আমি আপনাকে একটা গল্প শুনাব। গল্পটা আমারই। আমার সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা ভালো হয় তাহলে গল্পটা পড়লে আপনার এই ধারণা পাল্টে যেতে পারে৷ আমার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে চাইলে এই গল্পটা না পড়ার অনুরোধ।
আপনি তো জানেন আমি কতটা ভালো। ভিন্নমত, সংখ্যালঘু আরো যত বিষয়ে সংকীর্ণমনারা সব সময় বিরোধিতা করে এসেছে আমি সব সময় তাদের ঘৃণা করে এসেছি। বিভিন্ন সময়ে আমি এটাই বলে এসেছি যে, সবারই সমান সুযোগ আছে। অধিকারের ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য বিশ্বমঞ্চে সব সময়ই গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে এসেছে। আমি এই অধিকারের চূড়ান্ত নমুনা রেখে যেতে চাই।
আরেকটা বিষয় আপনার মনে আছে হয়তো। হত্যাদণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের সেই ঘটনাটা। হত্যাদণ্ড বিষয়ক আইনে যে পরিবর্তন এসেছে সেটা কিন্তু আমাদের হাত ধরেই এসেছে। তাই এটুকু তো এখন বলা যায় যে, বিশ্ব মানবতায় আমার অবদান কতটুকু।
আমি এখন যে গল্পটা বলতে চাই এটা শুরু হয়েছিল অধিকারবিষয়ক এক আন্দোলন থেকে। আমরা কিছু মানুষ চাইছিলাম, সবকিছুতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। একটা বিষয় এই আধুনিক বিশ্বে আজ স্বীকৃত সত্য যে, যারাই মানব সভ্যতার উন্নতি চেয়েছে তাদেরকেই মানুষেরা হত্যা করেছে, বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে। তাই সভ্যতার উন্নতির জন্য আগে মানুষের উপর নিজেদের আয়ত্ব আনাটা জরুরি। ইতিহাস এটাই বলে যে, রোম যদি সে সময় এতগুলা যুদ্ধ না করতো, বিশ্বে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা না করতো তাহলে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের যে অনুপম নমুনা এটা কখনোই আমরা বুঝতে পারতাম না। ঠিক এই কারণেই আমি এবং অন্যান্য আরো অনেকে সবকিছুর উপর আয়ত্ত আনার জন্য সোচ্চার হই। আমরা এটা শুরুও করেছিলাম। কিন্তু সেই সময়ে আমাদের উপর ভয়ংকর সব আঘাত করে আমাদেরকে তছনছ করে দিতে চেয়েছিল ওরা। কিন্তু মঙ্গলের চেষ্টায় নিয়োজিত আমাদের প্রচেষ্টা খোদা দেখেছিলেন। তাই তিনি আমাদেরকে বিজয় দিয়েছিলেন সেই সময়। সেই বিজয় যদি না হতো তাহলে আমি কল্পনাও করতে পারি না, মানবজাতির জন্য কী ভয়ানক বাস্তবতা কায়েম হতো।
এরপর থেকে আমরা পুরোদমে চালিয়ে গেছি আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলনের পথে যারাই বাধা দিতে এসেছে, খোদা তাদেরকে ধ্বংস করেছেন। আমরা খোদার কাজ করি এটা বুঝার জন্য এরচেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে!
মঙ্গলের জন্য হত্যা যায়েজ আছে। আমরা এটাকে জেহাদ বলি। ইতিহাস পড়লে আপনি দেখবেন খোদার পুত্ররাও জেহাদ করেছেন, খোদার আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য। খোদা সেইসব জেহাদে মদদ করেছেন, আকাশ থেকে আরো অনেক পুত্রকে জমিনে নাজেল করেছেন সেই জেহাদকে নুসরত করার জন্য। তেমনি খোদা আমাদেরকে সাহায্য করছেন এখন। খোদার সাহায্য আমাদেরকে আরো শক্তি দিয়েছে, আমাদের বিশ্বাস আরো পোক্ত হয়েছে। নাহয় গুটিকয়েক মানুষের জন্য পুরা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না।
বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলাম। এই যন্ত্রের সাহায্যে মানুষের সমর্থন আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পেরেছি আমরা। এই যন্ত্রের সাহায্যে আমাদের সব খারাপ কাজ মানুষের চোখে ভালো কাজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে। মানুষের সমর্থন অনেক বড় একটা জিনিস। এটা না পেলে বিশ্বের মাথায় উঠে সবকিছুকে নিজেদের করে নিতে পারতাম না হয়তো। আমাকে ভুল বুঝবেন না যে, খোদার সাহায্যের বিপরীতে যন্ত্রকে বড় করে তুলছি। খোদা কিছু কিছু কাজ করতে পারেন। বাকিটা খোদার পুত্রদের করে নিতে হয়। খোদা সব পারলে তো খোদার পুত্রদের দরকার পড়ত না। আমরা যাই বলি তাই মহাসত্য, এটাই আদর্শ। কারণ খোদার পুত্ররা আমাদের ভিতরেই জন্ম নিয়েছে, তাদের রক্তে আমাদের রক্ত মিশে গেছে। কিছু কিছু খোদার পুত্রকে হত্যা করে তাদের রক্তও আমরা গায়ে মেখেছি। আমাদের ভিতর বাহিরে তাই খোদার রক্ত মাখামাখি হয়ে আছে। আমরা তাই খোদারই লোক। এইসব যন্ত্র টন্ত্র সবই আমাদের হাত ধরে এসেছে।
কিন্তু আমাদের মহৎ কাজকে শয়তানের লোকেরা নিজেদের মতো করে ব্যাবহার করতে চাইছে। তারা আমাদের যন্ত্রের ভিতর মিশে এই যন্ত্রের কার্যকলাপ বুঝে নিয়েছে। তারা এখন তাদের ছোট ছোট যন্ত্র দিয়ে আমাদের উপর আঘাত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু শয়তান যতোই ভালো কিছু করুক, সে কিন্তু মন্দ।
এই গল্পটা এ জন্যই বলার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। মানুষকে জানাতে চাই, তারা যতসব কুৎসা আমাদের বিরুদ্ধে গাইছে তা সত্য নয়। আমার গল্পটা বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই আবেগ অনুভূতি বিসর্জন দিতে হবে। খোদায়ি কাজ দুর্বল মন নিয়ে কখনোই বুঝা সম্ভব না। দুর্বলের উপরই শয়তান জিততে পারে। যারা খোদায়ি শক্তিতে বলিয়ান তাদেরকে এই সব আবেগ অনুভূতি নামক তুচ্ছ জিনিস প্রভাবিত করতে পারে না। আমরা খোদার ভূমিতে সেইসব মানুষকেই দেখতে চাই, যারা শয়তানের কাছে হার মানবে না।
বিরুদ্ধবাদীদেরকে আমরা হত্যা করার সময় দেখেছি, তারা কতটা প্রতিশোধ পরায়ণ। আমরা যদি বাপকে মারি তাহলে মা আসে, দাদা আসে। তাদেরকে মারলে শিশুরা আসে। এই সমস্ত শিশুরা দেখতে দেবদূতের মত হলেও আদতে এরা হলো শয়তানের পুত্র। খোদার বিরুদ্ধে নাফরমান এক গোষ্ঠী। একটা ঘটনায় আমার মন থেকে সমস্ত প্রবঞ্চনা চলে যায়। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারি, এইসব শিশুর রূপ ধরে শয়তানই আসে আমাদের পবিত্র প্রাণ বিনাশ করতে।
আমরা একটা মিশনে যাই। আমরা জানতে পারি, বড় ধরনের একটা অস্ত্রাগার রয়েছে সেখানে। আমরা সেখানে গিয়ে দেখতে পাই কয়েকটি শিশু। আমরা তাদেরকে খাবার দেই, আদর দেই। আমরা তাদেরকে দেখে নিজেদের বাচ্চাদের কথা মনে করি৷ আমরা তাদেরকে সাথে করে নিয়ে আসতে চাই। শিশুদেরকে আগামীর জন্য প্রস্তুত করে তোলা আমাদেরই দায়িত্ব। তাই আমরা শত্রু শিবির থেকেও তাদেরকে নিয়ে আসার নিয়ত করি। উপর থেকেও আমরা নির্দেশ পেয়ে এসেছি এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা উচিত। এটা তো সর্বজন স্বীকৃত যে, মানব সভ্যতায় প্রজন্মের যত বড় বড় মাথা তা আমাদের হাত ধরেই বিশ্ব দরবারে নিজ নিজ অবদান তুলে ধরছে।
পথে এই শিশুদের ভিতরে লুকিয়ে থাকা শয়তান প্রকাশিত হয়। আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ করে এই শয়তানের বাচ্চারা আমাদের অসংখ্য পবিত্র প্রাণ ধ্বংস করে। সেই থেকে আমি একটা প্রতিজ্ঞা করেছি। আমি শিশুদের প্রতি কখনো আবেগ বা অনুভূতি দ্বারা আক্রান্ত হব না। আমি এখন আর তাদেরকে মানুষই মনে করি না। আমি নিয়তঃ তাদের হত্যা করি। আমার কাছে শিশু হত্যা গরু ছাগল হত্যার সাথে তুলনীয়। কারণ শিশুদের যেমন বুঝশক্তি বলে কিছু নেই তেমনি গরু ছাগলেরও নেই বুঝশক্তি নামক জিনিসটা।
আপনি আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত পোষণ করবেন না। এটা আমি জানি। বিশ্ব আজ বহু মতে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমি এটা চাই না। আমার মতে শক্ত হাতেই এসব দমন করতে হবে। আমি বোমা হামলায় বিশ্বাসী। সাধারণত বোমা হামলায় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ মারা পড়ে। সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে আকাশ থেকে ফেলা বোমার কার্যক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে। আমিও এটাই করতে চাই এবং করিও তাই।
আপনি হয়ত এই জিজ্ঞাসা তুলতে পারেন যে, শিশু হত্যা করে আমি কেমন অনুভব করি? আমি এর উত্তরে এটুকুই বলব, এতে আমি কিছু মনে করি না। হত্যা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার পথে বাধা হলে আমি স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতিগতভাবেই হত্যার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠব। শিশু হত্যাও এর ব্যতিক্রম না। এটা জরুরি এই জন্য যে, আমরা পুরোটার উপর নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এটা ছাড়া আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আর কোনো উপায় নেই। আর এটা ছাড়াও জীবনে নিজের জায়গা করে নিতে হলে খুন একটা অপরিহার্য বিষয়। আপনি বেডরুমে শুয়ে শুয়ে টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন বার্তা যাচাই করবেন আর আয়েশ করে ভাববেন কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক; মনে করছেন আমি আপনার চিন্তা গোনায় ধরি, অথচ বাস্তব হলো আমি যা করি তাই–ই সঠিক, আপনার চিন্তা যাইহোক আমিই সঠিক। এটা আপনার মাথায় গেঁথে নেওয়া দরকার যে, আমি যা করি, আমরা যা করি এটাই সঠিক।
শিশু হত্যার বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই৷ এটা সত্য। এবং এটা আপনাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে। আপনি ন্যাকামো করে পার পাবেন না। এইসব ভিন্ন মতের জায়গা আমরা সব সমূলে ধ্বংস করবই। তখন দেখবেন, আমরা যে সঠিক এটা ভাবতে আপনার মোটেই বেগ পেতে হচ্ছে না। আর এ জন্যই শিশু হত্যা জরুরি, যেমন অন্যান্য হত্যাও জরুরি।
আমি আরো কয়েকটা ঘটনাকে সামনে আনি। দেখুন যুক্তি কি বলে। এই যে হত্যাকাণ্ড, এখানে দোষ কার? নিশ্চয় ওইসব শিশু, যারা আমাদের উপর আত্মঘাতী বোমা হামলা করেছিল; ওরা এবং ওদের বাপ–মা গুরুজনেরা, যারা ওদেরকে প্রস্তুত করেছে, তারাই দোষী। নাহলে আমরা চকলেট খেতে দিয়েছি এমন অসংখ্য শিশু আজ দুনিয়ার খেদমত করে যাচ্ছে। যাদের কারণেই আমাদের মেশিনগুলো থেকে এখনো আপনি এই সংবাদ পেয়ে আসছেন যে, মন্দ কী এবং কেন।
আরেকটা ছোট্ট গল্প আছে। এই গল্পটাও কিন্তু এটাই বলে যে, যার দরকার যেখানে তার সেখানেই থাকা উচিত। আমার কথা আপনার কাছে খাপছাড়া এলোমেলো মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলেই খাপছাড়া আর তালগোলে হয়ে গেছে। কারণ কী জানেন, ইদানিং আমাকে কারা যেন খুঁজছে। তারা চাচ্ছে আমি যা করছি তার জন্য আমাকে বিচারের সম্মুখীন করতে, মানে রীতিমতো কোর্ট–মার্শালের ডাক দিচ্ছে তারা। কিন্তু ওরা জানুক কোর্ট–মার্শাল জিনিসটাই আমাদের। আমরাই ওসব চালাই। আর তাছাড়া আমি আগেও বলেছি আমরা যা করি তাই–ই সঠিক, তাই–ই সত্য।
গল্পটা হলো কিছু ছাগলের। এই ছাগলগুলা সিংহকে ঘাস খেতে ডাকলো। সিংহ কি ঘাস খায় বলুন! সিংহকে ডাকা মানে সিংহের উপযুক্ত খাদ্যের ব্যবস্থা করা। সিংহকে ডাকার পর তার প্রতি যথাযথ সম্মান না করায় সিংহ পুরো ছাগলের পালকেই খেয়ে ফেলল।
আশা করি ধরতে পেরেছেন, আমি কী বলতে চাইছি। হ্যা এটা বাস্তব। এই জন্য এসব করার অধিকার আমাদের আছে। আমরা শিশু হত্যা করব। এতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনার অসুবিধা মনে হলে বার্তা দিন। সময় হলে আপনাকেও হত্যা করা হবে। এটা কোনো গল্প না। এটা ছিল এক ধরনের সরল জবানবন্দি। যাতে করে পরিষ্কার বুঝতে পারেন আমি কী করছি, কেন করছি আর আমার উদ্দেশ্য কী।
অনেক লেখা মাথা উপরে দিয়ে গেলেই মূল বিষয়টা বুঝতে পেরেছি।