সমুদ্রযাত্রা
(আবির আবরাজকে)
আমি সমুদ্রপথে তোমাদের অঞ্চলে যেতে চাই
শহরের সবচেয়ে প্রাচীন বন্দরের ঘ্রাণ নাকে এসে লাগতে শুরু করেছে
নাভি বেয়ে ঢুকে পড়ছে ছোট ছোট ঢেউ
আমি রাত জেগে নাবিকদের চিঠি লিখে চলেছি
দক্ষিণে জাহাজের প্রথম বিন্দু আবিষ্কারের নেশায় উঠে বসে আছি দেয়াং পাহাড়ে
যার এক টিলায় পর্তুগিজ ঘোড়ার খুরের আওয়াজ
অন্য টিলায় গির্জার ঘন্টাধ্বনি
তোমার কাছে পৌঁছাতে একটা ভাঙা কম্পাসই বেশি প্রয়োজন এখন আমার
আমি ঘুমের ভিতর কাপড় শুকাতে দিয়ে আসি জাহাজের ডেকে
আর হাই তুলতে তুলতে চলে যাই মধ্যসমুদ্রে
বাড়িঘর ছেড়ে, উঠেছি গিয়ে সাগরের কাছাকাছি এক অজ্ঞাত হোটেলে
যেখানে জানালার কপাটগুলা নোনা হাওয়ায় নরম
বালিশের তলে লুকিয়ে রাখা আছে ছিঁড়া মানচিত্র
জাহাজ ভিড়লেই, ব্রিটিশ শাসনের সোনালী মুদ্রায় ভাড়া মিটিয়ে বিদায় নিব
আমি নিজেকে নাবিকদের ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করেছি
আমার পা কাটুক এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপের শামুকে
ক্ষতস্থান পেকে উঠুক অজস্র সৈকতের বালুতে
পশ্চিমে সন্ধাবেলার মাছবাজারের মত উজ্জ্বল সূর্যাস্ত
আর পূর্বে ফেনার ভিতর থেকে জেগে ওঠা চাঁদ
একদিন এই শীত আর গ্রীষ্মের সফর শেষে
মাছের স্বাদ আর ঢেউয়ের স্মৃতি পেরিয়ে
হঠাৎই নোঙর ফেলবে জাহাজ তোমাদের ঘাটে
ভেঁপুর শব্দে তোমার ঘুম ভেঙে যাবে…
তারাবি
উর্দু গজলের মত ছোট ছোট নামাজগুলার ঘ্রাণ
সমস্ত রাতকে ভরিয়ে রাখে
আমি দাঁড়িয়ে থাকি বাগান ও নহরের বর্ণনার ভিতর
বারান্দার শান্ত অস্তিত্বে সেই সুরের বুদবুদ আর
একটা পাকাফল নাকে চেপে ধরার আবেশ
এই নামাজ যেন তাকিয়ে থাকা, সমুদ্রের দিকে ফিরে
মসল্লার নরম উলে সাদা বালুর অনুভব
নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছে প্রতিটা ভঙিমা বেয়ে
অজুখানায়, পাহাড়ি উপত্যকার অধিক নিরবতা
পাশের জানালা দিয়ে এসে ঢুকছে গোরস্থানের হাওয়া
এই অতল সফরের দেশে পিতার কব্জি চেপে এসেছি একদিন
হয়ত পূর্বপুরুষদেরই রুহ ভেসে বেড়াচ্ছিল মসজিদের বাতাসে
আমি মানুষের আচ্ছন্নতার দিকে তাকিয়ে ছিলাম
বেরিয়ে দেখি, বৃষ্টি হয়ে আবার থেমে গেছে
আমাদের জুতাগুলা ভিজা পড়ে আছে বারান্দায়
আমরা কি পূর্ণ বর্ষা কাটিয়ে দিয়েছি এই দীর্ঘ নামাজে?
(সাফাকে)
এখন মনে করি তোমাকে সরাসরি
চুল আঁচড়াওনি
বুকের বোতাম খোলা কামিজও পালতোলা
এখনও খাওনি
শুয়েছ ভাতঘুম বাতাস কুমকুম
আর্দ্র হয়ে ভাসে
আহারে তোমার পাপ পুষেছ কালসাপ
পিঠের আশেপাশে
ইশ রে তোমার ব্রীড়া! দুয়ারে দিয়েছ গিরা
পর্দা শার্সিতে
আমি এ ছাত্রাবাসে পাশের ও ছাত্রীবাসে
তুমি কি আসতে?
তোমাকে ভেবে ভেবে এমনই গুনা হবে
আমার, শাবানমাসে
তোমাকে ভেবে ভেবে ভাতেও যেকোনওভাবে
নাইমু উঠে আসে
তোমাকে ভেবে ভেবেই হঠাৎই যেন এই
কবিতা লেখলাম
এবং ভাতঘুমে বাতাস কুমকুমে
ভাসতে লাগলাম
বৃষ্টিতে
কোনও প্রস্তাব ছাড়াই বৃষ্টি আসল
আর ভিজল অর্ধেক বানানো বাড়ি
ভিজা কাপড়গুলার প্রায় শুকিয়ে আসা
বৃষ্টিকে ডাকল কিনা জানিনা
এই গ্রামে, কিছু না, গার্মেন্টসের মেয়ের অভাবই
শুধু মনে পড়ল
যারা ভিজতে ভিজতে বোরকা আলগাবে
সবুজ রঙের ধূলি
পড়ে আছে মন তোমার ভিতর
তুমিও মনের দিকে
পাখিটা পালাল ঘুমের ঘোরে
পাতাকে নড়তে দেখে
গুঁড়ি থেকে ধান খুঁজে মরছিল
তোমার মোরগগুলি
চৈত্রমাসের পত্রে তখন
সবুজ রঙের ধূলি
জরিদার রোদ বিগলিত হল
ডুবে যেতে যেতে কূলে
সন্ধা এলাল সদ্য তোমার
কেটে যাওয়া আঙ্গুলে
আমি যে এসেছি বুঝতে পারো নি
উঠানে কাউকে দেখে?
ঋতু কাছে এলে ফলেরই স্বভাব
লাল হয়ে যাওয়া পেকে
ওয়ালী ভাইয়ের কবিতা আমি পছন্দ করি।