ঢাকার কাসিদা
অথচ আমরা তাকিয়ে ছিলাম গাজার দিকে,
শিফা হাসপাতালের জন্য দোয়া করতে করতে—
ভুলে গেছি ঢাকা মেডিকেলের কথা
পত্রিকায় কলাম লিখছিলাম মাহমুদ ও হিন্দের মৃত্যু নিয়ে
ঠাহর করতে পারিনি জাহাঙ্গীরনগরের ভাগ্য,
মনে হয়নি, রাফা হয়ে উঠতে পারে রংপুর কিংবা চট্টগ্রাম,
আমরা তাকিয়ে থাকি খান ইউনিসের আকাশে
অথচ মুহম্মদপুর ঝলসে দিয়ে চলে যায় ঘাতকের হেলিকপ্টার
সালাউদ্দিন স্ট্রিটের আর্তনাদ ভাসে যাত্রাবাড়ীর বাতাসে,
গাজায় শহিদের তালিকা দেখে ক্লান্ত হতে থাকি—
অথচ আমার ভাইদের আকাশমুখী মিছিল শুধু দীর্ঘ হয়;
যেন অন্তহীন।
আমাদের চোখ ছিল ফিলিস্তিনে,
মনে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’-এর হিশাব
টের পাইনি
উন্মত্ত কামানের মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছে হিমালয় থেকে সুন্দরবন।
আবু সাঈদের প্রতি
আমাদের বাঁচালে তুমি আবু সাঈদ;
জুলুমের জোয়াল টেনে যারা গুটিয়ে যাচ্ছিলাম প্রতিদিন
অভ্যস্ত দাসের মতো
কিংবা ভীতু সরীসৃপের মতো হামাগুড়ি দিচ্ছিলাম পেছন দিকে
তাদের সামনে উদ্বাহু যিশুর মতো আত্মবিসর্জন দিয়ে—
কাপুরুষের কালিমা থেকে বাঁচালে।
বাঁচালে তুমি,
এক পরিচয় বিস্মৃত কাফেলায়
স্মরণ করিয়ে দিলে পূর্বপুরুষের বিসর্জনের ঐতিহ্য
জালিমের আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে তোমাকে দেখে—
দেখলাম সিরাজ ও মোহনলাল
মজনু শাহ ও ভবানি পাঠক
আজাদির জোশে উন্মুখ বেঙ্গল রেজিমেন্ট;
সাতচল্লিশ ও একাত্তর হয়ে আজ অব্দি ফেলা প্রতিটি পদক্ষেপ;
যেন শুনলাম হাজার যুগের পূর্বপুরুষের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর—
‘আমরা কাপুরুষ নই।’
যে মাটি তোমার রক্তে এই মাত্র ভিজে গেল—
সেইখানে দাঁড়িয়েই স্বরাজের স্লোগান দিয়েছেন অজস্র বীর
এই হরিকেল,
এই রাঢ়, সমতট, বঙ্গ ও বরেন্দ্রের মাটি
হজম করতে পারেনি কোনো দখলদার,
কখনো ধর্মপাল আর কখনো বারো ভূইয়া হয়ে করেছে প্রতিরোধ—
রক্ত কি মিথ্যা বলে কোনোদিন?
উত্তরপুরুষ হিশেবে ব্যর্থ হতে দেবো সেই পদরেখা?
অথচ ইতিহাসের প্রতিটা পৃষ্ঠা জানে
বাংলার আরেক নাম বুলগাকপুর।
তোমার শুকিয়ে যাওয়া রক্ত আমাদের পরিচয় ফিরিয়ে দিলো
বিপ্লব আর বিসর্জনের পরিচয়,
যতবার ঘাতকের সক্ষমতার ফিরিস্তি শুনি
ততবার ভাবি তোমার উদ্বাহু দাঁড়িয়ে থাকা—
ভাবি, ‘আমরা এখনো কাপুরুষ হয়ে পড়িনি।’
ইনকিলাব
আমরা তো প্রায় ভুলেই গেছি বুনতে নতুন আর খোয়াব,
হঠাৎ কোথাও উঠল স্লোগান, ‘ইনকিলাব, ইনকিলাব’।
আকাশ ছিঁড়ে আলোর মিছিল মাটির বুকে নামল আর
জড়ের সভায় ছড়িয়ে দিলো যুগ বদলের ইশতেহার;
চোখ ও মুখে একটা পণই, জিততে হবে এই আজাব।
ইনকিলাব, ইনকিলাব।
দেশটা নিজেই মসজিদ এক; অবোধ যারা, পায়নি টের—
তাই তো অজুত ওজর নিয়ে ঠাঁই দিয়েছে অসাম্যের
সবাইকে আজ এক কাতারে দাঁড় করানোই তার জবাব।
ইনকিলাব, ইনকিলাব।
নতুন করে হোক শুরু সব, গড়তে চাওয়ার দায় অনেক
অত্যাচারীর মিথ্যা মিনার ভাঙাই এখন যুগ-বিবেক
জোর স্লোগানে যাক প্যাঁচিয়ে জুলুমশাহীর সব হিশাব,
ইনকিলাব, ইনকিলাব।
প্রৌঢ় কোনো ইমাম খুঁজে দাঁড়িয়ে থাকার নেই সময়
যার সিনাতে তারুণ্য ঢেউ, তার মুখই আজ জ্যোতির্ময়;
তার ইকতেদা করব বলেই করছি হাজার দিন বিলাপ
ইনকিলাব, ইনকিলাব।
সরল কবিতা। দারুণ।