দুয়ারে পাষাণ তালা (প্রথম কিস্তি)
মসজিদের পাশ দিয়া একটা সরু পায়দল পথ চইলা গেছে গ্রামের দিকে। সেই পথে মালিক জহির আর তার চাকর মজিদ হাঁটে। মজিদের হাতে লন্ঠন। সেটার আলোয় জংলি ঘাসপাতার মাঝে দিয়া রাস্তা বাহির হয়। মসজিদের সীমানার ভিতরে বিশাল বিশাল গাছ। ওগুলার ঘন ডালপালা পথের ওপর নুইয়া পড়ছে, যেন কানে পইড়া কোনো গোপন কথা বলতে চায়। আচানক একটা ডালে হুতোম পেঁচা ঘূৎকার কইরা ওঠে। ঘাবড়াইয়া যায় মালিক জহির। ব্যস্ত হইয়া পা ফেলার গতি বাড়ায়। শক্ত পাঞ্জায় আঁকড়ায়ে ধরে লাঠি। হুতোম পেঁচার ডাকরে অশুভ ভাবা হয়। কিন্তু নিশ্চিন্ত মনে হাঁইটা যায় মজিদ—গাট্টাগোট্টা বেঁটেখাটো দেহ, মাজা খানিকটা ঝুঁইকা পড়া, সাদা দাড়ি, কপালে দিনরাত এবাদতের দরুন গোলাকার কালো দাগ, কী যেন ভাবতেছে।
‘মসজিদে আসস নাই কেন মজিদ? ওয়াজেদ ভালো ইমাম। ওর সুরেলা কেরাত শুনলে তোর পরান জুড়াইত।’ ঘাবড়ানি কাটাইতে কথা খোঁজে মালিক জহির।
মাটিতে খক কইরা একদলা থুথু ফেলে মজিদ, যেন গলায় মহা কিছু ফাঁইসা গেছিল।
‘ওই ছোকরা ওয়াজেদের কথা বলতেছেন? এই বয়সে ও ইমামতির কী বোঝে? খোদার কসম, ও তো আলিফ-লাম-মিমের মানে পর্যন্ত জানে না। বাবাজি বাঁইচা থাকলে জীবনেও ওরে ইমাম বানাইতেন না। কাল পয়দা হইল আর আজ নাকি ইমাম সাইজা বসছে.. হাহ।’ কটু গলায় বলে মজিদ। বলতে বলতে বিদ্রুপমাখা ঈষৎ হাসি নিয়া মালিক জহিরের দিকে তাকায়।
রাগে লাল হইয়া ওঠে মালিক জহিরের চেহারা। আজ পর্যন্ত কেউ তার ফয়সালারে টকরাইতে পারে নাই। তার সিদ্ধান্তরে নাকচ করার সাহস কারও হয় নাই। সেখানে আজ কিনা তার বুড়া চাকর তার কাজকর্মের মজাক উড়াইতেছে। মজিদের জায়গায় অন্য কেউ হইলে এক রামথাপ্পড় খাইত সে। কিন্তু মজিদরে মারা অত সহজ না। মজিদ তার চাকরও বটে আবার না-ও বটে। বহুত পুরানা মুলাজেম[1]চাকর, কর্মচারী সে। মালিক জহিরের মরহুম বাপজান নিজে তারে চাকর রাখছিলেন। মজিদও জানপ্রাণ দিয়া তার মনিবের খেদমত করছিল। সেই সূত্রে সে খালি মালিক জহিররেই না, তার বাচ্চাগুলারেও কোলেপিঠে কইরা মানুষ করছে, তাদের নেগাহবানি[2]দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণ করছে। তা ছাড়া সে-ই মালিক জহিররে কোট ফাতাহ খানের প্রতিটা সমস্যার অলিগলি-পথঘাট-উপর-নিচ-ঢালু-সমতল চিনাইছে। বাধ্য হইয়া মালিক জহির চুপ থাকে। হাবিজাবি নানান ভাবনা মাথায় নিয়া, দমাইয়া রাখা রাগের মধ্যে খাবি খাইতে খাইতে মজিদের পিছন পিছন হাঁটে।
খানিকক্ষণ পর বহুকষ্টে নিজের আওয়াজরে কাবুর মধ্যে রাইখা মালিক জহির বলে, ‘মজিদ.. চাকর আমার.. তুই কেন খুশি না? আমার কপাল ভালো আমি ওয়াজেদরে পাইছি। তার গলার মিঠা আওয়াজে চুম্বকের টান আছে। তার সুরেলা কেরাত শোনার জন্য প্রতিদিন মুসল্লির সংখ্যা বাড়তেছে। তা ছাড়া ওয়াজেদ হাফেজে কোরআন। গ্রামের বাচ্চাগোরে সে হাফেজ বানায়। দ্বীনের এলেম শিখায়। উর্দুর তালিম দেয়। তুই তো জানস, গ্রামের মানুষের ওপর আমার কত জিম্মাদারি। তুই তো জানস, হিন্দুস্তান বণ্টিত হইয়া এখন পাকিস্তান পয়দা হইছে। কাশ্মিরে যুদ্ধ চলতেছে। সারা দেশ হিন্দু-মুসলমান বিবাদে জড়াইয়া পড়ছে। এখন আমাদের বাচ্চাদের এলেম হাসিল অতীব জরুরি।’
মজিদ যেন কিছুই শোনে নাই ধরনে মাথা নিচু কইরা হাঁটতে থাকে। আকাশে জনমের অন্ধকার। কোথায় যেন নিখোঁজ হইছে তারাগুলা। সুনসান চারিদিকে। খালি পথচারীর পায়ের খসখস শব্দ নীরবতা ভাঙতে ভাঙতে আগাইয়া যায়। মাঝেমধ্যে গ্রামের দিক থেকে ভাইসা আসে পটকা ফাটার আওয়াজ। এরপর আবারও ঘন হইয়া আসে নিশুতি। অলক্ষণে পেঁচা দ্বিতীয় দফা ডাইকা ওঠে। মহা জঘন্য সেই ঘূৎকার। আঁতকে ওঠে মালিক জহির।
‘মজিদ.. এই অপয়া উল্লুটারে খতম কর।’ ঘাবড়ানো গলায় বলে সে।
‘জি মালিক। আপনার পবিত্র নির্দেশনা আমি ইমাম ওয়াজেদ পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দেবো। মসজিদ দেখাশোনা তো উনারই দায়িত্ব। আর এই মহামতি বৃক্ষ মসজিদের সীমানার ভিতরে পড়ছে।’ মজিদ বাঁকা জবাব দেয়।
‘আহম্মক.. নিকম্মা.. আমি জানি ওয়াজেদরে নিয়া তোর কীসের এত জ্বালা। কারণ ওয়াজেদ তোর জায়গা লইছে, তুই এখন আর ইমাম নাই।’ রাগে মালিক জহির মুষ্টি পাকায়। চাকররে পিটানো থেকে বহু কষ্টে নিজেরে সামলাইয়া রাখে।
তিক্ত সত্যটা শুইনা কষ্ট লাগে মজিদের। যখন থেকে ওয়াজেদ ইমাম হইছে, ওরে জনমের ঘিন্না করে সে। কিন্তু কারও সামনে ওই ঘিন্না উগরাইলে উলটা তারই মজাক উড়ানো হয়। অতীতে মালিক জহিরের কাছে ওয়াজেদের গিল্লা গাওয়া হইলে সে শুনছে-শোনে নাই ভাব কইরা এড়াইয়া গেছে, পাত্তা দেয় নাই। কিন্তু আজকে ভালোই ডাঁটতেছে মালিক জহির। তার আওয়াজে ধমকের তেজ। তার রাগের পরিণাম কী হবে জানে মজিদ।
একদা এই জহিররেই সে কোলেপিঠে কইরা মানুষ করছে। তার ছোটো-বড়ো প্রতিটা ইচ্ছারে সম্মান করছে। আর সেই জহিরই কিনা মালিক হইয়া না-কেবল তারে একটা সম্মানজনক পদ থেকে বরখাস্ত করছে, বরং আজকে তো তারে খাড়া অপমানও কইরা সারল।
অথচ সে একজন মুত্তাকি-পরহেজগার ইনসান। বিগত তিরিশ বছর ধইরা তার এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয় নাই। কোরআনের বহু আয়াত তার মুখস্থ। কিন্তু তার মালিকের চোখে এগুলার কোনো মূল্যই নাই! ব্যাপারটা মজিদরে একটু বেশিই পীড়া দেয়। দুঃখে তার চোখ বন্ধ হইয়া আসে। মাথা ঝুঁকাইয়া পায়দল পথে হাঁটতে থাকে সে। আচানক লন্ঠনের আলোয় খেয়াল করে, ঘাসের ভিতরে কীসের যেন নড়াচড়া। এক মুহূর্তের জন্য ভাবে, সে নিজে রাস্তা থেকে সটকে পড়ে, আর জহিররে তার মুখামুখি হইতে দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। এটা সম্ভব না তার পক্ষে। জহিরের জন্য মহব্বত আছে তার দিলে। সে এখনও তার কাছে সেই ছোটোবেলার জহির, যারে সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করা তার ওপর ফরজ।
মজিদ হাত উঠাইয়া মালিক জহিররে থামার ইশারা করে। তারপর শিকারি পশুর মতন পা টিপে টিপে বড়ো সতর্কতার সহিত ঘাসের ওপর ঝুঁইকা পড়ে এবং খপ কইরা থাবা দিয়া কী যেন ধরার পর যখন সে সটান খাড়া হয়, তখন দেখা যায় তার হাতে একটা সাপ বেধড়ক তড়পাইতেছে। প্রাণীটার হিসহিসানির সাথে বর্শার ফলার মতন বাহির হইয়া আসা জিহ্বা, আর লন্ঠনের লালচে আলোয় হলুদ চামড়ার ওপর কালো ছোপ ছোপ দাগ দেইখা মনে হয় যেন সাক্ষাৎ আজরাইল। জহির আপাদমস্তক ঝাঁকি খাইয়া যায়। চাকর মজিদ শীতল চাউনিতে বিদ্ধ করতেছে তারে। তার চোখে বিজলির চমক; চেহারায় বিজয়ীর হাসি। তারে দেখতে লাগে ওই দরবেশের মতন, যে নিজের রুহানি শক্তিবলে অনেক জিনিস আগাম জানতে পারে। মজিদের যেন জানাই ছিল যে একটা সাপ মওতের সুরত লইয়া ঘাপটি মাইরা বইসা আছে ঘাসের আড়ালে, শিকারের ইন্তেজারে। অতএব যেই না সে ছোবল দিবে, তার আগেই সে মহা দক্ষতায় তারে কাবু কইরা ফেলছে।
ভয়ে পাথর হইয়া যায় জহির। তার চেহারা ফ্যাকাশে হইয়া পড়ে এবং অজান্তেই হাত দুইখান আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে উঁচু হইয়া ওঠে, যেন ওই বিষধর সাপ মজিদের কবল থেকে ছুটকারা পাইয়া তারে ছোবল বসাইয়া দিবে। তারে দেখায় ওই ভয়কাতরা বাচ্চার মতন, যার একটা আশ্রয়ের প্রয়োজন, আর এই মুহূর্তে তা আপন মুলাজেমের কাছ থেকেই পাওয়া সম্ভব।
‘ওরে আল্লাহ.. সর্প.. মমম.. মার ওইটারে মজিদ.. এখনই মার,’ জহির তোতলায়।
মজিদ সর্পটারে সজোরে একটা বৃক্ষের গায়ে আছাড় মারে। একটা মৃদু মটাৎ শব্দে ভাইঙা যায় সর্পের নাজুক শিরদাঁড়ার হাড়। মজিদ নেতায়ে পড়া সর্পটারে জুতার তলায় পিষে এবং লাত্থি মাইরা দূরে নিয়া ফালায়। তার শ্বাস পড়তেছে জোরে জোরে, গরম হইয়া উঠছে শরীর, যেন মহা শক্তিধর কোনো দুশমনের লগে মাত্রই কুস্তি দিয়া সারল। তার সফেদ দাড়ির গোড়ায় বিন্দু বিন্দু ঘাম এবং দৃষ্টি জহিরের দিকে।
‘খোদার হইয়া যাওয়ার জন্য কোনো এলেমের জরুরত হয় না মালিক,’ সিনা বরাবর চাপড় মারতে মারতে বলে মজিদ। জহির কোনো জবাব দেওয়ার আগেই বিষানো হাসি হাসে সে, ‘মরহুম বাবাজি যখন হজে আমারে নিয়া মক্কায় গেছিলেন, তখনই তারে আমি পাইয়া গেছিলাম, যার খোঁজে সবাই হন্যে হইয়া ফেরে। খোদা এইখানে বসত করেন মালিক, এইখানে,’ মজিদ দ্বিতীয় দফা তার সিনায় চাপড় মারে এবং হাঁটা শুরু করে।
জহির পরাজিত মানুষের মতন দুর্বল পায়ে নওকরের পিছু নেয়। তার মাথা ঝুঁকানো। পায়ে কেউ যেন দশমনা একটা পাথর বাইন্ধা দিছে। হাতের মুঠা একটু আগেই যেটা নওকররে মারার জন্য শক্ত হইয়া ছিল তা এখন ঢিলা। নিজেরে তার মনে হয় কোনো জানোয়ারের মতন, যারে গলায় রশি পরাইয়া টাইনা নেওয়া হইতেছে।
হাঁটতে হাঁটতে দুজনে গ্রামে আইসা পৌঁছে। জহিররে দেইখা কাঁচা ঘরের সামনে বইসা থাকা মহিলারা কুঠুরির ভিতর গায়েব হয় এবং পুরুষেরা তাজিমের সহিত মাথা ঝুঁকাইয়া সালাম করে। জহির জবাব দেয় না। অনুতাপে তার অনুভূতিরা সব বিকল হইছে। কী এক গায়েবি শক্তির প্রভাবে চোখ তুইলা তাকানোর হিম্মত নাই তার। ক্ষণে ক্ষণে তার মনে হয়, মজিদরে ইমামের মর্তবা থেকে হটাইয়া তার সাথে না-ইনসাফি করছে সে।
জীবন-মরণ তো খোদাতালার হাতে। তারই শুকরিয়া আদায় করা উচিত আমার। মজিদ তো একটা তুচ্ছ অসিলা মাত্র, যার মাধ্যমে খোদাতালা আমার জান বাঁচাইছেন।
ভাবতে ভাবতে জহিরের শরমিন্দগি খানিকটা কমে। তারপরও মজিদের চোখে চোখ মিলানো সম্ভব হয় না। পস্তানিভাব এত সহজে কাটে না। হাবেলিতে ঢোকার সময় সে মজিদরে ভিতরে আসতে মানা কইরা দেয়।
ও খোদা! নিজের বড়ত্ব আমি জাহির কইরা ফেলছি। মজিদ বিড়বিড় করতে করতে নিজের কুঠুরির দিকে যায়।
আমার মধ্যে যে পির-ফকিরের সিফত আছে তা আমার মালিকের জানা ছিল না। কিন্তু আজ প্রকাশ হইয়া গেল। খোদা ইনসাফ করনেওয়ালা জাত, তিনি জরুর ইনসাফ করবেন।
হাবেলির কাছেই মজিদের কুঠুরি। পদাঘাত করতেই দরজা খুইলা যায়, ভাগ্যদুয়ারের মতন, যা হিম্মতের পদাঘাতে হাট কইরা খুইলা যায়।
ঘরের ভিতর কাপড়চোপড় আর কাঁথাকম্বলের গন্ধ কাঁচা শরাবের মতন নাকে লাগে। মজিদ কুঠুরির ভিতর থেকে খাটিয়া বাহির করে এবং তার ওপর তোশক বিছায়। আবার ঘরে ফিরা আসে এবং তাকের কাছে যায়, যেখানে লন্ঠন, হুক্কা, তামাক আর দিয়াশলাইয়ের প্যাকেট রাখা আছে। হুক্কা উঠাইয়া নেয় সে। কলকির ভিতরে তামাক ভইরা আগুন জ্বালায়। জুতা খুইলা খাটিয়ার ওপর বসে। এরপর ধীরে ধীরে হুক্কা টানতে শুরু করে। আজকের তামাকটা একটু বেশিই মজা লাগে। তার চোখের সামনে ঘুরতে থাকে খানিকক্ষণ আগের ঘটনা।
রাতের বেলা গাঁওগেরামের পথেঘাটে সাপ-বিচ্ছুর উৎপাত তেমন আশ্চর্যের কিছু না। মজিদ ওগুলার মোকাবেলা করতে জানে। কিন্তু বয়সজনিত দুর্বলতা তার স্বভাবে বাড়তি সতর্কতা আনছে। সত্যি বলতে এখন ওগুলারে ভয় পায় সে।
অবশ্য কি যৌবনে কি বার্ধক্যে, ভয়ডর কোনোকালেই মজিদরে কাবু করতে পারে নাই। যতদিন তার গায়ে জোর ছিল, তার সাহসিকতার নামডাক ছিল চারিদিকে। অন্যান্য জায়গিরদারের এলাকায় যাইয়া তাদেরই কিষানদের ধমকধামক দিয়া আসা তার কাছে কোনো ব্যাপারই ছিল না। এখন যদিও বার্ধক্য ও বার্ধক্যজনিত কমজোরির দরুন সে দিন দিন অপারগ হইয়া পড়তেছে, তারপরও আজ কোত্থেকে যেন বীরত্ব আইসা ভর করছিল তার দেহে। খানিক সময়ের জন্য সে হইয়া উঠছিল সেই পুরানা মজিদ—ভয়ডরহীন, বুকের পাটাওয়ালা, যে জানের বাজি লাগাইতে জানে এবং যেই কারণে সে মালিক জহির ও তার মরহুম বাপজানের প্রিয়পাত্র।
‘রব্বা.. তুমি ইনসাফকারী। এই দাসেরে নিয়া তোমার সাচ্চা পরোয়া আছে,’ মজিদ ক্ষীণ কণ্ঠে বলে। আবেগে বন্ধ হইয়া আসে তার চোখ। এক গাঢ় আন্ধারে নিমজ্জিত হয় সে, যেখানে খোদার জালওয়া[3]প্রকাশ। সুফিদের এক বিশেষ হালত, যা গভীর মুরাকাবার পর পয়দা হয়। আছে, যা খালি সে-ই অনুভব করতে পারে।
এক যুবতি নারী মালিক জহিরের হাবেলি থেকে বাহির হয়। তার চুড়ির ঝনঝন শব্দ আর কোলের বাচ্চার প্যানপ্যান কান্না ধীরে ধীরে মজিদের নিকটবর্তী হয়। নুরা—কোলে দুই বছরের বাচ্চা আর মাথায় বড়ো একটা খাবারের তশতরি লইয়া তার দিকে আগাইয়া আসতে থাকে। রাতের খাবার।
‘খানা মসজিদে নিয়া যা নুরা’, হুকুমের স্বরে বলে মজিদ, নুরার দিকে না তাকাইয়া।
‘মসজিদে নিয়া যাব?’ হয়রান হয় নুরা। নিজের কানরে বিশ্বাস করতে পারে না।
‘হ। ইমামরে যাইয়া দিবি। সে বিশেষ মর্তবার অধিকারী। পয়লা তারই খাওয়া উচিত।’ আবেগথরথর গলায় বলে মজিদ। বলতে বলতে ভরা চোখে নুরার দিকে তাকায়।
‘কিন্তু চাচা.. খাবার তো তোমার জন্যে, আর তুমি হুকুম দিয়া রাখছিলা যে আমি ভুইলাও যেন মসজিদে পা না রাখি।’ নুরার গলায় বিরক্তি ধরা পড়ে।
দুয়ারে পাষাণ তালা (তৃতীয় কিস্তি)
তথ্যসূত্র: