বিক্ষোভের দিনগুলিতে সুনাগরিক হিসেবে আমাদের কার্যবিবরণী

আরমান

২০২৪ সালের ২১শে জুলাই পরবর্তী কোনো এক বিকালে যখন আসরের আজান দেয়, তখন আমি আরমান [লেখক, অনুবাদক] এবং মাহমুদুল হাসান [আউটসোর্সিং কর্মচারী, নির্বাচন অফিস, কুড়িগ্রাম] আমরা দুই বন্ধু দেশজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ায় ও ফেসবুক-ইউটিউব-টিকটক চালাতে না পারায় বিএনপি-জামাত কর্মীদের ওপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হই এবং তাদের প্রতি অশেষ নিন্দা জ্ঞাপন করতে করতে আসরের নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ধীরে ধীরে মসজিদ পানে হাঁটতে থাকি। আমরা মসজিদে প্রবেশ করার অব্যবহিত পর একটি অশীতিপর বৃদ্ধ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে একামত দিতে শুরু করে এবং তার গলায় আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুর আমাদের কিছু সময়ের জন্য অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। একামত শেষে আমরা নামাজে দাঁড়াই এবং বিক্ষিপ্ত মনোযোগ বাগে আনবার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকি। তখন আমাদের সামনের কাতারে মুসল্লিদের মধ্যে মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকায় দ্বিতীয় রাকাতের শেষভাগে সেখানে একটি শয়তান ঢুকে পড়ে এবং সে একটি শিশুর অন্তরে ওয়াসওয়াসা প্রদান করায় শিশুটি তার পাশের শিশুকে গুঁতা দিতে প্রবৃত্ত হয় এবং তার টুপি ধরে টান মারে। ফলস্বরূপ আমরা তার দিকে মনোযোগ ফেরাতে বাধ্য হই এবং নামাজ শেষে ওই শিশুটিকে মধ্যমমাত্রার চপেটাঘাত করে মসজিদ ছেড়ে বেরিয়ে আসি। মোড়ের কাছটায় আসার পর আমরা অত্যন্ত থমথমে পরিবেশ লক্ষ করি এবং আমাদের মনে পড়ে যায় দেশজুড়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনের কথা। সত্যি বলতে আমরা ভালোভাবে জানিও না ছাত্রসমাজ ঠিক কী নিয়ে আন্দোলন করছে। তবে আমরা মনে মনে ছাত্রসমাজকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি যেহেতু তাদের আন্দোলনের বদৌলতেই দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে এবং তারই ফলশ্রুতিতে আজ আমাদের কোনো কাজ করতে হচ্ছে না এবং আমরা খুশিমনে অবসর যাপন করতে পারছি। আমরা নিজেদের ভেতর একটি দ্বান্দ্বিকতা অনুভব করি এবং আরও খানিকটা এগিয়ে যেতেই আমাদের তৃতীয় বন্ধু আল-আমিনকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখি। তার কাছে আমরা জানতে পারি যে, কিছুক্ষণ আগে সারা দেশের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে নওগাঁ শহরে একটি মিছিল বের হয় এবং মিছিলটি শহরের ডিগ্রি কলেজ রোড হয়ে মুক্তির মোড় ঘুরে দয়ালের মোড় পর্যন্ত এসে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়। অচিরেই স্পটে একজন বিশিষ্ট সম্মানিত আওয়ামী লীগ নেতার উদয় ঘটে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে একটি পুলিশ তাঁকে দেখিয়ে দেখিয়ে এক আন্দোলনকারীর বাম চোখ লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তবে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার বাম কানের কিছু অংশ ছিন্ন করে চলে যায়। ইত্যবসরে ওই আওয়ামী লীগ নেতা একজন তরুণকে পার্শ্ববর্তী একটি বহুতল ভবনের ছাদ হতে সম্পূর্ণ ঘটনার ভিডিয়ো ধারণরত অবস্থায় দেখতে পান এবং তিনি তার কর্মী-সমর্থকদেরকে ওই তরুণটিকে ধরবার নির্দেশ প্রদান করেন। কর্মীরা তাকে ধৃত অবস্থায় নিয়ে আসলে তার ফোনটি চেক করবার পর আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে সে একজন আন্দোলন সমর্থনকারী। ফলে তার ফোনটি উন্নয়নের পিচঢালা পথে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয় এবং যথাক্রমে তার একটি হাত, একটি পা, বুকের একটি হাড্ডি, একাধিক আঙুল, নাক ও দুটি দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়। এ পর্যায়ে মাননীয় আওয়ামী লীগ নেতাটি তার কর্মী-সমর্থকদের থামতে বলেন এবং ওই ছেলেটির প্রাণ ভিক্ষা দেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্যকে বলেন, এই ছেলেকে হত্যাচেষ্টার জন্য দায়ী করে যেন স্থানীয় বিরোধীদলীয় নেতা ও সমন্বয়কদের নামে মামলা দায়ের করা হয় এবং ঘটনার যেন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হয়। এ কথা শুনে মরণপ্রায় তরুণটি আওয়ামী লীগ নেতাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এবং নেতাটি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় এবং নিজ খরচে একটি রিকশায় করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। আল-আমিনের মুখে এসব শুনে আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হই এবং যদিও ইন্টারনেট নেই তবু আমরা আমাদের ফোনের সমস্ত ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রাম-মেসেঞ্জার আন্সটল করে দিই এবং এক টহলরত পুলিশের পেছনে হাঁটতে হাঁটতে আমি ওই গুলিকারী পুলিশ অফিসারের নিশানার প্রশংসা করি এবং মন্তব্য করি যে চোখ সই করতে গিয়ে কান ভেদ করা খুব একটা খারাপ নিশানা নয়। আল-আমিন ও মাহমুদুল হাসান আমার কথায় সমর্থন ব্যক্ত করে। এভাবে আমরা ওই টহলরত পুলিশকে জানান দিই যে আমরা সহিংসতা পছন্দ করি না, আমরা বিটিভি পছন্দ করি এবং চলমান ছাত্র আন্দোলনের সাথে আমাদের কোনো যোগসূত্র নেই এবং দেশের মানুষ আসলে শান্তি চায় এবং প্রশাসনের ওপর ভরসা রাখে যে তারা অতিসত্বর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যটি বিরক্ত হয় এবং বলে যে ঠিক আছে আমি বুঝতে পেরেছি আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং দেশগঠনে মূলত এমন লোকই দরকার অতএব আপনারা যেতে পারেন। আমরা বেশ কিছু পথ ঘুরে এসে সিদ্ধান্ত নিই যে যতই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে ছাড়পত্র দেওয়া হোক তবু একদল সুনাগরিক হিসেবে আমরা সংবিধান, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর গড়ে ওঠা প্রশাসনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কারফিউ আইন মেনে চলব এবং সন্ধ্যার পর যদি ঘোরাঘুরি করতেই হয় তো রাজপথ এড়িয়ে গ্রামের পথ ধরে ঘোরাঘুরি করব। এই সিদ্ধান্ত থেকে আমরা মধ্যবিকালে পুনরায় এলাকায় প্রবেশ করি এবং এলাকার ভিতর দিয়ে গ্রামের রাস্তায় উঠে পড়ি এবং সেখান দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরির সিদ্ধান্ত নিই। আমি সন্ধ্যার পরে ঘোরাঘুরির জন্য আমার স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি প্রার্থনা করি। কিছুক্ষণ ইতস্তত করার পর সে অনুমতি প্রদান করে এবং সেই উপলক্ষ্যে আমার বাকি দুই বন্ধু আমার পরাধীনতা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে হাসাহাসি করে তবে বিষয়টি আমাকে স্পর্শ করে না। অনন্তর আমরা হাঁটতে ও গল্প করতে থাকি। আল-আমিন হাসিমুখে আমাদের চলমান আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা ও ভূমিকাহীনতা নিয়ে আফসোস করলে মাহমুদুল হাসান তাকে প্রতিহত করে এবং বলে যে শুধু খাওয়াদাওয়া, ঘুম, কামাইরোজগার, সঙ্গম, বাচ্চা পয়দা ও মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই করার নেই পৃথিবীতে। তখন আমি তার এই মন্তব্যকে একটা দার্শনিক মাত্রা দেওয়ার প্রয়াস চালাই এবং বলা যায় কোনোরূপ প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও মোটামুটি সফল হই যেহেতু আমার ভাষা আছে এবং এর সাহায্যে আমি নানা বিচার ও বিবেচনাকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করতে পারি এবং প্রতিবার তা করার মধ্য দিয়ে মূলত ভাষা যে তার নিজস্ব গতিপথে মানুষকে প্রলুব্ধ করে এবং তা যে সত্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না তা-ই নতুন করে প্রমাণ করি। আমাদের উত্তরোত্তর ভাষিক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে আল-আমিন একটি খেতের পাশে বসে পড়ে এবং সেখানে অনেক বাতাস বয় দেখে আমরাও তাকে বিদ্ধ করা থেকে নিবৃত্ত হই এবং তাকে ক্ষমা করি এবং তার পাশে বসার পর তাকে বলি যে, এই উত্তুঙ্গ আন্দোলনের সময় সে যে এমন একটি উদাস খেতের পাশে পা মেলে দিয়ে বসেছে হাওয়া খেতে তা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। তা ছাড়া ভবিষ্যতে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে তার বিভিন্ন সনদের নিচে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বাক্ষর লাগবে এবং যখন তারা আন্দোলন চলাকালে তার কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, তখন সে অতি সহজেই একটি সন্তোষজনক জবাব দিতে সক্ষম হবে এবং সাক্ষীস্বরূপ আমাদের ও প্রমাণস্বরূপ তারিখ-স্থানসহ সেলফিগুলো পেশ করতে পারবে। আল-আমিন বলে যে আইডিয়াটা ভালো এবং সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফটাফট কয়েকটি ছবি তোলে এবং তা ফেসবুকে এমন একটি গ্রুপে দিতে চায় যেখানে একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অ্যাডমিন হিসেবে আছেন। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে যায় যে এখন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, ফলে সে মর্মাহত হয়। আমরা দুই বন্ধু দুই পাশ থেকে তার পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিই এবং তবুও কাজ না হওয়ায় তাকে বগলদাবা করে তুলে নিয়ে আবারও হাঁটতে শুরু করি। একপর্যায়ে আমরা একটি মোড়ের কাছে এসে উপনীত হই যেখানে অনেকগুলো দোকান সারি সারি এবং এখানে-ওখানে জমে আছে ছোটো ছোটো আড্ডা। আমি স্থানীয় দোকানগুলোর মধ্যে কলার খোঁজ করি এবং তা দেখে আমার বাকি দুই বন্ধু হাসাহাসি করে যে এত সুন্দর সুন্দর মুখরোচক খাবার থাকতে আমি কিনা খেতে চাইছি তুচ্ছ কলা। তারা এমন উত্তুঙ্গ আন্দোলনের সময় যখন চারপাশে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ পড়ে আছে তার মাঝে বসে কলা খাওয়াকে একটি ‘নীরব অবজ্ঞা’ বলে আখ্যা দেয় এবং জানায় যে তা মোটেও আন্দোলনের স্পিরিটের সাথে যায় না। তারা বিকল্প খাবার হিসেবে চানাচুর, ঝালমুড়ি, বারোভাজা, সিঙ্গারা, ডালপুরি ও পাপড়ের নাম প্রস্তাব করে এবং অব্যাহতভাবে আমাকে বিদ্রুপ করতে করতে বলে যে বিয়ের পর আমার খাদ্যাভ্যাস হতাশাজনকভাবে বদলে গেছে এবং তারা ভালো করেই জানে কেন আমি কলা খেতে চাইছি। তখন আমার মনে পড়ে যায় বহুকাল আগে আমার একজন শিক্ষকের কথা। শিক্ষক বলেছিলেন যে, ‘তুমি হয়তো লক্ষ করে থাকবে হামদর্দের ওষুধগুলোর গায়ে মানবাকৃতির একটা গাছের শিকড়ের ছবি থাকে।’ আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, আমি লক্ষ করেছি।’ শিক্ষক বলেছিলেন, ‘ওটা বাস্তবেই এক্সিস্ট করে এবং আজকে তোমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি, মন দিয়ে শুনে রাখো : যে ফল মানুষের শরীরের যে অঙ্গের সাথে সাদৃশ্য রাখে তা ওই অঙ্গের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত এবং ওই শিকড়ের ক্ষেত্রেও একই কথা।’ কথাটা মনে পড়তেই আমার বিব্রতভাব বেড়ে যায় এবং প্রসঙ্গ পালটাতে আমি পুনরায় চলমান আন্দোলনের কথা পাড়ি এবং একটা দোকানে গিয়ে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখে নেওয়ার প্রস্তাব করি। কিন্তু ততক্ষণে তারা আমাকে ঠেলতে ঠেলতে একটা পাপড়ের দোকানে ঢুকিয়ে দেয় এবং আমার হাতে ধরিয়ে দেয় থালার সমান গোলাকার একখানা শৈশবের নস্টালজিক পাপড় আর দোকানদার তাতে ঝুরঝুর করে ফেলতে থাকে ঝালচটমট চাটনি। মাহমুদুল হাসান বলে যে সে ট্রেনে চড়ে সাউথ ইন্ডিয়ান মুভিগুলোতে যত সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখায় সেসব জায়গা ঘুরে দেখতে চায় এবং অবশ্যই অবশ্যই সে কাশ্মির যেতে চায় এবং সেখানে লেকের পানিতে ভেসে ভেসে ফ্রুটচার্ট খেতে চায় এবং বরফঢাকা উপত্যকায় ঘুরে বেড়াতে চায়। সে দেশভাগের তীব্র বিরোধিতা করে এবং এখন যে সে চাইলেই ইন্ডিয়ার মতো সুন্দর একটা দেশে ঘুরে বেড়াতে পারছে না তার জন্য কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহকে দায়ী করে এবং তার ব্যক্তিজীবনের ইসলামহীনতার দিকে ইঙ্গিত করে জানায় যে, এদের মতো লোকেরা, যারা তাদের সাড়ে তিন হাত বডিতেই ইসলাম আনতে পারেনি, তারাই ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে এবং ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ ঘটায় এবং ভ্রমণপ্রেমীদের নির্বিঘ্নে ভ্রমণের সুযোগ রহিত করে। সে ইন্ডিয়া এ দেশ দখল করলে ভালোই হবে বলে পাপড়ে কুড়মুড় করে কামড় বসায় এবং জানায় যে ইন্ডিয়ার রাস্তাঘাট কত সুন্দর ও উন্নত; তাদের ক্রিকেট, মুভি ও সেনাবাহিনীর বীরত্বগাথা কতটা অপার্থিব এবং সেখানকার স্ট্রিটফুডগুলো কত স্বাস্থ্যকর আর সমৃদ্ধ এবং আজকে ইন্ডিয়ার অংশ হলে এত বাজে পাপড় খেতে হতো না। বন্ধু আল-আমিন এই প্রথমবারের মতো মাহমুদুল হাসানের কথায় দ্বিমত ব্যক্ত করে এবং আচমকা তার জামার বুকের ভিতর থেকে রক্ষাকবচ হিসেবে রাখা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র একটা কপি বের করে আনে এবং প্রচ্ছদে বঙ্গবন্ধুর কপালে চুম্বন করে বইটার জায়গা জায়গা থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা কেন অনস্বীকার্য ছিল তা উদ্ধৃত করে শোনায়। ফলে মাহমুদুল হাসান একটু দমে যায় এবং প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য বলে যে সে এখন এসব নিয়ে ভাবার পরিবর্তে কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবতেই বেশি আগ্রহী। সে সরাসরিই বলে যে, এই সরকার যাক, কিংবা অন্য সরকার আসুক, তাতে কিছুই বদলাবে না, যতক্ষণ না ইসলামি খেলাফত কায়েম হচ্ছে; আর ইসলামি খেলাফত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ইমাম মাহদি আসছেন; আর ইমাম মাহদি আসবেন না যতক্ষণ না গাজওয়ায়ে হিন্দ হচ্ছে; আর গাজওয়ায়ে হিন্দ হবে না যতক্ষণ না এই দেশে অখণ্ড ভারত তৈরির লক্ষ্যে সশস্ত্র হামলা চালানো হচ্ছে; আর সশস্ত্র হামলা চালানো হবে না যতক্ষণ না.. যতক্ষণ না..। এ পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি যে মাহমুদুল হাসান কথা হারিয়েছে এবং এতক্ষণ নিজের ভাষাব্যবহারে নিজেই মুগ্ধ হওয়ার মাধ্যমে যে আত্মপ্রতারণা করছিল, তাতে ছেদ পড়েছে। এসব ভাবতেই ভাষা জিনিসটার নানান মাত্রা আর নানান ফর্ম যে কত ভয়াবহ ভ্রম সৃষ্টিকারী হতে পারে তা মাথায় আসে এবং যেহেতু প্রশ্নের মাধ্যমেই কোনো আত্মপ্রতারণাকারীকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব তাই আমি মাহমুদুল হাসানকে জিজ্ঞাসা করি যে, সে কেন খেলাফতের আগ পর্যন্ত স্থানীয় ইমারতকে বিকল্প ভাবতে পারছে না, যেখানে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই শুধু ইতিবাচক সংস্কারে বদলে দেওয়া হবে? মাহমুদুল হাসান আমাকে ব্যঙ্গ করে একদলা থুথু ফেলে এবং বলে যে ইমারত বলতে আমি আরব আমিরাত টাইপের কিছু বোঝাচ্ছি কি না, যেই আমিরাতে ওপরে ওপরে অনেককে জোব্বা পরে ঘুরতে দেখা গেলেও এরাই যে আবার গিয়ে সুন্দরী দিয়ে অল বডি মাসাজ করাচ্ছে না তার গ্যারান্টি কী? ‘আর সম্প্রতি আরেকটা আমিরাত যেটা কিনা হয়েছে আফগানিস্তানে ওখানকার অবস্থা তো আরও খারাপ। সরেজমিনে দেখা গেছে যে খানে কে লিয়ে রোটি নেহি, পেহেন নে কো কাপড়া নেহি। তা ছাড়া ওটা যদি আসলেই শান্তির দেশ হতো তাহলে মানুষজন ওভাবে বিমানে চড়ে ভাগতে চাইছিল কেন? আসলেই যদি ইসলামি আমিরাত হতো তাহলে হাত কাটা, পাথর মারা, মাজার ভাঙা, টেলিভিশন নিষিদ্ধ আর জিজিয়া আরোপের ভিডিয়ো কই? মোটকথা প্রায় সব পক্ষের ন্যারেটিভ দিয়েই ওদের প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। তদুপরি তারা পড়ছে এমন শিক্ষাব্যবস্থায় যার ভিত্তি গড়ে উঠেছে ধর্মহীনতার ওপর। এই শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ নিয়ে যারা বেরিয়ে আসবে তারা তো শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ লালন করেই যাবে যেমনটা করছে আজকের ইরানের শিক্ষিত শ্রেণি, বিশেষ করে মেয়েরা, কারণ তারাই সবচেয়ে বেশি জাতিসংঘ-ঘোষিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। ফলে আজ কাসেম সোলাইমানি, কাল রাইসি, পরশু না জানি কে, এভাবে এই জাতীয় নেতাদের বলি দিয়ে দিয়ে ইরানকে তার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। আসলে আধুনিক রাষ্ট্রের ফর্মে থাকাবস্থায় ইসলামি আমিরাত বোগাস জিনিস।’ এভাবে মাহমুদুল হাসান একের পর এক বিতর্কিত ফয়সালা শোনাতে থাকে এবং আমি কুড়মুড় করে পাপড় খেতে থাকি এবং আল-আমিন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পাঠে বুঁদ হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের এমন রিলাক্স ভাব দেখে দোকানি মহা বিরক্ত হয় এবং বলে যে অনেকক্ষণ থেকেই আমরা নাশকতামূলক ও সহিংস কথাবার্তা বলে যাচ্ছি এবং জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে টেলিভিশন থেকে সম্প্রচারিত সচেতনতামূলক ভিডিয়ো দেখার ফলে সে সহজেই বিষয়টি ধরতে পেরেছে, অতএব আমরা যেন অবিলম্বে তার দোকান ছেড়ে বেরিয়ে যাই। আমরা উচ্চবাচ্য না করে তার দোকান থেকে বেরিয়ে আসি এবং আল-আমিন তার পাশেই অবস্থিত একটা কম্পিউটারের দোকানে, তার তথ্যমতে তারই বন্ধুর দোকানে, ঢুকে পড়ে এবং তার বন্ধুকে জানায় যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় তার দিনকাল কিছুতেই ভালো কাটছে না, আর এক ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আর কতই বা পড়া যায়, অতএব খুব ভালো হয় যদি বন্ধুটি দয়া করে তার মেমোরিতে অসংখ্য মারদাঙ্গা মুভি, অজস্র রোমান্টিক নাটক ও সাড়া জাগানো দিরিলিস আর্তুগরুলের পঞ্চম সিজন লোড করে দেয়, যেগুলি একইসাথে তার টেস্টোস্টেরন যেমন বুস্ট করবে, তেমনই ভালোবাসার হরমোনেও জোয়ার আনবে, সেই সাথে ইসলামি ইতিহাস ও চেতনা বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে; মোটকথা এভাবেই যেন সে একটা ব্যালেন্স রক্ষা করে এবং বন্ধুত্বের খাতিরে ও বহুদিন তাকে নিজ পকেটের টাকায় খাওয়ানোর সুবাদে যেন মূল্য না রাখে। এভাবে বন্ধুকে রাজি করিয়ে আল-আমিন বিনামূল্যে মেমোরি লোড করে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে এবং মাগরিবের সময় হয়ে যাওয়ায় আমরা সবাই মসজিদপানে হাঁটতে থাকি। তখন আমার মনে হয় যে আমিও যদি কতক আস্ত ওয়াজ মাহফিল ভরে নিতাম তবে ভালোই হতো যেহেতু অনেকদিন হলো হাসির ওয়াজ শুনি না। তবে পরক্ষণেই চিন্তাটিকে বাতিল করি এবং সিদ্ধান্ত নিই যে আন্দোলনের সময়টাতে আমি সারাক্ষণ শুধু বই পড়ে কাটাব এবং কিছুতেই বাসা থেকে বের হব না। কারণ এভাবেই আমি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতো আলোকিত মানুষ হয়ে উঠতে পারব। তা ছাড়া আন্দোলন যদি সফল হয় তাহলে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব সামলানোর জন্য তো এই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদদেরকেই দরকার পড়বে যেহেতু তারা যোগ্য, যদিও তারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। আমার আবারও মনে পড়ে যায় সেই শিক্ষকের কথা, যিনি, একদা যখন কতিপয় ছাত্র আমাদের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে আরেকটি উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার কথা ভাবছিল, তখন তিনি জোরালোভাবে তাদের নাকচ করে বলেছিলেন যে, ‘হায় আফসোস, তোমরা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র হওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছ, অথচ ওরা আমাদের ছাত্রদের শিক্ষক বানানোর জন্য মুখিয়ে থাকে।’ অতঃপর তিনি আমাদের একটি মশহুর উর্দু পঙ্‌ক্তি আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন যে : ‘মানজিল কে জুস্তোজু মে কিউঁ ফের রাহা হায় রাহি, ইতনা আজিম বান জা কে মানজিল তুঝে পুকারে;’ যার অর্থ : ‘মনজিলের খোঁজে কেন ঘুরে মরছ হে পথিক, এতটা অনিবার্য হও যাতে মনজিল তোমায় ডাকে।’ মসজিদে প্রবেশের মুহূর্তে সেই পঙ্‌ক্তিটি মনে পড়তেই একঝলক আবেগে আমার দু-চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায় এবং মনে আক্ষেপ জাগে যে, এই আজ যারা পথেঘাটে আন্দোলন ও নাশকতা করে বেড়াচ্ছে, তারা যদি এসব সহিংসতা ও বিএনপি-জামায়াতগিরি না করে আত্মগঠনে মনোনিবেশ করত এবং আইইএলটিএস দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর উপায় তালাশ করত তবে কতই না ভালো হতো। এসব ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ে যখন আমার চোখে অশ্রু দেখে আমার দুই বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করে যে স্ত্রীর কথা মনে পড়ায় আমি কাঁদছি কি না। তখন কথাটা কেউ শুনে ফেলল কি না তা ভেবে আমি অত্যন্ত বিব্রতবোধ করি এবং মসজিদের জুতার বাক্সে জুতা তোলার কথা ভুলে যাই। ফলে নামাজে দাঁড়িয়ে সারাক্ষণই শুধু জুতার কথা মনে হতে থাকে এবং অতি কষ্টে তা থেকে মনোযোগ ফেরানোর চেষ্টা চালাতে হয়। অবশ্য নামাজ শেষে জুতা অক্ষতই পাওয়া যায় এবং আমরা সবাই মসজিদের টিউবওয়েল থেকে সুপেয় পানি পান করি। তখন মুসল্লিরা সবাই তিন-চারজন করে দল হয়ে হয়ে চলমান আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়াবে তা নিয়ে আলাপ করে। সুনাগরিক হিসেবে আমরা তাদের এসব রাষ্ট্রবিরোধী আলাপে কর্ণপাত না করে এখন কী করা যায়, কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়, তার প্ল্যান সাজাতে থাকি এবং সিদ্ধান্ত নিই যে রাতের বেলা অ্যাডভেঞ্চার করতে আমরা দুবলহাটি রাজবাড়ি যাব এবং সেখান থেকে ফিরে এসে দুবলহাটি বাজার মসজিদের সামনে যে বটগাছের চারপাশ গোল করে উঁচু করে পাকা করে টাইলস দিয়ে বাঁধানো আছে, সেখানে বসে নিহারি দিয়ে রুটি খাব। আমরা একটি অটোরিকশাওয়ালাকে ধরে বসি এবং তার চারপাশ থেকে তিনজন ঘিরে দাঁড়িয়ে তাকে আমাদের বলা দামে নিয়ে যেতে রাজি করাতে থাকি। আমাদের অব্যাহত চাপাচাপির মুখে অটোরিকশাওয়ালা রাজি হয় এবং ফুল গিয়ারে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের গন্তব্যে নিয়ে যেতে প্রবৃত্ত হয় এবং জানায় যে হাসপাতাল থেকে আন্দোলনে নিহতদের সব রেকর্ডপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং অনেককে গুম করে ফেলা হয়েছে এবং অনেককে বিভিন্ন গোরস্তানে নিয়ে গিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তখন এসব শুনে আল-আমিন ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত হয় এবং বলে যে এসব আর নতুন কী, এসব ঘটেই থাকে এবং দেশের মানুষ এসব মেনে নিয়েই দেশে থাকে, আর যারা মেনে নিতে পারে না তারা পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। মাহমুদুল হাসানও আল-আমিনের কথায় সমর্থন ব্যক্ত করে এবং অটোরিকশাওয়ালাকে এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে রাস্তা দেখে গাড়ি চালাতে বলে। ফলে চালক অপমানবোধ করে এবং নিশ্চুপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে থাকে এবং আমি মযিদ খবর শোনা থেকে বঞ্চিত হই। এমতাবস্থায় আমি মাহমুদুল হাসান ও আল-আমিনকে জানাই যে তাদের উচিত আমাকে মোড়ে মোড়ে অবস্থিত বিভিন্ন দোকানপাটের টেলিভিশন থেকে এবং বিভিন্ন লোকজনের মুখ থেকে খবরাখবর শুনতে বাধা না দেওয়া, যেহেতু আমাদের বাসায় টেলিভিশন নেই যে খবর দেখব এবং রেডিয়োও যে একটা ছিল সেটা এতদিন ভালো থাকলেও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ামাত্র বিকল হয়েছে। সুতরাং আমি চালককে পুনরায় খবরাখবর সরবরাহ করতে বলি, ফলে সে জানায়, সে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় ক্যাডারদের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের হেলমেট পরে, কিংবা মুখে রুমাল পেঁচিয়ে, রাজপথে থাকতে বলা হয়েছে। সে তার এই শ্রুত সংবাদ যে সত্য এবং এতে যে সন্দেহের অবকাশ নেই তার প্রমাণস্বরূপ একটি ঘটনা শোনায় যে, গতকাল রাতে এমনই একজন ক্যাডার তারই রিকশায় করে, ঠিক আমি যে সিটটাতে বসে আছি সেখানেই বসে, বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে সে নির্জনমতো একটা জায়গা দেখে অন্ধকারে রিকশা থামিয়ে খেতের ধারে পেশাব করতে বসে এবং সহসাই তার সমুখে খেতের ভিতর থেকে একটি শিয়াল বা অন্য কোনো পশুর দু-চোখ বিজলির মতো জ্বলে উঠলে সে মাজার কাছে গুঁজে রাখা পিস্তলটা বের করে পেশাবরত অবস্থাতেই অবলীলায় গুলি চালায়। চালক বলে, ‘আমি জানি না সেই পশুটিকে সে শিকার করতে সক্ষম হয়েছিল কি না। আসলে তার উদ্দেশ্য ছিল কেবল ভয় দেখানো। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নয়। পরবর্তীতে পুনরায় যখন ক্যাডারটি গাড়িতে ফিরে এসেছিল, তখন সে এটিই বলেছিল এবং আমি তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেছিলাম কারণ আমার ভয় করছিল। কিন্তু আজ যখন আরেকটি বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি যে, আন্দোলনে এমন ক্যাডাররা নির্দ্বিধায় গুলি চালিয়ে যাচ্ছে এবং অসংখ্য আন্দোলনকারী মারা পড়ছে, তখন তার কথায় আমি আর বিশ্বাস রাখতে পারছি না।’ চালক বলে যে অতএব খুবই ভালো হয় যদি আমি তার বিশ্বাস পুনরায় গড়তে সহযোগিতা করি যেহেতু সে আশ্বস্ত হতে চায়। আমি বলি যে, বিষয়টিকে নানাভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় কিংবা বলা যায় যে নানাভাবেই এর জবাব দেওয়া যেতে পারে এবং এভাবে ব্যাখ্যা বা জবাব দাঁড় করানোই মূল কথা। আমাদের দেখতে হবে উদ্দেশ্যটা কী। কেউ যদি সৎ উদ্দেশ্যে, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করতে, ফাসাদ দমন করতে, নির্দিষ্ট কাউকে নিশানা না করে কেবলমাত্র ভয় দেখাতে এভাবে গুলি ছোড়ে, তবে তাতে দোষের কিছু পরিলক্ষিত হয় না, যেমন পেশাবরত অবস্থায় ভয় দেখাতে আসা পশুকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তাতে দোষের কিছু ঘটে না। নির্বিঘ্নে পেশাব না হতে দিলে মানুষের মূত্রথলিতে ইনফেকশন হতে পারে। সেই ইনফেকশন ঠেকাতে গিয়ে গুলি ছোড়ায় কোনো পশু যদি মারা পড়ে তা যদিও একটা সমস্যা বটে, কিন্তু তার সমাধানের জন্য আমাদের প্রক্রিয়ামাফিক কাজ করে যেতে হবে কারণ রাষ্ট্রের একটা প্রসেস আছে এবং তা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগায়। এখানে অতিরিক্ত তোড়জোড়ের কোনো মানে হয় না এবং অতিরিক্ত তাড়াহুড়া কোনোদিন ভালো ফলাফল বয়ে আনে না, যেভাবে জোরে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে পড়ে। গাড়ির উদাহরণ দেওয়ায় চালক বিষয়টি বুঝতে পারে এবং আমি কথাকে গুছিয়ে আনতে সাধারণত যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয়, যেমন ফলে, অতএব, সুতরাং, তাই ইত্যাদি শব্দের মধ্যে কোন শব্দটি ব্যবহার করলে ভালো হবে তা নিয়ে ভাবতে থাকি এবং অবশেষে ‘মোটকথা’ শব্দটি প্রয়োগ করে বলি যে, ‘মোটকথা সমস্যার জায়গাটুকু চিহ্নিত করে শুধু সেটুকুর সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। মাথাব্যথার অজুহাতে মাথা কেটে ফেলা চলবে না।’ এভাবে আমি যদিও জানি যে, উপমা আমাদের সত্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না তবু চালককে আরও কতক উপমা পেশ করি এবং এর মাধ্যমে সহজেই তার আশ্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হই এবং এজন্য মাহমুদুল হাসান ও আল-আমিন আমাকে সাধুবাদ জানায়। তারা আমাকে ও চালককে দুটি সিঙ্গারা খেতে দেয় এবং আমাকে বলে যে মুখপাত্র হিসেবে আমি ভালো করব। এভাবে পরস্পর সহযোগিতামূলক পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা যখন দুবলহাটি রাজবাড়ির ফটকের সামনে এসে দাঁড়াই তখন রাত আটটা বাজে। রিকশা থেকে নামতেই রাজবাড়ির ভাঙা একাংশের ওপর যে দুইখানা স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে তার মাঝ দিয়ে গোল পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যায় এবং এই ভিউপয়েন্টটি আমাদের মুগ্ধ করলে ছবি তুলতে অজান্তেই আমাদের হাত ফোনের পকেটে চলে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই আমাদের ফোনের বাজে ক্যামেরাগুলো আমাদের নিদারুণ হতাশ করে এবং আমরা সেই অপার্থিব দৃশ্যটিকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যর্থ হই। আমরা মুখ দিয়ে হতাশাবাচক শব্দ করি এবং মূল ফটকে তালা দেওয়া দেখে একটা ভাঙা কোটর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হই। আমরা বাইরের বর্তমান অস্থিতিশীল পৃথিবীকে পুনরায় একবার দেখে নিয়ে ওই ভাঙা কোটর দিয়ে অতীতের গর্ভে প্রবেশ করি এবং মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইটগুলো নিভিয়ে দিই যেহেতু অতীতে ফ্ল্যাশলাইট বলতে কিছু ছিল না এবং আমাদের অ্যাডভেঞ্চার করতে হবে এবং কীভাবে কীভাবে যেহেতু আজকে পূর্ণিমা। অতএব ভেতরে ঢুকতেই বেশ খানিকক্ষণ আমাদের চোখে অন্ধকার জড়িয়ে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে চোখ সয়ে এলে আমরা দেখতে পাই, বিশাল করিডোরের দূরের এক মাথায় নিচুমতো একটা দরজা দিয়ে নরম চাঁদের আলো ভেতরে ঢুকে পড়েছে। আল-আমিন বলে যে সে নিশ্চিত ওদিক দিয়ে এককালে রাজার প্রজারা ঢুকত আর এখন আমরাও ঢুকব এবং তা করতে গিয়ে প্রজাদের যেভাবে বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করতে হতো, আমাদেরও তাই করতে হবে এবং জেনে রাখা ভালো হবে যে, এই রাজপ্রাসাদের সামনে দিয়ে কেউ ছাতা মাথায় ও ঘোড়ায় চড়ে যেতে পারত না বরং যেতে হতো উভয়টিকে হাতে নিয়ে : ‘ডান হাতে ঘোড়া আর বাম হাতে ছাতা প্রিয় বন্ধুগণ। এবং এই রাজা—কী নাম যেন, ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, রাজা শ্রী শ্রী হরনাথ রায়—মুর্শিদাবাদের মুসলমান নবাবকে বাইশ কাহন, হ্যাঁ ভাইয়েরা, এক-দুই কাহন নয়, বাইশটা কাহন কইমাছ দিত খাজনা হিসেবে। অজুহাত কী? কাহন মানে কী? এসবের কিছুই আমি জানি না। শুধু জানি যে, জলপ্রধান এলাকা বিধায় এবং এখানে কোনো ফসল ফলে না বিধায় কইমাছই ছিল তার অজুহাত এবং কইমাছই ছিল তার খাজনা এবং কইমাছকেই গ্রহণ করেছিল ইরান-তুরান-আফগানিস্তান থেকে আগত তথা বহিরাগত মুসলমান নবাবেরা। অবশ্য এটাও ঠিক যে আফগানিস্তান আমাদের ঐতিহ্যবাহী—হায় কত স্বর্ণখচিত মুকুটবাহী—অখণ্ড ভারতবর্ষের সীমানার মধ্যে পড়ে, ফলে নবাবদের একেবারে বহিরাগতও বলা যায় না, কিন্তু বন্ধুগণ, আমাদেরকে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে লেখা ইতিহাস বিশ্বাস করতে হবে যেহেতু পরীক্ষার খাতায় সেটিই লিখতে হবে। তা ছাড়া আজকের বিদ্যমান বাস্তবতা, মানচিত্র আর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অতীতকে বিচার করা কি অন্যায়?’ আল-আমিনের এমনতরো ভারী ভারী শব্দ আর জোরালো প্রশ্নের মুখে মাহমুদুল হাসান কিছু বুঝে ওঠার আগেই ‘না’ বলে বসে এবং তখন আল-আমিন আমাকে ডানপাশে ও মাহমুদুল হাসানকে বামপাশে রেখে হাঁটতে শুরু করে এবং মাহমুদুল হাসানকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে যে, ‘তাহলে বল, কইমাছ কীসের ইঙ্গিত বহন করে এবং এই যে ইরান-তুরান থেকে উড়ে এসে বাইশ কাহন কইমাছ আদায় করা, এটাকে সাম্রাজ্যবাদ ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? আজকের জ্ঞান দিয়ে বিগত সময়কে বিচার করা কি অন্যায়?’ মাহমুদুল হাসান তার কথার জবাব না দিতে পেরে নিঃশব্দে দরজার ভেতর দিয়ে মাথা গলিয়ে দেয়। তার দেখাদেখি আমরাও দেই এবং মাথা হেলে বেরোতেই সামনে একটা না-আয়তাকার, না-বৃত্তাকার ধরনের জ্যামিতিবহির্ভূত উঠানমতো একটা জায়গা নিজেকে মেলে ধরে এবং তাতে জোসনার আলো মোলায়েম ফরাশের মতো ছড়িয়ে থাকে আর তার গায়ে ছায়া ফেলে দাঁড়িয়ে থাকে রাজপ্রাসাদ ও মশাল হাতে সেপাইয়ের দল। তখন হাওয়াভবনের শার্সির পর্দাগুলো দুলে দুলে ওঠে দূরের বিল থেকে উঠে আসা হুহু বাতাসে এবং বামদিকের আস্তাবলে সারি সারি ঘোড়া দাঁড়িয়ে থাকে এবং রংমহল থেকে ভেসে আসে নূপুরের ঝংকার আর রাজার নিচে থাকা কোনো কিশোরীর আর্তনাদ। তবে আল-আমিন আমাদের সাবধানে থাকতে বলে কারণ আমরা অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছি। সে আমাদের আপাতত কল্পনার জগৎ থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেয় এবং আমাদের নিয়ে ডানে সরতে সরতে ঢুকে পড়ে ডেবে যাওয়া নিচতলার কোনো কামরায় এবং কানে পড়ে বলতে থাকে যে আমাদের উচিত এভাবে ঘরের ভেতর ঘর দিয়ে দিয়ে হাওয়াভবনের দিকে চলে যাওয়া এবং ওই উঁচু গম্বুজওয়ালা মিনারে উঠে পড়া, যেখান থেকে সবজায়গা জোসনার আলোয় স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বয়ে চলা বাতাসের ঘ্রাণ পাওয়া যায় এবং কল্পনাযাপনের জন্য সেটাই উপযুক্ত জায়গা হতে পারে। এ কথা শুনে মাহমুদুল হাসান দ্রুত সেখানে যেতে প্রবৃত্ত হয় এবং তৎক্ষণাৎ ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে উদ্যত হতেই আল-আমিন তাকে অ্যাডভেঞ্চারের শপথের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বলে যে এখন আমরা অতীতের মাঝে রয়েছি সুতরাং আলো জ্বালানো একেবারেই অবান্তর। আমরা দেয়াল ধরে ধরে হাঁটতে থাকি। কামরার ভেতরের দরজা দিয়ে অন্য কামরায় প্রবেশের সময় আমাদের অদ্ভুত আনন্দ হয়। মাঝেমধ্যে আমরা হোঁচটও খাই এবং মাঝেমধ্যে আবছায়া আলোর কামরায় প্রবেশ করে আলোর উৎস সন্ধান করতে ওপরে তাকাতেই দেখি ছাদের একাংশ ধসে গেছে আর দোতলায় এসে পড়া জোসনার আলোই এখানে গলে গলে নামছে। মাহমুদুল হাসান জিজ্ঞেস করে যে আমরা ভয় পাচ্ছি কি না। ‘বন্ধুরা, আমরা কি ভয় পাচ্ছি? ভয় পাওয়া কি আমাদের মানায়?’ আমরা মাথা নেড়ে, ‘না, কিছুতেই মানায় না’, বলতে বলতে হাওয়াভবনের মিনারের গোল সিঁড়ির মুখে এসে দাঁড়াই এবং যথারীতি তিনজন, প্রথমে আল-আমিন, মাঝে আমি ও শেষে মাহমুদুল হাসান, এভাবে লাইন ধরে দেয়াল হাতড়ে হাতড়ে ওপরে উঠতে থাকি। ফলে খানিক বাদে যখন আল-আমিন হঠাৎ থেমে যায় তখন তার মাজার সাথে আমি ধাক্কা খাই এবং আমার সাথে ধাক্কা খায় মাহমুদুল হাসান। আমরা আল-আমিনকে এভাবে থেমে পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় যে তার মনে হচ্ছে আলো ছাড়া সামনে আগানো সম্ভব হবে না, অতএব ভালো হয় যদি আমরা অ্যাডভেঞ্চারের শপথ ভাঙায় সম্মতি দিই এবং সবাই সবার ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ধরি। মাহমুদুল হাসান সবার আগে ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে সক্ষম হয় এবং তার আলোয় আমরা দেখি যে তেমন কিছুই নয় শুধু একটা বালিপাথরের দলা ঢিবির মতো সিঁড়ির মাথায় জমে রয়েছে এবং আমরা সহজেই তা ডিঙিয়ে যেতে সক্ষম হব। অচিরেই আমরা আলোর সাহায্যে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে উঠতে থাকি এবং সর্বশেষ একটু ঝুঁকি নিয়েই মিনারের চূড়ায় উঠতে সমর্থ হই এবং ফ্ল্যাশলাইট নিভিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সহজেই পুনরায় অতীতে ফিরে আসতে পারি। পুনরায় শতাব্দী প্রাচীন বাতাস বইতে থাকে এবং সে বাতাসে শার্সির পর্দা থই থই করে দুলতে থাকে। জোসনার আলোয় সমস্ত রাজবাড়ি নিজেকে কোনো বিবসনার মতো মেলে ধরে এবং আমরা তার সমস্ত অঞ্চল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করি এবং তার পুরোনো দিনের দাসীর মতো তার উঁচু-নিচু-ঢালু-সমতল সবটা মেপে মেপে দেখি এবং কল্পনায় তার যৌবনের জৌলুস উপভোগ করার চেষ্টা করি। পুনরায় আমাদের সামনে দিয়ে প্রহরীরা নৈশপ্রহরার স্থান বদল করে বর্শা হাতে হেঁটে যায় এবং রংমহলের বারবধূরা শরাবের পিপাসা হয়ে ওঠে এবং আবারও কোনো রমণীর ক্ষীণ তবু স্পষ্ট আর্তচিৎকার শোনা যায়। আমরা দেখি যে রাজবাড়ির কুয়ার কাছে কয়েকজন প্রহরী গোল হয়ে দাঁড়িয়ে খুব সম্ভব নৈশপ্রহরার দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছে এবং একজন ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত এই মিনারার দিকে হেঁটে আসছে যেহেতু এখান থেকেই পুরো রাজবাড়ির ওপরে নজর রাখা সম্ভব। ফলে একটু পরেই যখন সে মিনারার চূড়ায়, যেখানে আমরা আছি, উঠে আসে, তখন আমরা মোটেও অবাক হই না। এ কারণেই যখন সে আল-আমিনের ঘাড়ে ধাতব অস্ত্র ঠেকিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বলে এবং নিজে এক কদম পিছিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে কার অনুমতিতে আমরা এই মিনারায় উঠেছি, তখন আল-আমিন নির্দ্বিধায় বলে যে, রাজার অনুমতিতে, রাজার অনুমতিতে আমরা তিনজন এই মিনারায় উঠেছি। অবশ্য আমরা বিস্মিত হই যখন দেখি যে সে আমাদের অবিশ্বাস করে এবং পুনরায় এক কদম এগিয়ে এসে তার ধাতব অস্ত্রটি আল-আমিন ও আমার মাথা বরাবর তাক করে এবং জিজ্ঞাসা করে যে আমরা গাজা খেয়েছি কি না এবং আমাদের তৃতীয়জন কোথায়। আমি তৎক্ষণাৎ চারপাশে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে কোথাও মাহমুদুল হাসানের চিহ্নটি দেখতে পাই না এবং আল-আমিন বলে যে তৃতীয়জন হলেন স্বয়ং রাজা এবং উনি এখন রংমহলে। তখন প্রহরীটার নিকট আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে সত্যই আমরা গাজা খেয়েছি এবং সে তৎক্ষণাৎ আমাদের হাত উঁচু করতে বলে এবং অতীতেও এভাবে অপরাধী ধরার সময় তাহলে হাত উঁচু করাত এ ভেবে বিস্মিত হতে হতে আমরা হাত উঁচু করি। তখন প্রহরীটি এক কদম হেঁটে এসে আমাদের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে বের করা মোবাইল ফোন ও ফিয়াট মানি স্বাভাবিকভাবেই নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে যেন সে চিনতে পেরেছে। এরপর সে যখন বিশুদ্ধ উচ্চারণে আমাদের দুজনের দুটো মোবাইল ফোনের মডেলের নাম উচ্চারণ করে এবং ফিয়াট মানিগুলো তার পকেটে ঢুকিয়ে নেয়, তখন অকস্মাৎ আমাদের সামনে প্রতিভাত হয় যে সে অতীতের কোনো প্রহরী নয় এবং তার হাতের অস্ত্রটি বর্শাবল্লম জাতীয় কিছু নয় বরং সে পিস্তলধারী বর্তমানের লোক এবং আমাদের বর্তমানে ফেরা উচিত। আল-আমিন সবার আগে বর্তমানে ফেরে এবং বলে যে আমাদের ভুল হয়ে গেছে এবং আমাদের মোবাইল ফোন ও টাকা নেওয়া হয়েছে তাতে কোনো সমস্যা নেই, কারণ দিনশেষে এটাও তো একটা পেশাই বটে, সবারই তো পেট আছে আর জিনিসপত্রের যে দাম, সুতরাং অস্ত্রধারীকে সে দোষ দেয় না, কিন্তু দয়া করে যদি সে আমাদের ছেড়ে দেয় তাহলে উভয়পক্ষের জন্যই তা কল্যাণকর হবে এবং বাড়ি ফিরে আমরা এটাকে একটা স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলেই ধরে নেব এবং এর জন্য নিজেদের ভাগ্যকে ছাড়া কাউকেই দোষারোপ করব না; আর বিচার চাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তখন সদ্য এস্তেঞ্জা থেকে ফেরা মাহমুদুল হাসান অকস্মাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে উদিত হয় এবং জিজ্ঞেস করে যে কীসের বিচার কে চাইছে। তৎক্ষণাৎ অস্ত্রধারী ঝট করে মাহমুদুল হাসানের দিকে অস্ত্র তাক করে ঘুরে দাঁড়ায় এবং পরক্ষণেই চাঁদের আলোয় তাকে চিনতে পেরে বিব্রত বোধ করে এবং মাহমুদুল হাসান প্রথমে চমকে উঠলেও পরক্ষণেই অস্ত্রধারীকে সে বন্ধু বলে সম্বোধন করে এবং জিজ্ঞেস করে যে সে এই অসময়ে এখানে কী করছে আর এটা তো নকল পিস্তল বলেও মনে হচ্ছে না আর আমরা এভাবে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি কেন। তখন আমি পুনরায় মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই এবং তা হতে গিয়ে নিজেকে আমার মাওলানা মাহমুদ মাদানির মতো পবিত্র ও শুভ্র বলে মনে হয়। আমি শব্দ করে বিগলিতভাবে হাসি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য অস্ত্রধারীকে ভাই বলে সম্বোধন করি এবং বলি যে এখানে একটি গলত ফেহমি বা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বস্তুত অস্ত্র দেখে আমরা নিজেরাই নিজেদের অজান্তে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়েছি এবং এই ভাই মোটেও আমাদের তা করতে বাধ্য করেনি। আমি এগিয়ে এসে অস্ত্রধারীর কাঁধে হাত রাখি এবং তার কানের ওপর ঝুঁকে পড়ে বলি যে, তাকে তার বন্ধুর সামনে যাতে আরও বিব্রত না হতে হয় শুধু সেজন্যই আমি তার প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে নিচ্ছি আর টাকাগুলো সে যেন তার বন্ধুকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমাদের প্রদান করে এমন ভঙ্গিতে যেন বা সে আমাদের ট্রিট দিচ্ছে। অস্ত্রধারী এতে সম্মতি জ্ঞাপন করে এবং লাউডলি সবার উদ্দেশ্যে জানায় যে আসলেই একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। অতঃপর সে ইংরেজিতে বলে, ‘মাই নেম ইজ সজিব এবং আমার ফেসবুক আইডির নাম হচ্ছে প্রিন্স সজিব এবং অভিন্ন নামে ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকেও আমাকে পাওয়া যাবে।’ আল-আমিন বলে যে এখন যেহেতু বিএনপি-জামাতের দৌরাত্ম্যের ফলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, সুতরাং এই মুহূর্তে সে ফেসবুক-টিকটকে তাকে ফলো দিতে পারছে না, অন্যথায় সে অবশ্যই তাকে ফুল সাপোর্ট করে পাশে থাকত। প্রিন্স সজিব বলে যে পাশে থাকলে পাশে পাবেন এবং তার সূত্র ধরে মাহমুদুল হাসান প্রিন্স সজিবকে বলে যে রাষ্ট্র তো তার বাহিনীর পাশে আছে, তাহলে একজন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ক্যাডার হিসেবে সে রাষ্ট্রের পাশে আছে কি না এবং চলমান ছাত্র আন্দোলনের মুখোশে বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্য ঠেকাতে তার ভূমিকা কী। আল-আমিনও অভিন্ন প্রশ্ন রাখে এবং জানায় যে তার এক দূরসম্পর্কের মামা অমুকের ডান হাত নামক গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছে এবং প্রিন্স সজিব অনুমতি দিলে সে ওই মামার কাছে তার নাম করতে পারে। প্রিন্স সজিব বলে যে তার প্রয়োজন নেই এবং সে রেফারেন্সের ভিত্তিতে নয় বরং কাজ দিয়েই ওপরে উঠতে চায়। সে আমাদের বিশ্বস্ত, আপন ও সুনাগরিক হিসেবে অভিহিত করে এবং আমাদেরকে তার অস্ত্রটি হাতে নিতে দেয় এবং আমাদের সবার কাঁধে হাত রেখে মিনারার ওই পাশে নিয়ে যায়, যেখান থেকে রাজবাড়ির কুয়া দৃশ্যমান হয় এবং আমরা দেখি, কিছুক্ষণ আগের প্রহরীরা বর্তমানেও বিরাজ করছে এবং একটি নারীমূর্তি ছিনালিপনা করছে তাদের গায়ে-পায়ে। প্রিন্স সজিব জানায়, আমরা অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সর্বদা পাশে আছি এবং আমরা সৌভাগ্যবান যে রাষ্ট্রও আমাদের পাশে আছে পর্যাপ্ত উপাদান সরবরাহ ক’রে। সে তার হাতের পিস্তলটিকে ‘শান্তির প্রতীক’ বলে অভিহিত করে এবং জানায় যে, এমনই আরও অনেকগুলো শান্তির প্রতীক শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাঝে শান্তিমতো ডিস্ট্রিবিউট করতেই মূলত রাজবাড়ির এই সুনসান পরিবেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে এবং ওই নারীমূর্তিকে এমন নয় যে জোর করে তুলে আনা হয়েছে, এখানে সম্মতির বাইরে কিছুই ঘটেনি। বরং যখন তাকে বলা হয়েছে যে রাতের রাজবাড়িতে রত অবস্থায় সে যত জোরে ইচ্ছা মৌনিংয়ের সুযোগ পাবে এবং কেউই তার মুখ চেপে ধরবে না, তখন বলা যায় সে বেশ খুশি খুশিই রাজি হয়েছে এবং পাওনা টাকা গুনে দেখায় মনোযোগী হয়েছে। বস্তুত প্রত্যেককে প্রত্যেকের পাওনা মিটিয়ে দেওয়াতেই রয়েছে সফলতা এবং এটিই আমাদের মূলমন্ত্র। এই বলে প্রিন্স সজিব আমাদের ঘাড়ে বন্ধুত্বের হাত রেখে ফিরে আসতে শুরু করে এবং পুনরায় আমরা লাইন ধরে চারজন—প্রথমে পথপ্রদর্শক প্রিন্স সজিব, এরপর আল-আমিন, এরপর আমি ও সবশেষে ফ্ল্যাশলাইট হাতে মাহমুদুল হাসান—রাউন্ড সিঁড়ি ভেঙে ঘুরে ঘুরে নামতে থাকি এবং বাইরে এসে এবার যেহেতু আমাদের সঙ্গে রাজশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা আছে, তাই সরাসরি রাজবাড়ির উঠানের মাঝ বরাবর হেঁটে পুনরায় সেই নিচুমতো দরজা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিই এবং পুনরায় সে কোটর দিয়ে বেরিয়ে আসি রাজবাড়ির বাইরে। প্রিন্স সজিব আমাদের বিদায় জানায় এবং তার বন্ধু মাহমুদুল হাসানের হাতে ট্রিট হিসেবে আমাদের থেকে ছিনতাইকৃত টাকাগুলো তুলে দেয় এবং আপন ক্ষমতাবলে স্থানীয় এক অটোরিকশাওয়ালাকে ডেকে এনে বিনামূল্যে আমাদের দুবলহাটি বাজারে নামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। এভাবে অচিরেই যখন আমরা দুবলহাটি বাজার মসজিদে পৌঁছাই তখন এশার নামাজের দুই রাকাত শেষ হয়েছে এবং তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়ানো হয়েছে। আমরা দ্রুত অজু করে নামাজে শরিক হই এবং নামাজ শেষে আমাদের পরিকল্পনা মোতাবেক ওই বটতলায় বসে খুশিমনে নিহারি-রুটি খেতে শুরু করি, কিন্তু অত্যধিক ঝালের দরুন কয়েক লোকমা খেতেই আমাদের চোখের জল-নাকের জল একাকার হতে থাকে এবং মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করে এবং কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকে। আমাদের মনে হয় যেন বিক্ষোভের রাজপথের সমস্ত কাঁদানে গ্যাস, সমস্ত লাল মরিচের গুঁড়া এই এক নিহারির ডেগে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা নিহারিওয়ালার ওপর অত্যন্ত বিরক্ত হই এবং বিশেষ করে যখন দেখি সে বিভিন্ন পেশার লোকজন জুটিয়ে চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলছে এবং তা একরকম আন্দোলনকারীদের পক্ষেই যাচ্ছে তখন আমাদের মেজাজের পারদ চরমে ওঠে এবং আমরা তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিই এই বলে যে, তার উচিত নিহারির ডেগে কাঁদানে গ্যাস আর মরিচের স্প্রে দেওয়া বন্ধ করা এবং স্মরণ রাখা যে বিএনপি-জামায়াতের আমলে তার এরকম জমজমাট নিহারির দোকান দেওয়ার এবং ছেলেকে দামি মোটরবাইক কিনে দেওয়ার সামর্থ্য হয়নি যা কিনা হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে, সুতরাং তার উচিত কৃতজ্ঞ-নম্র হওয়া। অতঃপর আমরা জমায়েতের দিকে পুনরায় মাওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খানের মতো শুভ্রসফেদ শান্তির বার্তা নিয়ে তাকাই, মুখে সম্প্রীতির হাসি ধরে রাখি এবং সবার উদ্দেশে বাইবেলের ভার্স আবৃত্তি করি যেখানে বলা হয়েছে যে ‘সিজারকে দাও সিজারের প্রাপ্য আর ঈশ্বরকে দাও ঈশ্বরেরটা’ এবং সেই ভার্স অনুযায়ী তাদের উপদেশ দিয়ে বলি যে সবার উচিত অহেতুক সমালোচনায় লিপ্ত না হয়ে নিজ নিজ কাজে মনোনিবেশ করা এবং মনে রাখা যে চারদিকে সিজারের লোক লাগানো আছে এবং সবাই বিবাহিত ও সবারই প্রিয়জন আছে। মানুষেরা আমাদের কথা বোঝে এবং বিচলিত হয়ে চারপাশে তাকায়। তারা পেটের দায় বোঝে এবং নিশ্চুপ হয়। তারা আশ্বস্ত হয় এবং যার যার কাজে ফেরে এবং ভাবে পরিশ্রমই সফলতার চাবিকাঠি। তারা ভীতও হয় এবং এজন্য নিহারিওয়ালার পাওনা মিটিয়ে যখন আমরা বাসায় ফিরে আসতে চাই, তখন কোনো অটোরিকশাওয়ালাই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে রাজি হয় না। সবাই কারফিউ আইনকে সম্মান করে এবং আমাদের হেঁটে হেঁটে গ্রামের ভিতর দিয়ে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দেয়। অবশেষে একজন যুবকবয়সী অশিক্ষিত ও অবাধ্যগোছের ইসলামপন্থি অটোরিকশাওয়ালাকে আমরা পেয়ে যাই, যে কারফিউ আইনকে সম্মান তো দূরের কথা সমর্থনই করে না। সে-ই আমাদের কাজে আসে এবং সে প্রতিজ্ঞা করে যে ঝুঁকি নিয়ে হলেও সে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেবে। আমরা তার এই স্পিরিটকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করি এবং তাকে দ্রুত গাড়ি চালাতে উদ্‌বুদ্ধ করি। অবশ্য যখন সে তার গাড়ির সাউন্ডবক্সে আইনুদ্দিন আল আজাদের ‘কী হবে বেঁচে থেকে’ ও ‘স্বাধীনতা চাইনি আমি এই স্বাধীনতা’ নামক বিপ্লবী গানদুটো চালিয়ে দেয়, তখন ঠিকই তাকে ধমক দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী গান বন্ধ করাই এবং বিভিন্ন অলিগলিপথ দিয়ে সাবধানে যতটা নিঃশব্দে পারা যায় রিকশা এগিয়ে নিতে বলি। অবশ্য দয়ালের মোড়ের কাছে এসে আমাদের কারফিউয়ের পিচঢালা রাজপথে উঠতেই হয়। আল-আমিনের বাসা দয়ালের মোড়ে হওয়ায় সে ওখানেই নেমে যায়, তবে রক্ষাকবচ হিসেবে মাহমুদুল হাসানকে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’টি দিয়ে যায় আর আমি একটি ফার্মেসিতে নেমে জ্বরঠান্ডার কিছু আজেবাজে ওষুধ কিনি যেনবা এগুলো কেনার জন্যই আমাকে বাধ্য হয়ে কারফিউ ভেঙে এখানে আসতে হয়েছে। সেই রাতে আমরা নিরাপদেই বাসায় ফিরি এবং পরের কয়েকটি দিন আমি বাসায় শুয়ে-বসে ও বই পড়ে কাটাই। মাহমুদুল হাসান টিভি দেখে, আর আল-আমিন দিনরাত ওই লোডকৃত নাটক-সিনেমাগুলো দেখে কাটায়। অবশ্য সবাই মিলে একদিন রাতের বেলা শিবপুর মাদরাসার উঠানের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পাড়েও গিয়ে বসি এবং তখন মুহাম্মদ শরিফ আমাকে ফোন করলে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলি এবং তাকে তুরস্কে পাড়ি জমিয়ে সেখানের কাউকে বিয়ে করে নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানেই স্থায়ী হওয়ার প্ররোচনা দিই। এরই মধ্যে একদিন ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়। ফলে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু লিখিত বইপত্র থেকে নানান গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ফেসবুকে পোস্ট করার সুযোগ পাই। আমি মাননীয় মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দিই এবং তা শেয়ার করি এবং বিক্ষোভের দিনগুলিতে সবাইকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাই যে তারা যে বিজয় কিবোর্ডের জনপ্রিয় ওই ফন্টটাকে সুটোনি সুটোনি বলে ডাকে তা আসলে সঠিক নয়, সঠিক হলো সুতন্বী, যা মাননীয় মন্ত্রীর কন্যার নামানুসারে রাখা হয়েছে এবং সবার উচিত তথ্যটি জেনে রাখা যেহেতু তা বিসিএস পরীক্ষায় কাজে লাগতে পারে। এ ছাড়াও আমি আন্দোলনের স্বার্থে গড়ে ওঠা নানান পেজ ও গ্রুপ শেয়ার করে সেগুলোতে লাইক না দেওয়ার ও যুক্ত না হওয়ার আহ্বান জানাই। তবে আমার আহ্বান অগ্রাহ্য করে অনেকেই সেগুলোতে যুক্ত হয়। নৈরাজ্য দমনে আমাদের জোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একসময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং আমরা তিন বন্ধু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের মন ভেঙে যায়। আমরা বাইরের দুনিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিই এবং আপাত সুস্থ, নিরাপদ ও উঁচু বারান্দায় উঠে বসে থাকি। অবশ্য একটা সময় পর আমরা যার যার কাজে মনোনিবেশ করতে বাধ্য হই। আল-আমিন তার বাবার ব্যাবসায় আত্মনিয়োগ করে। মাহমুদুল হাসান কুড়িগ্রামে চলে যায়। আমি পুনরায় তরজমা করতে বসি। তবে প্রিন্স সজিবের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। তার ফেসবুক আইডিও ডিঅ্যাক্টিভ। সেই সাথে আমরা আজও জানি না সেই পিস্তলটার ভাগ্যে কী হয়েছে, যেটাতে আমরা তিন বন্ধু বোকার মতো আমাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে দিয়েছিলাম। আমরা চাই না পিস্তলটি কোনোভাবে খুঁজে পাওয়া যাক। তাই আমরা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, সংবিধানমতে এখনো যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেই বঙ্গবন্ধুকন্যা, সেই দেশরত্ন শেখ হাসিনা, যেন আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শাহরিয়ার
শাহরিয়ার
6 months ago

লেখাটা সাবলীল। খুব সহজেই সবটুকু পড়ে ফেলতে পেরেছি। লেখকের সেন্স অব হিউমারের কারণে বিরক্তবোধ হয়নি এবং বিরতিহীন ভাবে পড়ে শেষ করেছি।

শেখ মুজাহিদুল ইসলাম
শেখ মুজাহিদুল ইসলাম
6 months ago

পুরাটা না পড়তে পারায় কিছুটা খারাপ লাগতেছে। তবে আবারও ব্যাক করব বাকিটুজুর সমাপ্তি দিতে যেহেতু গদ্য খুবই ভালো লেগেছে এবং যেহেতু যেই জন্য এটা পড়তে এসেছিলাম—এই গদ্যের ঈষৎ অংশ যোগাযোগের পোস্ট থেকে পড়ে ভালো লাগায়, অতঃপর আজ একটা তর্জমাকে সম্পাদনা করতে গিয়ে এই গদ্যের কথা স্মরণ আসায়—অর্ধেক লেখা পড়ে সেই উদ্দেশ্য হাছিল হয়েছে; অতএব কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পাঠকে সমাপ্তি দিতে অবশ্যই আবার আসিব।

Last edited 6 months ago by শেখ মুজাহিদুল ইসলাম

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷