বদিউজ্জামান সাইদ নুরসির একগুচ্ছ কবিতা

মওলবি আশরাফ

ভূমিকা : ওস্তাদ সাইদ নুরসি ১৮৭৭ সালে তুরস্কের ‘নুরস’ নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। নিজ এলাকাতেই বিশিষ্ট আলেম-উলামার সান্নিধ্যে তার পড়ালেখায় হাতেখড়ি। আল্লাহ তাআলা তাকে বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তি দান করেছিলেন। যার বদৌলতে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি কোরআন, ফিকহ, ব্যাকরণ, সাহিত্য ও ভাষাসহ নয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মৌলিক গ্রন্থগুলো মুখস্ত করে ফেলেছিলেন। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তার উপাধী দেওয়া হয় ‘বদিউজ্জামান’ বা যুগের বিস্ময়।

ওসমানি খেলাফতের পতন ও কামাল আতাতুর্কের উত্থানের সাক্ষী হয়ে তিনি জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন—মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দাওয়াতি কাজ করে যাবেন। তার পুরো জীবন ছিল সংগ্রাম ও সাধনার। ৮৩ বছরের জীবনে প্রায় ৪০ বছর জেলে কিংবা সরকারের নজরদারিতে বন্দি থাকেন। এরই মাঝে ছাত্রদের সহায়তায় তিনি চিঠি আকারে কোরআনের আধুনিক তফসির ছড়িয়ে দেন, যা ‘রিসালায়ে নুর’ নামে প্রসিদ্ধ। আল্লাহ তার এই কিতাব ও কোরবানি কবুল করেন। তুরস্কে বর্তমানে যে আবার ইসলাম ফিরে আসছে, এতে খুব স্পষ্টভাবেই সাইদ নুরসির অবদান আছে।

কবিতার আঙ্গিকে লেখা হলেও ওস্তাদ নুরসি এগুলোকে ঠিক কবিতা বলেননি। তার উদ্দেশ্য ছিল অনেকটা এমন—কেউ যদি কবিতার মতো পাঠ করে, সমস্যা নাই, আবার গদ্যের মতো পাঠ করলেও অসুবিধা নাই। তার পূর্ণমনোযোগ ছিল কবিতার ভাবে, পাঠক যেন শব্দের পেছনে না ছুটে। এই কবিতাগুলো লেখা হয়েছে মুক্তছন্দে—গতানুগতিক কবিদের মতো খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে নয়; বরং লেখা হয়েছে যুক্তিশাস্ত্র, কোরআনি বাস্তবতা ও ঈমানের মানদণ্ড সামনে রেখে। এই কবিতাগুলো সর্বাংশে শাস্ত্রীয়—কোরআন ও ঈমানেরই ছন্দোময় পাঠ। পাঠকের প্রতি আরজ—এই হাকিকত সামনে রেখে কবিতাগুলো পাঠ করবেন।


বিশ্বাস

 

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুটো দলিল

আর এই মহাবিশ্ব নিজেই বড় এক দলিল

কেননা অদৃশ্যের স্বর আর চাক্ষুষ প্রমাণ—দুটোই গায় তৌহিদের গান

সরগমে জপে তসবিহ—লা ইলাহা ইল্লা হু

প্রতিটি অণু, কোষ কিংবা দেহ-প্রাণ—তারই অস্তিত্বের জবান

সমস্বরে গুঞ্জরণ করে—লা ইলাহা ইল্লা হু

সমস্ত মাখলুক আর মানুষ, জিকির করে যায় আল্লাহর

তাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোট বেঁধে ক্ষীণস্বরে গেয়ে যায়

তার পাক নাম—লা ইলাহা ইল্লা হু

সারা জগৎ মিহি সুরে কোরআন তেলাওয়াতের মতো

করে যায় তাদের স্রষ্টার জিকির

আর নুরে পূর্ণ কোরআন সমস্ত রুহের সাথে মিতালি করে

গুণগুণ করে—লা ইলাহা ইল্লা হু

প্রজ্ঞাময় কোরআন অদ্বিতীয় প্রাজ্ঞ স্রষ্টার স্পষ্ট প্রমাণ

তার প্রতিটি আয়াতই সত্যের প্রকাশ—ঈমানের ঝলমলে কিরণ

এই সবই এক হয়ে জিকির করে—লা ইলাহা ইল্লা হু

তোমার কান যদি এই পবিত্র গ্রন্থের বুকে লাগাও, তার গহিনে শুনতে পাবে

আসমানি গুঞ্জন—লা ইলাহা ইল্লা হু

এই সূক্ষ্ম আওয়াজে পাবে তুমি সত্য, সত্যনিষ্ঠা, মধুময় ও সুললিত কণ্ঠে

প্রশান্তির মেঘমল্লার, বারে বারে গেয়ে উঠে—লা ইলাহা ইল্লা হু

নুরে উদ্ভাসিত এই প্রামাণ্যের রয়েছে ছয়টি দিক,

তার উপরে ভাস্বর অলৌকিকতার চিন

ছড়ায় হেদায়াতের আলো, কণ্ঠে—লা ইলাহা ইল্লা হু

ঠিক তারই নীচে যুক্তি আর প্রামাণ্যের সুতো,

ডান দিকে বুদ্ধিমত্তা এই সত্যায়নে করে যায় বাহাস—লা ইলাহা ইল্লা হু

তার বাঁ দিকে রয়েছে অস্তিত্বের সবুদ

তার সামনে বাস করে সৌন্দর্য ও কল্যাণ, পরম সৌভাগ্য যার উদ্দেশ

আর তার চাবি—লা ইলাহা ইল্লা হু

তার পেছনের দিক, যার পিঠ ঠেকেছে আসমানে,

আর তা হলো রব্বানি ওহি

নুরে উজালা এই ছয়টি দিক প্রকাশ করে—লা ইলাহা ইল্লা হু

বিপথগামী ধারণার ময়দান থেকে চোখ না বাঁচিয়ে

কে এমন আছে নিতে পারবে গোপন খবর?

সংশয়, সে কী ভয়ংকর—কে আছে তার দরোজায় করবে কড়াঘাত?

কোনো বেপথু উদ্ভ্রান্তের জন্যে সম্ভব কী সেই প্রাসাদে প্রবেশ—

যার দেয়াল আসমান ছুঁই ছুঁই, আর প্রতিটি শব্দই ফেরেশতার

জবানে বলে—লা ইলাহা ইল্লা হু

মহিমান্বিত কোরআন—পরমসত্তার সবাক সমুদ্দুর যেন

সুরা ইখলাসের মতো ফোঁটায় ফোঁটায়, তার থেকে নিতে পারি

একখানা ছোটো রহস্য—যাকে ঠিক রহস্য বলা যায় না

এই সুরা একদম নিস্তনাবুদ করে দেয় শিরকের সব জঞ্জাল

এবং তিনটি ইতিবাচক ও তিনটি নেতিবাচক,

মোট ছয়টি বাক্যে প্রকাশ করে তৌহিদের সাত প্রকার—

প্রথম বাক্য—‘কুল হুয়া’—এ যেন কোনো আলামত ছাড়া ইশারা

‘তিনি’ শব্দে আছে সুনির্দিষ্ট ধারণা, এর মানে আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই

‘আল্লাহ’ শব্দের অনুল্লেখও প্রমাণ করে তিনি আল্লাহ—

কোনো রাখঢাক কিংবা সংশয় ছাড়াই।

এই অর্থে আমরা বলতে পারি, সত্যের সমুদ্রে মণিমুক্তোর সন্ধানী

যখন পাঠ করে ‘কুল হুয়া’, আসলে পাঠ করে ‘লা মাশহুদা ইল্লা হু’—

এই ভূলোকে কী দ্যুলোকে, তিনি ছাড়া প্রত্যক্ষ কিছুই নেই

দ্বিতীয় বাক্য—‘আল্লাহু আহাদ’—আল্লাহর একত্বের স্পষ্ট প্রকাশ

এর উচ্চারণে হকিকত হকের জবানে বলে—

‘লা মাবুদা ইল্লা হু’—তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই

তৃতীয় বাক্য—‘আল্লাহুস সমাদ’—তৌহিদের দুই মুক্তোদানা

প্রথমটা রবুবিয়াতের তৌহিদ, যা সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনার ভাষায় বলে—

‘লা খালিকা ইল্লা হু’—তিনি ছাড়া কোনো স্রষ্টা নেই

দ্বিতীয় মুক্তো আল্লাহর কাইয়ুমিয়াতের তৌহিদ—যা সমস্ত সৃষ্টিজগতে

প্রভাব সৃষ্টির ভাষায় বলে—‘লা কাইয়ুমা ইল্লা হু’

তিনি ছাড়া স্থায়ী কিছুই নাই

চতুর্থ বাক্য—‘লাম ইয়ালিদ’—সন্তান কিংবা পিতা হবার

ধারণা রদ করে, এবং এই শিরকের মূলোৎপাটন করে যে হযরত ঈসা (আ)

ফেরেশতা কিংবা অন্যকিছু আল্লাহর সন্তান। কেননা এই শিরকের

খপ্পরে পড়ে পথ হারায় বহু মানুষ, নিপতিত হয় গোমরাহির অন্ধকারে

পঞ্চম বাক্য—‘ওয়া লাম ইয়ুলাদ’—তার একত্বের মূলকথা

তার অদ্বিতীয় হবার দিকে অকাট্য ইশারা—

আর তাই যার অস্তিত্বে রয়েছে পরিবর্তন ও ধ্বংস,

যে স্থান কিংবা সময়ে সৃষ্ট, অন্য সত্তা থেকে নয় বিযুক্ত,

এবং যে আদি ও অন্তহীন নয়—

সে কোনোভাবেই হতে পারে না কারও উপাস্য

ষষ্ঠ বাক্য—‘ওয়া লাম ইয়াকুন’—তৌহিদের সামগ্রিক প্রকাশ

এর মানে তার সত্তার কোনো উপমা নেই, তার কাজেও নেই

কোনো অংশীদার, এবং নেই তার সিফতের কোনো বিকল্প।

তার সত্তা ও গুণ বাদে বাকি সবকিছুই ‘লাম’—তথা ‘না’

এই ছয় বাক্যে রয়েছে বিশ্বাসের সাত রং,

এর প্রত্যেক বাক্যই অপর বাক্যের প্রমাণ

সুরা ইখলাস একটি সুরা, তবে তার মাঝে আছে

দলিল ও প্রমাণে সুসজ্জিত আরও ত্রিশটি সুরার উপাদান—

যার প্রত্যেকটিই কূপে ধারণ করে বিশাল সমুদ্র

 

সৃষ্টির সম্পর্ক

 

সৃষ্টিজগতের সবকিছুই একে অপরের সাথে যুক্ত

তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্যমান যে সহযোগ ও সলিকা

উদাত্ত আওয়াজে সে বলে :

একজন সর্বময় ক্ষমতাশীলই কেবল পারেন

এ সব অণুকণা সৃজন করে যথাস্থানে বসাতে

জগৎগ্রন্থের প্রতিটি হরফ আর প্রতিটি লাইন

প্রমাণ করে একজন ‘হাইয়ুন’ সত্তা—

চিরঞ্জীব সেই সত্তার ডাকে তারা প্রতিনিয়ত বলে লাব্বাইক।

তৌহিদের রহস্যেই উন্মোচিত হয় প্রকৃতির সমস্ত দিক—

কেননা কুদরতই তার প্রতিটি হরফকে বাক্যের, আর বাক্যকে

গ্রন্থের ভাষ্যের অভিমুখী করেই বানিয়েছে।

 

অস্তিত্বের টান

 

অস্তিত্বের মাঝেই লুক্কায়িত পরমের ভালোবাসা ও টান

আর আকর্ষণ করবার শক্তি ছাড়া

করতে পারে না কেউ নিজের প্রতি আকৃষ্ট

পরমের সৌন্দর্য যদি কেউ বেপর্দা দেখে ফেলে

কীভাবে নিজেকে সামলাবে কোনো অনুভূতিশীল প্রাণ

এই অনুভূতিই সাক্ষী একজন পরাক্রমশালী অপরূপ সত্তার

প্রথম সাক্ষী তার ভালোবাসা আর দ্বিতীয় সাক্ষী প্রবল টান

 

সত্যের তালাশ

 

মানুষ একমাত্র সত্যকেই চায় পরম আপন করে

তার চোখ খুঁজে ফিরে কেবল সত্যকেই

এই বৈশিষ্ট্যই মানুষকে করেছে আলাদা, তাকে বানিয়েছে মহান

আর তাই হোঁচট খেয়ে সে কখনও যদি পড়েও যায় মিথ্যার কলুষে

সে ভাবে এ-ই বুঝি সত্য, অজ্ঞাতে জড়িয়ে ধরে তাকে

আবার কখনো কখনো এমনও হয়—হকিকতের অনুসন্ধানের পথে

ভুলবশত হয়ে যায় বিচ্যুত, অজান্তে হেঁটে যায় বিভ্রান্তির দিকে

অতঃপর তাকে ভেবে নেয় সত্য, এবং তাকেই করে যায় সত্যায়ন

 

মননের নুর বিকশিত হয় মনের সংস্পর্শে

 

যেসব চিন্তকের মনে ছেয়ে আছে গোমরাহির অন্ধকার

তাদের সমীপে আমার এই আলোকবর্তিকা :

যতক্ষণ না মনের নুর মিশবে মননের সাথে

আলোকিত হবার বদলে তোমার ওপর সওয়ার হবে

জাহালতের অন্ধকার।

তখন তুমি দিনকে সাদাই দেখবে, কিন্তু

সেই সাদা অন্ধকারেরই অন্য রূপ

তাতে নেই নুরের কোনো লেশ।

তোমার চোখে যদি নুরের পুত্তলি না থাকে

তবে সেই চোখ চর্বির টুকরো—তাতে দৃষ্টিশক্তি নেই।

সেই চোখের কী মূল্য—যাতে নেই দেখার শক্তি?

তাই, অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে যদি ফিকিরের আলো না ফোটে

তাহলে মননেও ফুটবে না অন্তর্দৃষ্টি ও এলেমের আলো

তাই বলা যায়—মন বাদ দিয়ে মনন, সত্যিকারের মনন নয়

 

কারও কারও কাছে এক মুহূর্ত এক বছরের সমান

 

মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি দুই ধরনের :

এক. কেউ কেউ উন্নত হয়ে যায় চোখের পলকে

দুই. কেউ কেউ উন্নত হয় পর্যায়ক্রমে—

রয়ে সয়ে পৌঁছায় উচ্চতর শিখরে

মানুষের স্বভাবের সাথে আবার রয়েছে এর সম্পর্ক

তবে অবস্থা ও পরিস্থিতি ভেদে স্বভাবের ঘটে পরিবর্তন

কখনো কখনো এই প্রকৃতি চলে ধীরে ধীরে

আবার কখনও কালো বারুদে আগুন লাগায় ঝলসে ওঠে

কখনও একটি দৃষ্টিই কয়লায় জন্ম দেয় হীরকখণ্ড

কখনও একটি স্পর্শ পাথরকে বানিয়ে পরশমণি

নবিজির (স) একটি দৃষ্টি যেমন জাহিল বেদুইনকে

মুহূর্তেই বানিয়ে ফেলেছিল আল্লাহর আরেফ।

এই বিষয়ে যদি আরও উদাহরণ চাও

তবে দেখো ওমর বিন খাত্তাবকে (রা)—

তার ইসলাম গ্রহণের আগের ও পরের জীবন

তিনি কী ছিলেন আর পরিণত হয়েছিলেন কেমন ব্যক্তিত্বে

এই দুটো উদাহরণ এমন গাছের মতো যে একবারই ফল দেয়

কিন্তু যদি খেয়াল করো, দেখতে পাবে :

নববি দৃষ্টি আরব উপদ্বীপের কয়লার খনিকে

পরিণত করেছিল হীরার ভান্ডারে

এবং কালো বারুদে আগুন দেবার মতো

তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন স্বভাবকে রূপান্তর করেছিলেন চির উজ্জ্বল নুরে

 

মিথ্যা কাফিরের শব্দ

 

একটি দানা পরিমাণ সত্যও ধ্বংস করে দেয় মিথ্যার গোটা স্তূপ

হাকিকতের অণু পরিমাণ ধারণা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় কল্পনার প্রাসাদ

তাই সত্য এক শক্তিশালী বনিয়াদ এবং উজ্জ্বল রত্ন

কখনো কখনো এমন হয়—যদি লোকসানের ভয় হয়

সত্য তার স্থির পথ থেকে সরে যায়

কিন্তু মিথ্যার কোনো সুযোগ নেই—থাকুক সে যতই স্থির

কিংবা তাতে যত কল্যাণই দেখা যাক না কেন।

তোমার এই হাকিকতে অনড় থাকা চাই :

‘সদা সত্য কথা বলিবে’ মানে এই নয়—সব সত্য তোমাকেই বলতে হবে

সব ক্ষেত্রে সত্য বলতে নেই—যদিও তুমি সত্যের একনিষ্ঠ খাদেম

তোমার নীতি হবে—খুয মা সফা, দা’ মা কাদার

যা ভালো, তাকে গ্রহণ করো নির্দ্বিধায়, আর মন্দকে করো ত্যাগ।

অতঃপর যেদিকেই তাকাবে, তাকাবে শুভদৃষ্টিতে

যা কিছুই পর্যবেক্ষণ করবে, করবে ভালো নিয়তে

আর তোমার চিন্তাভাবনা হওয়া চাই সুন্দর

ইতিবাচক দৃষ্টি আর ‘সবকিছুই ভালো’ এমন ভাবনা নিয়ে

যদি করতে পারো জীবনযাপন, তবে তুমি পাবে সুখের সন্ধান।

 

আলাদা নয় ধর্ম আর জীবন

 

তরুণ তুর্কিরাই এই ভুলের প্রচারক

তারা জানে না ধর্মই জীবনের ভিত

আর তাই তারা বলে বেড়ায়—

জাতি এক বিষয় আর ইসলাম আরেক

দুটো একে অপর থেকে আলাদা।

তাদের এই চিন্তার উৎস নষ্ট সভ্যতা

যার স্লোগান—ইহজীবনেই রয়েছে সব সুখ

তরুণ তুর্কিদের মন ও মনন আক্রান্ত

এই দুরারোগ্য কর্কট রোগে

অথচ এই এক কথাই প্রমাণ করে

সভ্যতার নামে তাদের সব তত্ত্ব অঠিক।

চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা বলে ধর্মই জীবনের মূল

এবং তার আলো ও ভিত্তি।

ধর্মকে ফের জিন্দা করলেই জিন্দা হবে জাতি

আর এই সত্যের পয়গাম কেবল ইসলামই দেয়

ধর্মকে আঁকড়ে ধরার ভিত্তিতেই

প্রমাণিত আমাদের জাতির উন্নতি-অগ্রগতি

অন্যদিকে অবনতি নির্ধারিত হবে

ধর্মকে অবহেলার মানদণ্ডে।

এই সত্য অন্যকোনো ধর্মের বেলায় খাটে না—

এটাই আজতক ঘটে আসা ইতিহাস

যাকে ভুলে আছে তারা

 

মতবিরোধ

 

হে হাকিকতের অনুসন্ধানী

যদি তুমি পেয়ে যাও সত্যের দিশা

তবে ‘অধিকতর সত্যের’ অনুসন্ধান যেন

তোমাকে উদ্বুদ্ধ না করে মতবিরোধে

এমন যদি হয় তবে—

অধিকতর সত্যের তুলনায় সত্যই ঠিক

এবং অধিকতর উত্তমের তুলনায়

সাধারণ উত্তমই অনুসরণীয়

 

ঐক্যের ডাক

 

হে মুসলিমবিশ্ব, তোমার প্রাণ লুকিয়ে আছে একতায়

আর তুমি যদি ঐক্য চাও, তবে অনুসরণ করো এই নীতি :

‘এটাই একমাত্র সত্য’—এমন কথা তুমি মুখেও আনবে না

বরং তোমার কথা হবে—‘এটাও সত্য’,

‘এটাই উত্তম’ বলার বদলে বলবে—‘এটা উত্তম’।

নিজের মাজহাবের ওপর প্রত্যেক মুসলমানের বক্তব্য হবে—

‘আমরা সঠিক, এবং অন্য মাজহাব ও মাসলাকও সঠিক।

যদি অন্য মাজহাব সুন্দর হয়,

তাহলে আমাদের অনুসৃত মাজহাব আরও সুন্দর।’

কিন্তু একথা ঘুণাক্ষরেও বলা যাবে না—‘কেবল আমাদের

মাজহাবই সঠিক, আর বাকিরা পথভ্রষ্ট। আমাদের নীতিই

কেবল সুন্দর, অন্যেরা অসুন্দর আর ভুলে নিমজ্জিত।

সংকীর্ণতা থেকেই জন্ম নেয় আত্মপ্রেম, আর তার

পরিণতিতে সৃষ্ট হয় কলহ-বিবাদের রোগ।

রোগ যত জটিল, ওষুধও দিতে হয় সেই অনুপাতে

রোগ যদি হয় একাধিক, ওষুধও হয় তখন অনেক

ওষুধের বহুসংখ্যার মতো সত্যও হয় বহুমাত্রিক—

ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনে, সেবন করা হয় ভিন্ন ভিন্ন সত্য।

যোগ্যতার আর প্রশিক্ষণের ভিন্নতার অনুপাতে

সত্যও নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয় আলাদা আলাদা ছাঁচে

কখনও একই জিনিশ দুই আঙ্গিকে দেখার ফলে

রোগে রূপ নেয়, আবার একই জিনিশ হয় আরোগ্য।

কেননা প্রত্যেকেই নিজের মতো করে দেখে পৃথিবী

আর তার মধ্যকার প্রতিটি বিষয়-আশয়—

তাই চিন্তা ও অভিজ্ঞতার ভিন্নতা নির্মাণ করে নিজস্ব পথ।

মাজহাবের অনুসারী প্রতিটি মানুষ থাকে আপন গণ্ডিতে

কখনো কখনো তাই জন্ম নেয় মাজহাব কেন্দ্রিক গোঁড়ামি

আর অপর মতের ওপর দয়ামায়াহীন আক্রমণ।

ইসলামপূর্ব সময়ে মানুষে মানুষে ছিল অনেক বিভেদ

তাই শরিয়তও ছিল একেক জনপদে একেক রকম

কিন্তু ইসলাম নিয়ে এলো এক আশ্চর্য ইনকিলাব

গোটা মানবজাতিকে দাঁড় করায় একই কাতারে

এরই বরকতে মানুষে মানুষে কমে যায় দূরত্ব

তাই সবাইকে প্রদান করা হয় অভিন্ন শরিয়ত।

যদ্দিন মানুষের জ্ঞান আর প্রজ্ঞায় রবে বিশাল ফারাক

থাকবে অনেক মাজহাব ও নানা রকমের মত-পথ

যখন সব মানুষের স্তর হয়ে যাবে একই পর্যায়ের

আর এক ও অভিন্ন জীবনবিধানের উপযোগী

তখন সবাই চলে আসবে একই মাজহাবের ছায়ায়

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷