ভেংচি

সাব্বির জাদিদ

চায়ের দোকানটা দেয়ার পর প্রথম যেদিন রুস্তম আলি তৃপ্তির হাসি হাসে, সেদিনই এক বিদঘুটে কুকুর এসে পা ছড়িয়ে বসে দোকানের সামনে। তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি হেনে সে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকে রুস্তম আলির দিকে। এমন অদ্ভুত তার চাহনি, প্রথম দেখায় থতমত খায় রুস্তম আলি। যদিও ব্যস্ততায় প্রথম দুদিন সে খেয়ালই করেনি কুকুরটিকে। যার সামনে সারাক্ষণই খদ্দেরের দল দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সে কীভাবে খেয়াল করবে বেওয়ারিশ কুকুরকে। কিন্তু তৃতীয় দিনের দিন ঠিক দুপুরে ভিড়টা পাতলা হয়ে এলে যখন কুকুরের চোখের ওপর চোখ পড়ে রুস্তম আলির, তখন বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে তার। কী ভয়ানক তাচ্ছিল্য, বিদ্রুপ আর ভেংচি খেলা করছে কুকুরটার মুখজুড়ে! রুস্তম আলি থমকায়। চারপাশ দেখে নিয়ে সে সাবধানে সরু চোখে তাকায়। কুকুরটির দেহ কুকুরের মতো হলেও তার মাথাটা যেন মানুষের। যেন মানুষের মাথা চুরি করে এনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে কুকুরটির ধড়ে। কোনো কুকুর যে মানুষের মতো অবিকল তাচ্ছিল্য ধারণ করতে পারে, আজকের দিনটি না এলে বিশ্বাসই করত না রুস্তম আলি। কুকুরটি এলো কোত্থেকে! এই মহল্লায় সে আগে কখনো দেখেনি কুকুরটিকে। রুস্তম আলিকে ব্যঙ্গ করবার জন্যই কি তার আগমন! বিব্রত রুস্তম আলি চুলার পাশ থেকে একটা চ্যালা কাঠ হাতে নেয়। কাঠটা সে কুকুরের উদ্দেশে শাসায়। এতে কিঞ্চিৎ ভয় পায় কুকুরটি। দুই পা পিছিয়ে সে আবার আগের মতো তাকায়। বিরক্ত রুস্তম আলি এবার বেরিয়ে আসে দোকান ছেড়ে। ‘শালাহ’ বলে লুঙ্গির কোনা ধরে সে তেড়ে যায় চ্যালাকাঠ হাতে। কুকুরটি এবার আগের তুলনায় বেশি ভয় পায়। সে দৌড় দেয়, কিন্তু একেবারে নিষ্ক্রান্ত হয় না। রুস্তম আলির চোখের দূরত্বের ভেতরই সে আবার পা ছড়িয়ে বসে। চেহারায় আগের সেই মানবচিত ভেংচি। 

ব্যর্থ রুস্তম আলি ফিরে আসে দোকানে। যুগপৎ হতাশা এবং ক্ষোভে অল্প অল্প কাঁপে তার শীর্ণ দেহ। খানিক বিরাম নিয়ে সে কাঁধের গামছা দিয়ে মোছে বিস্কুটের বয়াম। ঝাড়পোঁছ করে ক্যাশবক্স। সিগারেটের প্যাকেটগুলো নতুন করে সাজায়। মাটির জ্বলন্ত চুলার মুখে ঠেলে দেয় খড়ি। বড় সাধের এই চায়ের দোকান রুস্তম আলির। সেই ছেলেবেলা থেকেই, যখন সে জহুরুলের চায়ের দোকানে কাজ করত, স্বপ্ন দেখত, বড় হয়ে তারও অমন সুন্দর একটি চায়ের দোকান হবে। যেখানে সে সকাল-দুপুর-বিকাল কিবা সন্ধ্যা টুংটাং শব্দে চা ঘুঁটবে। খদ্দেররা সার ধরে বসে থাকবে চাঙের ওপর। ধূমায়িত চায়ের মায়াবী সৌরভে তারা গোপনে ঠোঁট-জিভ চাটবে। আর তখনই সবার হাতে হাতে সে তুলে দেবে অমৃতের পেয়ালা। স্বপ্নটা জীবনভর বয়ে বেড়িয়েছে রুস্তম আলি। শেষ বয়সে এসে পূরণ হয়েছে তার স্বপ্ন। দুঃখ একটাই—বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে গিয়ে লাশ হতে হয়েছে ছেলেকে। কী পরিহাস! 

রুস্তম আলির একটাই ছেলে—আকাশ। মধ্য যৌবনে বড় দুই মেয়েকে স্বামীর ঘরে পাঠানোর পর অন্ধের যষ্ঠির মতো ছেলেটাই তার সব ছিল। ছেলের জন্যই তার প্রতিদিনের সূর্য উঠত। সন্ধ্যায় যখন সূর্য ডুবত, তাও ওই ছেলের নামেই। এত আদরের ছেলে, অথচ পরের জমিতে কামলা খাটা রুস্তম আলি ছেলেকে বেশিদূর পড়াতে পারেনি। ইন্টারমিডিয়েট পাশ দেয়ার পরই ছেলের পড়ালেখার দম ফুরিয়ে যায়। অন্নের সন্ধানে আকাশকে পাড়ি জমাতে হয় জনারণ্যের শহর ঢাকায়। রুস্তম আলির স্পষ্ট মনে পড়ে, আকাশের ঢাকায় যাওয়ার দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছিল, আম্বিয়ার কান্নার বেগও তত বাড়ছিল। আম্বিয়া আকাশের মা, রুস্তমের বউ। তিন হাজার এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে করা বউ। স্বামীর সুখের চেয়ে ছেলের বিচ্ছেদই যার কাছে বড়। আকাশ ঢাকায় যাক, ইনকাম করুক, একান্ত চাওয়া ছিল রুস্তমের। ছেলের টাকা হলেই যে তার সুখ। আশপাশের কত পোলাপান ঢাকায় গেছে। গার্মেন্টস না কীসে যেন তারা চাকরি করে। মাসে মাসে বাড়িতে টাকা পাঠায়। যেন টাকার গৌরবে ঝলমল করে বাবাদের মুখ। রুস্তম আলি কি অমন গৌরবের অংশীদার হতে পারে না! 

বউকে কত যে বুঝিয়েছে রুস্তম আলি। ছেলে ঢাকায় গেলেই তাদের দিন ফিরবে। তার এই বৃদ্ধ শরীর কতইবা আর কামলা খাটতে পারে! কামলার বাজারে তার চাহিদাও কমছে দিনকে দিন। উত্তম বিকল্প থাকলে তার দিকে কেউ ফিরেও চায় না। এমতাবস্থায় আকাশই যে তার ভরসা। আর আছে এক সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের হাতছানি। চায়ের দোকান। কৈশোরে চুরির মিথ্যা দায়ে তাকে দোকান থেকে বিতাড়িত করেছিল জহুরুল। যদিও সেই জহুরুল কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে, তবু লাঞ্ছনার সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো যে তাকে তাড়া করে ফেরে! নিজের মতো করে একটা দোকান দিতে পারলে হয়তো সে ভুলতে পারবে মিথ্যা অপবাদের শোক। আকাশের সামনে তাই ঢাকায় যাওয়ার বিকল্প কিছু ছিল না।

আম্বিয়া প্রথম প্রথম কাঁদত খুব। ঢাকার কত রকম দুঃসংবাদ যে কানে আসে! আজ কোথাও বিল্ডিং ধসে পড়ছে তো কাল কোথাও আগুন লেগে ভস্ম হচ্ছে মানব-সন্তান। পরশু কেউ খুন হচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে। এমন মৃত্যুভূমিতে ছেলেকে পাঠিয়ে শান্ত থাকতে পারে কোন মাতা! অমন কঠিন হৃদয় তো দেয়া হয় না কোনো মাকে। আম্বিয়ার কান্নাকাটি তাই ন্যায়সঙ্গত।

দূরে চলে যাওয়া ছেলের জন্য আম্বিয়ার এত দুঃখবিলাস আর সেই সূত্রে স্বামীর সাথে তার সকাল-সন্ধ্যার তুমুল তর্কাতর্কি, অথচ মাসশেষে যখন পাশের বাড়ির ফরিদের মোবাইলে দুই হাজার টাকার বিকাশ আসে, আম্বিয়ার মুখখানা রজনিগন্ধার মতো সুবাসিত হয়ে ওঠে। আম্বিয়া পাঁচশ টাকার চারটা নোটের গায়ে স্নেহের হাত বোলায় আর আপ্লুত গলায় বলতে থাকে, আমার পোলার ইনকাম! আমার পোলার ইনকাম! আহা!

অচিরেই পোলার ইনকামের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে রুস্তম আলি। পোলার ইনকাম সে খরচ করতে দেয় না। সে টাকা জমায়। স্বপ্ন দেখে, জমানো টাকায় একদিন সে চায়ের দোকান দেবে—রুস্তম আলির চায়ের দোকান। ফরিদের মোবাইলের সূত্রে পোলার সাথে মাঝে মাঝে কথা হয় তাদের। আকাশ ভালোই আছে। সাভারে একটা রংয়ের ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। বেতন খারাপ না। একবারে সামনের ঈদে সে ছুটি পাবে। রুস্তম আলি ছেলেকে মন দিয়ে কাজ করার কথা বলে। এক ফাঁকে চায়ের দোকানের স্বপ্নের কথাটাও বলে। বাবার কথায় আপ্লুত হয়ে পড়ে নতুন উপার্জন করতে শেখা আকাশ। সে আর্দ্র গলায় জোরের সাথে বলে, আমি বাঁচে থাকলে অবশ্যই তোমার আশা পূরণ হবে আব্বা। 

রুস্তম আলি চোখ মোছে। প্রতিদিন ঘুমোনোর আগে সে জমানো টাকার গন্ধ শোঁকে। মাসে এক হাজার টাকা জমালে একটা দোকান হতে তার কত বছর লাগবে হিসাব করতে পারে না রুস্তম আলি। একেকবার মনে হয়, আকাশ যদি আরেকটু বেশি করে টাকা পাঠাত! কিংবা একবারে তিরিশ হাজার!

ভেংচি কাটা কুকুরটা আবার ফিরে এসেছে। কখন যে আবার সে দোকানের সামনে এসে পা মেলে বসেছে, টের পায়নি রুস্তম আলি। দোকানের ভিড় এখন কম। এই কম ভিড়ের সুযোগে কুকুরটা কি কৌতুক করছে তার সাথে! ক্রুদ্ধ রুস্তম আলি কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিয়ে আসে মোড় পর্যন্ত। কিন্তু দোকানে ফেরত আসতে আসতে কুকুরটাও ফিরে আসে আবার। রুস্তম আলি এবার সত্যি সত্যি দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এক জীবনে সে অনেক কিছু দেখেছে। বলতে গেলে তার শরীরখানা যে ঈষৎ ন্যুব্জ হয়েছে, তা ওই বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভারেই। কিন্তু কুকুরের ভেংচি কাটার মতো বিদঘুটে ঘটনা কোনোদিন সে দেখেনি, শোনেনি, এমনকি ভাবেওনি। এই আচানক ঘটনা তার সাথেই কেন ঘটতে এলো! রুস্তম আলি দিশেহারা বোধ করে। একবার মনে হয়, আম্বিয়ার কাছে খুলে বলে ঘটনা। তাতে বুকের ভারটা যদি হালকা হয়। হয়তো এই ঘটনার জূতসই কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবে আম্বিয়া, ভাবে রুস্তম আলি। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে সে বউকে বলতে গিয়েও থেমে যায়। সবে একদিনই তো হয়েছে। আরো কটা দিন দেখা যাক না! এইসব ভেবে চুপ করে থাকে রুস্তম আলি। কিন্তু পরদিনটাও গতকাল হয়ে যায় রুস্তম আলির। কোত্থেকে যেন আবির্ভূত হয় অভিশপ্ত কুকুরটা। ভেংচি কাটতে কাটতে সে এমনভাবে কাছে চলে আসে, রুস্তম আলির গা ছমছম করে ওঠে। কোনো জিন-ভূত সওয়ার হয়নি তো কুকুরটার ঘাড়ে! এদিনও চ্যালাকাঠ শাসিয়ে কুকুরটাকে রাস্তা পার করে আসে সে। এরপর ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে দোকানের। মানুষের ভিড়ে আড়ালে পড়ে যায় কুকুরটা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চুলায় পানির কেটলি বসায় রুস্তম আলি। আগুনের উত্তাপে টগবগ করে ফুটতে থাকে কেটলির পানি আর রুস্তম আলির মনের মাঝে উঁকি মারে আকাশের মুখ। মৃত্যুর আগে আকাশের শরীরও কি এমন টগবগ করে ফুটেছিল, কেটলির পানির মতো? রুস্তম আলির মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে। সন্তান হারানোর হাহাকারে শীর্ণ বুকটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায়। সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতি এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে তার, যেদিন ফরিদের মোবাইলে আকাশের মৃত্যু সংবাদ এসেছিল। হাঁপাতে হাঁপাতে ফরিদ ছুটে এসেছিল বাড়ির ওপর আর পরিবেশন করেছিল একজন বাবার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী এবং হৃদয় ফালা ফালা করা দুঃসংবাদ। ফ্যাক্টরির আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে আকাশের ফরসা শরীর। মারা গেছে ফ্যাক্টরির আরো এগারোজন। খবরটা শুনেই জ্ঞান হারিয়েছিল আম্বিয়া। আর রুস্তম আলি দিশে না পেয়ে একবার ছুটে যাচ্ছিল উঠোনে, একবার ঘরে। এমন ভয়ংকর দিন না আসুক কোনো বাবা-মার জীবনে। 

অনেক লাশের সাথে চার দিন হাসপাতালে পড়েছিল আকাশের বিকৃত লাশ। চেহারা দেখে চেনার উপায় ছিল না। ডিএনএ টেস্টের পরই শনাক্ত করা যায় তার পরিচয়। সেই দিনের পর আম্বিয়া যে কতবার দুষেছে স্বামীকে। তার জন্যই অকালে মরেছে পোলাডা। রুস্তম আলিও মেনে নিয়েছে বউয়ের তামাম অভিযোগ।

ছেলের শোক পুরনো হয়ে গেলে হঠাৎ একদিন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে রুস্তম আলির সেই পুরনো স্বপ্ন—একটি চায়ের দোকান। যার হাতের দিকে চেয়ে ধীরে ধীরে কুঁড়ি মেলছিল স্বপ্নের ফুল, সেই হাতই যে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে কি রুস্তম আলির স্বপ্ন পূরণ হবে না! রুস্তম আলির পুরনো চোখ দিয়ে দুই বেদনার অশ্রু ঝরে। সন্তান হারানোর বেদনা আর অপূর্ণ স্বপ্নের বেদনা। 

রুস্তম আলি কাজে যায়, কামলা খাটে। এর মাঝে একদিন এক সুসংবাদ আসে ফরিদের মোবাইলে। কোম্পানি আকাশের লাশের বিনিময়ে তিরিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তখন রুস্তম আলির শুকনো শোকটা আবার দগদগিয়ে ওঠে। এই টাকা সে কীভাবে খরচ করবে, যে টাকার গায়ে লেগে আছে সন্তানের রক্ত! রুস্তম আলি ভেবেছিল, সন্তানের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া এই টাকা সে স্পর্শই করতে পারবে না কোনোদিন। কিন্তু অভাব এমন এক বন্য শুয়োর, যার দাঁতালো কামড়ে যে কেউ অনুভূতি-শূন্য হতে বাধ্য। তাই তো দিনে দিনে, অভাবের প্রবল মরুঝড়ে রুস্তম আলির শোকের নদী পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। আর তখন একবারে হাতে পাওয়া তিরিশ হাজার টাকা দিয়ে সে চায়ের দোকান খুলে বসে। যদিও বুকের ভেতর অপরাধবোধের খচখচানি তার রয়েই যায়। পড়শিরাও জানে তার টাকার উৎস। তারাও সান্ত্বনা দেয়—কী আর করবা, চালাও দুকান। জীবন তো থামে থাকতে পারে না। 

ছয়মাস ভালোভাবেই চলে রুস্তম আলির নতুন জীবন। ছয়মাস পর গোল বাধায় ভেংচি কাটা কুকুরটা। কুকুরের এই ভেংচি-রহস্য কোনভাবেই উদ্‌ঘাটন করতে পারে না রুস্তম আলি। প্রতিদিনই কুকুরটা আসে, পা ছড়িয়ে বসে, ভেংচি কাটে আর তা দেখে রুস্তম আলির বুক হিম হয়ে যায়। দশদিন পরও কুকুরটার উৎপাত বন্ধ না হলে রুস্তম আলি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হয়। সে বোঝে, এভাবে চলতে থাকলে দোকানটা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। নয়তো সে পাগল হয়ে যাবে। স্রেফ পাগল।

সেদিন রাতে শুয়ে শুয়ে কুকুর নিয়ে ভাবতে থাকে রুস্তম আলি। দোকানটা সে দিয়েছে ছয় মাস হলো। এতদিনে কেন কুকুরটা আসেনি? ছয়মাস পরই কেন তাকে আসতে হলো? রুস্তম আলির হঠাৎ মনে হয়, এই ছয় মাসে দোকান চালাতে গিয়ে তার অপরাধবোধ ও অস্বস্তির শেষ ছিল না। তার কেবলই মনে হতো, এই দোকান, দোকানের খুঁটি, টিনের চাল, বিস্কুটের বয়াম, চা-পাতির গন্ধ সবকিছুর সাথে মিশে আছে আকাশ, আকাশের রক্ত। আর অমনি সে দুঃখে পুড়ত। গোপনে চোখ মুছত। কিন্তু ছয় মাস পর দোকানের খ্যাতি গ্রাম ছাড়িয়ে গেলে তার বুকের ভেতর ভালোলাগার ফড়িং নেচে ওঠে। আর ফড়িং নাচার দিন থেকেই তো উৎপাত শুরু করেছে কুকুরটা। কুকুরটা কি সবজান্তা? সে কি হৃদয়ের ভাষা পড়তে পারে? রুস্তম আলির ঘুম আসে না চোখে। উঠোনে সে রাতভর পায়চারি করে। শেষ রাতে, ফজরের আজান পড়লে নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলে রুস্তম আলি। অমনি তার বুকটা বকের পালকের মতো হালকা হয়ে যায়। 

পরদিন সকালে নদীর পাড়ে এক কুকুরের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসী। তারা কুকুরটিকে চেনে না। 

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
4 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
জাবের আরেফিন
জাবের আরেফিন
1 year ago

অসাধারণ

রুকনুদ্দিন মাহমুদ
রুকনুদ্দিন মাহমুদ
1 year ago

ভালোই লেগেছে। বিরতিহীন পড়ে নিলাম। পড়তে গিয়ে কখনো নিজেকে আকাশের স্থানে কখনো রুস্তম আলীর অসহায়ত্বে আবিষ্কার করলাম। কী দুঃখ! স্বার্থের টানে কতকিছু করতে হয়….

Last edited 1 year ago by রুকনুদ্দিন মাহমুদ
তালহা সাদিক
তালহা সাদিক
1 year ago

তেমন নতুন কিছু পাইলাম না।টিপিকাল প্লট।সাব্বির জাদিদের লেখায় আলাদা যে ব্যাপারটা থাকে,সেইটাও নাই।কয়েকটা বাক্য গঠনও রুচিতে বাধলো।দুঃসবাদ আবার পরিবেশন করে কেমন!!
তাও বিদ্রুপের নিয়তে করলে একটা কথা ছিলো।

তা মি ম
তা মি ম
28 days ago

স্মৃতি তো বিস্মৃতিরই অঙ্গ। তবুও মনে আসে। চোখ ভাসে। আবার ব্যস্ততার আড়ালে হারিয়ে যায়। কিন্তু স্মৃতি কি এভাবে সত্যিই ভেংচি কাটে— যখন আমরা ভুলে থাকি!

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷