আমাকে হয়তো আপনারা চেনেন না। আমাকে আমিও হয়তো চিনি না। আমি নিজেকে চেনার জন্যই পুরো ব্যাপারটা লিখতে চাচ্ছিলাম। পরে ভাবলাম, সক্রেটিস যে বলে গিয়েছিল, টু নোও দা ইট সেলফ ইজ বিগেনিং অফ উইজডম; এরপরে কেউ কি নিজেকে চিনে ফেলতে পারছে? যদি চিনেই ফেলে তাহলে এখনো ঘুরে-ফিরে এই প্রশ্ন কেন বারবার মানুষ করে আসছে, নিজেকে চেনো, নিজেকে জানো! সক্রেটিস তো ওদিকের লোক। কিন্তু আমাদের এদিকেও কি নিজেরে জানার জন্য মানুষ ফানা হয় না স্রষ্টার মহব্বতে? প্রশ্ন হতে পারে, ফানা হওয়ার মধ্যে নিজেকে জানার ব্যাপারটা কোথায়। এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইবনে নুফাইস যখন ফাদেল ইবনে নাতেকের বক্তব্য নকল করে বলল, কামেল যখন বুঝল, স্রষ্টা আছেন। তখন তার মনে প্রশ্ন জাগল, স্রষ্টা তার কাছে কী চান? সে অনেক ভেবে-চিন্তে এর সমাধান বের করে ফেলল। তার মতে সৃষ্টির জানার মূল বিষয় হলো, স্রষ্টা। স্রষ্টা তার কাছে কী চান, স্রষ্টা কেন তাকে সৃষ্টি করলেন আর তার সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্যটাই বা কী। যখন সে এই পথে বের হবে এবং স্রষ্টাকে চিনতে শিখবে এবং ধীরে ধীরে সুফিবাদের সমস্ত তবকা উতরে সে যখন স্রষ্টার মহব্বতের সাগরে নিজেরে ফানা করে ফেলবে তখনই মূলত সে জানবে, সে কে, কী তার উদ্দেশ্য আর কী তার পরিণাম। সুফিরা যেটা করেছে সেটা এক হিসেবে সক্রেটিসের প্রশ্নটার উত্তর বের করার ক্ষেত্রে এক সূত্রের জন্ম দেয়। কিন্তু সেই সূত্র ধরে আসলেই কি নিজেকে জানা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো সুফিদের কাছেও নেই। কারণ, তারা সর্বোচ্চ তবকায় পৌঁছে নিজের উজুদই হারিয়ে ফেলে। আর যে নিজের উজুদকেই হারিয়ে ফেলে সে কীভাবে নিজেরে আবিষ্কার করতে পারে? সে কি আগাগোড়াই একটা শূন্য না? তাকে যদি আমরা মা’দুম বলি সেটা কি ভুল কিছু হবে? সেই ভুল-সঠিকের উত্তর খুঁজতেই আমি নিজেকে চেনার চেষ্টা শুরু করি৷
আমি যখন শুধু এটুকু জানতে পারি যে, আমি যেখানে আছি সেখানে আমারে তারা জায়গা দিতে চায় না বা আমি নিজেই তাদের মধ্যে নিজেরে মিশায়ে ফেলতে পারি না; তখন আমি অন্তত একটু হলেও আমি কী নই এটা জানতে পারি। আর যখন এটুকু জানলাম তখন তো বিপুল সম্ভাবনা একটু হলেও কমে এল। এই এতটুকু কমিয়ে হলেও তো আমরা নিজেদেরকে জানার চেষ্টায় একটু হলেও এগিয়ে যেতে পারি। অন্তত সিসিপাসের ওই অভিশাপ বয়ে নিয়ে আজীবন পাথর ঠেলতে ঠেলতে এক জায়গায় স্থির থাকা বা য়াজুজ-মাজুজের মতো দেয়াল খেয়ে ফেলার অর্থহীনতা থেকেও আমাদের জন্য অল্প একটু ফুরসত মিলতে পারে। এতটুকু কি এই আমার মতো নাম-পরিচয়হীন মানুষের সারা জীবনের সফলতা হিসেবে ধরা হবে না? তা ছাড়া জীবন আসলে কী বা জীবনে সার্থকতা ঠিক কোথায় বা কীভাবে এটা আসে; এই জটিল প্রশ্ন যখন সামনে আসে তখন আমি এমনিতেও খেই হারিয়ে ফেলি। আমার মনে হয়, আমি কে; এই প্রশ্নের উত্তর তালাশই হচ্ছে প্রথম কাজ। এই কাজে যে যতদূর আগাতে পারবে সে ততই নতুন নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। আর প্রশ্ন যখন আসে তখন উত্তর তালাশের চেষ্টাটাই আমাদেরকে অন্যান্য জিনিস থেকে আলাদা করে দেয়, আমরা হয়ে উঠি আত্মসচেতন, আপনার তালাশের এই চেষ্টাই আমাদেরকে বুঝতে সহায়তা করে, ঠিক কী মানে রয়েছে আমার জীবনের বা জীবন জিনিসটা কী আর আমরা কেন এই জীবন পেলাম।
আমার গল্পটার কোনো শুরু নেই। কারণ গল্পের শুরু আমার জানা নেই। আমি জানি না এটা ঠিক কোথা থেকে এবং কখন থেকে শুরু হয়েছে। আমি এতটাই দুর্বল যে, জানি না আমার বুঝশক্তি কখন থেকে কাজ করা শুরু করেছে। তাই একেবারে আমার জন্ম থেকে এই কাহিনি শুরু করার কোনো মানে হয় না। জন্ম থেকে আমাদের সবার বেড়ে ওঠার কিছু অবস্থাগত পার্থক্য ছাড়া তেমন কিছু নেই, যেটা নিয়ে গল্প ফাঁদা যায়। এই গল্পের তাই কোনো শুরু নেই। যেমন অস্তিত্বহীন অবস্থাটা আপনার জন্য ঠিক কতটা দীর্ঘ ছিল, আপনি জানেন না। তেমনি শুধুমাত্র একটা তারিখ বাদে আপনি জানেন না আপনার অস্তিত্বের সূচনা ঠিক কখন। আর এই তারিখ হলো সময় হিসেবের একটা উপায়। কিন্তু সময়ের ব্যাপ্তি আমাদের জানা নেই৷ তাই আমরা জানি না শুরু-শেষের হিসেব।
এই গল্প কিছু মানুষের সাথে আমার পরিচয় আর তাদের মাঝে আমার জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টার কথা বলবে। যেসব মানুষকে আমি ভেবেছি আমার নিজের আর আমি নিজেকে তেমন একজন হিসেবে দেখতে চেয়েছি। কিন্তু অতীত আমাকে আমার ভবিষ্যত মনে করিয়ে দেয়, সে এখনো আমার সাথেই আছে, আমি তার থেকে পালাতে পারিনি।
আমার অতীত, যেটা আমি কাটিয়েছি একদল সুফির সান্নিধ্যে, তারা আমাকে শিখিয়েছিল, নিজেকে পবিত্র করার সমস্ত উপায়। আমিও চেয়েছি নিজেকে পবিত্র করে তুলতে। কিন্তু আমি যতই নিজেকে পবিত্র করতে চাইতাম ততই আমার ভিতরে সব অপবিত্র এসে ভীড় করত। আমি তখন ঘুরছিলাম হাযরামাউত থেকে আন্দালুসের সমস্ত সুফির দরবারে। প্রত্যেক সুফিই আমাকে সবক দিয়েছিল, নিজেকে পবিত্র করে তুলতে পারলেই আমি নাকি নিজেকে জানতে পারব। কিন্তু আমি জানতে চাইছিলাম, অপবিত্র জিনিসগুলো কী আর এগুলো ঠিক কোথা থেকে আসে। একজন সুফিও আমাকে বলতে পারেনি অপবিত্র জিনিসগুলো আসলে কী। যদিও বা তারা অপবিত্রের সংজ্ঞা আমাকে হিফজ করিয়েছিল। কিন্তু এই জিনিসটা কোত্থেকে আসে আর যখনই আমি নিজেকে পবিত্র করতে চাই তখনই কেন এরা এসে আমাকে আরো বেশি করে অপবিত্র করে তোলে? এই প্রশ্নটা সুফিরা এড়িয়ে গিয়েছিল। তারা আমার প্রশ্নটাকে স্বীকৃতি দিতে চাইছিল না। তখন আমি আজারবাইজান পার হয়ে এই দিকের এক জনপদে আসি। এখানে তখন চলছিল তুমুল যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাঝে আমার চিন্তাভাবনা এক করতে পারছিলাম না। সেনা-চৌকির আস্তাবলে আমি ঘোড়াকে দানাপানি খাওয়াচ্ছিলাম আর এই কষ্টের কথা বলছিলাম স্থানীয় এক তরমুজচাষীর কাছে৷ আমি বললাম, চিন্তা ছাড়া অন্য কিছুই আমার ভালো লাগে না। আমার শিক্ষার মূল বক্তব্য ছিল চিন্তা করো, জানো। তখন সেই চাষী বলল, তুমি কেন এই আস্তাবলে ঘোড়ার আবর্জনা পরিষ্কার করে নিজেকে অপচয় করছো! তুমি এই যুদ্ধ পেরিয়ে চলে যাও তিব্বতে। সেখানে মঙ্করা তোমাকে শেখাবে কীভাবে শূন্যে ভেসে ভেসে চিন্তাগুলো ধরে ফেলা যায়।
এরপরের দিনই আমি কাজে ইস্তফা দিয়ে সফর করি তিব্বতের দিকে। পথে দেখা পাই একজন গল্পকারের। এই গল্পকার বিভিন্ন চটকদার গল্পের মাধ্যমে মানুষের মাঝে অনুপ্রেরণামূলক বাণী প্রচার করত। আমি কনফুসিয়াসের এলাকায় সেই গল্পকারের পাল্লায় পড়লাম। এক মজলিসে দেখি মানুষ রাতের বেলা নিভু নিভু আলোয় গোল হয়ে বসে আছে একটা খোলা প্রান্তরে। আর সবার মাঝে দাঁড়িয়ে সেই গল্পকার বলে চলেছে কম খাওয়ার যতসব উপকারিতা। সে বলেছিল, তুমি কোনোকিছুর সমাধান করতে পারবে না। কারণ তুমি খাও অনেক বেশি। বেশি খেলে তোমার বোধবুদ্ধি জট পাকিয়ে যায়। যেমন বসে থাকলে পা ফুলে যায় আর হাঁটলে পা মজবুত হয়। এই ব্যাপারটা ছিল গল্পের বার্তা। সে পঞ্চতন্ত্রের মতো করে গল্প বলতো আর ইবনে মুকাফফার মতো করে বের করত সেই গল্পের বার্তা।
গল্প শেষে প্রচুর বাহবা আর টুপি ভর্তি পয়সা নিয়ে মানুষের ভীড় ঠেলে সে হারিয়ে যাচ্ছিল জঙ্গলের দিকে। আমি তাকে অনুসরণ করি। কিছু জানার জন্য তাকে অনুসরণ করিনি। আমি ভাবছিলাম, সে বলেছে চিন্তা করার কথা। আমিও এটাই শিখে এসেছি এতদিন। সমগোত্রীয় লোক পেয়ে দু-একদিন কাটিয়ে দেওয়াই ছিল আমার উদ্দেশ্য। দূরে জঙ্গলে আমি তাকে আবিষ্কার করি কয়েকজন মানুষের মাঝখানে। আমি দেখি, তারা তাদের টুপির ভেতর থেকে বের করছে বিভিন্ন রকম জিনিস। একজন তো আস্ত একটা ভেড়াই বের করে ফেলল টুপি থেকে। তারপর তারা সেই ভেড়া পোড়াতে লেগে গেলে আমি তাদের পাশে এসে বসে পড়ি। তাদের সামনে নিজেকে এইভাবে প্রকাশ করার ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু দু-তিনদিনের অভুক্ত মানুষের সামনে ভেড়ার চর্বি গলে গলে পড়ার শব্দ আর চর্বি-মাংস পোড়ার ঘ্রাণ যে আবেদন তৈরি করে তা অগ্রাহ্য করার সাধ্য তার হয় না।
আমি তাদের মজলিসে এসে বসি। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করে নিল। সবাই সবার টুপির ভিতর থেকে বের করা খাবার ভাগ করছিল তখন। তারা আমার জন্যও খাবারের একটা ভাগ আলাদা করল। আমরা ভেড়ার মাংস, শুকনো রুটি আর কয়েক রকম ফল দিয়ে আহার সারছিলাম। এ সময়ে সেই গল্পকার আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি এখানে কী করছি।
বললাম, তোমার গল্পের মধ্যে ভাবার বিষয় আছে। আমি ভাবতে পছন্দ করি। তাই তোমার গল্প শুনে তোমার সাথে কিছু সময় কাটাতে চলে এসেছি।
সে বলল, আমার গল্পে ভাবনার কী আছে আমি জানি না। আসলে হাসি পাচ্ছে, তুমি একজন ভাবুক মানুষ বলছো নিজেকে। কিন্তু তুমি দেখি আমাদেরকেই চিনতে পারলে না। শোনো, ভাবনা-চিন্তা করে কিছুই পাবা না। দুনিয়ায় সবকিছুই হলো বাস্তব, এখানে ভাবনা-চিন্তার মতো অলীক বিষয়ের স্থান নেই।
বললাম, তাহলে এই যে গল্প বলে বেড়াও, মানুষকে ভাবতে বলো, তাদেরকে ভাবতে উৎসাহ দেও এটা কী জন্য দেও? আর তোমাকে চেনার কথা বলছো, সেটা আমি আসলেই ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তুমি মানুষকে বেশি খেতে নিরুৎসাহিত করে এখানে এসে দারুণ সব খাবার দিয়ে ভূড়িভোজের আয়োজন করলে।
সে বলল, হেহ হে এটাই তো বলছি। মানুষ যত অবাস্তব আর অলীকের পিছনে ছুটবে রিজিকের দরজা ততই প্রশস্ত হবে। মানুষের স্বভাব বাস্তবমুখী। তাই তারা যখন অলীকের পিছনে ছুটে তখন অনেক উপায়-উপকরণের দরকার হয় তাদের। তুমি আশ্চর্য হবে, মানুষ মন বা হৃদয় নামে অস্তিত্বহীন একটা জিনিসের জন্য কত কী করে। এই যে এই জঙ্গলটা দেখছো না, এখান থেকেই কনফুসিয়াসের মতো লোকেরা চিন্তার আলো ছড়াতে চাইতো। রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবার নিয়ে তারা ভাবতো, এগুলার গঠনমূলক ধারণা মানুষকে শিখাতে চাইতো। তো কী হলো শেষমেষ, কোনো লাভ কী হলো!
বললাম, আমি কনফুসিয়াসের ধারণা নিয়ে আগ্রহী না। কিন্তু সে যে একটা পথ দেখায়ে গেছে সেটা খুবই বাস্তবসম্মত।
সে বলল, ফাউ আলাপ বাদ দাও না ভাই। তুমি চাচ্ছো তর্ক করতে। কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝো, ওই অতীতে গিয়ে অতীতের সাথে নিজেরে বেঁধে রেখে তুমি তো ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে পারবা না। আর ভবিষ্যতের কথা বাদই দাও। মানুষ বর্তমানের বাইরে বাঁচেই না। তাই শুধু শুধু কনফুসিয়াসের ওই সব আইডিয়া নিয়ে প্যাচাল তুলো না তো।
বললাম, তোমার কথা কাজের মধ্যে যেমন হঠকারিতা তেমনি তোমার চিন্তাগুলাও৷ তুমি বলছো অতীতের কথা, অতীত আর ভবিষ্যতের দরকার নাই। শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবতে চাচ্ছো। কিন্তু শোনো আমাদের অতীতই আমাদের ভবিষ্যত আর আমাদের ভবিষ্যতও পুরোটাই আমাদের অতীত। বর্তমানটা শুধু এ দুইটার মাঝখানের সেতু।
সে বলল, তুমি যেটা ঘুরায়ে বলছো আমি সেটাই সোজাসাপ্টা বলে দিছি। ফাউ প্যাচাল বাদ দাও তো ভাই। ভেড়ার মাংসের সাথে এইসব আলাপ যায় না। এখন খাওয়ার সাথে সাথে রসিক আলাপ হবে৷
এরপর সে পাঁজরের হাড্ডি চুষতে লাগল, তার কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল সূক্ষ্ম তেলের একটা ধারা। আর চপচপ করে খেতে খেতে ওরা বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয়ে কথা বলছিল। ব্যাপারটা আমার কাছে অপ্রীতিকর হলেও এখানে একটা ব্যাপার ছিল যা আমি অনেক পরে ধরতে পেরেছিলাম। সত্যি বলতে এই ব্যাপারটাই আমার আত্মোপলোব্ধির ক্ষেত্রে রসদ জুগিয়েছিল। সেই গল্পটা শুরু করা যাক এবার।
আমি যখন তাদের থেকে বিদায় নিয়ে তিব্বতের পথে বেরিয়ে পড়ি তখনকার কথা। দেখা হলো এক দুধ-বিক্রেতার সাথে। সে দুধে পানি দেয় এবং সেই দুধ সে বেঁচে দেয় বাজারে৷ সে কখনো সেই দুধ নিজে খাই না। কারণ এই দুধ যেসব গরু থেকে আসে তাদেরকে সে ছেড়ে দেয় খোলা মাঠে বা পাহাড়ের উপর সবুজ ঘাসের গালিচায়। ফলে দুধ মিষ্টি হলেও হয় পাতলা আর তার উপর পানি ঢেলে সে এটাকে আরও পাতলা করে ফেলে। আর নিজের জন্য সে ওইসব গরুকে বাছাই করে যাদেরকে সে আলাদা করে খড়-ভুসি খাওয়ায়, যাদেরকে সে কখনোই ওইসব পাহাড়ে সবুজ ঘাসে ছেড়ে আসে না। এই গরুগুলো যখন দুধ দেয় তখন সেই দুধ হয় গাঢ় ঘন আর নোনতা মাখনের মতো নরম। এই দুধের মাখন বা ঘোল এতটাই নরম আর সুস্বাদু হয় যে, মুখে দিলে গলে গলে সারা মুখে এক ধরনের তেল তেল ভাব ছড়িয়ে পড়ে। গলা দিয়ে যখন সেই দুধ পেটে নামে তখন মনে হয় ভেতরের সব জখম, অসুখ মুছে সবকিছু পরিষ্কার সুন্দর করে দিচ্ছে। সেই গরুগুলো যখন দুধ দেয় তখনই সে দুধ পান করে। এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে তা আমি জানতাম না। আমি কারণ খুঁজতেও যাইনি। প্রথমে যেটা আমার মাথায় আসে, যে এই লোক একটা বাটপার। এবং এই ধরনের লোক আমার মনে দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণাকে বাড়িয়ে তোলে।
আমি যখন লোকালয় ছেড়ে নির্জন বিজনে পথ চলছি তখন দুনিয়া থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। যেমন কেউ যখন হাঁটতে হাঁটতে জনবসতি ছাড়িয়ে লোকশূণ্য কোনো রাস্তায় হাঁটতে থাকে তখন মানুষের ব্যবহৃত সমস্ত কিছু ধীরে ধীরে আড়াল হয়ে যায়। মানুষের চারপাশ জুড়ে থাকে আবর্জনা। একেকজন সেই আবর্জনা একেকভাবে আবিষ্কার করে। এই আবিষ্কার তার আত্মোপলব্ধিতে ফলদায়ক ভূমিকা রাখে। আমিও এমনই এক আত্মোপলব্ধি লাভ করি। কারণ তখন চিন্তা থাকে সমস্ত প্রভাব বলয় হতে মুক্ত, স্বচ্ছ। এই সময়টায় আমি তিব্বতের খুব কাছাকাছি বিজন এক অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছি। তখন প্রভাব বলয়ের বাইরে গিয়ে এই জগতের কীর্তিকলাপ নিয়ে ভাবনা-চিন্তার সুযোগ আমার হয়। তখন আমি এক এক করে দুনিয়ার তাবৎ হাকিকত এই দুধঅলা আর গল্পকারের দলের কাজ-কাম থেকে বুঝতে পারি। ব্যাপারটা ঠিক এমন না যে, সবাই এই কাজই করে। ব্যাপার হলো, এই কাজের যে সিলসিলা, সেই সিলসিলার মধ্য দিয়েই জাগতিক জীবনের দিনরাত ঘুরতে থাকে।
গল্পকারদের থেকে যেটা আমি শিখি, মনে করেন এই যে সব ভুলে আনন্দ, ভোগ এসবের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখা; এটা এক প্রকার আত্মবিস্মৃতির মতো। আত্মবিস্মৃতি কেন সেটা বলি। আত্মা এমন গভীর ও দূরবর্তী এক জিনিস যেটাকে ধরতে বা জানতে আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। অনেকে বলে আত্মার মধ্যে যা আছে তাই-ই হলো স্রষ্টা। সমস্ত আত্মার মধ্য দিয়েই স্রষ্টা নিজেরে প্রকাশ করেন। তাদের মতে নিজেরে জানার মধ্য দিয়ে স্রষ্টা হিসেবে নিজেরে চেনা যায়। আমরা যদিও এই মতালম্বীদের মতবাদে বিশ্বাসী নই। কিন্তু তাদের একটা কথা সোয়াহি। মানে আপনি যখন নিজ আত্মাকে জানতে পারবেন তখন সমস্ত চাকচিক্য আর অন্যান্য রং-চং মুছে গিয়ে এই জগৎ আপনার চোখের সামনে থেকে আড়াল হবে এবং প্রকৃত সত্তার নজরে আপনি হয়ে উঠবেন মহিমান্বিত আর আলোকময়। আমি যখন পবিত্রতা ও অপবিত্রতার জ্ঞান নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম তখন কখনো কখনো এমন হতো যে, আমি অনুভব করতাম, এই জগৎ তার সমস্ত কিছু নিয়েই খুব তুচ্ছ, হাকারত এই জগতের সমস্ত অর্থকে মুছে দিয়েছে। এই জগৎ বা অস্তিত্বে শুধু আমিই হলাম একমাত্র এবং আমিই হলাম সেই মানুষ বা আত্মা যার অস্তিত্ব এক অপার অসীম প্রেমের সাগরে অবগাহন করছে এবং যে কি না এই সমুদ্রের প্রতিটা কণা আর ফোঁটা নিজের গায়ে মেখে নুরানিয়্যাতের আলোয় উজ্জ্বল হচ্ছে। কারণ সেই নুর, যার তাওয়াজ্জু এই জগতে আলোর জন্ম দিয়েছে, যেই নূর অন্ধকারকে রাখছে এই আলো যাতে ফুটে ওঠে অন্ধকারের মাঝে। আমি হলাম সেই আলো, যা জ্বলে অন্ধকারে। সমস্ত জগৎ তার আঁধার নিয়ে তখন হয়ে যায় তুচ্ছ আর আমি হই এমন এক মহান উচ্চ আলো যার বিচ্ছুরণ এই অন্ধকারের এতটাই উপরে অবস্থান করে যে, সেই আলোর চকমক এই জগৎ ধরতে পারে না, সেই ধারণ ক্ষমতা তার নাই। আমি এতটাই শক্তিশালী। কারণ, আমার আত্মা জুড়েছে গিয়ে অসীমের সাথে।
এই গল্পকাররা হলো সেই অন্ধকারের প্রতীক। তারা আত্মবিস্মৃত। তাদের ভোগ তাদেরকে আটকে রেখেছে একটা সেতুর উপরে, তারা এপার ওপারে কোথাও থাকে না, যেতে পারে না। এই বদ্ধতা তাদেরকে করেছে পিঁপড়ার মতো, যে পিঁপড়া একটা বাদামের খোসায় ভেসে চলেছে দরিয়ার মধ্যখান দিয়ে।
দুধঅলা, যে আমার মধ্যে আত্মসচেতনতার অনুপম উদাহরণ হিসেবে রয়ে যাবে। সে যে কাজটা করে সেটা তার নিজের প্রতি সচেতনতা। যদিও সে নিজের এই সচেতনতা দিয়ে কিছু অর্জন করতে পারবে না। কারণ সচেতনতা হলো প্রথম তবকা, এটার সাথে যুক্ত হতে হয় তরিকা। কিন্তু যে ব্যাপারটা এই দুধওয়ালার মধ্যে ছিল, সেটা আমাকে এমন কিছু মানুষ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করেছিল যারা ছিল বাহ্যিক হটকারিতার আড়ালে আত্মপূজায় নিয়োজিত। এই সব মানুষ আত্মসচেতন। কিন্তু আমি যেমন ওইসব গল্পকারদের কেউ নই তেমনই এই দুধঅলা কিসিমের সঙ্গীরাও আমার আপন নয়। এর কারণ, এরা হলো আপনার পূজারি। এরা নিজেদের অহংবোধ দিয়ে নিজেরে আলোকিত করতে চায়। আর যখন নিজের আলোয় নিজেই জ্বলতে চাওয়া হয় তখন সেই আলো আপনাকে জ্বালাবে না। আলোর নিচে বা স্বয়ং আলোর মধ্যে বাস করা অন্ধকার তাকে গ্রাস করে নেয় আর সে হয়ে যায় আঁধারের সঙ্গী।
এই দুই ঘটনা থেকে আমি যেটা পেয়েছিলাম সেটা আমাকে শিখিয়েছে ভোগহীন জীবনাচার। আমি চাইছি এই ভোগ থেকে দূরে থাকতে। এর কারণ ভোগ আমারে করে দেয় এক জন্তু। যে শুধু খেতে চায়। আর আমি চাই না, এই জীবন শুধু খেতে খেতে কেটে যাক। এই যে উপলব্ধি এটার গল্প আমি যখন তিব্বতের মংকদের কাছে করি তখন তারা এর এক বর্ণও বুঝতে পারেনি। তারা এই গল্পটা বুঝেনি কেন জানেন? কারণ তারা তাদের জীবনকে রেখেছে জীবন থেকে দূরে। তারা জানে না তারা কী চায়, তাদের নিজেরে মহিমান্বিত করার ব্যাপারটা, যা তারা মনে করে তাদেরকে অমর করে রাখবে, তা শুধুই বিরাট একটা ধোঁকা বই কিছু নয়। এই ধ্বংসশীল ক্ষয়কারী জগতে অমরত্ব নাই, শুহরত একটা প্রহেলিকা। আমি এটা বুঝলাম, কারণ আমি এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটেছি, দেখেছি। এই গুহা বা পর্বতের উপরকার তুষার আমারে প্রবঞ্চিত করার আগে আমি দেখেছি এই জগৎ, যা তার সমস্ত অর্থহীনতা নিয়েও উপলব্ধির সমস্ত উপকরণ ছড়িয়ে রেখেছে মাঠে-ময়দানে।
তিব্বতের মংকদের ব্যাপারটা আমাকে হতাশ করত, যদি না আমি তার আগেই নিজেরে খুঁজে পেতাম। এই খুঁজে পাওয়ার যাত্রায় সর্বশেষ আমার সঙ্গী হয় এক পাহাড়ি ছাগল। এই ছাগলটা ছিল একদম একা। সে আটকে গেছিল তিব্বতের কোনো এক পাহাড়ের কিনারে। এই ছাগলগুলা খুবই আশ্চর্যজনক উপায়ে বেঁচে থাকতে পারে। তারা পাহাড়ের খাড়া কিনার বেয়ে নামতে পারে। এই নামার ক্ষেত্রে তাদের কোনো দড়ি বা মইয়ের প্রয়োজন হয় না। আমি যেটা দেখলাম, এই ছাগল নিজেই নিজেকে আটকে রেখেছে পাহাড়ের কিনারে। কারণ অন্যান্য ছাগলগুলা এই কিনারে নিজেদের আটকে রাখেনি। তারা সেই নেমে আসা খাড়া ঢাল বেয়ে ঠিকই নেমে গেছে। আর তার এমন কোনো ওজর ছিল না, যার কারণে সে নামতে পারছিল না। ছাগলকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুই নামছিস না কেন? সে এর উত্তরে ম্যা ম্যা করা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি।
ছাগল কথা বলতে পারে না। এই জন্য আমি তার কাছ থেকে এই ব্যাপারে কিছুই জানতে পারিনি। তবে তাকে দেখে আমার এটা মনে হলো যে, পাহাড়ের কিনারে নিজেকে আটকে রাখাটা হলো শূন্যে ভেসে থাকার মতো। শূন্যে ভেসে থাকার ভিতরে যেমন কোনো সার্থকতা নেই তেমনি পাহাড়ের কিনারে নিজেরে আটকে রাখার ভিতরেও কোনো সার্থকতা নেই। শূন্য থেকে যেমন নিচে নেমে আসাটা কোনো ব্যাপার না। মানে শূন্য আর মাটির দুনিয়ার মধ্যে ফারাক থাকে না, যেমন পাহাড়ের কিনার আর পাহাড়ের নিচের মধ্যে এক উচ্চতা ছাড়া আর কোনো ফারাক নেই।
তিব্বতের এইসব দুর্গম অঞ্চল, যা সব সময় বরফে আচ্ছাদিত আর হিম শীতল বাতাস, যার মধ্য দিয়ে আমি মঙ্কদের আস্তানায় চলেছি। এই চলার পথে আমার আশপাশে আর কেউ আসেনি। আর আমিও ভেবে নিয়েছি আমার মতো করে, এই গল্পকারের দল, দুধ-বিক্রেতা আর পাহাড়ি ছাগলের সাথে মোলাকাতের পর আর কারো সাথে মোলাকাত হওয়াটা আমার জন্য আর জরুরি ছিল না। আমি দুনিয়ার তাবৎ হাল-হাকিকত, যেমন যুদ্ধ, শান্তি আর ঋষির ধ্যানমগ্নতা বা আহারের অপর্যাপ্ততা এবং আহারের বিলাসিতা ও ভোগকে পিছনে ফেলে এসেছি। এই মুহূর্তে আমি মংকদেরকে প্রশ্ন করি, শূন্যে ভেসে থেকে ধ্যান করার মধ্যে কী উপকারিতা? তখন তারা যেন ছাগলের মতোই ম্যা ম্যা করতে থাকে। তারা কিছু বলতে পারে না, কারণ তারা রয়েছে ধ্যানের মধ্যে। এই ধ্যান তাদেরকে কথা বলতে দেয় না। তারা শূন্য থেকে নিচের দুনিয়াটাও দেখে না। কারণ তারা চোখ বুজে ধ্যান করে। এইভাবে ধ্যানের মধ্যে কোনো ফায়দা আমার চোখে ধরা দেয় না। এই ধ্যান আসলে কী? নিজেকে চেনার জন্য না কি নিজেরে হারিয়ে ফেলার জন্য? কারণ আমি যখন দেখি ধ্যান আমাকে সংশয়ে ফেলে, পবিত্রতার অনুভূতি জাগ্রত করতে গিয়ে আমি অপবিত্রের ওয়াসওয়াসায় নিয়ত তাড়িত হই তখন ধ্যানের চেয়ে জগতে হাঁটতে হাঁটতে জীবন বৈচিত্রের পেছনে থাকা সর্বজনীন অর্থহীনতাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা দেখতে হলে খুলতে হয় চোখ, বলতে হয় কথা আর পা দিয়ে মাড়িয়ে যেতে হয় রক্ত বা শুকনো পাতা আর ঘাসের রাজ্য। যেটা আমি করেছি। আর এভাবেই আমি এই নতিজায় উপনীত হই যে, শূন্য আর দুনিয়ার মাটির মাঝে এক উচ্চতা ছাড়া আর কোনো ফারাক নেই আর চিন্তারা কখনো বাতাসে ঘুরে বেড়ায় না। চিন্তার জগৎ আপনার ভিতরে, যেখানে আত্মা থাকে আর আত্মার আশপাশ জুড়ে এমন সব অনুভূতি আর তাড়না তাকে ঘিরে রাখে, যা ফাঁক করে আপনাকে খুঁজে বের করার জন্যই আমরা চিন্তার ক্ষুরধার তরোয়াল চালাই।
মংকদের নিরুত্তর সাধনা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। অবশ্য প্রশ্নের উত্তর তো আমি পেয়ে গিয়েছি। তাই মংকদের এই ধ্যান আমার মধ্যে নতুন কোনো প্রবঞ্চনা জাগ্রত করেনি। যেমনটা গুরু আমাকে বলেছিল তেমনটাই আসলে সত্য, এটাই আসলি তরিকা, তা আমি বুঝতে পারি। আমি বুঝতে পারি হাজরামাউত থেকে আন্দালুসের পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ সাধকরা আমাকে ঠিক এটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, বাহ্যিক সাধনায় আত্মাকে খোঁজার চেষ্টাটা শুধুমাত্র প্রারম্ভ। এরপর পাড়ি দিতে হয় অনেক পথ ও চিন্তার পরত। গুরু আমাকে বলেছিল, এই শিক্ষার তরিকা নাই, কায়দা কানুন নাই। কথা সত্য। এইভাবে সমস্ত দুনিয়ারে দেখে ফেলার পরে আর কিছু থাকে না, যেটা আমাকে সঙ্গ দিতে পারে। এই সময়ে এসে আমি হয়ে গেলাম সম্পূর্ণ একা। কিন্তু এই সময়ে এসে ভালো-মন্দ, পবিত্রতা-অপবিত্রতা, কোনোকিছুই আর দ্বন্দ্ব জাগিয়ে তোলে না। কারণ তখন, মানে এই যে আমি যখন শুধুই আমি আর কেউ নেই, তখন আর কোনোকিছুর দরকার হয় না। ভোগ যেমন বিস্মৃতির পর্দা টেনে দেয় তেমনি ভোগহীনতা টেনে দেয় অর্থহীনতার উপর বিস্মৃতির পর্দা আর শুধু অর্থ বা জীবন অর্থহীনতা ছাড়া অপরিপূর্ণ। তাই যখন আমরা আলাদা হয়ে যাই তখন আমরা হয়ে যাই একা, এখানে শুধু আমি। আর এইভাবে যখন জানতে পারি কী কী জিনিস আর শ্রেণি আমার না, আমার জায়গা কোথায়, তখন সমস্ত কিছুর উপরে আমি নিজেরে দেখতে পাই এক শক্তিশালী সত্তা, যে সমস্ত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে আর তার দরকার পড়ছে না অন্য আর কোনোকিছুর। এইভাবেই সমস্ত ব্যাপারটায় উপলব্ধি হয়, এক আপনাকে ভালোবাসা এবং তাকে সবকিছুর উপরে অর্থময়তা দান করতে পারাটাই অপবিত্রতার ওয়াসওয়াসা থেকে পরিত্রাণের উপায়। আমি হয়তো পুরো ব্যাপারটায় ভুল করেছি। কিন্তু যেখানে এখন আমি আছি সেখানে যেহেতু আমিই একা তাই এই ভুল বা সঠিকের হিসেব আর কার্যকর হবে না। এই দুনিয়া এখন আমার নিচে আর এর সব ভোগ ও আনন্দ বা সমাগম আমি পিষে ফেলি যেভাবে কোনো তেলাপোকা পিষ্ট হয় মানুষের পায়ের নিচে।
সালমান সাদিকের প্রোফাইল টা পছন্দ হইলো
জীবনে মানব মানসে অকর্মণ্য হওয়ারও আগ্রহ দেখলাম… 😊
অতঃপর একজন ফিলোসফারকে পড়লাম
সালমান সাদিক ভাই সব গল্পই অতিরিক্ত চমৎকার
এই গল্পটা পড়েছি কিছুদিন আগে কিন্তু কমেন্ট করি নাই, আজ করে গেলাম।
( এই ‘যোগাযোগের’ যেই লেখা পড়ি কিছু না কিছু কমেন্টে লিখে যায়। পরে এসে আমি বুঝতে পারি এটা পড়েছি। তাই সব কমে এপ্রুব করা আবেদন)