বৃষ্টি থামবে না! ঘরে ফিরবো কখন? ফিরবোই বা কীভাবে! ড্রাইভার কাজটা ঠিক করলো কি? এমন একটা বিধ্বস্ত রাতেই তার জ্বর উঠতে হলো! তীব্র সংকটেই কি সব ড্রাইভারের অসুখ হয়! মারা যায় কেউ তার! এই তো গত মাসে; ইমার্জেন্সি গ্রামে যাওয়ার দিন তার ফুফু মারা গেল! কী জানি এই দেশের প্রতিটা সেবাদাতাই কোনো না কোনোভাবে সেবাগ্রহীতাকে ফাঁসাবেই। ফাঁসানোতেই এদের যতো আনন্দ!
এতো বৃষ্টি! কেন হচ্ছে? আকাশের স্লুইসগেট কি খুলে গেল! সড়কে কোমর পানি! একটা সড়কে কোমর পানি হবে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে! এইটা কোনো কথা হলো! কর্তৃপক্ষ বলতে কি আমাদের কিছু আছে! কই আছি আমরা? ধ্যাৎ!
‘ধ্যাৎ’ শব্দের আওয়াজটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেল। সহযোগী স্টাফ এবং সহ-চিকিৎসকদের সচকিত চোখ দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হলেন—ভাবনার গভীরে ডুবে থাকা ডাক্তার মাহমুদ জাবের। ‘স্যার কী হলো’ অথবা ‘কোনো সমস্যা স্যার’ বলার আগেই কথা বলে উঠলেন ডাক্তার মাহমুদ। “আসলে আজ ঘরে ফেরার দরকার ছিল একটু আগে। অথচ আজকেই হালত এমন হলো! কোনো যানবাহন নেই। রাস্তায় কোমর পানি। ড্রাইভারের জ্বর। জ্বর না থাকলেই কি—এমন জলাবদ্ধ সড়কে গাড়ি নামাবে কোন পাগলে! এই ভাবতে ভাবতে ‘ধ্যাৎ’ সব্দটা সশব্দে মুখ ফসকে বের হয়ে গেল।”
“স্যার একটা পিকআপ ভ্যান পেয়েছি। চেয়ার বসিয়ে আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি!” বলে সংশয়গ্রস্ত চোখে তাকিয়ে আছে পিয়ন আজমত। কয়েক সেকেন্ড ভেবে ডাক্তার মাহমুদ বললেন, “চলো। বাসায় যাওয়া জরুরি। তোমরা তাহলে কী করবে!” বললেন চেম্বারের বাকি সবাইকে। এরপর তিনিই উত্তর দিলেন, “একটু কষ্ট করে চেম্বারেই থেকে যাও সবাই। বাসায় ফোন করে বলে দাও রাস্তায় সাতার পানি এখন!”
অফিসের সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচল। ডাক্তার মাহমুদসহ সহ-চিকিৎসক তিনজন পিকআপ ভ্যানে করে বাসার দিকে চললেন।
দুই.
ডাক্তার মাহমুদ জাবের অবসরে এসেছেন দশ বছর। সে হিসেবে তার বয়স এখন সত্তর বা কিছুটা বেশি। তিনি মূলত মানসিক রোগের চিকিৎসক। কিন্তু অবসরের পর নিজস্ব চিকিৎসার পথ থেকে সরে আসেন তিনি। কয়েকজন তরুণ ডাক্তার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে। বিশেষ করে তিনি আত্মহত্যা প্রবণতা, ডিপ্রেশন, অবসাদ, অচঞ্চলতা, অল্পতে ভেঙ্গে পড়া, আত্মনিয়ন্ত্রণহীনতা, মনো-বিকার, ‘জেন্ডার বিষয়ক পশ্চিমা উদারতা এতো উগ্র কেন’ ইত্যাদির কারণ অনুসন্ধানের জন্য গবেষণা শুরু করেন।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো মানুষের কেসস্টাডি করেন তিনি। তিনি চেষ্টা করেন মানুষের এইসব মনোজাগতিক বিস্রস্ততার পেছনের কারণটা কী? তা খুঁজে বের করতে৷ তার ভাবনা—পৃথিবী এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে উপভোগ্য, সহজ, নিরাপদ, মানবিক এবং উদার। তারপরেও কেন বাড়ছে তরুণদের মধ্যে মনো-বিকার! কেন মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এতো ভঙ্গুর! কী কারণে তারুণ্য এখন ‘আঠারো বছর’কে উপভোগ করতে পারে না। সুকান্তের যুবকেরা কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নিস্তেজ অবসাদগ্রস্ত আর ডিপ্রেসড। এতো সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে কেন একটা তরুণ চলে যেতে চায়!
ডাক্তার মাহমুদ গত দশ বছরে বহু বিচিত্র মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিচিত্র কেস নিয়ে কাজ করেছেন। শ’য়ের কাছাকাছি গবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালে ছাপা হয়েছে তার।
তিন.
বৃষ্টি নামার ঘণ্টাখানেক আগেই তিনি ভারতের চেন্নাই থেকে এসেছেন। বাসায় যাওয়ার আগে চেম্বারে একটু সময় দেওয়ার জন্য এসেই ফেঁসে গিয়েছিলেন বৃষ্টির ক্ষোভার্ত অবতরণে। চেন্নাই গিয়েছিলেন কয়েকজন ডাক্তার বন্ধুর আমন্ত্রণে। সেখানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কয়েকটি সেমিনারে কথা বলেছেন। ইন্টার্নি করা হবু ডাক্তারদেরও ক্লাস নিয়েছেন ডাক্তার মাহমুদ। তার গবেষণা এবং নেপথ্যের রহস্য উদ্ধারের আলাপে সবাই অবাক হয়ে তাঁকে দেখে। চশমাওলা কেউ কেউ মাথা নিচু করে চোখ চশমার কাঁচের উপর নিয়ে দেখে।
তার বক্তব্যে আমাদের সময়, লাইফস্টাইল, স্ট্রাগলপদ্ধতি, সারভাইবপদ্ধতি, রাজনৈতিক স্থিতিহীনতা, মানুষের অপার লোভ, সহজ প্রাপ্তির প্রচেষ্টা, স্বপ্ন থাকার পরেও কাজে সচেষ্ট না হওয়া, নিজস্বতার বাড়াবাড়ি, যাপন পদ্ধতিতে অতি উদারতা আর শাসনহীনতা যে আমাদেরকে মানুষ হিসেবে খর্ব শক্তির করে দিচ্ছে—কি দৈহিক শক্তিতে, কি মানসিক শক্তিতে; সেই কথা দ্ব্যর্থহীন বলেন।
প্রমাণ পেশ করেন নিজের কেসস্টাডিগুলো থেকে। পত্রিকার কাটিং আর মনোচিকিৎসকদের মতামত বলেন। উপস্থাপন করেন নিজের কাউন্সেলিং করা ক্লায়েন্টদেরকেও। তারাও তার মতামতের পক্ষে বলেন।
চার.
বাসায় গিয়ে দ্রুত বিছানায় গিয়েছিলেন ডাক্তার মাহমুদ। সফরের ক্লান্তি আর পরের দিনের কাজের শিডিউল দেখে— ঘুমটা জরুরি মনে করেছিলেন তিনি। বিছানায় শোয়ার পর কিছুতেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না। শরতের ভারী বৃষ্টির পর শীতল আবহাওয়া আর বাসায় এসি চালু থাকার পরেও ঘামছেন তিনি।
একটা দূরাগত চিন্তা অথবা দুশ্চিন্তা তাঁর সমগ্র মনোযোগ অন্য কোথাও নিয়ে স্থির করে দিয়েছে। কোনোভাবেই নিজের মনকে ঘুমের জন্য তৈরি করতে পারছেন না তিনি। জীবনের অর্জিত সমস্ত কৌশল আর কাউন্সেলিংয়ের জ্ঞান নিজের উপর প্রয়োগ হচ্ছে না। মনে মনে ভয় পাচ্ছেন তিনি। ‘কোথাও কি আমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছি’ আসছে এমন ভাবনাও।
সারাদিনের ঘটনাগুলো স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে ধীরে ধীরে। নিজের ভেতরে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষের অসহায়ত্বগুলো। শিক্ষিত, স্মার্ট, সফল, পপুলার এবং পয়সাওয়ালা মানুষগুলো কেন হঠাৎ করেই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। কেন হয়ে উঠে হঠকারি! এইসব প্রশ্ন আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরেছে ডাক্তারকে। কোনোভাবেই মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি।
ঘুমের জন্য চোখ বন্ধ, এপাশ-ওপাশ করা আর নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হওয়া চলছে যুগপৎ। “এই সাত যুগের জীবনে কখনোই তো আমার ঘুমের এমন সমস্যা হয়নি। বিছানায় গা এলাতেই হারিয়ে যেতাম ঘুমের রাজ্যে। এমন কেন লাগছে আজ!” প্রশ্ন করেন নিজেকেই নিজে। এই প্রশ্নের ভেতর দিয়েই তিনি প্রবেশ করেন একটা ভিন্ন জগতে। কথা বলতে শুরু করে নিজের সঙ্গে নিজেই।
পাঁচ.
ডাক্তার জাহেদকে এভাবে ফেলে চলে আসাটা ঠিক হয়েছে? প্রশ্নটা করে নিজেই উত্তর দেন, “কী করব, ও তো চেন্নাই গিয়েছে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য। তো আমি কি তারে নিয়ে আসব! আর নিয়েই বা কেন আসব? ওর ছেলেমেয়েরা চেন্নাই যাওয়ার আগে একবার আমাকে বলতে পারত! আমি কথা বলতাম জাহেদের সঙ্গে। আমি চেষ্টা করে ওকে রিকভার করতে না পারলে তখন নিতো!
-আরেহ! তারা তো জানে তুমি এখন ঠিক চিকিৎসা করছো না। গবেষণা করছো। ফলে ওরা হয়তো ডিস্টার্ব করতে চায়নি তোমাকে।
-হ্যাঁ এইটা তো ঠিক কথাই। কারণ আমি তো চেম্বারে গতানুগতিক রোগী দেখছি না। তাই হয়তো ওরা এমনটা ভেবে থাকতে পারে। আমার তাহলে উচিত জাহেদের ছেলে সাকির সঙ্গে কথা বলা!
-খুব জরুরি। জাহেদ তোমার খুব কাছের বন্ধু। কর্মক্ষেত্রের দূরত্ব আর ভিন্নতার কারণে যোগাযোগ নিয়মিত না থাকলেও তোমরা কেউ খুব বেশি দূরে ছিলে না হৃদয়গতভাবে।
-আসলেই জাহেদ যেহেতু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আর আমার কাজও তাই; উচিত ছিল ওকে সময় দেওয়া আমার। আমি অন্তত পুরো হিস্ট্রিটা জানতে পারতাম। আর কী-ই বা করব! জীবন এতো ফাস্ট যে একটু বিকল্প উপায়ে চিন্তারই সুযোগ নাই। ওদিকে যদি চেন্নাই ট্যুরের শুরুতেই জানতে পারতাম তাহলে হয়তো প্রতিদিন একটু একটু করে আলাপ করতে পারতাম। জানলামও সেই ফেরার দিন। তা-ও আবার বিমান বন্দরে যাওয়ার পথে জাহেদের ছেলেকে গাড়িতে লিফট দিতে গিয়ে! ধ্যাৎ …
নির্ঘুম শেষ রাতে এইভাবে নিজের সঙ্গে নিজে মনোলগ করতে করতেই একসময় ঘুমিয়ে যান ডাক্তার মাহমুদ। সকাল ন’টায় ছোট মেয়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। কারণ তার ঘুমে থাকার সময় এই ছোট মেয়ে নওশীন ছাড়া তাকে কেউ ডাকার সাহস পায় না। আর ওর ডাক না হলে সাধারণত ডাক্তার মাহমুদের ঘুমও ভাঙ্গে না।
ছয়.
ডাক্তার জাহেদ ও ডাক্তার মাহমুদ জাবের একই ব্যাচের। দুজনই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়েছেন। ব্যাচে সবচেয় মেধাবী ছিলেন ডাক্তার জাহেদ। কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট আর সামাজিক বোধ কম থাকায় তার সার্কেল ছিল ছোট। দুই তিন জনের বেশি বন্ধু ছিল না তার। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কাছের ছিলেন ডাক্তার মাহমুদ।
ডাক্তার মাহমুদ মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ হলেন। আর জাহেদ হলেন হরমোন বিশেষজ্ঞ। ব্যক্তিগত জীবনে ডাক্তার জাহেদ ছাড়া সবাই ঘর বাঁধলেন ডাক্তারদের নিয়েই। এমনিতেই জাহেদ বন্ধুদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারতেন না সামাজিক ব্যাপার-স্যাপারে। যেমন, সিনেমা কখনোই দেখতে যেতেন না। খুব বেশি আড্ডা দিতেন না। পড়াশোনা, খাবার, ফুটবল এবং কেউ অসুস্থ হলে পাশে থাকা ছাড়া জাহেদের সক্রিয়তা আর তেমন ছিলোই না ক্যাম্পাসে।
অন্যরা যখন ক্যাম্পাসে চুটিয়ে প্রেম করত আর ভবিষ্যতের ঘর নিয়ে পরিকল্পনা করত; জাহেদ তখন নিজের বাবার বিক্রি করা জমি ও মায়ের বিক্রি করা গহনাগুলো ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা আঁটত! বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ হলে বলত ঘর-সংসার দেখবেন বাবা। আমার কাজ ডাক্তার হয়ে বাড়ি ফেরা। এর বাইরে ভাবছি না তেমন কিছু। ফলে অনেকেই তাকে ভাবত আত্মকেন্দ্রিক। ভালো ছাত্র হিসেবে কেউ কেউ মনে করত সে অহংকারী।
যখন জাহেদের ব্যাচের প্রায় সবার স্ত্রীই ডাক্তার শুধু তার স্ত্রীই গৃহিণী—তখন থেকেই ডাক্তার জাহেদ কিছুটা একা হতে থাকেন। চাকরি-চেম্বার-পরিবার এই তিনের বাইরে তাকে দেখা যেত না তেমন একটা। ডাক্তার মাহমুদ ছাড়া প্রায় সব বন্ধু ও ব্যাচমেটের থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। মাঝেমধ্যে ডাক্তার মাহমুদ একটু ধমক-টমক দিলে বলতেন, “আরে দেখ আমি নিজেই আনস্মার্ট। আবার তোর ভাবিও সহজ সরল। তোদের এই লাইফস্টাইল আর জীবন-যাপনের জৌলুসে আমরা ততোটা মিশতে পারি না। এতে তোদের ডিস্টার্ব হতে পারে। তাই একটু দূরে থাকা।” ‘তোরে নিয়ে আর পারা গেলো না।’ বলতেন ডাক্তার মাহমুদ।
একই শহরে একই মেডিকেলে থাকার সুবাদে সবার ছেলে মেয়েই কমন স্কুল ও কলেজে পড়ত। ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ডাক্তার জাহেদের ব্যাচমেটের প্রায় সবার বাচ্চাই পড়ত। মেয়েরা বিদ্যাময়ীতে। ফলে চলতেই থাকত একটা নীরব প্রতিযোগিতা। যেমনটা স্কুলগুলোতে চলতে থাকে সবসময়ই। ডাক্তার জাহেদের দুই ছেলে এক মেয়ে। আর মাহমুদের দুই মেয়ে দুই ছেলে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে সবাই বেশ ভালো ফলাফল করেছিল। কিন্তু ভর্তিযুদ্ধে জাহেদের ছেলেমেয়েদের কেউ মেডিকেলে চান্স পেল না। সাধারণত এইসব পরিস্থিতিতে নানা ধরনের ইশারা ইঙ্গিতের কথা শুনতে হয় মা-বাবাকে। শুনলেন জাহেদ দম্পতিও কিছু।
ভর্তি বিষয়ে ডাক্তার মাহমুদ একদিন জাহেদকে বললেন, “কী রে তোর বাবুরা তো খারাপ কিছু করেনি! মেয়ে জাহাঙ্গীরনগরে। বড় ছেলে বুয়েটে। মেঝোটা তো চট্টগ্রামে ইংলিশে। তো খারাপ কই করল! দেশের সবাই-ই কি মেডিক্যালে পড়বে?” ‘কিন্তু একটাও মেডিকেলে চান্স পাবে না কেন!’ বলল জাহেদ। সেদিনের মতো দু’জন দুই দিকের পথ ধরে বাসায় ফিরেন।
এরপর থেকেই ডাক্তার জাহেদ পরিবার আর পেশেন্ট ছাড়া কারো সঙ্গেই পারতপক্ষে যোগাযোগ রাখেন না। এমনকি ডাক্তার মাহমুদ বাসায় না গেলে তার সঙ্গেও ফোন-টোন করেন না। অনেকটাই ‘একলা চলো’ জীবন তার। ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী বরাবরই বেড়াতে যেতে বলেন। একটু ক্লাবে যেতে বলেন। বলেন, ট্যুর দিতে। কিন্তু তিনি প্রায় অনড় জড়বস্তুর মতোই রুটিনের বাইরে আর কিছু ভাবেন না। যতো দিন যাচ্ছে ততোই কাজের মধ্যে ডুবে যাচ্ছেন।
সাত.
সকাল দশটার দিকে ডাক্তার মাহমুদ জাবের বের হলেন বাসা থেকে। তখনও রাস্তা ভেজা। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘নিম্নচাপ নাকি রে! ও আচ্ছা জ্বর কমছে?’ ড্রাইভারের জবাবের অপেক্ষা না করেই গাড়িতে বসলেন। সোজা চেম্বারে। ঘণ্টাখানেক পর তার গাইনি ডাক্তার স্ত্রীও আসলেন চেম্বারে। স্ত্রীকে ডাকলেন। তখনও রোগী আসা শুরু করেনি। একসঙ্গে নাস্তা করতে চান৷ খেতে খেতে ডাক্তার মাহমুদ বললেন, ‘আমাদের জাহেদের খবর জানো!’
-কোন জাহেদ!
-ডাক্তার জাহেদ।
– ও! বাওনা জাহেদ! তো কী খবর বলো!
-দেখো তোমাদের এইসব আলাপের কারণে পুরো লাইফেই খোলস ছেড়ে বের হতে পারেনি বেচারা। একটা অবগুণ্ঠনের ভেতর দিয়ে গিয়েছে সবসময়ই। এভাবে আসলে মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলা হয়! তুমি আর কখনোই এভাবে জাহেদ নয় শুধু—কাউকেই তার দুর্বলতা নিয়ে বলো না। কারো খাটো হওয়া, অসুন্দর হওয়া, সরল হওয়া নিজস্ব ইচ্ছের ব্যাপার নয়!
-আরেহ! তুমি তো খুবই সিরিয়াস নিয়ে নিলে দেখছি। যাক আসলেই আমার এভাবে বলা উচিত হয়নি। একটু সচেতনতা আসলেই দরকার। তা বলো, ঘটনা কী?
-গতকাল চেন্নাই ট্যুর ও সেখানের কাজ শেষে বিমানবন্দরে ফিরছিলাম। তখনই রাস্তায় দেখলাম সাকি দাঁড়ানো। গাড়ি থামিয়ে জানলাম সে-ও বিমানবন্দরে যাবে। দেশের ফ্লাইট ধরবে। যদিও ওর আর আমার ফ্লাইট আলাদা। একসঙ্গে বিমান বন্দরে এলাম। জানলাম জাহেদ অসুস্থ। চেন্নাইয়ে রিহাব সেন্টারে আছে পনেরো দিন যাবৎ। মেন্টাল সিকনেস। আশ্চর্য হলাম ছেলেরা কেউ আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করল না!
-কী বলো! আর তুমি চলে আসলা! তোমার উচিত ছিল সাকির থেকে ঠিকানা নিয়ে ফ্লাইট ক্যান্সেল করা। এমনিতেই সে কথা বলে না। তার পরে মানসিকভাবে অসুস্থ। হয়তো জাহেদই না করেছে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে!
-এটা হতে পারে। সে হয়তো চায়নি নিজের জটিলতায় বন্ধুকে বিব্রত ও বিরক্ত করতে।
-সাকি এখন কী করছে!
– ও তো কোন ভার্সিটিতে নাকি জয়েন করেছে। লেকচারার হিসেবে। একটা নতুন ব্যাচের ওরিয়েন্টেশনের কাজে দুই দিনের জন্য দেশে আসছে। এরপর আবার যাবে চেন্নাইয়ে। ওখানে ওর মা ও ছোট বোন আছে।
-সাকিকে ফোন দাও। আজ রাতেই সাকির সঙ্গে বসার ব্যবস্থা করো। আপনজনদের পাশেই যদি দুর্দিনে দাঁড়াতে না পারি তাহলে এইসব স্বচ্ছলতা আর উপার্জনের কী মূল্য আছে!
আট.
ফোনে সাকি জানিয়েছিল বিকেলে সে ময়মনসিংহ ফিরছে। ফলে বাদ এশা সাকি ডাক্তার মাহমুদের বাসায় আসে। অনেকটাই বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত লাগে তাকে। সাকিকে দেখেই আফরোজা নূর ডাক্তার মাহমুদের স্ত্রী হায় হায় করে উঠেন। দ্রুত লুঙ্গি ও টাওয়াল দিয়ে গোসল করতে বলেন। ততক্ষণে তিনি টেবিলে খাবার সাজালেন। “কাকা আজ চারদিন পরে গোসল করলাম। মনে হচ্ছে আমার দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে। গোসলহীন মানুষ আসলে যন্ত্র একটা!” বলেই সাকি হাসতে লাগল। কিন্তু হাসিটাও প্রাণবন্ত না। কোথাও যেন একটা বিষাদ জড়িয়ে আছে।
খেতে খেতে আলাপ চলছে। আফরোজা নূর যেন আজ যথার্থ মাতৃত্বের ভূমিকায়। বাবার পাশে বসে ছোট মেয়ে মাকে পর্যবেক্ষণ করছে। আর বাবাকে ইশারায় বহু কিছু বলছে। বাবা মেয়েকে চুপ থাকতে বলছেন। বলছেন সাকি একটা বড় ট্রমার মধ্যে আছে। আপাতত তোর বানরামি রাখ। ফাইজা চুপ করে আছে। মুখের এক্সপ্রেশনে মনে হচ্ছে সমস্যাটা সে-ও একজন মাতৃবৎ অনুভব করছে।
-কাকা, হঠাৎ করে, গত বছর একদিন বাসায় আব্বু গল্প বলছেন। গল্পের মধ্যেই ছোট্ট বলল, ‘বাবাই তুমি কবে থেকে গল্প বলা শুরু করেছো!’ আব্বু রেগে গেলেন। এমন রাগ আমরা কখনোই দেখিনি। বললেন, “আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলছি; আর তুমি বলছো আমি গল্প বলছি!” এরপর তিনি উঠে চলে গেলেন। দুইদিন আর নিজের রুম থেকে বের হলেন না। বললেন শরীর খারাপ লাগছে।
-তখন আসলে কোন ঘটনাটা বলেছিল, মনে আছে তোমার! জানতে চাইলেন ডাক্তার মাহমুদ।
-কাকা, তিনি বলছিলেন, চেম্বার থেকে বের হতেই দাদার মতো একজনকে দেখলেন। সালাম দিলেন। দিতেই সেই লোক বললেন, ‘বাবা কেমন আছো?’ তখন বাবার এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করল। বৃদ্ধ বাবাকে গাড়ি করে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে বললেন। বাবা গাড়িতে তুললেন বৃদ্ধকে। তিনি পথ দেখিয়ে বাবাকে নিয়ে যাচ্ছেন। যেতে যেতে হঠাৎ বাবা দেখেন আমাদের গ্রামের বাড়ির পথে যাচ্ছেন। কিন্তু বাবা তখন কিছু বলতে পারছেন না। হঠাৎ বৃদ্ধ বাবাকে গাড়ি থামাতে বললেন। বললেন, ‘আমি এসে গেছি। দরজাটা খুলে দাও বাবা।’ বাবা দেখলেন দাদার কবরের সামনে তার গাড়ি। বৃদ্ধ গাড়ি থেকে নেমে কবরে ঢুকে গেলেন। ঘটনা এইটাই। বাবা রাগ করার পরে আমরা গাড়ি দেখতে যাই। দেখি গাড়ির চাকা একদম পরিষ্কার। কোথাও ধুলো বালি নেই। অথচ আমাদের গ্রামের রাস্তায় আগেরদিন আমি কাঁদা দেখে এসেছি।
-এরপর দুইদিন পর কী হলো! জিজ্ঞেস করলেন আফরোজা নূর।
-কাকি, এরপর থেকে নিয়মিত এইরকম রূপকথাটাইপ ঘটনা তিনি বলতে লাগলেন। এই সকল কিছুই নাকি তার সঙ্গে ঘটছে। অর্থাৎ তিনি যা কল্পনা করেন সেইটেকেই বাস্তব মনে করেন। যা ভাবেন তাই ঘটছে মনে করেন। মাঝেমধ্যে তো এমনও হয়েছে প্রচণ্ড রোদ বাইরে। তিনি বারান্দায়। হঠাৎ শীতের দিনের মতো কাঁপতে শুরু করছেন। বলছেন এতো ঠান্ডা কেন আজ! প্রথম প্রথম আমরা হাসতাম। ভাবতাম আব্বু মনে হয় আমাদের সঙ্গে মজা করতেই এসব করেন বা বলেন। কিন্তু যখন নিয়মিতই এমনটা হচ্ছিল তখন মা ও আমরা আতঙ্কিত হচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুই বলতে পারতাম না।
একদিন ছোট্ট বললো, “বাবাই তোমাকে একদিন মাহমুদ কাকার চেম্বারে নিয়ে যাই চলো! তুমি সম্ভবত কোন কারণে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছো। ফলে তোমার কোথাও সমস্যা হচ্ছে।” এরপর থেকে আপনার নাম শুনতেই পারেন না। আর ছোট্টর সঙ্গেও কথা বলেন না।
-চেন্নাই কীভাবে নিয়ে গেলে। বললেন ডাক্তার মাহমুদ।
-চেন্নাই মূলত জোড় করেই আমি নিয়েছি। ওখানে নিয়েছি আমার নিজের ট্রিটমেন্ট লাগবে বলে। পরে সেখানে যাওয়ার পর বাবার পছন্দের একজন মানুষ বাবাকে দুইদিন বুঝানোর পরে বললেন, “আচ্ছা, তোমরা যদি তাই মনে করো, তাহলে চলো কথা বলা যাক।” এরপর থেকেই কনভিন্স হলেন কিছুটা।
নয়.
তুমি কবে যাবে! আমিও যাবো তোমার সঙ্গে। জাহেদ যদি রাগও করে তবুও। বন্ধুর এইরকম বিপদে আমাকে পাশে থাকতেই হবে। আজকে তাহলে যাও। কাল আমি দু‘জনেরই টিকিট কনফার্ম করে নেব। বাকি কথা আমরা যেতে যেতে বলব।
এরপর সাকি বের হয়ে যায় বাসার দিকে। ডাক্তার মাহমুদ ও আফরোজা দীর্ঘক্ষণ আলাপ করে বিছানায় যান। আজকে ডাক্তার মাহমুদ শুয়েই ঘুমের রাজ্যে চলে যান।
দশ.
বিমানে পাশাপাশি সিটে বসা ডাক্তার মাহমুদ জাবের ও ফারহান সাকী। বিমান চলতে শুরু করেছে অনেক আগেই। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। অথচ দু’জনই কথার জাহাজ। আড্ডার মধ্যমনি সবসময়ই। অথচ আজ কারো মুখেই কথা নেই।
একজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা। বন্ধুকে রিকভার করা। এই মনোবিস্রস্ততার কারণ অনুসন্ধান। সেইসব নিয়ে হয়তো ভাবনার অতলে ডুবে গেছেন।
আরেকজন বাবা। একজন সফল চিকিৎসক। একজন দৃঢ়চেতা মানুষের ক্রমশ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা নিয়ে হয়তো ভেবে ভেবে গোপন করছে চোখের অশ্রু।
ডাক্তার মাহমুদ ডাকেন, সাকি! সাকি চোখ ফেরাতেই দেখা যায় সত্যি সত্যি তার চোখে পানির অস্তিত্ব।
বলেন, “বাবা শক্ত হও। লড়াই আমাদের জীবনের অংশ। তোমার বাবা একা লড়েছেন। তোমার সঙ্গে আমরা আছি। আশা করি দ্রুতই আমার বন্ধু সুস্থ হবে। আবার মানুষের প্রিয় ডাক্তার হিসেবে চেম্বারে যাবে। দেখো, তোমার বাবা কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট ছিলেন সত্য। কিন্তু তোমার বাবার রোগী হয়েছেন এমন একজন মানুষ আমি পাইনি যে ডাক্তার জাহেদে মুগ্ধ হয়নি! এমন কোনো সহকর্মী তোমার বাবার পাবে না; যারা তোমার বাবাকে ভালোবাসে না। কিন্তু তার মধ্যে কীসের যেনো পলায়নপরতা ছিল! কীসের যেনো অবগুণ্ঠন ছিলো। কী কারণে যেনো বেশ ক’বছর ধরে আমাকেও এড়িয়ে চলছিল! জাগতিক ব্যস্ততার কারণে বন্ধুর দিকে মনোযোগ দিতে পারিনি। অপরাধবোধ কাজ করছে আমার। আমি যদি নিজ থেকে তার খবর রাখতাম তাহলে হয়তো সে এতোটা একা হতে পারতো না!” কঠিন হৃদয়ের ডাক্তার মাহমুদের চোখও আর্দ্র হয়ে উঠল।
কাকা, “জীবন এমনই। যা ভাবি; তা তো ঘটেই না। যা ভাবি না; তা ঘটতেই থাকে। যতদূর জানি আমার মেডিকেলে চান্স না পাওয়ার পর থেকেই আব্বু নিজেকে গুটিয়ে নেন। মা অনেক বুঝিয়েছেন। একসময় মা কলেজের অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন বাবাকে কিছুটা সপ্রতিভ করার জন্য। একদিন তিনি বললেন, ‘যা-ই করো, তুমি তো আর ডাক্তার না। এই সমাজ অন্যরকম। ডাক্তারের স্ত্রী ডাক্তার না হলে দাম থাকে না। ডাক্তারের ছেলে মেডিকেলে চান্স না পেলে ইজ্জত থাকে না।’ এরপর থেকে মা ও আমরা বাবার সঙ্গে এসব নিয়ে আর কথা বলতাম না। মূলত আমাদের এই দূরে থাকা ও কথা না বলতে চাওয়াটা বাবার জন্য নেগেটিভ ব্যাপার হয়েছে।”
এগারো.
ডাক্তার মাহমুদ জাবের। ডাক্তার জাহেদ ও সাকি মুখোমুখি বসে আছে। একদম সুস্থ স্বাভাবিক দেখাচ্ছে ডাক্তার জাহেদকে। হাসিখুশি আলাপ করছেন ডাক্তার মাহমুদের সঙ্গে। বলছেন, ‘দোস্ত তুই থাকতে আমার পুলায় আমারে চেন্নাই কেন আনলো! ওরে জিগা তো!’ বলেই হাসতে শুরু করলেন।
সাকি বললো, “হ্যাঁ আব্বু এইটা ঠিক হয় নাই। স্যরি।”
আলাপ চলল দীর্ঘক্ষণ। সাকি কিছুটা আশাবাদী। এমন সময় টয়লেটে ঢুকলেন ডাক্তার জাহেদ।
ডাক্তার মাহমুদ বললেন, “বাবা সাকি এইটা সুস্থতার লক্ষণ নয়। বরং সমস্যা অনেকটাই বেড়েছে। এখানে তোমার বাবা যে একজন ডাক্তার সেইটে মাথায় রেখে তার কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা হয়নি। দ্রুত এখান থেকে বের হতে হবে। খুব সেন্সেটিভলি হ্যান্ডল করতে হবে।
দেশে নিয়ে যাই চলো। আমি আছি ইন শা আল্লাহ। আশা করি দ্রুতই রিকভার করাতে পারবো।”
সাকির চোখে অসহায়ত্বের দৃষ্টি। এমন সময় টয়লেট থেকে ফিরলেন ডাক্তার জাহেদ। ফিরেই সাকিকে বললেন, “বাবা ডিএনএ টেস্টের জন্য সবাই রাজি হয়েছে! তুমি কি সবার অনুমতি নিতে পারছো?”
প্রশ্ন শুনেই ডাক্তার মাহমুদ সাকির দিকে তাকালেন। জাহেদ তখন বন্ধুকে বললেন, “দেখো এরা বাবার ইচ্ছে ও স্বপ্নকে কোন মূল্যই দেয় না।”
সাকির মা ডাকলেন দু’জনকে। পাশের রুমে গিয়ে বসলেন সাকি ও ডাক্তার মাহমুদ। সাকির মা খাবার নিয়ে গেলেন জাহেদের রুমে।
জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন ডাক্তার মাহমুদ। যেন তিনি জানতে চান ডিএনএ টেস্ট ব্যাপারটা কী! সাকি বুঝতে পারে। বলে, “কাকা, ব্যাপার যদি শুধু কল্পিত গল্প বানানোতে সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে তো সমস্যা ছিল না। কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিতাম। হঠাৎ করে বাবার মনে হলো আমরা কেউই তার রক্তের উত্তরাধিকার বহন করি না। সেই ভাবনা থেকেই তিনি আমাদের যে হাসপাতালে জন্ম হয়েছিল; সেখানে খোঁজখবর নিতে থাকেন। কাগজপত্র ঘেঁটে তিনি আবিষ্কার করেন; আমার সঙ্গে একই দিনে এই হাসপাতালে আরো ছয়জন ছেলের জন্ম হয়েছিল। ছোট বোনের সঙ্গে চারজন মেয়ে এবং ছোট্টর সঙ্গে আরও পাঁচজন। তিনি এই পনেরোজনের ঠিকানা জোগাড় করেন। তার ধারণা হাসপাতালে এমন সিন্ডিকেট আছে যারা সন্তান বদলে দেয়। ফলে তিনি সবার ডিএনএ টেস্ট করাতে চান। এই পর্যন্ত যতজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কেউই রাজি হয়নি। মামলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন অনেকে। তবুও তিনি দমে যাবার পাত্র নন।
আমি যখন ঢাকায় ফিরি তিনি আমাকে বলেন আমি যেনো সবাইকে রাজি করাই।”
ইদানিং কি জাহেদ সিনেমা দেখতে শুরু করেছিল! জানতে চাইলেন ডাক্তার মাহমুদ।
-কাকা এখানে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। গতবছর হঠাৎ করেই তিনি সিনেমা দেখতে শুরু করেন। আর সেইসব সিনেমাগুলো নিজের জীবন হিসেবে সিরিয়াসলি ভাবতে থাকেন। সেখানে তার ওয়াচলিস্ট খুঁজে দেখি একটা সিনেমা এমন ছিল; যেখানে হাসপাতালে সন্তান বদলে দেওয়ার কাহিনি ছিল।
বারো.
ডাক্তার মাহমুদ চুপ করে আছেন। আকাশের দিকে চোখ। সাকি একাই কথা বলছে… “কাকা আপনাদের সফলতা, মেধা আর কম্পিটিশন দিন শেষে আমার বাবার মতো কতো মানুষকে শেষ করছে! ভেবেছেন কখনও?”
ডাক্তার মাহমুদ আকাশের দিকেই চেয়ে থাকলেন। যেন বা তার কাছে কোন কথা জমা নেই…
অসাধারণ!
অসুস্থ প্রতিযোগিতা হত্যা করছে মানুষ। অথচ…