‘আফা, আপনেরে নিতে আসছে।’
তিতলি পড়ছিল বসে, তখনো এসএসসি ডাকবার চল হয়নি, আর কদিন পর মেট্রিকের টেস্ট। খুব প্রয়োজন না পড়লে বাইরে যাওয়া একরকম বন্ধ। তার মাঝে খবর এলো। তাড়াতাড়ি বই বন্ধ করতে করতে জবাব দিল সে, ‘ড্রাইভারকে বল, দেরি হবে।’
‘জে আচ্ছা।’
কাজের মেয়ে রহিমা বাইরে যেতেই টেবিল ছেড়ে উঠল তিতলি। শীত এবার জাকিয়ে বসতে শুরু করেছে। জানলার ভারী পর্দা উঠিয়ে বারান্দায় পা রাখল সে৷ বরফিকাটা আলো আর দুটি পাখি খেলা করছে বারান্দায়, পাখিদুটো নিজেদের মধ্যে খোশগল্প করছিল বোধহয় কিংবা প্রেমালাপ। তিতলিকে গ্রাহ্য না করে সঙ্গীকে ঘাড় বাঁকিয়ে দীর্ঘস্বরে কী বলল খানিক। ভঙ্গী দেখে খানিকটা হেসে ফেলল তিতলি, যা ভাগ! লেজের লালটুকু বারান্দায় একটা রেখা টেনে দিয়ে এলো যেন, তার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল সেই পুরনো পরিচিত সাদা টয়োটা। কাচতোলা, ড্রাইভার চুপ করে বসে আছে ভেতরে।
দরজা ঠেলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তিতলি। শাড়ির রং ম্যাচ হচ্ছে না, দীর্ঘশ্বাস সে জন্য নয়। আজকে সেই দিন, গত চার পাঁচদিন ধরে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে, সেটা জানিয়ে দিতে হবে আজই, খানিকটা পর।
‘সেকি, ডায়ালগ শেষে ঐ ফলস লুকটা কেন দিলে! ক্যামেরা, এই শটটা আবার নাও।’
তিতলি খানিকটা হতাশ হলো। এই পড়ন্ত বিকেলে আর কাজ করতে মনে সায় দেয় না। তার ওপর যতসব আজেবাজে ব্যাপার ঘটে এইসব শেষ মুহূর্তে এসে। শাড়ীর আঁচল টেনে নিয়ে আবার শট দিতে প্রস্তুত হয় তিতলি। দৃশ্য তেমন কিছু নয়। রাগত ভঙ্গিতে হেঁটে এসে সিঁড়ির গোড়া থেকে দুটো টব লাথি দিয়ে ফেলতে হবে নিচে। চেহারায় একটা রাগী-দুঃখী-বিধ্বস্ত ভাব থাকবে। এমনিই মন খারাপ ছিল, তার ওপর খানিকটা রাগ চাপিয়ে নিতে বেগ পেতে হলো না তেমন। শেষ টবটি গড়িয়ে গড়িয়ে অর্ধেকটা যেতেই নিচ থেকে শোনা গেল, কাট! খুব টানটান রশি আচমকা ছেড়ে দিলে যেমন, আলতো করে এক মনোরম আলস্য নেমে এলো পুরো শ্যুটিং টিমের ওপর। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হাঁক ছেড়ে বললেন তার সুদৃশ্য চেয়ারে হেলান দিতে দিতে,
‘বোয়, চায়ে লে আও!’ সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে খাঁটি গ্রামের স্বরে উত্তর পড়ল,
‘দিতাছি ভাইজান।’
এই চা পান উত্তর, তবলার ঠুকঠাক রেখে তিতলি বসল আয়নার সামনে। মেকআপ ওঠাতে হবে, ব্যাগ গোছাতে হবে। এলোমেলো বইগুলোর দিকে চোখ পড়তেই খানিকটা হেসে উঠল আপন মনে, বইগুলো নিয়ে আসাই সার, পড়তে বসার সময় আর পাওয়া গেল কই।
ও ঘরে তখন আড্ডা চড়ছে, ডিরেক্টর সাহেব ক্যামেরা চালু থাকলে যেমন তেমন, যেই শ্যুটিং শেষ, অমনি সব সিরিয়াসনেস ভুলে গিয়ে গল্পের ঝুলি মেলে বসো, চা চালাও, চাই কি হতে পারে দুচারটে গান। তিতলি ওসবে কান না দিয়ে নিজের কাজটি করছিল আপন মনে। দরজায় নক,
‘এসো!’
‘আপা, আনিস সাব আপনেরে ডাকে।’
হালকা একটু বিরক্তি আর খানিকটা কৌতূহল জড়িয়ে নিয়ে সে বলল, ‘আসছি, মেকআপটা তুলে নিই?’
‘জি, আচ্ছা।’
অভিনয় জগতের কায়দাই এই। বয়সে যত ছোটই হোক বয়গুলো সব অভিনেতা অভিনেত্রীদের আপনি বলে ডাকে। না হলে মাত্র টেনে পা রাখা তিতলিকে আপনি ডাকার মতো কে আছে।
‘সেকি তিতলি, মুখ গোমড়া কেন?’ নাট্যকার আনিস সাহেব হাসিমুখে জানতে চাইলেন।
‘না আংকেল, তেমন কিছু না। মাথাটা ধরেছে একটু।’
‘দেখো, আমাদের খান ভাই কী এক গল্প জুড়েছেন, বসো একটু, মন ভাল হয়ে যাবে।’
একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল তিতলি, কোন লাউয়াছড়া না কোথাকার জঙ্গলে হারিয়ে গিয়ে ভুত দেখার গল্প। মজার ভুত বোধহয়, সবাই খানিক পরপর খুব হাসছে। দুচারটে হাই গোপন করে একসময় উঠে দাঁড়াল সে, ‘আজকে তবে আসি, সন্ধ্যা হয়ে আসছে।’
‘যাও তবে, হারুন, তিতলিকে নামিয়ে দিয়ে এসো।’
পরের শুক্রবার। প্যাকেজ নাটক ‘লীলাময়’র বারতম পর্বের শুটিং শুরু হবে। প্রথম সিকোয়েন্সে তিতলির শট নেই, পরেরটার মাঝামাঝি গিয়ে শুরু। এই অবসরে সেটের বাইরে একটা ফাঁকা রুমে বসে প্যারাগ্রাফের খাতা নামিয়ে বসল তিতলি। আর মাসদুয়েক পর থেকে ম্যাট্রিকের টেস্ট শুরু। তার আগে আগে এই শুটিংয়ের ফ্যাসাদ না ফুরোলে নিশ্চিত মা’র স্কেল আছে কপালে। ফ্যাসাদ বলল বটে, কিন্তু সত্যি এই অল্প বয়সে ক্যামেরার আলো মুখের ওপর পড়া, হঠাৎ পথে ঘাটে কেউ চিনে ফেলা এসব কি সে ভালবাসে না। তখনো ভিকি ভিকি ডাকের চল হয়নি বটে, কিন্তু ভিকারুননিসার আলাদা একটা জেল্লা আছে তো বটেই। সেই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে টিভিতে দেখায় এমন একজন সহপাঠী পেয়ে ক্লাস টেন সেকশন বি-র রীতিমতো পাখা গজিয়ে গেছে। কোথাও দাওয়াত পড়লে বান্ধবীরা আগ্রহ করে পরিচয় করিয়ে দেয়, বইমেলা কিংবা বাণিজ্যমেলায় চট করে কেউ চিনে ফেলে জানতে চায় কেমন আছেন। এমন সব ভাললাগাটুকুর সুখ নিতে তো সে ভালই বাসে। এই পাতাটা শেষ হয়ে আসছে, নতুন পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে দরজার দিকে নজর পড়ল তিতলির। খুলছে…
‘আপা আপনের চা, আনিস সারে পাঠাইসে’
‘বাহ, রেখে যাও দেখি।’
রীতিমতো ধোঁয়া ওঠা চা, আলতো করে ধরে নিচে এক চে তাকাতেই, আরে পিরিচের পাশে ওটা কী! নীল রঙের একটুকরো কাগজ, দ্রুত হাতে লেখা একটি লাইন-
‘এত পড়ালেখা করে কী হবে?’
আনিস সোহেল মোটের ওপর পরিচিত মানুষ। টিভির পর্দা কিংবা পত্রিকার পাতায় প্রায় নাম দেখা যায়, সেই সঙ্গে যেখানে যান স্যার স্যার বলে মুখে ফেনা তোলা একদল অনুরাগী জুটে যায়। এমনকি এই নাটকের সেটেও বিকেলের দিকে সেই সঙ্গীবহরের আড্ডা জমে। এমন একজনের হঠাৎ করে চিরকুট পাঠানো, অস্বাভাবিক তো বটেই, রীতিমতো বিস্ময়কর। চা শেষ করে বইপত্র গুছিয়ে ফেলল তিতলি। রেডি হওয়া যাক। ডাক পড়তে আর বেশি দেরি নেই হয়তো।
সেদিনের শুটিংয়ে আর মন বসল না কিছুতেই, বারবার শট এনজি হতে হতে শেষে ডিরেক্টর খান রেগেই গেলেন।
‘আজ তোমার কীসে পেয়েছে মেয়ে, দুটি শট ওকে হতেই ঘণ্টা পার!’
অমন রাগী রাগী চেহারায় বাবাও কোনোদিন বকেননি তিতলিকে। সেট ভর্তি মানুষের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বড্ড অস্বস্তিকর। ধুপধাপ পায়ের শব্দ আর সজোরে ড্রেসিং রুমের দরজা লেগে যাওয়ার পর তিতলি শুনল আনিসের গলা। ‘খান ভাই, একটু বেশি হয়ে গেছে মনে হয়।’
যে সময়ের গল্প ফেঁদেছি তখনো শুক্র শনি ছুটি শুরু হয়নি দেশে। পরদিন টিফিন টাইমে যখন ভিকারুননিসার মগবাজার শাখায় চলছে তুমুল হইচই। বাচ্চারা ক্লাসের ফাঁকে খানিকটা মহামূল্যবান সময় পেয়ে সেটার প্রতিটি পল কাজে লাগাতে চাইছে যেন। সেই সময় দেখা গেল পুরাতন বিল্ডিংয়ের ছাদে, যেখানে বড় বড় গাছ তৈরি করেছে খানিকটা আলোছায়া, তার ভেতরে দুটি নীলসাদা বসে কিচির মিচির শুরু করেছে। আলোচ্য বিষয় একখানি চিরকুট, নীল রঙের। যাতে লেখা আছে কেবল একটি লাইন। রাইসা নাছোড় হয়ে ধরেছে তিতলিকে, এই চিরকুটের রহস্য উদ্ধার না করে শান্তি নেই। শেষমেষ রফা হলো আজীবন গোপন রাখা আর দুটি কার্নিভাল আইসক্রিমের শর্তে।
‘চোখ বন্ধ করে হাত পাত, মনে আছে কাউকে বলা চলবে না কিন্তু!’
‘হাত পেতে লাভ কি, সেই মানুষকে কি হাতে তুলে দিবি নাকি?’
‘বাজে বকিসনে, হাতটি পাত৷ ঘণ্টা পড়তে আর পাঁচ মিনিট।’
বলপেনের কালিতে ফুটে ওঠা নামটি দেখে কেমন গম্ভীর হয়ে গেল রাইসা। শত হোক খ্যাতির ছোঁয়া কে না পেতে চায়, কে না খ্যাতিমানকে ঈর্ষা করে। দুপুরের প্রখর রোদে খাটো হয়ে আসা দুটি নীরব ছায়া ধীর পদে নেমে গেল নিচে, শোনা গেল একলয়ে বেজে যাওয়া ঘণ্টা…
সেদিন সকাল, কী এক কারণে স্কুল ছুটি৷ আগের রাতে যথেষ্ট হই-হুল্লোড় আর আড্ডাবাজি শেষে তিতলি বাড়ি ফিরেছে রাত করে। এক বান্ধবীর জন্মদিনে ক্লাসের অনেকে এসেছিল। আর সব উৎসবের মতো গানের পালা পড়েছিল তিতলির ঘাড়ে, সারাসন্ধ্যা নানান ধরনের সুর তুলতে তুলতে মাথাটি হয়েছে ভার, তার সঙ্গে গুরুপাক খাবার। সকালের রোদ মেঝেতে নকশিকাটা আলো ফেলে চলে যায় প্রায়, তিতলির ঘুম ভাঙে না। শেষে মায়ের ধমক আর নানাবিধ হুমকির কল্যাণে সেই শোয়া আর হলো কই। নাশতা সেরে গল্পগুচ্ছ হাতে বারান্দায় পা মেলে বসেছে, সেদিনের সেই লালপুচ্ছ শালিকজুটি এসে ঘাড় বাঁকিয়ে দেখছে। আর কিচ কিচ করে কীসব বলছে নিজেরা নিজেরা। প্রবল বৃষ্টির সন্ধ্যায় দাদুর গলা ধরে গল্প শোনার বায়না ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ, ওদিকে মাস্টার এসে বাগড়া দিতে প্রস্তুত। বালক রবী নানাবিধ কৌশলে সেই মনোরম সন্ধ্যাটি খটোমটো পড়াশোনায় নষ্ট হতে দেবেন না, এই যখন অবস্থা তখন বারান্দায় সাড়া পাওয়া গেল রহিমার,
‘আপা আপনের ফোন, প্রডাকশন অফিস থিকা।’
‘সেকি, কেন?’
‘তা আমি ক্যামনে কমু!’
উঠে গিয়ে ফোন ধরল তিতলি, ‘তিতলি বলছি’
‘আচ্ছা শোন, সামনের পর্বে নতুন একটি সিকোয়েন্স যুক্ত হচ্ছে, তুমি থাকছ তাতে। কস্টিউম নিয়ে শিগগির চলে এসো।’
‘কী বিপদ!’
ঘণ্টাখানেক পর যখন নামা গেল শুটিং হাউসের সামনে, আবিষ্কার হলো, কীসের শুটিং কীসের কী! আনিস সাহেব পা নাচাচ্ছেন একাকী বসে বসে।
‘কী সব নতুন সিকোয়েন্স না কী যেন শুনলাম, কই শুটিং?
‘আরে সেসব হবে হবে। তারচেয়ে বসো খানিকটা আড্ডা দেয়া যাক।’
‘ঠিক আছে’ বসতে বসতে বলল তিতলি।
‘আজকে তো বয় কেউ আসেনি। চা খাবে?’
‘তা খাওয়া যায়, আচ্ছা ভালো কথা। আপনি সেদিন চা পাঠিয়েছিলেন, একটা থ্যাংকস পর্যন্ত দিইনি। পরে বাসায় ফিরে আমার এমন লজ্জা লাগছিল!’
‘লজ্জার কী আছে’ হাসতে হাসতে বলল আনিস, ‘ভুলে তো মানুষ যেতেই পারে। তা সেই থ্যাংকস কি এখন দেবে, না আজও ভুলে যাবে।’
‘দিতে পারি, তবে এক শর্তে। আপনার হাতে চা বানিয়ে খাওয়াতে হবে।’
‘জো হুকুম মহারানি!’ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল আনিস।
‘আপনার মাথায় কি সবসময় লেখা নয়তো নাটক ঘোরে?’
‘তা ঘোরে বইকি। যার যা কাজ!’
তার পরের সপ্তাহে আবারও একটা জরুরি অংশের শুটিং করতে যেতে হলো একদিন দুপুরে। পরের সপ্তাহে আবারও। এমনই একদিন গিয়ে দেখা গেল, সেই পড়তে বসার টেবিলে ছোট্ট একটি চিরকুট। আজকের রং ঈষৎ হলদে। তাতে লেখা চারটি লাইন-
‘ক্লান্ত চোখ ও ক্লান্ত চোখের পাতা
তাহার চেয়ে ক্লান্ত আমার পা।
মাঝ উঠোনে সাধের আসন পাতা
একটু বসি? ‘
‘কী, পড়া হলো?’ আচমকা দরজা ঠেলে ঢোকে আনিস। এই ইঙ্গিতময় চারটি লাইনের মানে কী হতে পারে সেই ভাবনায় ডুবে থাকা তিতলি ভয়ানক চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল,
‘না, মানে হ্যাঁ, পড়লাম।’
‘কী, দেবে বসতে?’ চেয়ারে বসতে বসতে বলে আনিস, ‘না, এক্ষুনি বলবার দরকার নেই। ভাবো, সময় নাও। আমার হাতে অজস্র সময়। তারচেয়ে বসো, একসাথে খাওয়া দাওয়া করা যাক।’
‘না, আমি তো বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।’
‘ওহ, তাহলে এমনই বসো। আমি খাই তুমি দেখো।’
‘সেটা হতে পারে।’
‘জানো, আমার সারাজীবনের অভ্যাস নানা লোকজন সাথে নিয়ে আয়োজন করে খাওয়া,’ মাছের টুকরোটি পাতে তুলতে বলে আনিস, ‘অথচ আমারই কী ভাগ্য, প্রায় সময়ই আমি খেতে বসি যখন সবার খাওয়া হয়ে গেছে, খাবার ঠান্ডা হয়ে শুকিয়ে আছে। বাঁচার জন্য খেতে হয়।’
‘সেকি, কেন? বাসার সবাই একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন না।’
‘সে এক বিরাট ইতিহাস। বলব একসময়।’
পাঁচদিন পরের বিকেল। আর সব দিনের মতো সেদিন দুপুরে পড়তে বসেছে তিতলি। আর কদিন পর মেট্রিকের টেস্ট। খুব প্রয়োজন না পড়লে বাইরে যাওয়া একরকম বন্ধ। রহিমা এসে খবর দিলো,
‘আফা, আফনেরে নিতে আসছে।’
‘হু, ড্রাইভারকে বল, দেরি হবে।’
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তিতলি। শাড়ির রং ম্যাচ হচ্ছে না, দীর্ঘশ্বাস সে জন্য নয়। আজকে সেই দিন, গত চার পাঁচদিন ধরে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে, সেটা জানিয়ে দিতে হবে আজই, খানিকটা পর। অন্যদিনের মত লম্বা থ্রিপিস নয়, একেবারে শুটিংয়ের সাজে সাজল আজ, সময় নিয়ে শাড়ি পরল তিতলি। বিকেলের উড়তে থাকা পর্দার ফাঁক গলে ছিঁড়ে ছিঁড়ে আসা আলোয় মেরুণ রঙা শাড়িতে তাকে মনে হলো ইন্দ্রাণী। যত্ন করে পরা কাজল আর গুছিয়ে বাঁধা চুল দেখে মা বললেন,
‘কীরে, আজকে একেবারে বাসা থেকেই ফিটফাট?’
‘হু, সেরকমই কথা।’
বিকেলের তেরচা হয়ে আসা আলো শুটিং বাড়িটিকে আলোছায়ায় ভরে তুলেছে। মাঝের বড় বারান্দায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে আনিস। দৃষ্টি কোন সুদূরে হারিয়ে গেছে, কেবল মাঝে মাঝে জুতোর শব্দে বোঝা যায়, জীবিত কেউ আছে এইখানে। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বলল তিতলি,
‘আপনার সাধের আসনে চাইলে বসতে পারেন।’
অতঃপর দীর্ঘ একটি সময় সেই লম্বা বারান্দায় হলো কেবলই নৈঃশব্দের বসবাস। একসময় ধীর লয়ে শোনা যায় কেঁপে যাওয়া আনিসের গলা,
‘সেই কবিতার পরের লাইনটি লিখতে সাহস পাইনি। যদি সত্যি হয়ে যায়।’
‘তাই নাকি, কী ছিল সে লাইন?’
ক্লান্ত চোখ ও ক্লান্ত চোখের পাতা
তাহার চেয়ে ক্লান্ত আমার পা।
মাঝ উঠোনে সাধের আসন পাতা
একটু বসি?
জবাব আসে, ‘না’।
২.
একটা সাদা টয়োটা গাড়ি এগিয়ে চলেছে ঢাকার রাস্তা দিয়ে। পেছনের সিটে হাতে একটি সিগারেট গুজে বসে আছে আনিস। সেই জ্বলন্ত সিগারেটের ছাই লম্বা হচ্ছে, কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। এমনিতে সে সকলের সঙ্গে হাসিখুশি, কেউ বাইরে থেকে দেখলে বুঝবেই না তার ভেতরের ঝড় সম্পর্কে। বিয়ের বহু বছর পর ফারহানা একদিন বলছিল,
‘তুমি কি জানো তোমার বাস্তবে কোনো বন্ধু নেই?’
‘তাই নাকি! আমি তো দেখি দিনমান লোকে আসছে যাচ্ছে, কথা বলছি দেখা করছি। বন্ধু কম কই?’
‘সেসব বন্ধু নয়, নিজ প্রয়োজনে আসা দুধের মাছি। সময় হলে বুঝবে।’
সেদিন হাসলেও এখনের সংকটে সেই কথা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে, বান্ধবহীন যন্ত্রণার বোঝার ওপর শাকের আঁটি হিসেবে আছে সেই ভবিষ্যদ্বাণী। এ যেন গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে যাওয়ার পর পেছনে জিভ বের করা কুকুর আবিষ্কার করা, অথচ সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
‘স্যার’ চিন্তার সুতো ছিঁড়ে দেয় ড্রাইভার, ‘বলেছিলেন স্টেশনারি দোকান দেখলে দাঁড় করাতে। কী যেন কিনবেন।’
‘ও হ্যাঁ’
চকিতে মনে পড়ে যায় আনিসের, আসার সময় মেঝো মেয়ে কঙ্কা বলে দিয়েছে ভালো দেখে একটা ডায়েরি আনতে। তখন রফিককে বলে রেখেছিল। বাসার আর সবার মধ্যে এই মেয়েটিকে সবচেয়ে স্নেহ করে আনিস। এ দেখতে যেমন ভালো, গুণেও তেমনি। সাধারণত পরিবারের লেখক সদস্য সবচেয়ে অবহেলিত থাকে, কিন্তু আনিস সেই সৌভাগ্যবানদের একজন যাকে পরিবারের সকলেই লেখক হিসেবে মেনে নিয়েছে। নতুন কোনো লেখা তারা মনোযোগ দিয়ে পড়ে, সবচেয়ে ছোট যে আরাধ্য, সে এখন টুকটাক পড়তে শিখেছে। নতুন বই পেলেই দু এক লাইন পড়ে, তারপর গম্ভীর স্বরে বলে, ‘বাবা তুমি পচা বই লেখো, কোন ছবি নাই। ছবিঅলা বই লিখবে এরপর থেকে।’
একমাত্র পুত্রের এইসব পাকামো মনে পড়তেই আপন মনে হেসে ফেলে আনিস, পাগল ছেলে। ড্রাইভার ততক্ষণে গাড়ি থামিয়ে ফেলেছে। থরে থরে সাজানো ডায়েরি৷ আকাশি আর সাদায় মেলানো মলাটের একটি নোটবুক পছন্দ করে সে, কঙ্কা মেয়েটির হালকা রং পছন্দ। আচ্ছা, আনিস যে তাদের পছন্দের খুটিনাটি পর্যন্ত জানে, ওরা কি সেই খোঁজ রাখে, নাকি তাকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া একজন মনে করে। কদিন আগে পুত্র আরাধ্যকে একা পাওয়া গেল, সে তখন আপন মনে বারান্দায় খেলছে৷ কেউ যেন না শোনে সেভাবে তাকে জিজ্ঞেস করেছে আনিস,
‘বাবা, তোমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে?’
‘উমম, মা।’
‘তারপর?’
‘বড়াপা’
‘তারপর?’
‘ছোট চাচা।’
‘তারপর?’
‘দাদু’
ক্রমাগত বাড়তে থাকা তালিকায় নিজের অস্তিত্ব হুমকির মুখে দেখে আর জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকে আনিস। আচ্ছা সে কখন তার পুত্র-কন্যাদের থেকে এতটা দূরে চলে এলো? ভাবতে ভাবতে একটা গোলাপি বাক্সের দিকে নজর গেল, বেশ সুদৃশ্য। ভেতরে নানান রঙের চৌকো কাগজ। ঝট করে যেন সেই টুকরা কাগজগুলো পড়ে থাকতে দেখল শুটিংবাড়ির সেই টেবিলে, তিতলির হাতে, নরোম মুঠোয় সযত্নে ধরে রাখা। সে ডায়রির সঙ্গে কিনে ফেলল একবাক্স রঙিন চিরকুট।
বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পড়ে এলো, পথের সোডিয়াম লাইটের হলদে আলোয় কেমন একাকী হয়ে এসেছে চারপাশ। রাস্তার কুকুরটি হাত পা ছড়িয়ে ঘুম ঘুম ভাবে কান খাড়া করে আছে। বাবর রোডের দোতলা বাড়ির সামনে যখন গাড়ি এসে দাঁড়াল, ততক্ষণে চারদিকে আঁধার নেমে এসেছে৷ গেটে ঢোকার সময় বাঁ পা টি খুব শক্ত করে ঠুকে গেল পড়ে থাকা আধলায়, আজ কি খানিকটা অন্যমনস্ক আনিস? দরোজা খুলে ঢোকার আগে সেই উদাসীনতাকে সযত্নে শার্টের পকেটে চালান করে দিয়ে অভিনেতার দক্ষতায় মুখে ফুটিয়ে তুলল প্রশান্তির হাসি। ছেলে মেয়েরা দৌড়ে এলো বাবা বাবা করে। কঙ্কা ছুটে এসে জানতে চাইল,
‘বাবা, আমার ডায়েরি?’
সতর্ক চোখে দেখে নিলো আনিস, চিরকুটের বক্সটা আবার চলে আসেনি তো। আরাধ্যর গায়ে নতুন জামা,
‘বাবা, আজ সন্ধ্যায় আমরা বেড়াতে যাবো, তুমি যাবে না?’
‘তোর বাবাকে কোনোদিন কোথাও যেতে দেখেছিস’ এগিয়ে আসেন ফারহানা, ‘ও শুটিং থেকে এসেছে, এখন বারান্দায় বসে বসে সিগারেট খাবে আর হাঁটাহাঁটি করবে।’
জামা কাপড় ছাড়তে ছাড়তে আনিস শোনে ও ঘরে মেয়েদের হট্টগোল, কে কোন জামা পড়বে, কোনটা কাকে মানাবে এইসব৷ ফারহানা চিৎকার করে বলছে, ‘তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও, আটটা বাজতে আর বেশি বাকি নেই।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনিস, চারদিকে কত আনন্দের উপাদান, অথচ সে যোগ দিতে পারছে না। কেবলই মনে হচ্ছে, জগতের এই আনন্দযজ্ঞে তার কোন আমন্ত্রণ নেই। অনাহূত অতিথির মতো সেই উৎসবে ঢুকে পড়ে কাকে আবার বিব্রত করবে, থাক!
লেখার খাতা নামিয়ে বসেছে আনিস, ফেব্রুয়ারির আর বেশি দেরি নেই৷ কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ তৈরি হয়ে বাসার দেয়ালে ঝুলছে। অনেকটা সেলফ রিমাইন্ডারের মতো সেসব জানিয়ে দিচ্ছে কোন কোন কাজ তাকে করে ফেলতে হবে শিগগিরই৷ ভাতের পিরিচ আর কাগজ-কাঁচি যথাস্থানে আছে দেখে খানিকটা স্বস্তি পেলেন, নয়তো আবার চিৎকার করতে হতো, ‘নীতু মা, কাগজ কাঁচি দিয়ে যাও তো।’ নিজের মনে হাসল আনিস, দিন কীভাবে পাল্টায়। আগে এই নামটি ছিল ফারহানার। সকল কাজে তার হাত চাই, সহায়তা চাই, সে ছাড়া কোন কিছু ঠিক গুছিয়ে হবার নয়। ধীরে ধীরে মেয়েরা বড় হচ্ছে, আর তাদের মায়ের বাড়ছে ব্যস্ততা। এটা ওটা প্রয়োজনে এখন মেয়েরাই এগিয়ে আসে। আগে যে ছিল অপরিহার্য, ধীরে ধীরে সেই জায়গা থেকে সে হয়ে দাঁড়িয়েছে সেকেন্ড চয়েজ। চাই কি দৈনন্দিন কাজে, চাই সংসারে কিংবা দাম্পত্যে।
অভ্যস্ততা একটা ভালো গুণ, কিন্তু তার অনেক বড় দোষের একটি, এ অনেকটা ঘুনে ধরা কাঠের পলিশের মতো। বাইরের জেল্লা ধরে রাখে ঠিকই, ভেতরের ফাঁপা হয়ে যাওয়া সম্পর্কের আভাস দেয় না। আজ কত দিন সকালে উঠে লিখতে বসে আনিস, তারপর দুপুরে শুটিং, গভীর রাতে লেখা শেষ করে ডাইনিংয়ে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া খাবার টেনে নিয়ে বসে, এ যেন নিয়ম করে ঘড়ির কাঁটার ঘুরে আসা। ততক্ষণে সারাদিনের উৎসব শেষ হয়ে নেমে এসেছে গভীর ক্লান্তি, বাড়ির সবাই ঘুমে, রাস্তায় কুকুর ডাকছে, হুঁইসেল বাজছে ঘন ঘন। শোবার ঘরে ফারহানা ঘুমুচ্ছে আরাধ্যকে জড়িয়ে ধরে, শান্তির ঘুম, অভ্যস্ততার ঘুম। আহা আজ কতদিন নিয়ম ভেঙে মধ্যরাত্রে ছাদে হাঁটতে যাওয়া হয় না, শোনা হয়না রাতদুপুরে হঠাৎ ফারহানার গাওয়া বসন্তের গান। শবনম লিখেছিল তার মাজনুনকে, ‘আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না।’ অদ্ভুতভাবে এর উল্টোটাও কি সত্যি নয়। আনিস বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে বিড়বিড়িয়ে উচ্চারণ করে, ‘আমার মিলনে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না, যেয়ো না, যেয়ো না।’
জগতের সব কোলাহল থেমে গেলে পরে শূন্য হলঘরে বেজে যায় একটি গান৷ সে গান একাকীত্বের, সে গান সঙ্গীহীনতার৷ মাসছয়েক পর। তিতলির মেট্রিক পরীক্ষা শুরু হয়ে কয়েকটা পেরিয়ে গেছে। একদিন পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখছে সে, একটা সাদা টয়োটা এসে থামল তার সামনে। পেছনে সেই বহুরঙা চিরকুট, হাতে একটি ডাব নিয়ে কেমন অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে বসে আছে আনিস।
‘পরীক্ষা কেমন হলো?’
‘বেশি সুবিধের নয়, অঙ্ক তো!’
‘সে আর এমন কী! খানিক পড়লেই সব জলবৎ তরলং।’
‘বলছো’, এক সিপ ডাবের পানি মুখে নিয়ে বলে তিতলি, ‘তোমাকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিলে হয়।’
‘হয়ই তো!’ গাড়ি ততক্ষণে নিউ ইস্কাটনের কাছাকাছি, ‘আরেকবার রেডিয়োতে নাম শোনা যায়, এখন অবশ্য টিভিতেও দেখাবে।’
‘হয়েছে, আমি এখানেই নেমে পড়ি, তোমার আর সামনে গিয়ে কাজ নেই।’
‘সত্যি চলে যাবে?’
‘হ্যাঁ যাচ্ছি, তবে ফিরে আসবার জন্য।’
সদ্যতরুণীর লীলাময় ভঙ্গির দিকে তাকিয়ে গাড়ির এক্সেলেটরে চাপ দেয় আনিস। কেউ চিনে ফেললে মুশকিল। এমনিতেই খবরটা খুব দয়াপরবশ কেউ বাড়ি পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গেছে। আর ঘটে গেছে পজিটিভ-নেগেটিভের সংস্পর্শ, সেই থেকে সংসারে স্পার্ক হচ্ছে অসম্ভবরকম। এমন তীব্র অশান্তির দিনে শান্তি মতো বাসায় ফিরে বসবারও সুযোগ নেই৷ কেউ কথা বলে না, ফিরে তাকায় না, যেন একরকম বয়কট। দুয়েকদিন আরাধ্যর প্রিয় চকোলেট, খেলনা কিনে নিয়ে গিয়েছিল আনিস। ফারহানা কাছেই ঘেঁষতে দেয়নি। সেই ‘লীলাময়’ প্যাকেজ নাটকের কাজ ফুরিয়েছে বলে আজ বহুদিন তিতলির দেখা নেই৷ একূল ওকূল ছুঁয়ে থাকা আনিস গতরাতে তার অফিসের মেঝেতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিল একাকী, শেষে কি দুকূল হারিয়ে অথই নদীতে ভেসে যাবে সে।
গাড়ি অফিসের সামনে এসে দাঁড়াতেই ড্রাইভার রফিক ছুটে এলো।
‘স্যার, বড় আপা বাসা থেকে ফোন করছিলেন। সিঁড়ি থেকে পড়ে ছোট আপার পা মচকায় গেছে। হাসপাতালে নিতে হবে।’
‘বলো কি!’
শাঁ শাঁ করে গাড়ি ছুটে চলেছে ঢাকার রাস্তা দিয়ে। একটু আগে দুকূল হারানোর অনুভুতি হারিয়ে গেছে আনিসের মাথা থেকে। তার বদলে ফিরে এসেছে দীর্ঘদিনের লালিত বাৎসল্য, স্নেহ। আবারো সে অনুভব করছে সামনে পেছনের যুগলবন্দী আহ্বান। সে কি পিছিয়ে যাবে, নাকি সব ছেঁড়েছুড়ে এগিয়ে যাবে মোহ আর অনুরাগের দিকে। দিকবিদিকশুন্য সাদা টয়োটার মতো তার আরোহী আনিসেরও সে উত্তর জানা নেই।
৩.
চার বছর পরের একদিন। নিউমার্কেটের ওভারব্রিজের ওপর একাকী দাঁড়িয়ে আছে তিতলি। হাতে প্রচুর কাজ, একটা লাল শাড়ী কিনতে হবে, পার্লারে যেতে হবে, আনিসের জন্য একটা পাঞ্জাবি পছন্দ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই সব কিছু করতে হবে একা একা। সারাজীবন ধরে লালন করে আসা এই স্বপ্নের দিনে পাশে বাবা, পরিবার, বন্ধু কেউ নেই৷ একাকী ক্লান্ত প্রাণ এক ধীর পায়ে নেমে এসেছে রাজপথে।
আনিস ফারহানাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিল তারও কয়েকমাস আগে। তার কয়েকদিন পর এক দুপুরে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে আরাধ্য স্কুল থেকে ফিরল কাঁদতে কাঁদতে, ‘মা ওরা আমাকে খেলতে নেয়নি, বলেছে আমার বাবা নাকি পঁচা।’
‘আচ্ছা মা, বাবারা কি কোনোদিন পচা হয়?’
(এই গল্পের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক)
হুমায়ুন আহমেদের জীবনী। দারুন হয়েছে 🍁
গল্পটা গতকালই পড়তে আরম্ভ করেছিলাম। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে কিছুই বুঝছিলাম না, ভালো ভাষায় যাকে বলে ‘সব মাথার উপর দিয়ে যাওয়া’। আজ পড়লাম ফের। শুরুতে কেমন জানি কালকের মতোই দুর্ভেদ্য কঠিন লাগছিলো, কিন্তু মোটামুটি খানিকটা এগুতেই মাথার জ্যাম কিছুটা ছোটে, আর আমিও গল্পের ভেতরে ডুবি। পড়লাম। ভালো লাগলো।
পড়লাম আর অনুভূতি অনুভব করলাম। লেখা মাথার ওপর দিয়ে গেছে কিছু। আবার পড়তে হবে।
মাঝেপথে মনে হয়েছে হুমায়ুন আহমদের চরিত্রের সাথে মিলে যাচ্ছে। নিচের কমেন্ট দেখে বুঝলাম আমার না আরো অনেকের!
প্রথমে মাথার উপর দিয়ে গেছিল। পরে বুজচি
অসাধারণ ভাই, নতুনত্ব পাইলাম