বই : ঈভের হ্রদ
প্রচ্ছদ : কাজী যুবাইর মাহমুদ
প্রকাশক : ঘাসফুল
পৃষ্ঠা : ১০০
এক.
ফানার প্রতীক্ষা
মধ্যনিশিতে সত্তার হিরক ফাটিয়ে উছলে উঠা হে রশ্মিধারা!
তোমার ঝংকারে বিবরের তল থেকে লাফিয়ে উঠছে রাত্রির লাশ
নিদ্রাকে ভস্ম করে দিচ্ছে গোলাপের দাউ দাউ পাঁপড়িদল
নেশাগ্রস্ত সময়ের ট্রাক উল্টে গেছে বৃক্ষের উচ্ছ্বাসে
জ্যোৎস্নার চেকপোস্টে বন্দি হয়ে গেছে নক্ষত্রের গুপ্তচর
হৃদয়ের কুচকাওয়াজে থরথর কম্পমান এই রাতে
অলৌকিক বজ্রপাতে ভেঙে গেলো আত্মনাশা বিলাসের পাথুরে পাঁচিল
অন্ধকারে ছলকে উঠলো সুতুমুল উজ্জীবন
যেনো সুমধুর কোনো বিস্ফোরণে পালিয়ে গেলো মৃত্যুর সন্ত্রাস
এইবার দেহের কবর ভেঙে সত্তার পুনরুত্থান কে ঠেকায়?
অস্তিত্বের প্রতিটি কণায় তরুণ নক্ষত্রের মতো জ্বলে উঠছে
পরমের নামের নামতা। রক্তের গহিনে তার ঘোরের ঘূর্ণি লেগে
সুবিমল যে জোয়ার সবেগে জেগেছে
তার তোড়ে জীবনের প্রাণ পেয়ে গেলে
আমি বলে আর কোনো প্রতিমা থাকবে না।
আমিহীন উদ্ভাসনের শুদ্ধপ্রাণঝড়ে
মহাবিশ্বে জেগে উঠবো অন্তহীন অস্তিত্বের জ্বলন্ত তুর পাহাড় ।
বাকার বর্ণনা
এক.
আছি আরণ্যে, শিয়রে মৃত্যু,
শীতল নিঃশ্বাসে থমথমে চারপাশ
গাছের ডালপালায় দুঃস্বপ্নের পাতা নড়ছে!
দ্রবীভূত পর্বতে ঝাঁপিয়ে পড়ে উপেক্ষার আষাঢ়,
স্বপ্নের চারাবনে দৌড়ায় অদম্য উন্মাদ,
প্রকৃতির গলিত পুঁজে ভরে যাচ্ছে
ইথারের ঝিল!
আর আমি এক দিগন্তবিস্তৃত বৈভব
কোনো মরমি সবুজে-
মানুষের পরাজয় অস্বীকৃতির নানা উপমায়
চাঁদের ঘর-দোরকে করে ফেলি
কবিতার মসনবি!
লবণাক্তনির্জনে বহুবর্ণ কবিতা ঝরায় ছন্দের স্বাদুশিষ,
রমণীরা ক্ষুধার জবাব পাক করতে উনুনে যাকে ভাঁজে
মৌ মৌ মশলা। বর্তনে তার মাধুরী ঢাললেই বৃক্ষেরা
জ্যোৎস্না, জ্যোৎস্না বলে হেসে ওঠে।
আমার শব্দ তবে পৃথিবীকে জ্যোৎস্না খাওয়াবে?
দুই.
পাপ-পুণ্য আসে, আম্মা আম্মা বলে সেমেটিক বিশ্বাসের
জড়িয়ে ধরি বুক। আয়ুর সর্পের তাড়া, ঔদ্ধত্যের ধমক ভেঙে
আমি তো সেই পাখি, কবরের কঙ্কর ভাসাই হৃদিরন্দ্রের
শরবতে। আলোর পাখা ছড়িয়ে জনতারে টেনে তুলি অসীম ঊর্ধ্বতায়।
সত্যের দাবার গুটি আমি, পৃথিবীতে
চালাচালি হয়, আমাকে তো তিনিই পাঠিয়েছেন। তার মায়া ভুলেছি কভু?
উজ্জ্বল ঘাসের সারি, মেঘের ধুলোবালি প্রগল্ভ দোয়েলের মতো
সাহস সাহস রবে উচ্ছ্বল। নাভির দরজা খোলে কস্তুরিগন্ধ ছড়ায় হরিণী
পুষ্পের সোনালি দুধ অলিরা ছিটিয়ে দেয় আমার চোখে-মুখে
আনন্দের তরঙ্গে থরথর পৃথিবী আকাশ
কিন্তু অদূরেই মৃত্যুর চাবুক ঘুরে সপাং সপাং
তিন.
দুঃসহ হাওয়ার নৃত্য তুমুল গমকে উধাও
আমার মৃত্যুর ছবি নিস্তব্ধ শিলার বুকে গূঢ়জলরং
প্রত্যন্তপাতার গীতে চুইয়ে পড়ে শোকাশ্রু সফেন
বাতাসের ঢেউয়ে ভাসে পর্বতের পাঁজরের গুড়া,
তখনি রক্তে ওঠে বাকার তুফান, শোনিতে গর্জন ওঠে
আনাল হকের। জাগর প্রাণের পাখি উড়ে উড়ে
নিয়ে আসে খুশবু সতেজ
‘খুশবু মাখবো না’ বললাম-‘যাও তরুলতার হাতে হাতে
দিয়ে এসো’ আমি যেনো ধ্যানে রই
আত্মার উৎসবে মৃত্যুর আওয়াজ উঠলে বলবে আমায়
আমি তাকে ছুঁড়ে মারবো সত্তার তীব্রতীর
মৃত্যুর বুকে জীবন তার পা রাখলেই পৃথিবীর বিজয় উৎসব
সুন্দর কবিতা। উস্তাদ মুসা আল হাফিজের প্রতিটি কবিতাই সারগর্ভ।
আলহামদুলিল্লাহ।
পুরোটাই পড়লাম। গভীর মর্মবাহী।