সাদা পাখি
কচুরিপানার কাছে থাকে যেই সাদা পাখি সেই মোর
পুরা হাঁস সকাল বেলার, দাদির মুরগির মতো নয় যারা
তারা তবু আপাতত হাঁস, আমার ডাকের কাছে নত হয়
আমার হাঁসের চলাচল, আমি ডাকলে আসে কাছে,
যেন পাপড়ির মতো
ঝরিয়া উদিলা হয় সে যে, তার কেন্দ্রগুলি আমার নিকটে রহে!
মালিকের একটা আয়না ওর মনের কিনারে আমিই বসাই
যেন কবে কবে তেরছা ঢঙ্গে, মোর কাছে মাথা হায় যেন তার
নোয়ানোর লাগি হয়েছে তৈয়ার!
এইসব নৈতিক হাঁসের কাছে আমি
ঘুরি তারে তবু কেন্দ্রে রাখি নাই,
ধানের কলের কাছে যাই, কুড়া আনি
প্রাগৈতিহাসিক হাঁস আমি ফেইস করি নাই, তাই
এট্টু বেশি যত্ন-আত্তি করি ওরে!
ঐ পাহাড়ের ঐপারে কল্পনায় নাই ওড়ে, মোর এই হাঁস হইছিল
সাধারণ কম গোল ডিম্ব থাকি, কম ওমে জন্মিছিল ঐ ছানা,
দাদি কয়, দাদার হাঁসের নাকি মাত্র দুটা গল্পই আছিল
আমি পান খাই–পিচকিরি হাঁসের ডানাতেই লাল মুছি
যাতে কেউ রক্তাক্ত হাঁসের কথা না আনে মনেতে–
আর কই, হাঁস নিয়া অসীম বিষয়ে অনুভবে
মোর অভিজ্ঞতা বাড়তেছে কই!
কষ্টের পষ্ট মেসেজ
ইঁদুরের গর্তের জমানো ধান আমি উন্দুরের হক মারি
ভোর বেলা কোদাল মারিয়া তুলি আনি।
আমার হাঁসটি তার মধ্যে ভাবছি ঢুকাইবে তার চিটা চঞ্চু
আমি ধুই পুকুরের তিনটা জিয়েল পুকুরের পানিতেই।
হাঁসের পালক রুই আমাদের পরিচিত
নাকে নথ পরানো তিনটা
কাতল মাছের নীরব চলার পথে।
সন্ধ্যার রঙের মতো লম্বাচুলের কাছে আমি গলি নাই তত।
রাখি নাই চুমা মাথা নিচু করি
হ্যানে হোনে চাচাদের অকম্মা হিজলে।
ধানের গন্ধের সনে ততটা অবশ হই নাই খিদা নিয়া
কলমির সকল পদের ঘ্রাণ আমি শুঁকি নাই খাবার আগেই।
বন্ধু কলিমুল্লাহর ভিজা হাতের চেটোয় পাইছি
বিশাল শূন্যের দেখা, শূন্য নাশে স্যানে
তুলি দিছি তাই একখান বটফল
হাঁসের মুখের থাকি কাড়ি।
বলিছি শোনরে এটাই জগতের
কষ্টের পষ্ট মেসেজ!
ঈশ্বর চিন্তার মতো ভাসে
মাছরাঙা মরা মাছ খায় না, হাঁসেরা কেন খায়–
বিড়বিড় করি নিজের সাথেই
ভাবি যে জগত এই হাঁসও যেন ঈশ্বর চিন্তার মতো।
চিন্তার পানির পর বুদ্ধিনাশিনী সে হাঁস ঘোরে সাঁতরায়
মনের ভিতর আসে কারণ ভাসতে পারে
সে জলীয় ভাবনার মাঝে যেন নাই ভাসা।
সে এমন যুদ্ধের বছর আমার কাছেই ছিল
ধানের ছড়ার মধ্যে মধ্যে সে ভাসত কয়শ বছর ধরি।
বিলের পানির মধ্যে আগে আগে লিড দিত
বাবলা গাছের কাছে আসি পিছনে তাকাইত।
শামুকের ঘ্রাণ নিয়া বাড়ি ফিরা
বাড়ি ফিরা নয় কেন বাড়ি ফিরা।
পঁচিশ বছর আমি ভুলে ভাবি যে ছাব্বিশ হবে বোধ হয়
হাঁসের মতন দোলা আসে যেই আমার ভিতর
আমার ভিতর ভাবি সেই হাঁস আসে
আব্বার আজানে কতবার রাত ছারখার হয় পৃথিবীতে
মসজিদে মাইক আসনের আগে সেই হাঁস আসে
প্রতিদিন ফজর বেলায় যেন আমাদের পুকুরের পাড়ে
জিয়ল গাছের কাছে
আমি তার ডাক শুনি মনে হয় তার ঠাণ্ডা আরেকটা মন
যদি দেখি যদি আমি দৌড় দিই যদি তারে পাই
অন্ধকারে, চড়–ইয়ের ভাঙা বাসার নিকটে, হয়ত, হয়ত
ঘুমের শেষের এক পৃষ্ঠা আগে চোখ বুজি কোনো ডিম তাও দিতেছে তখনও!
সান্ধাই নিশি
মন ভোলা চুড়ি ভাঙে
নদীর ঘাটে শোয় খালি
হাঁসের বোন হাঁসের গাঙে
চোখে চুমা আকাশ ঢালি।
জলের সাথে বান্ধা গিঁট
আমরা আসছি কুৎসিত।
ও দেশের জাদু মনি কই রে
সেই হাঁসগুলি খায় নি শিয়ালে
তাইলে তো দেখতি পামুন
লৌকা ভিড়া আলো ছিটা তা’লে।
তাল তলে লগি লাগা
পাড়বোনে ভোর টানি
জানে শালি, রে ঠাপানি!
হাঁসগুলি কত নিশি জাগা।
ওদের নির্জনে
বহুদিন যাবে, ডালে শুয়ে রবো
তোলা জলে স্নান করি।
কিংবা তন আমিই তখন নামবোনে ডালেরতে
রইদ আসি দাঁড়াবেনে এইধারে
সামরিক প্রধানের লাশের কিনাররে ঘেঁষি যেন
অনেক হিমড়া জমবেনে ভাঙা ঝিনুকের রসে।
যারা হাঁস ছিল
তাদের গন্ধের সাথে মিশবো তফাতে।
অনেক জলের গান পিছু পড়া
অনেক জলের গান নেহারিয়া
শোনা যাবে তন এক সাথে।
কোলাহল, যশের মাছিরা
অনেক অতলে ঢেউ ও স্তন চুপ যাবে।
ঝরার পাতারা আশেপাশের
দেখা পাবে
প্রায় তিনখান হাঁসের সাক্ষাৎ–
কার?
মনে রবে
চিরকাল শেষ হইলে কিভাবে যে তারা মোর
মনে রবে!