বিরহকাল
দুপুরের বিষণ্ণতাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে
দুর্বৃত্ত সান্ধ্য হাওয়া।
দেখো, এখানে
মলিন বেতফলের মতো আর্দ্র আকাশ।
সুবেহ সাদিকের পর একদিন;
এমন শিশির ভেজা আকাশ দেখেছিলাম—
নিশুতি রাতের শ্রাবণ ধারার শেষে।
রোদ কমে এলেই মনে হয়—ভাবতে থাকি
ঘুঘুদের খড়কুটোর মতো অগোছালো ডানার ভেতর
জীবনের কতিপয় স্মৃতি এসে ভিড় জমা করে।
অদ্ভুত রহস্যময় সত্য হচ্ছে—
অন্ধকার রাতের শেষে একা হয়ে যায় চাঁদ!
*
ও বিকেলের ব্যাকুল আকাশ,
ও পাখিরা, ও গাছেরা—
বুকের ভেতর উথলে ওঠা ও মায়ারা!
তোমরা কেন কাঁদাও আমায়?
মরে গেলে রোদের আলো
আঁধার যখন জমতে থাকে
এই হৃদয়ের দোর-জানালায়;
কি অপরাধ, কোন কারণে—
দগ্ধ করো দহন-জ্বালায়?
নদীর বুকে উথলে ওঠা ও জলেরা
ও বাতাসের শীতল ধারা
কোন ইশারায়, কার আদেশে
কবির বুকের ডাক ঠিকানায়—
নীল ব্যথাময় থামের ভেতর
দাও গুছিয়ে কতক বিষাদ
দগ্ধ করো দহন-জ্বালায়—
কোন কারণে, কি অপরাধ?
এই যে ব্যথার খেই হারিয়ে
আমি নিথর রই দাঁড়িয়ে
ভাবতে থাকি আকাশ পাতাল
চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর ভেতর;
ছড়িয়ে থাকা গন্ধকুসুম—
গন্ধরাজের মিষ্টি সুবাস
এত ব্যথার রহস্য কি; বুক-পাঁজরায়
কি অপরাধ, কোন কারণে—
পোড়াও আমায় দহন-জ্বালায়?
সরীসৃপ
একটা তৃষিত তিতির মরু-মরীচিকার অতলে
তলিয়ে যেতে থাকে ক্রমশ।
বাবলা গাছের ডাল বেয়ে নেমে আসে তপ্ত দুপুর।
একঝাঁক দাঁড় কাক গুপ্তধন খোঁজার মতো বালি আঁচড়ায়
পিপাসায় শ্রান্ত হয়ে আসে দেহ—বালি খুঁড়ে
কবর রচনা করি।
এই বেলা বড় অলস লাগছে—চোখের ছায়ায়
শীতল পাটির মতো নেমে আসে ঘুম।
আমি ঢলে পড়ি বালির বিছানায়
মৃত্যুর লাল পেয়ালায় চুমুক দিয়ে হয়ে উঠি উন্মাতাল
দেখি, মৃত্যুর গন্ধ পেয়ে হিসহিস করে তেড়েফুঁড়ে আসছে বিষাক্ত সরীসৃপ।।
আমাদের আব্বা কিংবা একটি বুনোহাঁস
বাবাকে দেখেছি—বোতাম ছেঁড়া সাদা পাঞ্জাবি
ও দুটো সেন্ডু গেঞ্জিতে তৃপ্ত ছিলেন।
আমাদের আমলকী গাছের তলায়—
দুর্বা ঘাসের বুকে বসে তিনি জাল বুনতেন।
কখনো কয়েক মুঠ ভুট্টা ছড়িয়ে দিয়ে
বাকুম বাকুম করে ডাকতেন খোঁপের পায়রাগুলোকে।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখতাম এইসব দৃশ্যাবলী।
বাবার জাল বুনুনের সেকি সুন্দর
শৈল্পিক কারুকাজ
যেন একটি বুনোহাঁস ডুব সাঁতার খেলছে দিঘির ঘোলাটে জলে।
দিন যাপনের দহন জ্বালা
তোমায় প্রেমের গদ্য দেব,
সদ্য ফোটা ফুলের মতো
যত্নে রেখো।
আগলে রেখো বৈশাখী ঝড়
কিম্বা ভীষণ ব্যথার দিনে
তোমার চলার পথ জুড়ে প্রেম ছড়িয়ে দেব,
জড়িয়ে রেখো
বালিকা যেমন বুকের খাঁচায়
জড়িয়ে রাখে বাংলা বই।
কিম্বা দেব রোদের মতন আদর,
তোমার—চুল এলানো কানের কাছে—
তিলক আঁকা কোমল গালে।
রাত্রি এসো—আমার বুকে দাও জাগিয়ে
দিন যাপনের দহন জ্বালা।
তিক্ত লাগে চাঁদের আলো।
মাংস পোড়া গন্ধ ভাসে
রাত্রিকালীন হিম বাতাসে!
কোথাও যেন ছন্দপতন আলোর মতন কামড়ে ধরে।
এসো, আমার বন্ধ ঘরে ছন্দ নিয়ে।
খেরোখাতা
চলো, গল্প বলি দিনযাপনের
কোমল রোদের আদর মাখা ভোর সকালের
গল্প বলি। এই যে এমন জ্বরের ঘোরে,
চোখ ভিজে যায়, কাঁপতে থাকি,
বুকের ভেতর উথলে ওঠে ক্লান্ত-কাতর অস্থিরতা!
জ্বরাক্রান্ত শিথানের পাশে ছড়িয়ে থাকে
দগ্ধ রাত্রির গল্প—
রং চায়ের কাপে জমে ওঠা সমূহ স্মৃতির গন্ধ যেমন।
আম্মার নরম হাতের ছোঁয়ায়
লেগে থাকা শুশ্রুষা—চুমু খেয়ে যায় চোখের পাতায়
মাঝরাত্রিতে গল্প বলি,
খুব কাছের কারো নাম্বারে ডায়াল করে
খুলে বসি দিনযাপনের খেরোখাতা।
আমার এমন অস্থিরতায়
যখন করুন অতীত ঘেটে
ক্লান্ত দিনের প্রান্ত সীমায়
জীবন ধীরে যাচ্ছে হেঁটে—
আমি তোমায় খুঁজতে থাকি হন্যে হয়ে
তুমি এসো, যেমন আসে জ্বর
একটা কোমল দিনযাপনের গল্প অতঃপর
যেমন আসে জ্বর…
খেরোখাতা সুন্দর। বিরহকালটা একটু বেশি সুন্দর।