ঘটনাবলির ইতিহাস সম্পূর্ণ সত্য বলে মেনে নিতে হয় এই কারণে যে, গ্রন্থের লেখক মির্জা নাথান বাংলায় নিয়োজিত অন্যতম মুগল সেনানায়করূপে তার প্রতিটি ঘটনা ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং প্রতিটি যুদ্ধ, অভিযান ও ঘটনাতে স্বয়ং অংশগ্রহণ করেছিলেন। সমস্তই তার ব্যক্তিগত ও চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার ফল। তার লেখনী ও ঘটনার বিবরণ সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্বহীন ও নির্ভীক; বর্ণনার শৈলী প্রাজ্ঞ সমালোচক প্রতীম। ঐতিহাসিক গ্রন্থে এই ধরনের নিরপেক্ষতা ও স্পষ্টবাদিতা বিরল। বাহারিস্তান-ই গায়বী ইতিহাস গ্রন্থ হিসাবেই কেবল গণ্য হয় না; বরং এ গ্রন্থ উচ্চাঙ্গের ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের পর্যায়ভুক্ত‌ও বটে। গ্রন্থকার ঐতিহাসিক ঘটনাবলির বিবরণ পেশ করার পাশাপাশি গ্রন্থটিকে একটি উচ্চাঙ্গের ক্লাসিক্যাল সাহিত্যরূপে প্রতিপন্ন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।

মুগল বাংলার ইতিহাস জানার জন্য বাহারিস্তান-ই গায়বী অদ্বিতীয় প্রামাণিক গ্রন্থ। গন্থটির রচয়িতার মতোই সকল পাঠককেও তাই স্বীকার করতে হয় যে, বাহারিস্তান-ই গায়বী অনেককাল ধরে স্বমহিমায় ভাস্বর থাকবে।

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Hasan Imran
Hasan Imran
1 year ago

দারুণ একটা গ্রন্থের নাম পেয়ে গেলাম৷ ধন্যবাদ।

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷