মনীষী ওমর খৈয়ামকে নিয়ে প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে এত বেশি লেখালেখি হয়েছে যে তাঁর ব্যাপারে নতুন কোনো কথা তৈরি করা দুঃসাধ্য। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, যে–বিষয়ে যতবেশি আলোচনা ও কথাবার্তা হয় তাতে ততবেশি ভুল বোঝাবুঝি ও গোলমালের সৃষ্টি হয়। বেচারা খৈয়ামও এই আপদের শিকার হয়েছেন। তবে আপনারা যদি মনে করেন যে খৈয়াম সম্পর্কে আমার এই রচনা থেকে ভুল বোঝাবুঝি ও গোলমাল তো কমবেই না, বরং বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে তা ভুল ধারণা হবে। এটাও হতে পারে যে, আমার এই রচনা থেকে ওইসব ভুল বোঝাবুঝি ও গোলমালের জটিল জট খুলে যাবে। তাই আমিও এই দুঃসাধ্য কর্ম সম্পন্ন করতে বীর রুস্তমের দুঃসাহস দেখিয়েছি।
শুরুতেই আমরা সেসব গ্রন্থের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নেব যেগুলোতে মনীষী ওমর খৈয়ামের অবস্থাবলি ও তাঁর পরিপার্শ্বের বিবরণ রয়েছে। এ–গ্রন্থগুলোই তাঁর জীবনচরিতের উৎস ও সূত্র। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত তাঁর ওপর প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে সেগুলোর ওপরও আলোকপাত করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে প্রাচ্যে ওমর খৈয়ামকে নিয়ে যে–মাতামাতি করা হয় তার পুরোটাই পাশ্চাত্যের ইনসাফ ও অনুগ্রহের ফল। খৈয়ামের জীবনচরিত, অবস্থাবলি ও রচনাবলি, বিশেষ করে রুবাইয়াত কবিতার অনুসন্ধান, নিরীক্ষা ও প্রকাশের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন পাশ্চাত্যের পণ্ডিতগণ।
একইভাবে খৈয়ামের জীবনেতিহাসের প্রাচীন উৎসের অনুসন্ধান ও নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও পাশ্চাত্যের পণ্ডিতেররা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। এ–কারণে এটা অসঙ্গত নয় যে, আমরা প্রাচীন উৎসগুলোর আলোচনার পাশাপাশি সেগুলো যাঁরা আমাদের কাছে পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন তাঁদেরও উল্লেখ করব।
এক.
এই প্রসঙ্গে প্রথম যাঁর নাম আসবে তিনি হলেন ডাচ প্রাচ্যবিদ প্রফেসর হোট্স্মা (Martijn Theodoor Houtsma)। তাঁর পূর্বে খৈয়াম সম্পর্কে যা–কিছু লেখা হয়েছে তা সাধারণত নিযামুল মুল্ক ও হাসান সাবার সমকালীন কাহিনি। যা পরবর্তীকালের অনেকের ইতিহাসে ও বর্ণনায় পাওয়া যাবে। প্রফেসর হোট্স্মাই প্রথম ব্যক্তি যিনি এসব কাহিনির সূত্র ও পরম্পরাকে সংশয়ের দৃষ্টিতে বিদ্ধ করেছেন। আরবি ভাষায় ‘যুবদাতুন নুস্রাহ’ (زبدة النصرة) নামে সালজুকি রাজবংশের একটি ইতিহাস আছে। ‘যুবদাতুন নুস্রাহ’ গ্রন্থটির হাকিকত এরূপ : সুলতাম মাহমুদ সালজুকির মন্ত্রী আনু শিরওয়াঁ ইবনে খালিদ (মৃত্যু : ৫৩২ হি.) ফার্সি ভাষায় একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখেছিলেন। (এই আনু শিরওয়াঁর ইঙ্গিতেই আবু মুহাম্মদ আল–কাসিম হারিরি তাঁর বিখ্যাত ‘মাকামাতে হারিরি’ লিখেছিলেন।) কাতেব জেলবি (হাজি খলিফা)-এর বর্ণনামতে আনু শিরওয়াঁর এই সংক্ষিপ্ত ফার্সি ইতিহাসের নাম ছিল ‘ফুতুরু যামানিস সুদূর ওয়া সুদূরু যামানিল ফুতুর’ (فتور زمان الصدور وصدور زمان الفتور)। তারপর ইমাদুদ্দীন কাতিব আল–ইস্ফাহানি (মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইমাদ/আল–ইমাদ আল–কাতিব আল–ইস্ফাহানি, ৫১৯–৫৯৭ হি. / ১১২৫–১২০১ খ্রি.) ‘নুস্রাতুল ফাত্রাহ ওয়া উস্রাতুল ফিত্রাহ’ (نُصْرَة الفَترَة وَعُصرَةُ الفِطرَة) নামে আরবিতে সাহিত্যিকসুলভ আড়ম্বরপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে জোড়ায় জোড়ায় ছন্দ মিলিয়ে সালজুকিদের প্রাথমিক ইতিহাস ভূমিকা হিসেবে রচনা করেন। তিনি ওই বাগ্মিতাপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে ছন্দ মিলিয়ে আনু শিরওয়াঁর বইটির অনুবাদ করে তাঁর বইয়ে জুড়ে দেন। তারপর ফাত্হ ইবনে আলী আল–বুন্দারি (৫৮৬–৬৪৩ হি.) ‘নুস্রাতুল ফাত্রাহ’র আড়ম্বরতা ও টীকা–টিপ্পনি বাদ দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত নুসখা (কপি) তৈরি করেন, যার নাম ‘যুবদাতুন নাস্রাহ ওয়া নুখবাতুল আসরাহ’ (زبدة النصرة ونخبة العصرة)। এসব বইয়ের চাকচিক্যময় ভাষা ও ছন্দোময়তা থেকে অনুমান করা যায় যে, আবু মুহাম্মদ আল–কাসিম হারিরি বানোয়াট গল্পকাহিনি থেকে বের হয়ে ইতিহাসের ময়দানেও প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন।
প্রফেসর হোট্স্মা শেষ বইটি ১৮৮৯ সালে প্রকাশ করেন। এতে তিনি ফরাসি ভাষায় একটি ভূমিকা যুক্ত করেন। এই ভূমিকায় ওই বইয়ের একটি অনুচ্ছেদের একটি শব্দ (مكتب) থেকে—যাতে গুপ্ত ধর্মত্যাগী–সঙ্ঘের উল্লেখ রয়েছে এবং হাসান সাবার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে—বোঝানো হয়েছে যে, হাসান সাবা ও অন্যরা যে–সালজুকি মন্ত্রীর সমসাময়িক ও সমবয়স্ক ছিলেন তিনি হলেন এই আনু শিরওয়াঁ ইবনে খালিদ। এই ভূমিকা খৈয়াম, নিযামুল মুল্ক ও হাসান সাবার চিত্রগ্রাহী গল্পগুলোকে সবার চোখে সন্দেহযুক্ত বানিয়ে দিয়েছে এবং প্রকৃত ওমর খৈয়ামের পরিচয় লাভের জন্য মানুষের মধ্যে অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি করেছে।
দুই.
খৈয়ামের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের ওপর ইউরোপের মধ্যে সর্বপ্রথম যাঁর চোখ পড়ে তিনি হলেন রুশ প্রাচ্যবিদ ভ্যালেন্টিন ঝুকোভ্স্কি (Valentin Zhukovski)। তিনি ১৮৯৭ সালে খৈয়ামের ওপর রুশ ভাষায় একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখেন। এ–প্রবন্ধটি সেইন্ট পিটার্সবার্গে রক্ষিত ‘আল–মুযাফারিয়াহ’ (অষ–গুঁধভভধৎরুব) নামের একটি প্রবন্ধ–সঙ্কলনে অন্তর্ভুক্ত আছে।[1]ড. ডেনিসন রস দ্য রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে Al-Muzaffariye : containing a Recent Contribution to the Study of … Continue reading প্রবন্ধটির দুটি অংশ :
প্রথম অংশে গ্রহণযোগ্য আরবি ও ফার্সি গ্রন্থাবলির হুবহু সেসব উদ্ধৃতি রয়েছে যেগুলোতে ঝুকোভ্স্কি মনীষী খৈয়ামের অবস্থা বা নামের উল্লেখ পেয়েছেন। প্রবন্ধটির দ্বিতীয় অংশে রয়েছে মনীষী খৈয়ামের ৮৪টি রুবাইয়াত কবিতা। লেখক দেখতে পেয়েছিলেন যে, এগুলো অন্যান্য কবির রুবাইয়াত কবিতার সঙ্গে মিশ্রিত ও তাঁদেরই কবিতা বলে বর্ণিত। এ–কারণে তিনি এগুলোকে ‘ভবঘুরে রুবাইয়াত’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। ঝুকোভ্স্কি তাঁর ওই প্রবন্ধে খৈয়ামের জীবনচরিতে ঘটনাবলি নিম্নবর্ণিত লেখকগণের সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন :
১. নুযহাতুল আরওয়াহ ওয়া রাওযাতুল আফরাহ ফী তারীখিল হুকামা ওয়াল ফালাসিফাহ (نزهة الأرواح وروضة الأفراح في تاريخ الحكماء والفلاسفة), শামসুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে মাহমুদ শাহারযুরী, রচনাকাল : ৫৮৬–৬১১ হি.;
২. মিরসাদুল ইবাদ মিনাল মাবদাঅি ইলাল মা‘আদ (مرصاد العباد من المبدأ إلى المعاد), শায়খ নাজমুদ্দীন আবু বকর রাযী (দায়া নামে পরিচিত), রচনাকাল : ৬২০ হি.;
৩. তারীখুল হুকামা (تاريخ الحكماء), কাযি আকরাম জামালুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে ইউসুফ কুতফী, রচনাকাল : ৬২৪–৬৪৬ হি.;
৪. ফিরদাউস আত–তাওয়ারীখ (فردوس التواریخ), মওলানা খসরু আবারকোহী (مولانا خسرو ابرقوهی), রচনাকাল : ৮০৮ হি.;
৫. তারীখে আলফি, মুল্লা আহমদ নাসরুল্লাহ ঠাট্টভি সিন্ধি, রচনাকাল : ১০০০ হি.।
তিন.
ঝুকোভ্স্কির ওই প্রবন্ধটির ইংরেজি অনুবাদ করেন ড. ডেনিসন রস (Sir Edward Dennison Ross) এবং তা ১৮৯৮ সালের এপ্রিল মাসে দ্য রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশ করেন। এর প্রভাব হল এই যে, ইংরেজ প্রাচ্যবিদদের মধ্যেও খৈয়ামের ব্যাপারে অনুসন্ধিৎসা ও গবেষণার প্রেরণা আন্দোলিত হয়ে উঠল।
প্রফেসর ব্রাউন (Edward Granville Browne) ১৮৯৯ সালে দ্য রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে (পৃ. ৪০৯–৪১১) একটি ছোট প্রবন্ধ লেখেন। (১৯২০ সালে আমি কেমব্রিজে প্রফেসর ব্রাউনের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্মান লাভ করি।) এই প্রবন্ধে তিনি খৈয়ামের জীবনচরিতের কয়েকটি নতুন উৎসের সন্ধান দেন। তা ছাড়া, বিশেষভাবে তিনি মোগলদের ইতিহাস জামে‘ আত–তারীখের একটি অংশ প্রকাশ করেন। যেখানে হাসান সাবা ও গুপ্তসঙ্ঘের প্রসঙ্গে ওমর খৈয়াম, নিযামুল মুল্ক ও হাসান সাবার সমসাময়িক হওয়ার ওই পুরনো কাহিনিই বিবৃত হয়েছে। প্রফেসর ব্রাউনের প্রবন্ধের শিরোনাম হল ‘ওমর খৈয়ামের ওপর অধিকতর আলোকপাত’ (Yet More Light on Umar-i-Khayym)।
চার.
১৯০০ সালে London: Meihuen and Co. থেকে খৈয়ামের রুবাইয়াতের এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ট–কৃত ইংরেজি অনুবাদের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
এতে ড. ডেনিসন রস ৯১ পৃষ্ঠার একটি ভূমিকা লেখেন। এই ভূমিকাকে তিনি তিনটি অনুচ্ছেদে ভাগ করেছেন। প্রথম অনুচ্ছেদে খৈয়ামের ঐতিহাসিক যুগের বিবরণ দিয়েছেন, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে খৈয়ামের ব্যক্তিগত অবস্থাবলির বর্ণনা দিয়েছেন এবং তৃতীয় অনুচ্ছেদে ফিটজেরাল্ডের অনুবাদের ব্যবচ্ছেদ করেছেন। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ৩৮ থেকে ৭৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ব্যক্তিগত অবস্থার বর্ণনা রয়েছে। এতে ড. রস নিজের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বিবরণের সাহায্যে ঝুকোভ্স্কি ও ব্রাউনের প্রবন্ধের ও হোট্স্মার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা করেছেন এবং হোট্স্মার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দিয়েছেন। তা ছাড়া তিনি ওমর খৈয়ামের জন্মতারিখ ও মৃত্যুতারিখ নির্দিষ্টকরণে অসম্পূর্ণ প্রচেষ্টা ব্যয় করেছেন।
ড. রস তাঁর ভূমিকা–রচনায় নিম্নবর্ণিত গ্রন্থাবলি থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন :
১. চাহার মাকালা বা প্রবন্ধ চতুষ্টয় (রচনাশৈলী, কবিতা, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসা–বিষয়ক), লেখক : আন–নিযামী আল–আরুযী আল–সমরকন্দী, রচনাকাল : ৫৫২ হি. (প্রায়);
২. ফিরদাউস আত–তাওয়ারীখ;
৩. নুযহাতুল আরওয়াহ ওয়া রাওযাতুল আফরাহ;
৪. মিরসাদুল ইবাদ মিনাল মাবদাঅি ইলাল মা‘আদ;
৫. তারীখুল হুকামা, কুতফী;
৬. আসারুল বিলাদ, কাযবিনী;
৭. জামে‘ আত–তাওয়ারীখ, রশীদুদ্দীন ফাদ্লুল্লাহ;
৮. তারীখে আলফি, থাট্টাভি;
৯. রিয়াদ আশ–শুআরা;
১০. আল–কামিল, ইবনে আসীর।
পাঁচ.
এরপর প্রফেসর ব্রাউন তাঁর বিখ্যাত বই লিটারেরি হিস্ট্রি অফ পার্সিয়া (A literary history of Persia) লিখতে শুরু করেন। ১৯০৬ সালে এটির দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। এতে খৈয়াম ও হাসান সাবার অবস্থা সম্পর্কে উপর্যুক্ত তথ্যাবলি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে একত্র করা হয়েছে। এসব আলোচনায় অল্প অল্প নতুন তথ্যও এসেছে। তিনি নিম্নবর্ণিত উৎসগুলো থেকে ঐতিহাসিক বিন্যাস অনুসারে উদ্ধৃতি দিয়েছেন :
১. চাহার মাকালা বা প্রবন্ধ চতুষ্টয় (রচনাশৈলী, কবিতা, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসা–বিষয়ক), লেখক : আন–নিযামী আল–আরুযী আল–সমরকন্দী, রচনাকাল : ৫৫২ হি. (প্রায়);
২. মিরসাদুল ইবাদ মিনাল মাবদাঅি ইলাল মা‘আদ;
৩. তারীখুল হুকামা, কুতফী;
৪. নুযহাতুল আরওয়াহ ওয়া রাওযাতুল আফরাহ;
৫. আসারুল বিলাদ, কাযবিনী;
৬. জামে‘ আত–তাওয়ারীখ, রশীদুদ্দীন ফাদ্লুল্লাহ;
৭. ফিরদাউস আত–তাওয়ারীখ;
৮. তারীখে আলফি, থাট্টাভি;
৯. কাশফ আয–যুনুন, হাজী খলিফা।
ছয়.
আল্লামা আবদুল ওয়াহাব কাযবিনী ইরানের বিদ্যমান আলেমগণের মধ্যে অত্যন্ত যোগ্য ও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। (১৯২০ সালে আমার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের মর্যাদা লাভ হয়।) তিনি প্রফেসর ব্রাউনের তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত দক্ষতা ও সূক্ষ্মতার সঙ্গে গিব মেমোরিয়াল সিরিজের[2]ই. জে. ডব্লিউ. গিব মেমোরিয়াল সিরিজ হল একটি প্রাচ্যবাদী বইয়ের সিরিজ যাতে … Continue reading কয়েকটি বইয়ের বিশুদ্ধতা নিরূপণ করেছেন, টীকা সংযোজন করেছেন ও পর্যালোচনা লিখেছেন। এই সিরিজে ছন্দ–বিষয়ক সমরকন্দী প্রবন্ধ চতুষ্টয়ও রয়েছে। আল্লামা আবদুল ওয়াহাব ১৯০৯ সালে এগুলোর বিশুদ্ধতা নিরূপণ, টীকা লিখন ও পরিশিষ্ট সংযোজনের কাজ সম্পন্ন করেছেন। পরিশিষ্টে তিনি খৈয়াম সম্পর্কে প্রফেসর ব্রাউনের রচনার সারকথা ফার্সিতে অনুবাদ করেছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে কিছু টুকরো কথা যুক্ত করেছেন।
মূল উৎসগুলোর সঙ্গে আল্লামা কাযবিনী কেবল একটি উৎস অর্থাৎ পারসিক কবি খাকানীর (১১২০–১১৯৯) একটি কবিতা যুক্ত করেছেন। এই কবিতায় খৈয়ামের নাম রয়েছে। এই উৎসগুলোর ঐতিহাসিক বিন্যাস নিম্নরূপ :
১. চাহার মাকালা বা প্রবন্ধ চতুষ্টয় (রচনাশৈলী, কবিতা, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসা–বিষয়ক), লেখক : আন–নিযামী আল–আরুযী আল–সমরকন্দী, রচনাকাল : ৫৫২ হি. (প্রায়);
২. খাকানির (মৃত্যু : ৫৯৫ হি.) একটি কবিতা;
৩. নুযহাতুল আরওয়াহ ওয়া রাওযাতুল আফরাহ, রচনাকাল : ৫৮৬–৬১১ হি.;
৪. মিরসাদুল ইবাদ মিনাল মাবদাঅি ইলাল মা‘আদ, রচনাকাল : ৬২০ হি.;
৫. তারীখ আল–কামিল, ইবনে আসীর, ৪৬৯ হিজরির ঘটনাবলি, রচনাকাল : ৬২৮ হি.;
৬. আখবারুল উলামা বি–আখবারিল হুকামা, জামালুদ্দীন কুতফী, রচনাকাল : ৬২৪–৬৪৬ হি.;
৭. আসারুল বিলাদ, যাকারিয়া কাযবিনী, রচনাকাল: ৬৭৪ হি.;
৮. জামে‘ আত–তাওয়ারীখ, রশীদুদ্দীন ফাদ্লুল্লাহ (নিহত : ৭১৮ হি.);
৯. ফিরদাউস আত–তাওয়ারীখ, খসরু আবারকোহী, রচনাকাল : ৮০৮ হি.;
১০. তারীখে আলফি, মুল্লা আহমদ নাসরুল্লাহ ঠাট্টভি সিন্ধি, রচনাকাল : ১০০০ হি.।
সাত.
এরপর গত দুই বছর পর্যন্ত কেউ খৈয়ামের অবস্থা বা জীবনচরিত–সম্পর্কিত কোনো নতুন উৎস যুক্ত করেননি। কিন্তু সাধারণ ফার্সি ইতিহাস ও চরিতমূলক গ্রন্থের অনুসন্ধান করলে উপর্যুক্ত দশটি উৎসের সঙ্গে আরো দশটি উৎস যুক্ত করা যাবে। যেমন : তারীখে গাযিদাহ (হামদুল্লাহ সুফী), রাওযাতুস সাফা (মীর খন্দ), হাবিবুস সিয়ার (খাওয়ান্দ মীর), হাফ্ত ইকলিম (আমীন আহমদ রাযী), তাযকিরাতুশ শুআরা (দৌলত শাহ সমরকন্দী), আদশকিদাহ আযার (পারসিক কবিদের জীবনচরিত, লুত্ফ আলী বেগ ইবনে আকা খান) য়াদ বাইদা (সাধারণ কবিদের জীবনচরিত, মীর গোলাম আলী আযাদ বালগ্রামি), মাজমাউল ফুসাহা (রেজাকুলি খান হেদায়েত), তাযকেরা মাখযানুল গারায়িব (আহমদ আলী সান্দিলাভি)। কিন্তু কেবল ওমর খৈয়ামের নাম ও পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি ছাড়া এসব গ্রন্থে নতুন কিছুই নেই। তবে প্রাচীনত্বের বিচারে যেখানে কেবল কয়েকটি শব্দের জন্য মিরসাদুল ইবাদ ও আসারুল বিলাদ থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া জরুরি, সেখানে তারীখে গাযিদাহ উপেক্ষণীয় নয়।
খৈয়ামের জীবচরিতের উৎস ও সূত্র : একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা (২য় কিস্তি)
তথ্যসূত্র:
↑1 | ড. ডেনিসন রস দ্য রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে Al-Muzaffariye : containing a Recent Contribution to the Study of ‘Omar Khayyam নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন (১৮৯৮)। |
---|---|
↑2 | ই. জে. ডব্লিউ. গিব মেমোরিয়াল সিরিজ হল একটি প্রাচ্যবাদী বইয়ের সিরিজ যাতে ফার্সি, তুর্কি ও আরব ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন ও ধর্মবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এতে ইংরেজি অনুবাদের অনেক কাজও রয়েছে। তাদের কিছু কাজ ইউনেস্কো কালেকশন অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ওয়ার্কস–এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছ। সিরিজটি স্কটিশ প্রাচ্যবিদ ইলিয়াস জন উইলকিনসন গিব (১৮৫৭–১৯০১)-এর স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত। |
শুধু পড়ে গেলাম তবে বুজতে পারি নি। ধন্যবাদ আপনাদের।