দুয়ারে পাষাণ তালা (পঞ্চম কিস্তি)

মূল : মুস্তফা করিম

আরমান

দুয়ারে পাষাণ তালা (চতুর্থ কিস্তি)

বিশ্বাস হইতে চায় না মজিদের। ভিতরে ভিতরে তির-খাওয়া পশুর মতন তড়পায় সে। ভাবে তারে ধোঁকা দেওয়া হইতেছে। এই মাথাভরতি শয়তানি বুদ্ধিঅলা ছোকরা, চোখেমুখে যার শয়তানি বুদ্ধি, অন্তত চুলের সমপরিমাণ যার শয়তানি বুদ্ধি, আর সেই ঝাঁকড়া এলোপাতাড়ি বাবরিসমান চুলগুলা ঢাকতেই যার টুপির সামনের দিকটা নামতে নামতে ভ্রু পর্যন্ত আইসা ঠেকছে, সে নিশ্চিত মিথ্যা কথা বলতেছে। 

রাগে লাল হইয়া ওঠে মজিদের চেহারা। কড়া চোখে তাকায় ওয়াজেদের দিকে, যেন দৃষ্টিবাণে এফোঁড়-ওফোঁড় করবে তার দেহ। ওয়াজেদের উচিত ছিল, এই শয়তান শিশুরে মিথ্যা বলার দায়ে শাসানো, প্রয়োজনে বেত্রাঘাত করা। তা তো সে করেই নাই, উলটা হাসতেছে গায়ে জ্বালা ধরানো মিচকা মিচকা হাসি। একটা নিষ্পাপ পক্ষী হত্যার পরেও তার চেহারায় অনুতাপের কোনো ছাপ নাই; বরং সেখানে খেলা করতেছে খুশির আভা। বুকের ভিতর মাথা জাগাইতেছে প্রশংসাপ্রাপ্তির খায়েশ। মজিদের বোকামিও অশেষ বিদ্রুপ জোগাইতেছে তার মনে। 

‘এটা কি সত্যি?’ মজিদ উপহাসের চোখে তাকায় ওয়াজেদের দিকে। 

‘জি, সত্যি। উল্লুটার হাত থেকে আপনারা মুক্তি চাইতেছিলেন, উল্লু মাইরা আপনাদের মুশকিল আসান করলাম।’ ওয়াজেদ জবাব দেয়।

‘দেখো দেখি, এই আজব প্রাণীটা কী বলে।’ মজিদ ওয়াজেদের দিকে ইশারা করে এবং আপন সাথিবর্গের দিকে সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে তাকায় এবং ওয়াজেদরে অপদস্থ করার লক্ষ্যে কথা জারি রাখে: ‘আরে বাপু, আমার মনের খবর তুমি জানো নাকি? গায়েবের খবর তো কেবল খোদাই জানেন। আর তুমি নাকি মসজিদের ইমাম, ভালো কথা, তা এইটুকুও কি জানো না যে মসজিদের সীমানার ভিতর যত কীটপতঙ্গ, পশুপক্ষী আর পোকামাকড় বসত করেন, উনারা সকলেই পবিত্র ও মোবারক হায়ওয়ান? উনাদের হত্যা করা শুধু অনুচিতই না, কঠিন গুনাহও বটে? একইভাবে যারাই এই মসজিদের সীমানার ভিতর থাকবেন, মনে রাখা লাগবে, খোদা স্বয়ং উনাদের এইখানে আশ্রয় দিছেন, হেফাজত দান করছেন। আজকে তুমি পেঁচা মাইরা শখ মিটাইলা, কালকে তো মিয়া কবুতর দিয়া আহার করবা।’ বলতে বলতে মজিদ গম্বুজের দিকে ইশারা করে, যেখানে একঝাঁক মানতের কবুতর উড়াউড়ি শেষে জোড়ায় জোড়ায় বিশ্রাম নিতেছে। 

মজিদ দমে না। সে মুষ্টি পাকায়। চক্ষু গরম রাখে, চোয়াল শক্ত রাখে এবং মুখ দিয়া অনল বর্ষাইতে চায়। ওয়াজেদ শুধু তার ইমামতিই ছিনাইয়া লয় নাই, বরং আজ সবার সামনে তারে মহা বেইজ্জতও করছে। 

মজিদের মতিগতি দেইখা ওয়াজেদ হতভম্ব হয় এবং তার বেহুদা কথার কোনো আগামাথা সে খুঁইজা পায় না। কিন্তু যেই ঘিন্না আর আক্রোশ লইয়া মজিদ তারে বকে, তা ঠিকই টের পায়। তার মনে হয়, কেউ যেন তারে আচানক জাপটে ধরে শোয়ায়ে মাচার সাথে পেরেকবিদ্ধ করছে তার হাত-পা; একইসাথে সিলাই কইরা দিছে ঠোঁট।  

‘শোনো মিয়া। তুমি এইটারে মারছ। এখন তুমিই এইটার ব্যবস্থা করো।’ মজিদ মুর্দা পক্ষীরে অবজ্ঞার সহিত জমিনে নিক্ষেপ করে এবং দ্রুত পায়ে মসজিদ ছাইড়া যায়। পিছু লয় তার উভয় চাকর—আপন মালিকের ছ্যাবলামি দেইখা বক্রভাবে হাসে।

অপমানে ওয়াজেদের দিল পোড়ে। সে স্বপ্নেও ভাবে নাই একটা চাকর শ্রেণির লোক তারে এইভাবে ডাঁটবে। আপন সত্তার তুচ্ছতায় সে বিষাদনমিত হয়। মস্তক অবনতভাবে বইসা থাকে খামোশ। 

শাগরেদরা সব চুপচাপ বইসা তামাশা দেখে। তাদের আশা ছিল, তাদের উস্তাদ বুড়া মজিদের একদম থোঁতায় বাড়ি দেবেন এবং তারে লা-জবাব কইরা দেবেন। কিন্তু উনি তেমন কিছুই করেন নাই। চুপচাপ সব হজম কইরা গেছেন। শাগরেদরা এর কোনো ব্যাখ্যা খুঁইজা পায় না। তারা হতাশ চোখে তাকাইয়া থাকে উস্তাদের দিকে।

শাগরেদদের সবাইরে কেমন অচেনা লাগে ওয়াজেদের। সবার চেহারায় কেমন একটা মজিদ-মজিদ ভাব, চোখে তাচ্ছিল্যভরা চাউনি, মুখে বিদ্রুপের হাসি। ওয়াজেদের মনে হয়, এতকাল শাগরেদরা তারে যেই মর্যাদার আসনে বসাইয়া রাখছিল, সেখান থেকে তারে সজোরে টাইনা নামাইছে। শাগরেদদের ওপর রাগ আসে ওয়াজেদের।

‘তোমরা সবাই চুপ কইরা আছ কেন? পড়ো। আর এই যে তুমি’, ওয়াজেদ এক মেদবহুল শাগরেদরে হুকুম করে, ‘এই মরা উল্লুটারে দূরে পাক মাইরা আসো।’

মেদবহুল আপন জায়গা থেকে নড়ে না। একটা মুর্দা পক্ষীর গায়ে হাত দিতে তার ঘিন্না লাগে। তার ফোলা ফোলা গাল দুইটা চিমসাইয়া যায়। চোখে ভয়ের ছায়া পড়ে। আলতোভাবে নরম হাতখানা সে কোরআনপাকের ওপর রাখে, যেন সেথায় আশ্রয় লইতে চায়। কাঁদোকাঁদো মুখ কইরা তাকাইয়া থাকে ওয়াজেদের দিকে।

‘বেয়াদব! শোনো নাই কী বলছি?’ গর্জে ওঠে ওয়াজেদ। সাথেই একটা কষে চড় লাগায় মেদবহুল শিশু শাগরেদের গালে। লাল হইয়া ওঠে শিশু শাগরেদের গাল। উচ্চ রবে ক্রন্দন জুইড়া দেয় সে। 

‘সাঁইজি, আমারে মাইরেন না, আমি নাবালেগ শিশু।’ 

ওয়াজেদ তবু থামে না। সপাটে আরেকটা রামথাপ্পড় সরবরাহ করে শিশুটির গালে। শিশুটি হাতজোড় কইরা মিনতি জানায় এবং তার সমস্ত চোখমুখমাথা একত্রে গুটাইয়া আনে কচ্ছপের মতন। অন্য শিশুরাও এই অবিচার দেইখা ঘাড় গোঁজে। ভয়ে কয়েকজন ফুঁপাইতে থাকে নিঃশব্দে। অগত্যা ওয়াজেদ নিজেই আসন ছাইড়া ওঠে এবং মরা উল্লুরে মসজিদের সীমানার বাইরে নিক্ষেপ করে। ফিরা আইসা সে সবক জারি রাখার কোশেশ করে। কিন্তু সফল হয় না। আজ কোরআনপাঠে বাচ্চারা দফায় দফায় ভুল করে এবং ওয়াজেদ তাদের সাবধান করলে তারা বাসায় যাওয়ার জেদ ধরে। শেষমেশ ওয়াজেদ হার মানে এবং সম্মিলিত ছুটি ঘোষণা করে।

সবাই চইলা যায়। নিঃস্ব বোধ করে ওয়াজেদ। কাল মালিক জহির তারে ডাঁটল। আজ একটা চাকর শ্রেণির লোক তারে সবার সামনে অপমান করল। আর খানিক আগে একটা শিশু শাগরেদ সরাসরি অমান্য করল তার নির্দেশ। 

অহম্‌ ভাইঙা যায় ওয়াজেদের। সবখানেই তার মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত। কিন্তু মনের দুঃখ প্রকাশের জায়গা নাই। একবার ভাবে, মজিদের বিষয়ে মালিক জহিরের কাছে শেকায়েত করবে। পরক্ষণেই বাতিল করে সেই চিন্তা। মালিক জহিরের চোখে সেও একটা খাদেমেরই মতো, যার থেকে মসজিদ সাফাইয়ের উম্মিদ রাখা হয় এবং দায়িত্ব পালনে সামান্য ত্রুটি হইলে সেটারে ঘোরতর অন্যায় হিসাবে দেখা হয়।

ও খোদা! শারাফতের জিন্দেগি কি আমার নসিব হবে না? ওয়াজদের করুণ ফরিয়াদ তার আত্মার মাঝেই নিনাদিত হয়। সুনসান মসজিদ, তার বিশাল সীমানাজুড়ে বিরাট বিরাট সব প্রাচীন বৃক্ষ আর তলদেশে প্রবাহিত ঝরনাধারা, সবখানেই এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য, এক বিষতিক্ত নিঃসঙ্গতা। ওয়াজেদ মাচায় বইসা থাকে। হাতের তালুতে ঢাইকা রাখে বিরান মরুর মতন শুষ্ক চেহারা। সময় বইয়া যায়। না-জানি কত সময় যাবৎ বইসা থাকে সে। তারে দেখায় কোনো সর্বহারা মুসাফিরের মতন, যার না আছে পথ, না আছে গন্তব্য, যে পারে শুধু দূরে ঝাপসা হইয়া আসা দৃশ্যের দিকে তাকাইয়া থাকতে। 

হঠাৎ মসজিদের উঠানে অনেক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। চোখ খোলে ওয়াজেদ। গাঁয়ের নারীরা কলস কাঁখে মসজিদের ঝরনা হইতে পানি লইতে আসতেছে। অনেকের চেহারা নেকাবে ঢাকা। ওয়াজেদের চোখ নুরারে খোঁজে এবং খুঁইজা পায়। ধীর পদক্ষেপে চলতেছে সে; যেন ঝরনা-প্রবাহিত কোনো সবুজ উপত্যকার মাঝে নিশ্চিন্ত হরিণী। নুরা এক হাতে মেয়েরে ধইরা রাখছে, অন্য হাতে সামলাইতেছে মাথার ওপরে থাকা পিতলের ঘড়া। তার হলুদ দোপাট্টা আর নীল কামিজ ফরসা কইরা কাচা, যেন সে জানতই যে ওয়াজেদের সাথে তার দেখা হইতে যাইতেছে। 

নুরারে দেইখা ওয়াজেদের উদাসভাব মিলাইয়া যায়। শরীরে ভর করে এক অপ্রস্তুত উষ্ণতা। মনে পড়ে গতরাতের কথা, নুরার কাপড়ের খসখসানি, তার শরমে নুয়ে পড়া দেহ আর নারীসুলভ ললিত শব্দমালা, যেগুলি দ্বিতীয়বার শোনার জন্য সে রাতভর বেকারার হইয়া থাকছে। উইঠা পড়ে ওয়াজেদ। তার চোখ বারবার নুরার দিকে যায়। নুরা অন্য নারীদের পিছনে দাঁড়াইয়া থাকে। তাদের সাথে গল্পগুজবে মাতে না। কিন্তু তারা যখন হাসে, সেও না হাইসা পারে না। 

অবশেষে নুরার পালা আসে। সবার মতন সেও পানি লইতে শরীর ঝুঁকায়। উন্নীত হয় তার কটিপ্রান্তর এবং দৃশ্যমান হয় তার বাহু-সংলগ্ন বর্তুল। ওয়াজেদের মুখ শুকাইয়া যায়। তার মনে হয়, নুরাও তারে চোরা চাউনিতে দেখতেছে বারবার। রক্ত বলকাইয়া ওঠে ওয়াজেদের। কল্পনায় নুরারে সে সজোরে বুকে পেষে। নিজ দেহের রক্তের আদিম স্রোত বহাইতে চায় নুরার শরীরে। 

খোদা, আমার খোদা, পানাহ চাই এই রক্তের অভিশাপ থেকে। পাপবোধে কম্পিত হয় ওয়াজেদ। আমার পাকিজা রুহ আমি কেন ময়লামাখা করতেছি? আস্ত অভিশপ্ত আমি একটা।

বিড়বিড় করতে করতে ওয়াজেদ কুঠুরির দিকে যায়। উঠানে অভিশপ্ত সময় বইতেছে। এইসব সময়ে না উথলে ওঠা খায়েশাত দমানো যায়, না কাবুতে আসে দিলের ধড়কন। ঘামে জবজব করে ওয়াজেদের কুর্তা। না চাইতেও তার চোখ যায় ঝরনার দিকে, যেখানে নুরা আছে। ওয়াজেদ বেচাইন হইয়া রেহেলে রাখা মুসহাফগুলি জড়ো করে।

নুরার যাওয়ার যেন তাড়া নাই। সে বারবার ঝরনার পানিতে পিতলের ঘড়া সাফ করে। পাশেই দাঁড়াইয়া থাকে তার মেয়ে শাদান। তার মাথায়ও মায়ের মতন ঘুঙট—ফরসা, সাফসুতরা; লম্বা জামাটা গলা থেকে হাঁটু বরাবর নাইমা আসছে। নুরা এক আজলা পানি ছিটায় মেয়ের গায়ে। খিলখিল করে হাইসা ওঠে শাদান। জাপটাইয়া ধরে মায়ের পা। মা-বেটির হাসিতামাশা দেইখা ওয়াজেদও খুশি হয়। হাসির আভাস ছড়াইয়া পড়ে তার চেহারায়। ঝলক দিয়া ওঠে তার মজবুত সফেদ দন্তশ্রেণি। ওয়াজেদের হাস্যমুখ দেইখা নুরা আপ্লুত হয়। এক মোবারক ইনসান তার খুশিতে খুশি হইছেন, এর চাইতে বড়ো পাওয়া আর কী হইতে পারে? পাশে দাঁড়াইয়া থাকা সখীদের সে চঞ্চল গলায় বলে, ‘সবাই সবার দামানরে বইলা দিয়ো, এখন থেকে তারা যেন পানি লইতে আসে।’ বলতে বলতে নুরা চোরা চোখে তাকায় ওয়াজেদের দিকে, যে তার আল্লাহ-রাসুল ভুইলা, এক নারীর উপস্থিতির আবেশে বিভোর হইয়া রইছে বর্তমানে। 

নুরার কথায় হাইসা ওঠে নারীরা। লালচে আভা খেলা করে তাদের গালে। ওয়াজেদের উপস্থিতি টের পায় তারা। ব্যস্তভাবে সবাই আপন আপন ঘড়ায় পানি ভরে। একে একে ছাইড়া যাইতে থাকে মসজিদের উঠান। সবার পিছু পিছু চলে নুরা। তার কোনো তাড়া নাই। মসজিদের বিশাল সীমানা ঘিরে দাঁড়াইয়া আছে এক প্রাচীর। নুরা থাইমা থাইমা সেই প্রাচীর দেখে। প্রাচীরের পাশ দিয়ে একটা সরু পায়দল পথ চইলা গেছে হাবেলির দিকে। সখীদের নিয়ে নুরা সেই পথে হাঁটে। পথের দুই পাশে ফুইটা থাকে রংবেরঙের ফুল। নুরা ফুলের পাপড়িগুলিরে আলতোভাবে স্পর্শ করে। সখীরা ভাবে, নুরা হয়তো ফুল ছিঁড়তে চায়। কেউ ভুলেও এমনটা করে না। ধ্বংসপ্রায় হাবেলির মালকিন খুদকুশির আগে নিজ হাতে লাগাইছিলেন এইসব ফুলের চারা। সবাই উনার ভাসমান মৃত আত্মারে ভয় করে।

দ্বিপ্রহরে খাওয়াদাওয়ার পর, মালিক জহিরের হাবেলির জেনানখানায় অন্য খাদেমাদের সাথে শুইয়া আছে নুরা। তার ঘুম আসতেছে না। অস্থির চোখে এদিকসেদিক তাকাইতেছে সে। বেশ খানিকক্ষণ আগে শেষ হইছে জোহরের আজান। কিন্তু তার বিলীয়মান সুরের লহরি কাইড়া নিছে নুরার ঘুম। বারবার তার মনে পড়তেছে ওয়াজেদের কথা। একটানা গুঞ্জনের মতন কানে বাজতেছে তার কণ্ঠ। ওয়াজেদ যখন তারে বলছিল যে সেও মানুষ, সেও চাইলে মসজিদে থাইকা এবাদত করতে পারে, তখনই সে তার মন জিতে নিছিল। পবিত্র মানুষের কথাও পবিত্র হয়। 

নুরা উইঠা বসে। খানিকক্ষণ মাথা ঝুঁকাইয়া কী যেন ভাবে। আশেপাশে শুইয়া থাকা মহিলাদের ওপর একদফা নজর বুলায়। এরপর গায়ে-মাথায় ভালোভাবে দোপাট্টা জড়াইয়া, ঘুমন্ত কন্যারে কোলে লইয়া, হাবেলি থেকে বাহির হইয়া পড়ে। 

গলিপথ ধইরা একটা রাস্তা মসজিদ অভিমুখে চইলা গেছে। নুরা সেই পথে হাঁটে। কঠিন গরম পড়ছে। রোদ তো না, যেন আগুন ঝরতেছে, ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তেছে গলিত সিসা। পায়ের তলায় অবিরাম দংশন করতেছে তপ্ত পাথুরে মাটি আর ধারালো  কঙ্করের দাঁত। তারপরেও নুরার কদম মসজিদ পানে আগায়। কিছুর পরোয়া করে না সে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে, মসজিদের উঠানে, ঝরনার পাশে, তার চুড়ি পইড়া গেছে এবং শুধু এইজন্যই সে এই অসময়ে মসজিদের দিকে যাইতেছে হন্তদন্ত। নুরা উত্তর সাজাইয়া রাখে। কিন্তু এই বিরান রুগ্‌ণ জরাজীর্ণ গলিপথে, এক আকাশ রোদ মাথায় নিয়া, কে তারে প্রশ্ন করার জন্য দাঁড়াইয়া থাকবে?

দুয়ারে পাষাণ তালা (ষষ্ঠ কিস্তি)

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷