০১
রুহের স্বভাব
আমি তো জানি না কেন, তোমার নিকটে এলে
শরীরের সকাম আবেগ নিমেষে শান্ত হয় গলে
তুমি তো জননী নও, জানি, রক্তের শীতল বংশ
কন্যা নও তুমি-জায়া, আমিও তো নই মৃত হংস।
তোমার নামের মতো তুমিও তো হালাল শরাব
রক্তের ঢেউ ডেকে আনো, এ তোমার রুহের স্বভাব
দারুণ সম্পর্কের টানে আমাদের আত্মায় উষ্ণ
স্রোত আসে আদিসিদ্ধ নিয়মে। আমরা ক্ষয়িষ্ণু
হই হরষে। আমাদের পেশীরা সবল সম্ভ্রমে ঘামে।
শরীরের শরম সুষে বাঁকা হাড় বেয়ে ঘামেরা নামে।
০২
মৌলিক দুঃখের সম্ভান
একজন মৌলিক দুঃখের সন্তান-আমরা তাকে ভালবাসি
সন্ধ্যার অন্ধকারে আমরা কাতার ধরে তার জন্য অপেক্ষা করি
তারপর সাক্ষাতে বলি, রুহানিয়াত শব্দের অর্থ কী?
আওয়াবিন এশা ও বিতিরে তিনি রচনা করেন অলৌকিক কবিতা
আমরা তখনো সন্ধ্যা-অন্ধকার কিনতে চাই
তাহাজ্জুদের নির্জনতায় উজ্জ্বল বেদনা মেখে তিনি বলেন, নুর!
এই প্রথম আমরা জোছনা ভালোবেসে মৃত্যুতে আস্থা রাখি
তারপর অশ্রু, তারপর সুবহে সাদিক
আমরা বিকাশমান আকাশের আলোয় ঘোষনা করি-
মৌলিক দুঃখের সন্তানেরা! কাতার ধরে দাঁড়ান
একজন কামেল মানুষ আপনাদের বলবেন
কলবের নুর ও রুহানিয়াত শব্দের জালালি সৌন্দর্যের কথা।
০৩
মুহাম্মাদ
সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হৃদয় হইলো কাচের টুকরা, তাকালেই নিজের চেহারা ভাইসা ওঠে
কিন্তু পৃথিবী তার উপরে ছুঁইড়া মারে ধুলা
ধারালো খামছি দিয়া বসায়া দেয় নখের আঁচড়
আঁচড়ে আঁচড়ে কাচের উপর কলঙ্ক পইড়া গেলে
আমার চেহারা আমিই দেখতে পাই না
পৃথিবীর পর্দা আমারে ঢাইকা দেয়
কলঙ্কিত দিলের ভিতর আমি আটকা পইড়া যাই
আমি যেনো বন্ধ কূপে আটকে পড়া শিশু ইউসুফ
অন্ধ পিতা আমার গন্ধমাখা জামা হাতে কানতেছে
প্রাচীন দেয়াল থিকা আমার আওয়াজ ফিরা আসে
কেউ আমারে তুইলা নিতে আসে না
নিজেরে না দেইখা আমি অস্থির হইতে থাকি
হৃদয়ের সেই ক্ষত চেহারায় উইঠা আসতে থাকে
আমি দুই হাতে বারবার মুখ মুছি
ভিজা কাপড়ে ঘইষা তুলতে চাই চেহারার দাগ
আমার হাত অসার হয়া আসে-দাগ মোছে না
দিলের দুয়ার খুইলা আমি আমারে বাইর করতে পারি না
আমি তখন আল্লাহ আল্লাহ বইলা কাইন্দা দেই
কান্নার পানি গালের উপর দিয়া গড়ায়া পরে
আমি আরো জোরে কানতে থাকি
আরো কান্নার পানি ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তে থাকে
আল্লাহর নামে আস্তে আস্তে হৃদয়ের কাচ সাদা হয়
আটকে পড়া আমারে আমি সামান্য দেখতে পাই
আমি তখন নবিজিরে মনে করি
মুহাম্মাদ বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার শরীরের প্রতিটি পশম কাঁইপাা ওঠে
পশমের গোড়া থিকা ফিনকি দিয়া আসতে থাকে কান্না
আমার হৃৎপিণ্ড ধরফর ধরফর করে
মক্কার মরুভূমির মতো আমার গলা শুকায়া আসে
কমজোর উচ্চারণে জিহ্বা ডাকতে থাকে-মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ
আর মুখের ভেতর ছড়ায়া পড়তে থাকে মধু মধু মধু
চোখ দিয়া বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে কলিজার কলকল পানি
অনবরত দুরুদ অসীম নৈঃশব্দে আমার সঙ্গী হয়
নবিজির নাম দিলের কলঙ্ক মুইছা দেয়
আমার হৃদয় আরো সাদা হইতে থাকে
আমি একটু একটু কইরা আমারে দেখতে পাই
দিলের দুয়ার খুইলা যাইতে থাকে
আটকে পড়া আমারে আমি বাইর কইরা আনি
হৃদয়ের দাগ বিলকুল মুইছা গেলে
পৃথিবীর ফাঁদ আমি ধইরা ফেলতে পারি
পৃথিবী এক নষ্ট জাদুর দেশ
হৃদয়ের কাছ থেকে আমি তারে খুব দূরে রাখি
আমি তারে সন্দেহ করি নিঃশর্ত
অসংখ্য ধন্যবাদ। সুন্দর কবিতা পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
অনেক অনেক শুকরিয়া। আপনাদের উপলব্ধিই আমাদের বিরাট প্রাপ্তি।
জাযাকাল্লাহ খাইরান
ওয়াইয়্যাকুম।
‘মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ শিরোনামে লেখা কবিতাটি অসম্ভব ভালো লেগেছ । খোদা নামের জিকির আর মুহাম্মদ নামে তাসবিহ হৃদয়ে যে প্রশান্তির ঢেউ তোলে; কী চমৎকার প্রকাশ করেছেন শব্দের যাদুতে।
আল্লাহ তায়ালা আপনার ইলমে ও কলমে বারাকাহ দান করুন!
আমিন। অনেক অনেক শুকরিয়া। জাঝাকাল্লাহ।
মা শা আল্লাহ। আমার প্রিয় ওস্তাদজী, কবি মুহিম মাহফুজ। আমার জন্য এক চেতনার বাতিঘর। বলতে গেলে মৌলিক সাহিত্যের হাতেখড়ি হয়েছে তার হাত ধরেই। তাকে সবসময় ফিল করি মন থেকে। আল্লাহ তাকে আরো বড় করুক।
এই তিনটি কবিতা দারুণ লেগেছে। এতো সুন্দর করে মানুষ কিভাবে লিখে!বিশেষ করে শেষ কবিতাটা,” মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” একেবারে মন ছুঁয়ে গেলো।
জাযাকুমুল্লাহ। শেষ কবিতাটি বিশেষভাবে ভালো লাগার কারণ নিশ্চয়ই কবিতা নয়, কবিতার বিষয় ও ব্যক্তি। তিনিই তো আমাদের জীবন মরণের একমাত্র কবিতা। মুহম্মদ, আমাদের অনন্ত কবিতার অবিনশ্বর শিরোনাম।
ভালো লাগলো।
রাত ১২.২৫ মিনিট🥰
শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ।
প্রিয় শায়েখ এইমাত্র পড়েছি।
দারুণ লিখেছেন।
আল্লাহ আপনার কলম ও কলমের কালিতে এবং চিন্তা ও চেতনার বাতিতে সর্বদাই নূর ও নুরানিয়্যাতে আবৃত ও আদৃত করে রাখুন।
আমিন।
আমিন। আপনার সবকিছুতেই আল্লাহ তাআলা ভরপুর বরকত দান করুন।
জাযাকাল্লাহ। সবকটিই দারুণ। তবে তুলনামূলক তৃতীয়টি বেশি ভালো লেগেছে। শব্দের কারসাজিতে আমি মুগ্ধ।