রাবিয়া সাহিন ফুল্লরা’র কবিতা


আমার ত এখন দুইটা হার্ট


নিজেরে যে একলা ভাবুম

ভাবতে গেলেই লাগে যে,

আমার ত এখন দুইটা হার্ট!

একটা আমার

আরেকটা যে কার!

আমি খাইলেই যার খাওয়া হয়ে যায়

আমি হাঁটলেই যার ঘুম পায়

আমার উমে যে শান্তি পায়

হাত-পা নাড়ায়

 

যদিও দিনে দিনে টের পাই আমি

সে আরেকজন হয়ে উঠতেছে

আমার শরীরে আর থাকবে না বেশিদিন

যদি থাকতো,

দুইটা হার্ট নিয়ে আমি ঘুরতাম!

অবশ্য একটু ঠেস দিয়ে হাঁটা লাগতো, এখন যেমন

সামান্য বাঁকা হয়ে, পেটটারে সামনে ঠেলে

কেমন পেটভরা হাঁসের মতন 

পা দুইটা ছড়ায়ে ছড়ায়ে

 

পুকুরে নামি সাঁতরানো যাইতো যদি

সেই একজনের মতন 

আমিও পুকুরের পেটে ভাসতাম

হাত পা ছুঁড়তাম

শরীরের ভারটা পানিতে ছাড়ি

পুকুরের পেটে আরেকটা হার্ট হয়ে উঠতাম!

পুকুর কি তখন হইতো আমার মা?

 

কুচিওয়ালা জামায় তারে ত আর গুঁজায়ে রাখা গেলো না…

 


তেলাপোকার খোঁজে


আমার শুরু করতেই যত ইতস্ততা

একবার শুরু করা গেলে

আর থাকবে না আধোয়া কাপড়

না মোছা ঘর

যদিও তেলাপোকারা ওয়াশরুমেই থাকে

তোমাকে খাওয়াতে নিলে বারবার ওয়াশরুম খোলা লাগে

দেখো দেখো, কত তেলাপোকা, সব পালাইছে

অথচ তোমারে রেখে যখন গোসলে যাই

আর তুমি কানতে থাকো দরজায়

তেলাপোকারা তোমার হয়ে গোসল করে

এদিক ওদিক দৌড়ায়

তোমার মত কী কী যে করে বুঝতে পারে না

জুতার নিচেও লুকায়

বাথরুমের ব্রাশগুলা ওদের বেশি পছন্দ

আর পছন্দ আধোয়া কাপড়

কখনো বেসিনে, আধোয়া প্লেট ধোয়ার পরে

বেসিনটা ঘামায় ইদানিং

ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়তেই থাকে

যেন নারকেল পাতা চুয়ে রাতের শিশির, সারারাত

পড়তেছে চালে

আর আমরা মা ছেলে

তখনও এক লোকমা ভাত হাতে;

ডালের পেঁপে আর কুমড়া ভাজি দিয়ে, লগে এক টুকরা ইলিশ ভাজা প্লেটে জুড়াবে

 


কাঁটার মত লাগে


আমি তো জীবনযুদ্ধে পিছায়ে গেলাম, বন্ধুরা

ফিলিস্তিন নিয়ে কোন কবিতা লেখলাম না বলে

আমার গলা দিয়ে ভাত নামা বন্ধ হয় নাই

তিনবেলা ভাতের আয়োজনই থামে নাই

দারুচিনি এলাচির ব্যবহারও কমে নাই

মৌসুমি ফলের বাইরেও দূর 

মহাদেশি আপেল আঙুর

ঝুড়িভরা থাকে

কখনো আনারের রস আরো

টকটকা করে লেপ্টাই ছুরিতে

লেবু কাটতে নিলে

তেরছা করে প্রতিটা কোষের মাথা কেটে

প্রচুর রস ছড়ায়ে দিই ভাতে। 

তাতে, প্রতিশোধ কি কমে? 

খালি গলার ভিতর কেমন যেন কাঁটার মত লাগে।

 


বিচ্ছিন্নতা


তোমারে কী করে বুঝাই

যে ছেলেটা যুদ্ধ থামার পরেও চাবি নিয়ে ঘোরে

কোলে তার আদরের বিলাই

জানে না তার বাড়িটা আছে কি না

আছে কিনা আদরের ছোটবোন

আছে কি না বারান্দার গাছ

মা বাপ আর শখের লালমাছ

আপনজনহারা পৃথিবীর পথে

শরীরের একেকটা টুকরা মনে হয় একেক জায়গায়

তাও কাতর এক মন 

সারাক্ষণ বাড়ি যাইতে চায়

 


বুনোফুলের দিনে


জানালা মেললেই দেখব সাত আটটা এসির বাকশো, বারো দুগুনা চব্বিশটা জানালা, পাশের দালান থেকে আমার দিকে তাক করা। একটা পাখির খাঁচা দেয়ালের মাঝামাঝি এক বারান্দায়। খাঁচায় তিনটা পাখি চক্রাকারে উপর নিচ উপর নিচ ঘুরতে আছে। আরেকটা বারান্দায় বাইরের দিকে হাত বাড়ানোর মত এক তক্তায় ভাত খায় বুনোশালিক। দালানের ফাঁক গলে আড়াআড়ি আসা সামান্য এক টুকরা রইদ। তোমারে এসব অর্থহীনতায় জোড়া দিই বসে বসে। 

তোমারে বলব কখনো শহরের কোণায় ধূলিধূসরিত বুনোলতার কথা, যে বাইতে চায় ঐ দালান। বলব দুই দালানের মাঝে পড়ে থাকা জমিটার কথা। পলিথিন, কংক্রিট আর ময়লার দিন  সরায়ে চাষ করা সবুজ টমেটোর কথা। রাসায়নিক সারহীন তাজা পালংশাক, পেঁপেঁ আর কুমড়ার কথা। বলব সেই একই জায়গায়  বুনোফুলের মত বর্ষায় ফুটে ওঠা গ্রাফিতির কথা, কম্পমান হৃদয়ের ধুকপুকানির কথা, যা বাতাসে ভাসমান মৃত্যু নিঃশ্বাসে নিয়ে লিখছিল: পুলিশ দুচি না; ধবধবা সাদা দেয়ালে লালকালিতে লেখা: খানকি মাগী হাসিনা; তীরের ফলার মতন আঙুল তুলে: দেশটা কারো বাপের না। অদিনে বিষ্টি যদি আসে, ষড়যন্ত্রে রিনিরিনি, ধূলিধূসরিত পাতার মত এই দেয়ালও তো ছাফ হয়ে যাবে, আমাদের মেসেজগুলা যেমন মুছে ফেলতে হইছে পুলিশের নজরদারীর ডরে। তোমারে কী কী বলা হয় নি  ভাবতে ভাবতে, বেওয়ারিশ লাশের মত আমাদের যুদ্ধাহত প্রেম, বিছড়াই সবখানে।

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷