জায়নবাদ : ইতিহাস ও মতাদর্শ (প্রথম পর্ব)
রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বাস্তববাদী জায়নবাদ
উনিশ শতকী রাজনৈতিক জায়নবাদের ইতিহাসে মোসেস হেস (Moses Hess: 1812-75) গুরুত্বপূর্ণ এক নাম। স্পিনোজার অনুরাগী এই জার্মান চিন্তক এক সময়ে ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে কার্ল মার্কসের আন্তর্জাতিকতাবাদী সাংগঠনিক তৎপরতার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা পরিত্যাগ করে তিনি ইহুদি-দরদি আদর্শবাদে নিজের নাম লেখান। ১৮৬২ সালে তিনি রোম ও জেরুজালেম শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেন যেখানে তাঁর জায়নবাদী চিন্তার পূর্ণ বিকাশ লক্ষ করা যায়।[1]Moses Hess, Rome and Jerusalem, A Study in Jewish Nationalism, translated by Meyer Waxman, New York: Bloch Publishing House, 1918 হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টিক্টের প্রভাবে মোসেস মনে করতেন ইতিহাস অবিরাম সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে পৌঁছায়। তবে হেগেল যেখানে জার্মানদের ভেবেছিলেন ইতিহাসের কর্তা, মোসেস হেস জার্মানদের স্থলে ইহুদিদের ইতিহাসের কর্তারূপে বসিয়েছিলেন।[2]Alan R. Taylor, “Vision and Intent in Zionist Thought”, in Transformation of Palestine
কারণ, মোসেসের মতে, একমাত্র ইহুদিদের জাতীয় জীবনেই রূহানিয়াত ও বস্তুবাদের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। এ দিক থেকে ইহুদিরা গ্রিক ও খ্রিস্টানদের চেয়ে এগিয়ে। কাজেই “ইতিহাসের পরিসমাপ্তি” ঘটানোর উপযুক্ত কর্তাশক্তি ইহুদিদের মধ্যেই বিদ্যমান। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ইহুদিদের নিজেদেরকে ‘জাতি’ হিসেবে পুনঃআবিষ্কার এবং ফিলিস্তিনে জাতীয় জীবন উদ্বোধনের প্রয়োজন। মোসেস কেবলমাত্র ইহুদিদের জন্যই নয়, সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্যই ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমির জরুরত অনুভব করতেন।[3]ফরাসি দার্শনিক ইমানুয়েল লেভিনাসও মনে করতেন ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার … Continue reading ইউরোপের সর্বজনীন চিন্তার মানচিত্রে খুব একটা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম না হলেও, মোসেসের অধিবিদ্যক নৃগোষ্ঠীকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা জায়নবাদের মতাদর্শিক গঠনের ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা রেখেছিল। হার্জেলসহ বিশ শতকী জায়নবাদী সংগঠকদের চিন্তা গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।
উনিশ শতকের রুশ ইহুদিদের মধ্যে দুই ধরনের আন্দোলন ক্রমশ জায়গা করে নেয়। উভয় ঘরানার বিকাশের ক্ষেত্রেই পূর্ববর্তী হাসকালাহ ও সেক্যুলারায়ন আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। তবে উভয় আন্দোলনই স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষরও রেখেছিল। একদিকে রুশ সমাজতান্ত্রিকদের শ্রমিক শ্রেণিকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় ইহুদিদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল বান্ড (Bund)[4]John Rose, The Myths of Zionism, London: Pluto Press, 2004, p.102 আন্দোলন; অন্যদিকে ছিল জাতিবাদী জায়নবাদ। বান্ড আন্দোলন ও জায়নবাদ উনিশ শতকী ইহুদি নবজাগরণের পরস্পর প্রতিযোগী দুই আন্দোলন। বান্ডিস্টরাও ইহুদি স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ছিল, তবে তারা পোল্যান্ড, ইউক্রেন, লিথুনিয়া, রোমানিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের মধ্যেই ইহুদিদের স্বতন্ত্র আবাসভূমির পক্ষে ছিলেন।[5]প্রাগুক্ত কিন্তু সে সময়ে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমির প্রচারণা এমনই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যে, জায়নবাদীরা বান্ডিস্টদের জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যায়। রুশ বংশোদ্ভূত ইহুদি লেখক ও সংগঠক পেরেটজ স্মোলেনস্কিন (Peretz Smolenskin 1842-85) এবং মোশে লিলিয়েনব্লুমসহ (Moshe Lilienblum 1843-1910) অন্যান্য রুশ জায়নবাদীরা ফিলিস্তিনে ইহুদি উপনিবেশ নির্মাণকে ইহুদিদের আধুনিকায়নের চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে বিবেচনা করতেন।[6]Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel, trans. David Maisel, Princeton: Princeton University Press, 1998
রুশ ইহুদিরাই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জায়নদরদী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। লিও পিন্সকারের (1821-91) নেতৃত্বে ১৮৮০ সালের দিকে জায়নপ্রেমী আন্দোলন (Chovevei Zion ওরফে Lovers of Zion) শুরু হয়।[7]“The Lovers Of Zion”, Jewish History, https://www.jewishhistory.org/the-lovers-of-zion/ এই আন্দোলন বিশ্বাস করত যে, ফিলিস্তিনে কৃষি উপনিবেশ গড়ে তুলতে পারলে ইহুদিদের স্বয়ংক্রিয় মুক্তি ঘটবে।[8]তারা উনিশ শতকের শেষের দিকে ফিলিস্তিনে সেটেলমেন্ট স্থাপন করেছিল। এ … Continue reading এই আন্দোলনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন অ্যারন ডেভিড গর্ডন (1856-1922)। ইহুদি পুনর্জাগরণের জন্য তিনি ফিলিস্তিনে ইহুদি-শ্রমের ধারণাকে সামনে আনেন এবং পরবর্তীকালের লেবার জায়নবাদের প্রধান তাত্ত্বিক ব্যক্তিতে পরিণত হন।[9]Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel, pp. 47-68
রাজনৈতিক জায়নবাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইহুদি সার্বভৌমত্ব। খ্রিস্টানদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে ইহুদিদের অবশ্যই রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়োজন। এ ছাড়া ইউরোপের ইহুদিভীতি থেকে কোনো মুক্তি নেই। এজন্যই রাজনৈতিক জায়নবাদের অন্যতম কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব থিওডের হার্জেল বলেছিলেন, ইহুদিদের সমস্যা ধর্মীয় কিংবা সমাজতান্ত্রিক নয়; এটা জাতীয় মুক্তির প্রশ্ন (national problem)।[10]‘ইহুদি প্রশ্ন’ সম্পর্কে হার্জেলের অভিমত: “I do not consider the Jewish question as a social one or a religious one… It is a … Continue reading
হার্জেল প্রসঙ্গে আমরা অন্যত্র বিস্তারিত [দেখুন: দ্বিতীয় অধ্যায়, ফিলিস্তিন: একুশ শতকের উপনিবেশের ইতিহাস, সারোয়ার তুষার, প্রকাশিতব্য] আলোচনা করেছি। জায়নবাদে দীক্ষা নেয়ার আগে তিনি গণহারে ইহুদিদের ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে “ইহুদি সমস্যা” সমাধানের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ইহুদিদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির ধারণা তাঁর কাছে অধিক বাস্তবসম্মত প্রতীয়মান হয়। তবে ফিলিস্তিন হার্জেলের বিবেচনাতে থাকলেও তিনি ফিলিস্তিনের প্রশ্নে অনড় ছিলেন না। আর্জেন্টিনা, সাইপ্রাস, সিনাই, উগান্ডা ইত্যাদি অঞ্চলের কথাও তিনি ভেবেছিলেন।[11]প্রাগুক্ত হার্জেল এমনকি বিশুদ্ধ রক্তের ভিত্তিতে জাতির ধারণাও খুব একটা পছন্দ করেননি। তাঁর সমসাময়িক প্রভাবশালী ইহুদি চিন্তক ইজরায়েল জ্যাংউইলের সাথে সাক্ষাতের পরে হার্জেল বিশুদ্ধ রক্তের ধারণা পরিত্যাগ করেন। জ্যাংউইলের গাত্রবর্ণ নিয়ে হার্জেল তাঁর ডায়েরিতে অত্যন্ত বর্ণবাদী মন্তব্য করেন এবং লেখেন যে, ইহুদিদের ঐতিহাসিক সত্তা অর্থে ‘জাতি’ বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।[12]এক সন্ধ্যায় লণ্ডনের কোনো এক রেস্তোরাঁয় হার্জেল অ্যাংলো-ইহুদি লেখক ইজরায়েল … Continue reading
তার মানে দেখা যাচ্ছে যে, হার্জেলকে জায়নবাদের “জনক” অভিধায় ভূষিত করা হলেও, তাঁর অজান্তেই জায়নবাদী আন্দোলনের আবির্ভাব ঘটেছিল। এমনকি হার্জেল যখন ভিয়েনায় বসে ইহুদিদের ভবিষ্যত সম্পর্কে নানা ছক কষছিলেন, তখন ফিলিস্তিনে ১৮টি ইহুদি সেটেলমেন্ট প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল।[13]Benjamin Beit-Hallahmi, Original Sins হার্জেল এসব ইহুদি বসতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর ছিলেন। তবে জায়নবাদের ইতিহাসে হার্জেলের গুরুত্ব খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি তাঁর সমকালের বিভিন্ন ধরনের জায়নবাদকে একত্রিত করে জায়নবাদী কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮৯৭ সালে ব্যাসেলে অনুষ্ঠিত প্রথম জায়নবাদী কংগ্রেসেই “ইহুদি রাষ্ট্র” ধারণা অনুমোদন করিয়ে নেন। বিভিন্ন ধরনের জায়নবাদী সংগঠনকে একই ছাতায় এনে তিনি গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের মিশেলে এক অদ্ভুত সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলেন। হার্জেল নেতৃত্বাধীন জায়নবাদী কংগ্রেসে সকল ঘরানাই মতামত পেশ করার সুযোগ পেত, তবে নীতিনির্ধারণ প্রশ্নে হার্জেল তাঁর ঘনিষ্ঠদের সমন্বয়ে গঠিত ইনার অ্যাকশন কমিটির ওপরেই ভরসা করতেন। হার্জেল কল্পিত এরেৎজ ইজরায়েল (Land of Israel) বর্তমান ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের চাইতেও বিস্তৃত। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন ইহুদি আবাসভূমি মিসর নদী থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত বিস্তৃত।[14]ইহুদি রাষ্ট্রের সীমানা প্রসঙ্গে হার্জেল ডায়েরিতে লিখেছেন: “From the brook of Egypt to the … Continue reading
রক্ত, ভূমি ও জাতির ধারণা
হার্জেলের মৃত্যুর পর (১৯০৪) জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক স্নাতকদের হাতে জায়নবাদের নেতৃত্ব চলে যায়। তাদের ওপর আধুনিক জাতিবাদের বর্ণবাদী মতাদর্শের বিপুল প্রভাব ছিল। বিশ শতকী এই তরুণ জায়নবাদীরা বিশুদ্ধ রক্তের ধারণায় আচ্ছন্ন জার্মান জাতিবাদী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের প্রভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, জার্মানির ইহুদিরা তথাকথিত জার্মান রক্তের অন্তর্ভুক্ত নয়। কাজেই তারা জার্মান জাতির অংশও নয় এবং জার্মান মাটিতে তারা ভিনদেশী।[15]Lenni Brenner, “Blut UND Boden (Blood and Soil): The Roots of Zionist Racism”, Zionism in the Age of the Dictators, pp.24-30 তরুণ এই জায়নবাদী সংগঠকরা ইহুদিবিদ্বেষীদের সাথে অন্তত তিনটি প্রশ্নে একমত পোষণ করতেন :
- ইহুদিরা জার্মান জাতির অন্তর্ভুক্ত নয়।
- ইহুদি ও জার্মানদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হওয়া উচিত নয়। না, কোনো ধর্মীয় কারণে নয়; জাতিগত রক্তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার স্বার্থে।
- অভিন্ন রক্তের অধিকারী না হওয়ায় ইহুদিদের ‘নিজস্ব’ ভূখণ্ড তথা ফিলিস্তিনে চলে যাওয়া উচিত।[16]প্রাগুক্ত
অর্থাৎ, বর্ণবাদী অপবিজ্ঞানের ছত্রছায়ায় রক্ত ও ভূমিকেন্দ্রিক উদ্ভট এক সরল সমীকরণ দাঁড়ায় : জাতি = বিশুদ্ধ রক্তের জনগোষ্ঠী + ভূমি। একই ভূমিতে একই রক্তের অধিকারী জনগোষ্ঠী একই ‘জাতি’ গঠন করে। বিশ শতকের জার্মান জায়নবাদ ছিল জার্মান জাতিবাদী মতাদর্শেরই কার্বন কপি। জার্মানি এবং ইউরোপে ইহুদিদের হাজার বছরের ইতিহাস থাকলেও বিশ শতকের জাতিবাদী চিন্তায় তারা আর জার্মান নয়।[17]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত জার্মানিতে ইহুদিদের নিরবিচ্ছিন্ন … Continue reading সে সময় প্রবল প্রতাপশালী এই রক্তবাদী-জাতিবাদী ধারণা থেকে মুক্ত ইহুদি বুদ্ধিজীবী পাওয়া বেশ দুষ্কর ছিল। যেমন দার্শনিক মার্টিন বুবেরের কথা ধরা যাক। তিনি লিখেছেন: “..that the deepest layers of our being are determined by blood; that our innermost thinking and our will are coloured by it….was driven out of his land and dispersed throughout the lands of the occident… despite all this, he (Jew) has remained on Oriental.”[18]ইহুদিদের ইউরোপে বসবাসের ইতিহাস হাঙ্গেরির ম্যাগয়ারসদের চেয়েও পুরানা। … Continue reading
তবে বুবের এককভাবে বিশুদ্ধ রক্তের ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন তা নয়। একই সময়ের অপরাপর জায়নবাদী ও জায়নদরদী বুদ্ধিজীবী, দার্শনিকদের মধ্যেও বিশুদ্ধ রক্তের ধারণা জেঁকে বসেছিল। এমনকি খোদ আলবার্ট আইনস্টাইনও এর থেকে মুক্ত ছিলেন না।[19]আইনস্টাইন লিখেছেন: “Nations with racial difference appear to have instincts which work against their fusion. The assimilation of the Jews to the European nations… … Continue reading
কেবলমাত্র বিশুদ্ধ রক্তের ধারণা ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমির পক্ষে যৌক্তিকতা তৈরির জন্য যথেষ্ট ছিল না। যতদিন পর্যন্ত আটলান্টিকের অপরপাড় আমেরিকার জমিন ইহুদিদের জন্য উন্মুক্ত ছিল, ইউরোপের ইহুদিরা জায়নবাদীদের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন যে, ইউরোপে যদি ইহুদি সমস্যার সমাধান না-ই হবে, তাহলে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে সমস্যা কোথায়? কেন ফিলিস্তিন? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে জায়নবাদীরা উদ্ভট যুক্তি হাজির করেছিলেন। তারা জবাব দিয়েছেন, আমেরিকায় পাড়ি জমালেই ইহুদি সমস্যার সমাধান হবে না। ইহুদিরা যেখানে যায় সাথে করে ইহুদিঘৃণা নিয়ে যায়। ইহুদিঘৃণার জন্য ইহুদিরাই দায়ী।[20]এ প্রসঙ্গে হার্জেলের মন্তব্যটি উল্লেখযোগ্য: “Where [anti-semitism] does not exist, it is carried by Jews in the course of … Continue reading
তাদের অভিবাসী অস্তিত্ব তাদের প্রতি অন্যের ঘৃণার উদ্রেক করে। ইহুদিরা যতদিন পর্যন্ত ‘পরজীবী’ হয়ে থাকবে তথা ‘নিজেদের ভূখণ্ড’ ফিলিস্তিনে স্বতন্ত্র আবাসভূমি গড়ে না তুলবে, ইহুদিঘৃণা থেকে তাদের নিস্তার নাই। অর্থাৎ, এ পর্যায়ে এসে জায়নবাদ কেবলমাত্র বিশুদ্ধ রক্তকেন্দ্রিক নয়, ভূমিকেন্দ্রিক জাতিবাদে রূপ নেয়।[21]Lenni Brenner, Zionism in the Age of the Dictators ইউরোপের দেশে দেশে ইহুদিদের অবস্থান বিশ শতকে জাতিবাদী চিন্তায় আচ্ছন্ন জায়নবাদী বিভিন্ন সংগঠনের প্রধান নিশানা হয়ে দাঁড়ায়। তারা ইউরোপীয় ইহুদিদের মনস্তত্ত্বকে তুমুলভাবে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ইহুদিদের মধ্যে যারা সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিকতাবাদে উদ্বুদ্ধ ছিলেন, তাদেরকে অন্যের বিপ্লবের ফুটফরমাশ খাটনেওয়ালা হিসেবে অভিহিত করা হয়। ‘নিজেদের’ ভূখণ্ডের জন্য যারা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয় তাদেরকে দেশদ্রোহী, ডরপুক ও বিকারগ্রস্ত উপাধি দেয়া হয়।[22]প্রাগুক্ত তবে উগ্র ডানপন্থি কোনো কোনো জায়নবাদী গোটা ইহুদি সম্প্রদায়কেই ‘অস্বাস্থ্যকর ও বিকারগ্রস্ত’ তকমা দেন।[23]Ben Frommer, “The significance of a Jewish State”, Jewish Call, Sanghai, 1935, p.10 যেমন বেন ফ্রমার (Ben Frommer) নাম্নী একজন সংশোধনবাদী জায়নবাদী ১৯৩৫ সালে লেখেন : “The fact is undeniable that the Jews collectively are unhealthy and neurotic.”[24]প্রাগুক্ত কোনো কোনো ইহুদি লেখক ইহুদি সম্প্রদায়কে “নোংরা কুকুর” পর্যন্ত বলেছেন।[25]ইজরায়েলি দার্শনিক এবং বাইবেল বিশেষজ্ঞ ইয়েহেজকেল কাউফম্যান ইহুদিদের … Continue reading
জায়নবাদীদের প্রভাবশালী ধারা লেবার জায়নবাদের মধ্যেও আত্ম-ঘৃণার প্রবল উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। শ্রমিক-দরদি ভেক ধরলেও লেবার জায়নবাদ শ্রমিকদের খুব একটা আকৃষ্ট করেনি; বরং মধ্যবিত্ত ইহুদি বুদ্ধিজীবীরাই এই ঘরানায় নাম লিখিয়েছিলেন।[26]Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel কাজেই লেবার জায়নবাদ ইউরোপের দেশে দেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের আওতায় থাকা শ্রমিক এবং মধ্যবিত্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবীদের দিকে মৌখিক ও লিখিত আক্রমণের নিশানা তাক করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইহুদি শ্রমিকদের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরির উদ্দেশ্যে তারা বলতে শুরু করেন যে, ইউরোপের কারখানাগুলোতে সবচাইতে বাজে ও তাৎপর্যহীন কাজ ইহুদিদের দিয়ে করানো হয় (এ বক্তব্যের আংশিক সত্যতা রয়েছে)। কাজেই ‘স্বাস্থ্যকর ও প্রকৃত’ শ্রেণিসংগ্রাম করতে চাইলে ‘নিজস্ব’ ভূখণ্ডে ফিরতে হবে। তথাপি, ইহুদি শ্রমিকদের মধ্যে লেবার জায়নবাদ সামান্যই আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল।[27]প্রাগুক্ত কারণ শ্রমিকদের দৈনন্দিন সংগ্রামের প্রতি অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করার পাশাপাশি সুদূর অচেনা ফিলিস্তিনে এক বেহেশতি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানো জায়নবাদের সাথে শ্রমিকরা নিজেদের সম্পর্কিত করতে পারেনি। জায়নবাদীরা প্রচার করতে শুরু করেন যে, একজন সাচ্চা জায়নবাদী ইহুদি-বিদ্বেষী না হয়ে পারে না।[28]নিউইয়র্কস্থ জ্যুয়িশ ফ্রন্টিয়ার পত্রিকার সম্পাদক হাইম গ্রিনবার্গ ১৯৪২ … Continue reading যারা ফিলিস্তিনে পাড়ি দিয়ে ‘স্বদেশ নির্মাণের’ মহাযজ্ঞে নিজেকে নিয়োজিত করবে না, তারা ইজরায়েল জাতি ও গোটা মানবজাতিরই শত্রু।[29]প্রাগুক্ত
তার মানে দেখা যাচ্ছে যে, উনিশ ও বিশ শতকের জায়নবাদী জাতিবাদী মতাদর্শ রক্ত ও মাটির (blut und boden) ধারণায় আচ্ছন্ন ছিল। জার্মান বিশুদ্ধ রক্তবাদী জাতিবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এক পর্যায়ে জায়নবাদীরা নিজেদেরকে জার্মানদের তুলনায় অধিকতর বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী দাবি করে বসেন।[30]Lenni Brenner, Zionism in the Age of the Dictators জার্মানদের রক্তে স্লাভিক রক্তের মিশ্রণ আছে, অন্যদিকে, তাদের রক্ত এতটাই ‘বিশুদ্ধ’ যে এতে কোনো ‘দূষণ’ (পড়ুন মিশ্রণ) নাই। তবে বিশুদ্ধ রক্তের ধারণায় আত্মতুষ্ট জায়নবাদীরা পুরোপুরি স্বস্তিতে ছিলেন না। একদিক থেকে তারা জার্মানদের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন। জার্মানদের অন্তত নিজেদের মাটি আছে, জায়নবাদীদের তা নাই।[31]প্রাগুক্ত ‘নিজস্ব’ ভূখণ্ড ছাড়া রক্তগর্বী জায়নবাদীরা নিজেদের অন্যের ভূখণ্ডের ওপর নির্ভরশীল জোঁকের সাথে তুলনা করতেন।[32]প্রাগুক্ত
এর ফলে রক্ত ও ভূমিবাদী জায়নবাদীরা ইহুদিঘৃণার জন্য নিজেদের সম্প্রদায়কেই দুষতেন।[33]জায়নবাদীরা কীভাবে ইউরোপীয় খ্রিস্টান সমাজে বিরাজমান ইহুদি-ঘৃণাকে আত্মস্থ … Continue reading তাদের আধুনিকতাবাদী প্রকল্পে ইউরোপে থেকে ইহুদিঘৃণা মোকাবেলার কোনো কর্মসূচি ছিল না। এ সময় তারা নিজেদেরকে প্রাচীন হিব্রু জনগোষ্ঠীর সরাসরি বংশধর হিসেবে দাবি করেছিলেন।[34]কিন্তু ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও পৌরাণিক নজির জায়নবাদীদের এই দাবিকে … Continue reading তারা আরও দাবি করেন ফিলিস্তিন থেকে তারা ‘বিতাড়িত’। একমাত্র ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তনই ইহুদি প্রশ্নের মীমাংসা করতে সক্ষম।
জায়নবাদের মতাদর্শিক বিচার
জায়নবাদী মতাদর্শ স্রেফ ইহুদিদের মনস্তত্ত্বকে নিশানা করেনি, খোদ ইহুদি শরীর ছিল তাদের কেন্দ্রীয় নিশানা। তারা হীন, দুর্বল ও তথাকথিত মেয়েলি ইহুদি সত্তার অপবাদ ঘোচাতে মরিয়া ছিলেন। হার্জলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইহুদি দার্শনিক ম্যাক্স নর্ডু ছিলেন (Max Nordau) পেশিশক্তিবহুল ইহুদি সত্তার মূল প্রবক্তা।[35]Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel; George Mosse, Confronting the Nation, Jewish and Western Nationalism, Hanover, NH: Brandeis University Press, published by the University Press of New … Continue reading চওড়া বুক এবং পেশিশক্তির অধিকারী প্রাচীন ইহুদি ঐতিহ্য তিনি ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। স্বভাবতই রোমানদের বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্রোহের নায়োকচিত চরিত্র বার কোচবা (Bar Kochba) ম্যাক্স নর্ডু প্রণীত নতুন ইহুদি সত্তার মডেলে পরিণত হন।[36]Joseph Massad, “The post-colonial” colony: time, space, and bodies in Palestine/Israel”, The Persistence of the Palestinian Question, pp.13-40 ম্যাক্স নর্ডু ১৮৯৮ সালে বার্লিনে বার কোচবা জিমনেশিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন।[37]প্রাগুক্ত এর উদ্দেশ্য ছিল পেশিশক্তির ছাঁচে ইহুদি তরুণদের দৈহিক পুনর্গঠন। বার কোচবা জিমনেশিয়ামের অনুপ্রেরণায় ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ইহুদি জিমনেশিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। [38]প্রাগুক্ত
অ্যান্টি সেমেটিক ডিসকোর্সে ইহুদিরা ছিল ‘মেয়েলি’। এই ভাষ্য মোতাবেক মেয়েলিপনা দুর্বলতারই নামান্তর।[39]Sander Gilman, The Jew’s body, New York:Routledge, 1991 কাজেই শৌর্যবীর্যে বলীয়ান নতুন পুরুষালি ইহুদিরা এমন সব ‘কঠিন কাজ’ করবে যা তাদের খ্রিস্টান সমাজে করতে দেয়া হয়নি। কৃষি, যুদ্ধ ও শরীরচর্চার সম্মিলনে “কঠোর ইহুদি” শরীর বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়।[40]Paul Breines, Tough Jews, Political Fantasies and the Moral Dilemma of American Jewry, New York: Basic Books, 1991 ৭৩ সালে মাসাদায় সংঘটিত রোমানবিরোধী ইহুদি বিদ্রোহের আদলে মোসাদ এজেন্ট এবং ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর সৈন্যের শারীরিক গড়ন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। [41]পল ব্রেইনেসের বইয়ের দ্বিতীয়ভাগের উপশিরোনাম: From Masada to Mossad: a historical sketch of tough Jewish imagery”, Tough … Continue reading
অস্ত্র, শিশ্ন, ভূমি ও নারী
জায়নবাদের নতুন “ইহুদি শরীর” নির্মাণ প্রকল্পকে কেবল পুরুষতান্ত্রিক বললে কম বলা হবে। এটা ছিল শিশ্নবাদী।[42]জোসেফ মাসাদ বহুল প্রশংসিত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা ইউরোপা ইউরোপা (Europa Europa) … Continue reading শিশুকালে ইহুদি বালকদের খৎনা করানো হয়। ইউরোপের খ্রিস্টান বালকরা এ কারণে ইহুদি পুরুষদের ব্যাপারে ভীত ছিল। তারা খৎনা করানোকে খোজাকরণ ও অঙ্গহানি ভেবে আতঙ্কিত থাকত। ফ্রয়েড মনে করেন ইহুদিবিদ্বেষের অচেতন গোড়ায় রয়েছে এই খোজাকরণ ভীতি :
The castration complex is the deepest unconscious root of anti-Semitism; for even in the nursery little [gentile] boys hear that a Jew has something cut off his penis— a piece of his penis they think— and this gives them a right to despise Jews. And there is no stronger unconscious root for the sense of superiority over women… and from that standpoint what is common to Jews and women is their relation to the castration complex.[43]Sigmund Freud, “Analysis of a phobia in a Five-year-old boy”, in The Standard Edition of the Complete Psychological Works of Sigmund Freud, London: Hogarth Press, 1953-1974, Vol. X, … Continue reading
ইহুদিবিদ্বেষী ভাষ্যে খৎনাকৃত ইহুদি পুরুষ আর নারীতে পার্থক্য নাই। শিশ্নহীন নারী যেমন ‘দুর্বলতা’ ও ‘অস্বাস্থ্যের’ প্রতীক, ইহুদি পুরুষও তাই।[44]জোসেফ মাসাদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ: “Hence the Jewish penis becomes the site of reinterpretation of Jewish masculinity by … Continue reading কাজেই ইহুদি ব্যাটাগিরির পুনর্সংজ্ঞায়নে ইহুদি-শিশ্নের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। ইহুদিদের শিশ্নকেন্দ্রিক হীনমন্যতা কাটিয়ে উঠতে শিশ্নগর্বী[45]প্রখ্যাত মনোবিশ্লেষক মেলানি ক্লেইন অবলম্বনে জায়নবাদী এই প্রকল্পকে ‘penis-pride’ … Continue reading
ইহুদি ব্যাটাগিরির উদ্ভব ঘটে। নতুন এই আত্মবীক্ষায় যে ইহুদি প্রতিচ্ছবি নির্মিত হয়, তা আবশ্যিকভাবে পুরুষালি। এমনকি জায়নবাদের সাথে সম্পর্কিত হিব্রু শব্দ জায়িন (Zayin)-এর অর্থ অস্ত্র ও শিশ্ন।[46]Simona Sharoni, “To be a man in the Jewish State, the sociopolitical context of violence and oppression,” Challenge, 2:5 (September/October 1991), 26-28 ইহুদি সামরিকায়নে অস্ত্র ও শিশ্নের যুগপৎ পুনর্ব্যাখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অস্ত্র যেন এক ধরনের শিশ্ন; অন্যদিকে, শিশ্ন যেন এক ‘অস্ত্র’। জায়নবাদী কল্পনায় অস্ত্ররূপী শিশ্নের ভূমিকা কেবল মুক্তিদায়ীই নয়, জুলুমকারীও বটে। উপনিবেশিত ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে জায়নবাদী বাহিনী শিশ্নকে অস্ত্ররূপে কল্পনা করেছে।[47]David Hirst, The gun and the olive branch, pp. 124-129
ইউরোপীয় সমাজে কৃষিকাজ থেকে বঞ্চিত ইহুদিরা ফিলিস্তিনে নতুন উদ্যম এবং প্রবল উৎসাহে কৃষিকাজে ঝাপিয়ে পড়ে। ‘কুমারী’ ও অনুর্বর মাটিকে তারা উর্বর এবং ফলে-ফসলে ভরিয়ে দেবেন।[48]Ella Shohat, “Imaging terra incognita: the disciplinary gaze of Empire”, Public Culture (1991) 3 (2): 41–70. … Continue reading ফিলিস্তিন অনুর্বর কিংবা অনাবাদী কোনোটাই ছিল না। কিন্তু জায়নবাদী মিথে ফিলিস্তিন ছিল ভূমিহীন ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য জনশূন্য বিরান ভূমি। তারা এই ‘পাথুরে’ ভূমিকে পুষ্পময় করে তোলার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু কৃষিকাজে অনভিজ্ঞতার দরুন প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের সহায়তা নেয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। পরবর্তীতে অবশ্য বিপুল সংখ্যক অভিবাসিত আরব-ইহুদিদের দ্বারা স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের প্রতিস্থাপন করা হয়।
অস্ত্র ও শিশ্নের পারস্পরিকতার মতোই জায়নবাদী কল্পনায় ভূমি ও নারী ছিল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ভূমি যেন ‘নারী’, জায়নবাদী বীজের পুরুষালি ছোঁয়ায় যা উর্বর হয়ে উঠবে।[49]Joseph Massad, The Persistence of the Palestinian Question অন্যদিকে, ইহুদি নারীরা যেন ভূমি। তারা বীর বার কোচবার উত্তরাধিকারীদের গর্ভ ধারণপূর্বক ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনী ভবিষ্যৎ-যোদ্ধা প্রসব করবেন।[50]Nira Yuval-Davis, “National reproduction and ‘the demographic race’ in Israel”, in Woman–Nation–State, edited by Nira Yuval-Davis & Floya Anthias, London: Macmillan, 1989, pp.92-109 অর্থাৎ, ইহুদি-পুরুষ শরীর পুনর্গঠনের সমান্তরালে যুদ্ধ, কৃষি, শিশ্ন, অস্ত্র, নারী ও ভূমি ডিসকোর্সের যৌনবাদী নির্মাণের মধ্য দিয়ে জায়নবাদ এক নজিরবিহীন মারাত্মক সামরিকায়িত, পুরুষালি ও যুদ্ধংদেহী ঔপনিবেশিক মতবাদে পরিণত হয়।[51]Joseph Massad, The Persistence of the Palestinian Question ইজরায়েল রাষ্ট্র জায়নবাদী মতবাদেরই ‘যৌক্তিক’ পরিণতি।
প্রচলিত ধারণা হচ্ছে ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইউরোপের ‘ইহুদি প্রশ্নের’ মীমাংসা ঘটেছে। জায়নপন্থিরা এতে উৎফুল্ল, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বনকারীরা এতে সঙ্গত কারণেই ক্ষুব্ধ। আদতে জায়নবাদ ইহুদি প্রশ্নের মীমাংসা করেনি; বরং, আরও জটিল করে তুলেছে। জায়নবাদী যুক্তি মোতাবেক ইজরায়েল রাষ্ট্রের সমালোচনা মাত্রই ইহুদি-বিদ্বেষ।[52]অতিসম্প্রতি মার্কিন হাউজ অব রেপ্রিজেন্টেটিভে ৩১১ বনাম ১৪ ভোটে … Continue reading
জায়নবাদের ভাষ্য ও বয়ান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় জায়নবাদ নিজেই নতুন ধরনের ইহুদি-বিদ্বেষ।[53]Nathan Weinstock, Zionism: False Messiah ‘ইহুদি প্রশ্ন’ জাগরুক রাখাই তার উদ্দেশ্য। ইহুদি-বিদ্বেষী রাষ্ট্রগুলোর সাথেই জায়নবাদের ঐতিহাসিক আঁতাতের সম্বন্ধ।[54]হার্জেল তার জীবদ্দশাতে বলে গিয়েছিলেন যে, ইহুদি-বিদ্বেষী ব্যক্তি ও … Continue reading জায়নবাদ, ইউরোপীয় ইহুদি-বিদ্বেষীদের মতোই মনে করে, ইউরোপের ইহুদিরা ইউরোপীয় নয়। প্রাচ্যে তথা ফিলিস্তিনে স্বতন্ত্র ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ নির্মাণ করা ব্যতীত ইহুদি প্রশ্নের কোনো মীমাংসা নাই। ‘ইহুদি প্রশ্ন’ জাগরূক রাখার পাশাপাশি জায়নবাদ ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন’ জন্ম দিয়েছে।[55]Joseph Massad, “The Persistence of the Palestinian Question”, in The Persistence of the Palestinian Question, pp. 166-178 ইহুদিবিদ্বেষীদের হাতে ইহুদিদের করুণ পরিণতির সাথে জায়নবাদীদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় জুলুমের চমকপ্রদ মিল লক্ষ করা যায়।[56]David Hirst, The gun and the olive branch, pp. 312-314 ইহুদি প্রশ্ন মীমাংসার নামে জায়নবাদ একদিকে তৈরি করেছে নব্য ইহুদিবিদ্বেষ; অন্যদিকে, জন্ম দিয়েছে ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন’।[57]নোংরা, অসুস্থ, দুর্বল, মধ্যযুগীয় ইত্যাদি নানা তকমা সেঁটে দিয়ে জার্মান … Continue reading
শেষ কথা
ভুবনবিখ্যাত তাত্ত্বিক একবাল আহমেদ নিজেকে অনুভূতির দিক থেকে ‘আরব’ ঘোষণা করেছিলেন। অর্থাৎ, আরবের মুক্তি ও স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে তিনি নিজের সংগ্রাম ভেবেছিলেন। কথাটার আরেক তাৎপর্য এই, সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক বিশ্বব্যবস্থার অধীন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মুক্তিকামী জনগণের সাথে আত্মিক ও কৌশলগত মৈত্রী গড়ে তুলতে না পারলে সংকীর্ণ জাতিবাদের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। স্থানিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হয়ে পড়ে জাতিবাদী ও রাষ্ট্রবাদী। এর ফলে যদি নিজেদের সংগ্রামে সফল হওয়া যেত, তাহলে হয়তো আপত্তির কিছু ছিল না। কিন্তু সমগ্র বিশ্বের গণতান্ত্রিক ও মুক্তিকামী সংগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখে আসলে স্থানীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রামেও সফল হওয়া যায় না।
আমাদের তরফে ফিলিস্তিনের ইতিহাস চর্চার অর্থ হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ, জাতিবাদ, আধিপত্যবাদসহ সকল ধরনের অসম ক্ষমতা-সম্পর্ক চিহ্নিতকরণ এবং অধিকতর ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক বিউপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা। সারা দুনিয়াতেই বিউপনিবেশিক তত্ত্ব ও দর্শন প্রতাপশালী হয়ে উঠছে এবং গত শতাব্দীর ডিকলোনাইজেশন প্রকল্পকে তা বহুদূর পর্যন্ত ছাপিয়ে গেছে। অবশ্য বিউপনিবেশায়ন সম্পর্কে বেশ কিছু অতি-তরল পাঠ ও চর্চা লক্ষ করা যায়। উগ্র আবেগী পশ্চিমবিরোধিতা, সংকীর্ণ স্বদেশিয়ানা এবং গোষ্ঠী-জাতীয়তাবাদকে অনেক সময় বিউপনিবেশায়নের মোড়কে হাজির করার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। তবে নিশ্চিতভাবেই বিউপনিবেশায়ন সংকীর্ণ জাতিবাদ ও আপেক্ষিকতার চেয়ে বেশি কিছু। বিশ শতকের ডিকলোনাইনেশন প্রকল্প জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলাকেই তার অভীষ্ট লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ক্ষমতা-সম্পর্কের ঔপনিবেশিকতাকে বহাল রেখে স্রেফ জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলা যে উপনিবেশবাদের আত্মস্থকরণ মাত্র—যুগ সীমাবদ্ধতার কারণে তা অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি। অধুনা বিউপনিবেশায়ন তত্ত্ব ও দর্শন জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলাকে তার লক্ষ্য হিসেবে না নিলেও, আধুনিক রাষ্ট্রের বিচারবিবেচনাশূন্য বিরোধিতাও করে না; বরং, আত্মশক্তির ওপর ভর করে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী রূপে বিশ্বের মানচিত্রে মর্যাদার সাথে টিকে থাকার নিমিত্তে প্রভাবশালী ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণার নতুন ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করাই হালের বিউপনিবেশিক তত্ত্বের কাজ। অস্তিত্ব ও যাপনের ঔপনিবেশিকতাকে চিহ্নিত করে জ্ঞানতাত্ত্বিক পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ দেয় বিউপনিবেশায়ন। ফলে কেবলমাত্র মানুষকে কেন্দ্রে রেখে অধুনা বিউপনিবেশায়ন কোনো ‘সামাজিক সম্পর্ক’ ভাবে না। মানুষকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র কর্তাসত্তা ভাবার আবশ্যিক পরিণতি হিসেবে পৃথিবী নামক গ্রহের নাভিশ্বাস উঠেছে। সুতরাং, গ্রহীয় (Planetary) পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিউপনিবেশায়নের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক প্রস্তাব গড়ে তোলার আশু কর্তব্যও থেকে যায়।
ফিলিস্তিন একুশ শতকের উপনিবেশ। প্রাথমিকভাবে এ চিহ্নায়নের যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন দানা বাঁধতে পারে। প্রচলিত কাণ্ডজ্ঞান মোতাবেক আমরা এক সমরূপ উত্তর-ঔপনিবেশিক দুনিয়ায় বসবাস করছি; যেখানে সাক্ষাৎ উপনিবেশ উঠে গেছে। তাহলে ফিলিস্তিন কি আজও উপনিবেশিত থাকতে পারে? আমাদের উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ, পারে এবং তাই আছে। গত শতাব্দীর চল্লিশ, পঞ্চাশের দশকে যখন এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে, ফিলিস্তিন তখন উপনিবেশে পরিণত হচ্ছিল। ফিলিস্তিন, সেই অর্থে, উত্তর-ঔপনিবেশিক (post-colonial) যুগের উপনিবেশ। এই পরিস্থিতিকে একবাল আহমেদ ‘প্যারাডক্স’ হিসেবে মানতে নারাজ; তিনি একেই “উত্তর-ঔপনিবেশিক দশা” অভিহিত করেছেন। ফিলিস্তিনের সিংহভাগ অঞ্চল জায়নবাদীদের ঔপনিবেশিক জিম্মায় রেখেই, তুরস্ক, মিসর, ইরান, ইরাক, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ ততদিনে “স্বাধীন” হয়েছে। আরবের অভিজাত নেতৃত্ব অনাগত ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ অনুধাবনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিলেন। ইনসাফ কায়েমে প্রত্যেক আরব দেশই পশ্চিমের মুখাপেক্ষী ছিল। বলা বাহুল্য, কেবল ফিলিস্তিনের জন্য নয়, সমগ্র আরব অঞ্চলের জন্যই এই পিছুটান, অপরিণামদর্শিতা এবং আঞ্চলিক স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে সংকীর্ণ জাতিবাদী স্বার্থসিদ্ধির প্রচেষ্টার পরিণতি ভালো হয়নি।
স্থান-কাল সম্পর্কে সচেতনতা উত্তরৌপনিবেশিক (postcolonial) চিন্তার প্রধান এক দিক। একই ভূখণ্ডে (ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন) তিন ধরনের জনগোষ্ঠীর জন্য তিন ধরনের বাস্তবতা তৈরি হওয়া বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার জন্য কী তাৎপর্য বহন করে— তার সঠিক ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ হাজির করা হালের উত্তরৌপনিবেশিক চিন্তকদের অন্যতম প্রধান এক কর্তব্য। একদিকে আছে আশকেনাজি তথা ইউরোপীয় ইহুদি সম্প্রদায়। তারা উপনিবেশিত ভূখণ্ডে “উত্তর-ঔপনিবেশিক” মর্যাদায় অভিষিক্ত জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে আছে ফিলিস্তিনি আরব সম্প্রদায়। তারা “উত্তর-ঔপনিবেশিক” ভূখণ্ডের উপনিবেশিত জনগোষ্ঠী। আরও রয়েছে আরব-ইহুদি সম্প্রদায়। তারা ফিলিস্তিনিদের সাপেক্ষে ঔপনিবেশিক, আবার আশকেনাজি ইহুদিদের সাপেক্ষে উপনিবেশিত। অর্থাৎ পরস্পরবিরোধী দশায় উপনীত। একই স্থানে অবস্থান করলেও উল্লিখিত তিন জনগোষ্ঠীর কালিক বাস্তবতা ভিন্ন ভিন্ন। “উত্তর-ঔপনিবেশিক” কালে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনে কি একইসাথে ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক বাস্তবতা বিরাজ করছে? যদি করেই থাকে, এর অর্থ কী দাঁড়ায়? পারস্পরিক স্বার্থ ও ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত আঞ্চলিক নেটওয়ার্কসমূহের শিথিল ফেডারেশন অর্থে অনাগত “গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার” সাপেক্ষে এটাই কেন্দ্রীয় প্রশ্ন।
ইজরায়েলের গাজা আক্রমণ ও নির্মূল অভিযান স্রেফ গাজায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইরানকে এই যুদ্ধে জড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। সেরকম কিছু হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই-যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যেই দুটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে। একদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের ওপর বিমান হামলা শুরু করেছে। কারণ গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দাবিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি লোহিত সাগরে ইজরায়েলগামী জাহাজকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হুতিদের বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা গণহত্যার অভিযোগে মামলা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিশালী পরাশক্তিসমূহের রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিপত্তিকে ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে কী রায় আসবে তা বলা কঠিন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো দাখিল করেছে, ঐতিহাসিক নথি হিসেবে তার বিপুল গুরুত্ব রয়েছে।
যে ইতিহাস “ফিলিস্তিন প্রশ্ন” জন্ম দিয়েছে, সেই ইতিহাস থেকে মুক্তি পেতে হলে ইতিহাস-চর্চার কোনো বিকল্প নাই। বর্তমান প্রবন্ধটি সেই উদ্দেশ্যের প্রতি বিনীত নিবেদন।
তথ্যসূত্র:
↑1 | Moses Hess, Rome and Jerusalem, A Study in Jewish Nationalism, translated by Meyer Waxman, New York: Bloch Publishing House, 1918 |
---|---|
↑2 | Alan R. Taylor, “Vision and Intent in Zionist Thought”, in Transformation of Palestine |
↑3 | ফরাসি দার্শনিক ইমানুয়েল লেভিনাসও মনে করতেন ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জায়নবাদ ইতিহাসে পদার্পণ করেছে এবং একটা ‘ন্যায্য দুনিয়া’ কায়েমের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে: “The state of Israel is the first opportunity to move into history by bringing about a just world.” দেখুন: Emmanuel Levinas, “Jewish Thought Today”, in Difficult Freedom: Essays on Judaism, trans. Sean Hand, Baltimore: Johns Hopkins University Press, 1990, p. 164 |
↑4 | John Rose, The Myths of Zionism, London: Pluto Press, 2004, p.102 |
↑5, ↑16, ↑22, ↑24, ↑27, ↑29, ↑31, ↑32, ↑37, ↑38 | প্রাগুক্ত |
↑6 | Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel, trans. David Maisel, Princeton: Princeton University Press, 1998 |
↑7 | “The Lovers Of Zion”, Jewish History, https://www.jewishhistory.org/the-lovers-of-zion/ |
↑8 | তারা উনিশ শতকের শেষের দিকে ফিলিস্তিনে সেটেলমেন্ট স্থাপন করেছিল। এ প্রসঙ্গে বিস্তারির আলোচনার জন্য দেখুন, ফিলিস্তিন: একুশ শতকের উপনিবেশের ইতিহাস (প্রথম অধ্যায়), সারোয়ার তুষার (প্রকাশিতব্য)। |
↑9 | Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel, pp. 47-68 |
↑10 | ‘ইহুদি প্রশ্ন’ সম্পর্কে হার্জেলের অভিমত: “I do not consider the Jewish question as a social one or a religious one… It is a national question, and to solve it we have to make it into a global question.” উদ্ধৃত, Benjamin Beit-Hallahmi, Original Sins, p. 37 |
↑11 | প্রাগুক্ত |
↑12 | এক সন্ধ্যায় লণ্ডনের কোনো এক রেস্তোরাঁয় হার্জেল অ্যাংলো-ইহুদি লেখক ইজরায়েল জ্যাংউইলের সাথে ডিনার করছিলেন। সম্ভবত সেটাই ছিল তাদের প্রথম সাক্ষাৎ। হার্জেল তখন হন্যে হয়ে দল ভারী করার চেষ্টায় লিপ্ত। জ্যাংউইল পরে জায়নবাদী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। জ্যাংউইল সম্ভবত “অভিন্ন ইহুদি বংশ” ধারণায় বিশ্বাস করতেন। সেদিনের সাক্ষাৎ শেষে হার্জেল ডায়েরিতে লিখেছেন: “He obsesses about the racial aspect, which I cannot accept. It’s enough for me to look at myself and at him. I say only this: We are a historical entity, a nation made up of different anthropological elements. That will suffice for the Jewish state. No nation has racial uniformity.” দেখুন: Shlomo Sand, The Invention of the Jewish People, p. 258 |
↑13 | Benjamin Beit-Hallahmi, Original Sins |
↑14 | ইহুদি রাষ্ট্রের সীমানা প্রসঙ্গে হার্জেল ডায়েরিতে লিখেছেন: “From the brook of Egypt to the Euphrates.” ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের স্পেশাল তদন্ত কমিটির কাছে ইহুদি এজেন্সির সদস্য রাব্বি Fischmann ইহুদি রাষ্ট্রের সীমানা প্রসঙ্গে একই কথা বলেন: “The promised land extends from the river of Egypt to the Euphrates. It includes parts of Syria and Lebanon.” দেখুন: Ralph Schoenman, The Hidden History of Zionism |
↑15 | Lenni Brenner, “Blut UND Boden (Blood and Soil): The Roots of Zionist Racism”, Zionism in the Age of the Dictators, pp.24-30 |
↑17 | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত জার্মানিতে ইহুদিদের নিরবিচ্ছিন্ন বসবাসের ইতিহাস অন্তত ১৭০০ বছরের। দেখুন: Benjamin Beit-Hallahmi, Original Sins, p.14 |
↑18 | ইহুদিদের ইউরোপে বসবাসের ইতিহাস হাঙ্গেরির ম্যাগয়ারসদের চেয়েও পুরানা। কিন্তু ম্যাগয়ারসদের কেউ কখনো ‘এশীয়’ না বললেও বুবের মনে করেন রক্তের ধারায় গড়ে ওঠা সম্প্রদায়— তাঁর ভাষায় ‘community of blood’ — ইহুদিরা কখনোই ইউরোপীয় হতে পারবে না। দেখুন: Martin Buber, On Judaism, trans. Eva Jospe. Knopf Doubleday Publishing Group, 1996 https://theanarchistlibrary.org/library/martin-buber-on-judaism |
↑19 | আইনস্টাইন লিখেছেন: “Nations with racial difference appear to have instincts which work against their fusion. The assimilation of the Jews to the European nations… could not eradicate the feeling of lack of kinship between them and those among whom they lived. In the last resort, the instinctive feeling of lack of kinship is referable to the law of conservation of energy. For this reason it cannot be eradicated by any amount of well meant pressure.” দেখুন: Solomon Goldman, Crisis and Decision, New York, London: Harper & Brothers, 1938, p. 116 |
↑20 | এ প্রসঙ্গে হার্জেলের মন্তব্যটি উল্লেখযোগ্য: “Where [anti-semitism] does not exist, it is carried by Jews in the course of their migrations… The unfortunate Jews are now carrying the seeds of Anti-Semitism into England, they have already introduced it into America.” দেখুন: Theodor Herzl, 1988 [1896]. The Jewish State, Dover Publications: New York |
↑21, ↑30 | Lenni Brenner, Zionism in the Age of the Dictators |
↑23 | Ben Frommer, “The significance of a Jewish State”, Jewish Call, Sanghai, 1935, p.10 |
↑25 | ইজরায়েলি দার্শনিক এবং বাইবেল বিশেষজ্ঞ ইয়েহেজকেল কাউফম্যান ইহুদিদের সম্পর্কে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ জায়নবাদী নেতার উদ্ধৃতি পেশ করেছেন। ইহুদিরা অন্য কিছু হওয়ার যোগ্য কি অযোগ্য পরের বিষয়, মিচা জোসেফ বার্ডিকজেউস্কির বিবেচনায় তারা মানুষই নয় (not a nation, not a people, not human) । ইয়োসেফ হাইম ব্রেন্নারের কাছে ইহুদিরা যাযবর ও নোংরা কুকুর (Gypsies, filthy dogs, inhuman, wounded, dogs) । লেবার জায়নবাদের প্রধান তাত্ত্বিক ব্যক্তিত্ব এ.ডি. গর্ডনের কাছে ইহুদিরা রীতিমতো পরজীবী ও ফেলনা (parasites, people fundamentally useless)। দেখুন: Yehezkel Kaufmann, “Hurban Hanefesh: A Discussion of Zionism and Anti-Semitism”, Issues, (Winter 1967), p.106 |
↑26 | Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel |
↑28 | নিউইয়র্কস্থ জ্যুয়িশ ফ্রন্টিয়ার পত্রিকার সম্পাদক হাইম গ্রিনবার্গ ১৯৪২ সালে আত্মসমালোচনা ও আক্ষেপের সুরে লিখেছেন: “[there had been] a time when it used to be fashionable for Zionist speakers (including the writer) to declare from the platform that ‘to be a good Zionist one must be somewhat of an anti-Semite’. To this day Labour Zionist Circles are under the influence of the idea that the Return to Zion involved a process of purification from our economic uncleanliness. Whosoever doesn’t engage in so-called ‘productive’ manual labour is believed to be sinner against Israel and against mankind.” দেখুন: Chaim Greenberg, “The Myth of Jewish Parasitism”, Jewish Frontiers, (March 1942), p.20 |
↑33 | জায়নবাদীরা কীভাবে ইউরোপীয় খ্রিস্টান সমাজে বিরাজমান ইহুদি-ঘৃণাকে আত্মস্থ করেছে তার নিখুঁত বর্ণনার জন্য দেখুন: Nathan Weinstock, Zionism: False Messiah, trans. and ed. by Alan Adler, London: Ink Links, 1979 এবং Michael Selzer, Aryanization of the Jewish State, New York: Blackstar, 1967 |
↑34 | কিন্তু ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও পৌরাণিক নজির জায়নবাদীদের এই দাবিকে সমর্থন করে না। দেখুন: Keith W. Whitelam, The Invention Of Ancient Israel: The Silencing of Palestinian History; Nur Masalha, The Bible and Zionism: Invented Traditions, Archaeology And Post-Colonialism in Palestine-Israel; Shlomo Sand, The Invention of the Jewish People; Shlomo Sand, The Invention of the Land of Israel: From Holy Land to a Homeland |
↑35 |
Zeev Sternhell, The Founding Myths of Israel; George Mosse, Confronting the Nation, Jewish and Western Nationalism, Hanover, NH: Brandeis University Press, published by the University Press of New England, 1993, pp.161-175 |
↑36 | Joseph Massad, “The post-colonial” colony: time, space, and bodies in Palestine/Israel”, The Persistence of the Palestinian Question, pp.13-40 |
↑39 | Sander Gilman, The Jew’s body, New York:Routledge, 1991 |
↑40 | Paul Breines, Tough Jews, Political Fantasies and the Moral Dilemma of American Jewry, New York: Basic Books, 1991 |
↑41 | পল ব্রেইনেসের বইয়ের দ্বিতীয়ভাগের উপশিরোনাম: From Masada to Mossad: a historical sketch of tough Jewish imagery”, Tough Jews, Political Fantasies and the Moral Dilemma of American Jewry, pp. 75-167 |
↑42 | জোসেফ মাসাদ বহুল প্রশংসিত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা ইউরোপা ইউরোপা (Europa Europa) বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন নাজি নিয়ন্ত্রিত জার্মানির বয়ঃসন্ধিকালীন এক ইহুদি কিশোরের শিশ্নকেন্দ্রিক হীনমন্যতাকে ঘিরে পুরো সিনেমার কাহিনি গড়ে উঠেছে। সিনেমাটির প্রধান চরিত্র ইহুদি কিশোর সলোমন পেরেল নাজিদের হাতে ধরা পড়বার ভয়ে তটস্থ থাকে। নাজি বাহিনী কর্তৃক ইহুদি সনাক্তকরণের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় শিশ্ন। যেন শিশ্নই ইহুদি পরিচয়ের একমাত্র ধারক ও বাহক! অবশ্য এই পদ্ধতিতে ইহুদি নারীদের কীভাবে সনাক্ত করা যাবে তার কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। সিনেমাটিতে নাজিদের হাতে ধরা পড়া একজন আর্মেনিয়ান খ্রিস্টান নিজের অ-ইহুদিত্বের প্রমাণ স্বরূপ খৎনাহীন শিশ্ন দেখিয়ে ছাড়া পান। একজন আলবেনিয়ান কিংবা বসনিয়ান মুসলমান যদি ইহুদি সন্দেহে নাজিদের হাতে ধরা পড়ত, এই পদ্ধতি অনুসারে তাদের অ-ইহুদিত্ব প্রমাণের কোনো সুযোগ আর থাকে না।
খৎনাকৃত শিশ্নের কারণে ইউরোপীয় খ্রিস্টান সমাজের ঘৃণা ও মশকরার শিকার ইহুদি পুরুষদের শিশ্নকেন্দ্রিক হীনমন্যতা দূর করা ছিল জায়নবাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই প্রকল্পে “ইহুদি শরীরের পরিচর্যা ও পুনর্গঠন”-এর অর্থ দাঁড়ায় ইহুদি পুরুষের শিশ্ন হীনমন্যতা কাটিয়ে তোলা। দেখুন: Joseph Massad, The Persistence of the Palestinian Question, pp.13-40 |
↑43 |
Sigmund Freud, “Analysis of a phobia in a Five-year-old boy”, in The Standard Edition of the Complete Psychological Works of Sigmund Freud, London: Hogarth Press, 1953-1974, Vol. X, 36f https://ia902907.us.archive.org/17/items/SigmundFreud/Sigmund%20Freud%20%5B1909%5D%20Analysis%20Of%20A%20Phobia%20In%20A%20Five-year-old%20Boy%20%28The%20Little%20Hans%20Case%20History%29%28James%20Strachey%20Translation%201955%29.pdf |
↑44 | জোসেফ মাসাদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ: “Hence the Jewish penis becomes the site of reinterpretation of Jewish masculinity by Zionism. The only way Jewish men can rejoin the world of (gentile) men after Nazi annihilation, the film suggests, is through a spectacular exposure of their circumcised penises as a visual assertion of phallicity against a discursive and materially castrating order.” The Persistence of the Palestinian Question, p.32 |
↑45 |
প্রখ্যাত মনোবিশ্লেষক মেলানি ক্লেইন অবলম্বনে জায়নবাদী এই প্রকল্পকে ‘penis-pride’ তথা শিশ্নগর্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জোসেফ মাসাদ। http://www.psychoanalysis-and-therapy.com/human_nature/nash/Nashchap3.htm |
↑46 | Simona Sharoni, “To be a man in the Jewish State, the sociopolitical context of violence and oppression,” Challenge, 2:5 (September/October 1991), 26-28 |
↑47 | David Hirst, The gun and the olive branch, pp. 124-129 |
↑48 | Ella Shohat, “Imaging terra incognita: the disciplinary gaze of Empire”, Public Culture (1991) 3 (2): 41–70. https://read.dukeupress.edu/public-culture/article-abstract/3/2/41/32048/Imaging-Terra-Incognita-The-Disciplinary-Gaze-of |
↑49, ↑51 | Joseph Massad, The Persistence of the Palestinian Question |
↑50 | Nira Yuval-Davis, “National reproduction and ‘the demographic race’ in Israel”, in Woman–Nation–State, edited by Nira Yuval-Davis & Floya Anthias, London: Macmillan, 1989, pp.92-109 |
↑52 | অতিসম্প্রতি মার্কিন হাউজ অব রেপ্রিজেন্টেটিভে ৩১১ বনাম ১৪ ভোটে জায়নবাদবিরোধিতাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ সাব্যস্ত করার প্রস্তাব পাশ হয়েছে। https://www.aljazeera.com/amp/news/2023/12/6/anti-zionism-is-antisemitism-us-house-asserts-in-dangerous-resolution ; Robert S. Wistrich, “Zionism and Anti-Semitism in the 21st Century”, Jewish Virtual Library, August 2012
https://www.jewishvirtuallibrary.org/israel-studies-an-anthology-anti-zionism-and-anti-semitism |
↑53 | Nathan Weinstock, Zionism: False Messiah |
↑54 | হার্জেল তার জীবদ্দশাতে বলে গিয়েছিলেন যে, ইহুদি-বিদ্বেষী ব্যক্তি ও রাষ্ট্রগুলোই জায়নবাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হবে: “The anti-Semites will become our most dependable friends, the anti-Semitic countries our allies.” Theodor Herzl, The Complete Diaries of Theodor Herzl, Vol. 1, edited by Raphael Patai, translated by Harry Zohn, New York: Herzl Press and Thomas Yoseloff, 1960, p.94;
তিনি আরও বলেছিলেন, “the Governments of all countries scourged by Anti-Semitism will be keenly interested in assisting us to obtain [the] sovereignty we want.” দেখুন: Herzl, Jewish State, p. 93 হার্জেলের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের (বিশেষত পাশ্চাত্যের) প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো জায়নবাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি হলোকাস্টের মূল কারিগর, ইহুদিদের ভাইরাসের সাথে তুলনাকারী হিটলার পর্যন্ত জায়নবাদীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন: “And whatever doubts I may still have nourished were finally dispelled by the attitude of a portion of the Jews themselves. Among them there was a great movement, quite extensive in Vienna, which came out sharply in confirmation of the national character of the Jews: this was the Zionists.” দেখুন: Adlof Hitler, Mein Kampf, p. 56 https://www.sjsu.edu/people/mary.pickering/courses/His146/s1/MeinKampfpartone0001.pdf নাজিবাদ ও জায়নবাদের মধ্যে গভীর আঁতাতের চুলচেরা তথ্য-প্রমাণ হাজির করেছেন লেন্নি ব্রেন্নার। দেখুন: Lenni Brenner, Zionism in the Age of the Dictators; নানা ছলচাতুরী করে ইরাকি ও মিসরীয় ইহুদিদের ইজরায়েলে আনার জন্য ইরাকি ও মিসরীয় সরকারের সাথেও জায়নবাদীদের গোপন আঁতাত হয়েছিল। দেখুন: David Hirst, The gun and the olive branch, pp. 281-297; আজের্ন্টাইন ইহুদিদের বিরুদ্ধে ইহুদি-বিদ্বেষী নীতি গ্রহণে জায়নবাদীরা আর্জেন্টাইন জেনারেলদের ফুসলিয়েছিল। দেখুন: Noam Chomsky, The Fateful Triangle: The United States, Israel, and the Palestinians, Boston, MA: South End Press, 1983, p.110 |
↑55 | Joseph Massad, “The Persistence of the Palestinian Question”, in The Persistence of the Palestinian Question, pp. 166-178 |
↑56 | David Hirst, The gun and the olive branch, pp. 312-314 |
↑57 | নোংরা, অসুস্থ, দুর্বল, মধ্যযুগীয় ইত্যাদি নানা তকমা সেঁটে দিয়ে জার্মান ইহুদি-বিদ্বেষীরা প্রতিবেশী ইহুদিদের দৈনন্দিন জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। অনেকক্ষেত্রে জার্মান ইহুদিরা পূর্ব ইউরোপের ইহুদিদের অনুরূপ বর্ণবাদী তকমায় জর্জরিত করেছে এমন নজির পাওয়া যায়। আবার ইজরায়েল পর্বে পূর্ব ইউরোপের ইহুদিরা আরব-ইহুদিদের বর্ণবাদী ভাষায় আক্রমণ করেছে। ইতিহাসের করুণ পরিহাস হচ্ছে এই, ইজরায়েলি সেটলার ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের জ্ঞানতাত্ত্বিক ও মতাদর্শিক ভিতটাই এমন যে, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য নির্বিশেষে ইজরায়েলি ইহুদি জনগোষ্ঠী একই ধরনের (কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও নির্মম) বর্ণবাদী ভাষা আত্মস্থ করে স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের হামেশাই ঘায়েল করেছে। দেখুন: Michael Selzer, Aryanization of the Jewish State; Ilan Pappe, “The Alien who became a Terrorist: The Palestinian in Zionist Thought”, The Idea of Israel: A History of Power and Knowledge, pp.30-50; Nurit Peled-Elhanan, Palestine in Israeli School Books: Ideology and Propaganda in Education, I.B. Tauris, 2012 |