পলিয়ার ওয়াহিদ এর মহুয়া সিরিজি

পলিয়ার ওয়াহিদ

বই : আলিফ লাম মীম ও মহুয়ার মরমী গম

লেখক : পলিয়ার ওয়াহিদ

প্রচ্ছদ : শামীম আরেফিন

প্রকাশনী : ঘাসফুল

পৃষ্ঠা : ৬৪ পৃষ্টা

এক

এক বসন্তে আমরা একত্রিত হব। তোমার মেহেদি রঙা আঙুলের মতো গুছায়ে নেব জীবন। রঙের ব্যবহারে শিল্পী যেভাবে থাকে শৌখিন ও সচেতন। তোমার বুকে আগেই কিনে জমা রাখব তুঁতেমি আকাশ। তুমি ফুটায়ে নিও ডালিম-মালিম ফুল। আমি পাকায়ে-মাকায়ে রাখব কলা-ফলা ফল।

চুমোচুমিতে আমরা ভরে ফেলব পৃথিবী বেলুন-মেলুন। দেখো—সূর্যের সাথে বেরিয়ে পড়লে আমরা ঠিক চাঁদের কাছে পৌঁছাব। যেখানে নিজের বলে কিছু নেই। জন্মভিটার দিকে ফিরে তাকালে দেখবে—সবাই অভিন্ন মিসকিন। সেখানে আমি বৃক্ষবালক আর তুমি গজে ওঠা হাওয়ার ফুলমূল।

দুই

পৃথিবীর দীর্ঘ নদীর সুরভি জলের মতন বয়ে যাব আমরা। দুতীরের সবুজ-অবুঝ ঘাসের মতন জমে উঠবে—আমাদের আলাপ-মালাপ। সখ্যতা বেড়ে যাবে ঢেউয়ের শরীরে আছড়ে পরা নারকেল পাতার মতন। ভাঙনের সম্ভাবনা থাকলেও কানে ভেসে আসবে—মিলন মোহনার মরমি সুর।

অন্যের চোখে তাকানো লজ্জার জেনে—আমরা যেন মাছ—তাকায়ে তাকায়ে ঘুমাই। পাখিরা আকাশ বুনে ফিরবে পথ-প্রান্তর। ঘরহীন আমি আর মহুয়া পাখনাবিলাসী হব। যদিও ডানা গজাবার আগেই দেখব—পিরানের প্রস্থে প্যারালাল পিরামিডের উচ্চতা বিষয়ক বুনিয়াদি জ্ঞান। নাভির নাকে লটকানো মরুভূমির পিপাসা। আর সুন্দরবন দেখেই—বাঘ হবার তুমুল নেশা। লাল-খাল নদীতে ডুবে মরার কৌতূহল!

তিন

আমরা কোথায় যাব মহুয়া? কেন, দুই পাহাড়ের দেশে। যারা তোমায় হাতছানি দেয়। কেন তারা ডাকে? তুমি পুরুষ মৌমাছি। তোমার রেণু ছাড়া সেই পাহাড়ের ফুলগুলো লাজ-বংশহীন। আমি তবে কি এমন শক্তি রাখি? তোমার শক্তি-মক্তি কেবল স্পর্শ। তোমার আদরে আবরণ ছিঁড়ে যায়। তারপর সে মুক্তি পায়—বেড়ে ওঠে আপন আদিমতায়। নিজস্ব শৃঙ্খলে। ছেঁড়া কী করে নিয়ম হলো তবে? কারো ছেঁড়া কারো জীবন পাওয়া! ও আচ্ছা। আমি তো কোনো নিয়ম মানি না মহুয়া। জানি তো। নিয়ম একটা বেয়াড়া বিড়াল—কবি তাতে পোষ মানে না। অনিয়মও একটা নিয়ম জেনো।

চার

এত উড়াউড়ি। আমার শুধু পিপাসা লাগে মহুয়া? তুমি জানো না পিপাসার পরিত্রাণ কোথায়? এই দুটো গাব তোমার জন্যে তো। কোথায় সে গাব? কেন, তুমি যাকে ডালিম ডাকো। ডালিমের জলে কি পিপাসা মেটে? ডালিম খেতে খেতে তুমি সাঁতার শিখে যাবে। আর সাঁতার জানলেই নদীর সন্ধান পাবে। আমি তো নদী চাইনি, চেয়েছি জল! ওহ—এসো। মাতাল হলে—তার জলে পোষায় না। তখন নদীতে নামতে হয়। এই নাও—চোখে নেশার সুরমা পরো। সে কী বলো? এই নাও—ঠোঁটের পাগড়ি। এখানে থাকে মৌমাছি মাহফিলের ফজিলত।

পাঁচ

সেই কবে—চিরবসন্তের উজ্জ্বল উদ্যান থেকে বিতাড়িত হবার পর পুনরায় পৃথিবীময় ক্ষমা নিয়ে আমি আর মহুয়া ভয়ে-ময়ে স্বর্গে ঢুকি। দেখি—নয়নাভিরাম জান্নাত দাঁড়ায়ে অবিকল মায়ের মুখের মতন স্বচ্ছল।

ছুটে যাচ্ছে অফুরান মধুক্ষেত। মৃত্যু থেকে পালায়ে-মালায়ে তাড়াচ্ছে পিপাসা। চুমুক আটকে আছে মাকামের ঠোঁটে। কারার থেকে ভেসে আসছে দুধেলা নহর। আর অদূরে জান্নাতুল ফেরদাউসের গুণগানে ভরে উঠছে সবুজ বয়ান। তাকে ঘিরে মৌমাছি বিতরণ করছিল—আগর কাঠের সুঘ্রাণ। আর সেখানে লটকানো জননী ও জায়ার ছবি।

যে কোনো আয়াতালোচনা মাওয়া হয়ে উঠতে পারেন—জ্যোতিষ্কের সোনার চিরুনি।

ছয়

আঁধারের ভেতরে যেতে যেতে আমি আর মহুয়া একটা কয়লার ব্রিজ পেরিয়ে যাব আর দেখব—পৃথিবীর সকল মানুষ শীতকাল অতিক্রম করতে করতে কুয়াশা হয়ে যাবে কিন্তু মুখে কাঁচা হলদি মাখতে মাখতে মহুয়া বলবে—এই, তুমি কি কোকিলের ভাষা বোঝো?

মধ্যফাল্গুনে জন্ম নিয়েও কেন জানি কখনোই বসন্তের মুখোমুখি হতে পারিনি অথচ বিরোধের চৌরাস্তায় পৌঁছে দেখতে পাব—মেঘ ছাড়া আমাদের কোনো অর্জন নেই। তবু প্রশ্ন জাগে—ঝরা পাতার প্রাপ্তি ও বিসর্জন নিয়ে কোনো কৌতূহল আছে কিনা?

ফাল্গুন এলেই কোকিলের সাথে সুমধুর ঝগড়া। সঙ্গীকে কাছে পেতে কী অপার বেদনা তার। আহ কত পাখির ভাষা আমার হলো না জানা! আচ্ছা, পৃথিবী থেকে যদি একদিনের জন্য সব পুরুষ হাওয়া হয়ে যায়—তাহলে আমাদের প্রেমিকারা কোন সুরে মাতন করবে? কুহু কুহু কি কেবল সঙ্গীকে কাছে পাবার জিকির?

সাত

মহুয়া একটা ফুলের নাম। যে ফুলে বাঁধা আছে পরমায়ু। পান করতে করতে এ উত্তর তবু হয় না জানা। প্রতিটি বটের ফল দৃশ্যত মোরগ ফুলের রঙ নিয়ে বাঁচে। আন্দোলনে গেলে—আমি ঘোড়ার মতো দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে ঘুমাই। চে’র সাথে দেখা হলে বলবে—তুমি মরে যাওনি, বরং মরণ তোমাকে বাঁচিয়েছে। এশিয়ার মাটি বড় দরদি আর গোলামির কুমারী সেজে ঘোমটা দেয়। দাদি বলে গেলেন—তোরা সামনে এগিয়ে যা, আমি চলে যাচ্ছি!

তৃষ্ণার সাথে কবে সাক্ষাৎ হবে—সে খবর এখন গৌণ থাক। বরং এই গরমে রোদে বসে কচি কচি ডাব খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।

 

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷