পশ্চিমবঙ্গের আরবিচর্চা : সংকট ও বাস্তবতা

মূল : মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম

শেখ মুজাহিদুল ইসলাম

সর্বজনস্বীকৃত যে, আরবি ভাষা পৃথিবীর প্রাচীনতম ও সবচে ব্যাপক প্রচলিত একটি ভাষা। বর্তমানে বিশ্বের ২২টি দেশের সরকারি ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা ব্যবহৃত। বিশ্বজুড়ে ৪২২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে এবং ১.৫ বিলিয়নেরও বেশি মুসলিম তাদের দৈনন্দিন জীবনে এ ভাষা ব্যবহার করে থাকে।[1]البعث الإسلامي، العدد الثامن، مارس 2014م، ص:3

বহু ভাষা ও সংস্কৃতির জন্মস্থান ভারতে প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন ভারতীয় মুসলিম ধর্ম ও সংস্কৃতির ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা অধ্যয়ন করে থাকে।[2] طبقا لإحصائيات الهند الرسمية عام 2001م

তারমধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—২০ মিলিয়ন মুসলমানের বাস পশ্চিমবঙ্গে,[3]Muslim in West Bengal: trend of population growth and educational status by Nazmul Hussain, page no.41. যাদের জনসংখ্যার ২৫% মানুষ তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ততার কারণে আরবি ভাষা অধ্যয়ন করে থাকে। তবে মাতৃভাষা বাংলা হওয়া ও আরো নানাবিধ কারণে আরবি ভাষা শিক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যানেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। তাই এ সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা আরবিভাষা-শিক্ষার্থীরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলোর পর্যালোচনা করব এবং সেগুলো সমাধানের পথ বাতলাব। কিন্তু এর আগে আমরা পশ্চিমবঙ্গে আরবি ভাষা অধ্যয়নের উপর একটু আলোকপাত করে নিতে চাই।

 

পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান :

সিন্ধু ও মুলতানের মাধ্যমে ভারতে ইসলাম প্রবেশ করে। ধার্মিক ব্যবসায়ী ও মুখলিস দায়িদের মাধ্যমে ইসলাম গোটা ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, যারা ছিলেন ধর্মের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ; সদুপদেশ, নির্দেশনা ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে যারা ধর্মপ্রচারে সর্বপ্রকার কষ্টক্লেশ সয়ে নিয়েছিলেন। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিমের ভারত বিজয়ের পর, ভারতের জমিনে ইসলামের প্রচার-প্রসার আরও বৃদ্ধি পায়।[4]. اللغة العربية في الهند عبر العصور، خورشيد أشرف إقبال الندوي، ص: 11

উত্তর ভারতে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ, প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে বসবাসকারীদের আরব মুসলিম ব্যবসায়ীদের সাথে ভালো বাণিজ্যিক ও ধর্মপ্রাচারের সম্পর্ক ছিল। কিছু ঐতিহাসিকের মতে ইসলাম ও মুসলমানদের এ সম্পর্কের সূচনা অষ্টম শতাব্দীকালে। যেমন আব্দুল করিম বলেন : “ইসলাম অষ্টম শতাব্দিতে ভারতে প্রবেশ করে, যদিও ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটেছিল আরও আগে।”[5]Abdul Karim, social history of the muslim in West Bengal,  p. no.25 ،  نقلا عن بحث جامعي “المدارس الإسلامية لولاية البنغال الغربية ودورها … Continue reading

অন্যদিকে জগদিশ সরকার নারায়ণ লেখেন : “খ্রিস্টাব্দ ১২০৩ সনে তেরতম শতাব্দীর শুরুতে ইখতিয়ারুদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি দ্বারা বঙ্গ বিজয়ের পর বাংলায় ইসলাম বিকাশ লাভ করে।”[6] ، نقلا عن المصدر المذكور، ص: 3.Jagadish Sarkar Narayan, Islam in Bengal, page no. 20  এরপর অমুসলিমরা একে একে দলেদলে ইসলামগ্রহণ শুরু করে এবং পশ্চিমবঙ্গ মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য হয়ে ওঠে।

 

পশ্চিমবঙ্গে মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান :

পশ্চিমবঙ্গে আরবি অধ্যয়নের ইতিহাস  মুসলিমদের আগমনের সাথে জড়িত। মুসলিমরা এসে পশ্চিমবঙ্গকে তাদের শাসনব্যবস্থার রাজধানী হিসেবে গ্রহণ করেন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য মসজিদ মাদরাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেগুলোতে কোরআন-হাদিসের জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেন।[7]. الدراسات العربية في البنغال الغربية خلال القرن العشرين: دراسة تحليلية، بحث جامعي تم تقديمه من محمد سعيد … Continue reading

এটা সত্য যে, ধর্মের সাথে আরবি ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে; কারণ ধর্মীয় জ্ঞানের মূল উৎস হলো কোরআন ও হাদিস, এবং উভয়ই আরবি ভাষায় রচিত, তাই আরবি ভাষা জানা এই জ্ঞান অর্জনের জন্য অপরিহার্য। কোরআনে বলা হয়েছে : “নিশ্চয় আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।”[8]سورة يوسف: الآية، 2 ফলে, না আরবি ছাড়া ইসলাম হতে পারে আর না ইসলাম ছাড়া আরবি হতে পারে। আর তাই মুসলিমরা আরবি ভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল এবং নিজেদের সন্তানরা কোরআন না বুঝলেও, অন্তত তেলাওয়াত করতে পারে এটুকু আরবি শিখতে তাদের মাদরাসা-মকতবে পাঠায়; পরবর্তীতে এদের কেউ কেউ ধর্মীয় জ্ঞানে আরো উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্থানীয় ধর্মীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে।

 

পশ্চিমবঙ্গে মাদরাসা :

আরবি ভাষা শেখানোর জন্য দু ধরনের মাদরাসা আছে পশ্চিমবঙ্গে :

১. স্থানীয় মাদরাসা :

এ মাদরাসাগুলো সমাজের সাহায্য ও সহায়তায় পরিচালিত হয়। এগুলো মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কোরআন-হাদিস শেখার ও বোঝার জন্য এবং মুসলিমদের আত্মপরিচয় বা আইডেন্টিটি টিকিয়ে রাখার জন্য—এমন একটা সময়ে যখন ভারতে ইসলাম ও মুসলমানদের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ ও আপত্তিকর অবস্থা তৈরি হচ্ছিল। জুবায়ের আহমাদ ফারুকি লেখেন : “এসকল পরিস্থিতি ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, তখন উলামাগণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং ধর্মীয় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যার শীর্ষে ছিল দারুল উলুম দেওবন্দ”।[9]مساهمة دار العلوم ديوبند في الأدب العربي، الدكتور زبير أحمد فاروقي، ص: 19

স্থানীয় মাদরাসাগুলোতে সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদির তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় কোরআন-হাদিস শেখার ও বোঝার উপর। এখানে দরসে নেজামি বা পাঠ্যক্রম প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু হয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, যাকে আমরা ‘দাওরাহ’ বলি থাকি। স্নাতকোত্তর শিক্ষার জন্য কিছু শিক্ষার্থী অন্য প্রদেশে এবং বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মাদরাসায় চলে যায় এবং সেখানে বেশ কিছু বছর ধরে পড়াশোনা করে। উল্লেখযোগ্য স্থানীয় মাদরাসার মধ্যে রয়েছে :

জামিয়া ইসলাহিল মুসলিমিন, ভাদো।

ফালাহুল মুসলিমিন মাদরাসা, ধানগাড়া

জামিয়া মাজহরুল উলুম, পাটনা।

জামিয়া ইসলামিয়া মেরাজুল উলুম, জালালপুর।

জামিয়া রাহিমিয়া, কালামারি ইত্যাদি।

২. সরকারি মাদরাসা :

এ মাদরাসাগুলো পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাবোর্ডের তত্ত্বাবধানে সরকারি সহায়তায় পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য যে, পশ্চিমভঙ্গ ভারতে প্রথম প্রদেশ যা নিজস্ব শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠা করে। ১৭৪১ সালে খ্রিস্টান মিশনারি ওয়ারেন হেস্টিংয়ের[10]البعث الإسلامي، ذو القعدة، 1397هـ، ص: 61 ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদরাসা ছিল ভারতের সর্বপ্রথম মাদরাসা। আবুল হাসান আলি নদবি লেখেন : “সরকারি মাদরাসাগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যোগ্য কিছু মাদরাসা হচ্ছে—রামপুর আলিয়া মাদরাসা, কলকাতা আলিয়া মাদরাসা ও বাটনার শামসুল হুদা মাদরাসা, যা বেশ প্রসিদ্ধ মাদরাসা ছিল। অতীতে কলকাতা ও রামপুর আলিয়া মাদরাসাকে পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম মাদরাসা হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং পশ্চিমবঙ্গে আরবিশিক্ষার ইতিহাসে এ দুই মাদরাসা তাদের শিক্ষকদের উচ্চতর যোগ্যতা ও শিক্ষার্থীদের উত্তম গুণাবলির মাধ্যমে যে অবদান রেখে গেছে তা কখনোই ভুলবার নয়।” [11].المسلمون في الهند، أبو الحسن علي الحسني الندوي، ص: 132

এ মাদরাসাগুলোতে আরবি শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান, গণিত, বাংলা ও ইংরেজিসহ আরো অন্যান্য বিষয়েও পড়ানো হয়। উপরন্তু, বেশ কিছু পাবলিক সরকারি মাদরাসায় অপশনাল সাবজেক্ট হিসেবেও আরবি ভাষা পড়ানো হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা এ মাদরাসাগুলোয় পড়াশোনা শেষ করে দেশ-বিদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালযগুলোতে ভর্তি হয়। পশ্চিমবাংলার সেসকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেসান্স, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি স্তরে আরবি পড়াশোনা করা যায় সেগুলো হলো :

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্যাদি

 

পশ্চিমবঙ্গে আরবি-শিক্ষার্থীরা যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হয় :

ব্যাকরণ, বাক্যগঠন, শব্দমূল ও উচ্চারণ ইত্যাদি নানান দিক থেকে আরবি ভাষা কঠিনতম একটি ভাষা। তাই ভিন্নভাষী শিক্ষার্থীর জন্য এ ভাষা শেখা ও অধ্যয়ন করাও তুলনামূলক কঠিন। শিক্ষার্থীদের সুম্মুখীন হওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো :

দু ভাষার স্বভাব-প্রকৃতির ভিন্নতা :

বর্ণমালা ও তার উচ্চারণগত দিক, শ্রবণ, ভাষাশৈলী ও লিখন-পদ্ধতিগত দিক ইত্যাদি সবকিছুতে আরবিভাষা বাংলাভাষার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও আলাদা। উভয়ের মাঝে কোনো সামঞ্জস্য নেই। উদাহরণস্বরূপ : আরবিভাষা ডান দিক থেকে লেখা হয় আর বাংলাভাষা লেখা হয় বাম দিক থেকে। বাংলাভাষীরা তাদের মার্তৃভাষায় মাখরাজের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না, যেমন : সিন-শীন, স–দ-দ্ব–দ, হা-হাঁ, আইন, হামজাহ ইত্যাদি। যেমন তারা عرب কে ارب (আরব) পড়ে, حمد কে পড়ে همد (হামদ)। একইভাবে তারা মদ্দের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে না, তাই কখনও কখনও মদ্দহীন শব্দকে মদ্দ দিয়ে পড়ে, আবার কখনও মদ্দ বিশিষ্ট শব্দকে মদ্দছাড়া পড়ে, উদাহরণ : اكبر কে পড়ে اكبار, আবার مطار কে পড়ে مطر।  বাঙালিদের আরেকটা অভ্যাস হলো, তারা যেকোন শব্দকে গোল করে উচ্চারণ করে থাকে, যেমন : أكبر (আকবার) কে বলবে اكبور (আকবর)। অথচ আমরা ভালো করে জানি যে, আরবিভাষা অন্যান্য ভাষা থেকে পৃথক ও বিশিষ্ট এই মাখরাজ, শ্রবণ, উচ্চারণ, বাক্যগঠন ও শব্দমূল ইত্যাদির কারণে।[12] تاريخ العربية وآدابها، محمد الفاروقي ومحمد إسماعيل المجددي، ص: 11 এজন্য বাঙালি আরবি-শিক্ষার্থীদের জন্য সবচে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সঠিক ও শুদ্ধ উচ্চারণে আরবি বলতে পারা। ফলত আমরা দেখি পশ্চিম বাংলার অনেক আলেম সঠিক মাখরাজে কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করতে পারেন না বা হরফগুলোর সঠিক উচ্চারণে আদায় করতে পারেন না।

নাহবি ও সরফি কায়দা-কানুন :

বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের আরবিভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় একটা বিপত্তি, আরবি ভাষার নাহবি-সরফি কায়দা-কানুন বলা যায়। শিক্ষার্থীরা বাক্যগঠনে সমস্যার সম্মুখীন হয়, যেহেতু আরবি ভাষার বাক্যকাঠামো বাংলা ভাষার বাক্যকাঠামো থেকে ভিন্ন। আরবিতে বাক্যকাঠামো হয়ে থাকে ফেয়েল (ভার্ব) ফায়েল (এজেন্ট নাউন) মাফউল (অবজেক্ট), পক্ষান্তরে বাংলা ভাষায় বাক্যকাঠামো অবজেক্ট-এজেন্ট নাউন-ভার্ব এভাবে হয়ে থাকে । তাছাড়া সংখ্যা-গণনার নিয়মেও আরবি ভাষা অন্যান্য সব ভাষা থেকে কঠিন বলে বিবেচিত। যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্যই অল্পদিনের মধ্যে এই সংখ্যা-গণনার নিয়ম শেখা সম্ভব না। একইভাবে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক হওয়া, পরিচিত ও অপরিচিত হওয়া, একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন হওয়া, সরফি নিয়ম ও শব্দমূলউৎস ইত্যাদি  নিয়ম বাংলা ভাষায় নেই। ফলত স্পষ্টতর বিষয়, যে শিক্ষার্থীর মার্তৃভাষায় এসকল নিয়মকানুন নেই, তার জন্য এসব শেখা ও আয়ত্ত করা বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জের বিষয়।[13]. تاريخ العربية وآدابها، محمد الفاروقي ومحمد إسماعيل المجددي، ص: 11

পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাসিলেবাস :

পশ্চিমবাংলার মাদরাসাগুলোতে প্রচলিত শিক্ষাসিলেবাস ও পাঠ্যক্রম পশ্চিমবঙ্গে আরবি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা বড় প্রতিবন্ধক। কেননা সিংহভাগ দ্বীনি মাদরাসা পরিচালিত হয় দরসে নেজামি নামে পরিচিত গতানুগতিক শিক্ষাসিলেবাসে, নেজামুদ্দিন সালুহি লাখনবি (১১৬১হি./১৭৪৭খ্রি.) যার সংস্কার করেছিলেন। সে সিলেবাসে ফারসিতে লেখা জটিল জটিল কেতাব পড়ানো হতো—মিজান, মুনশাইব, নাহবেমির, পাঞ্জেগাঞ্জ, সাজাল আরফ, হেদায়াতুন্নাহু ও কাফিয়া ইত্যাদি সব কেতাব। আর সরকারি মাদরাসাগুলোতে এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলায় লেখিত বইপত্র পড়ানো হতো। এমন কোনো একক শিক্ষাসিলেবাস বা পাঠ্যক্রম ছিল না যে সিলেবাস মাদরাসাগুলো আরবি ভাষা শিক্ষাদানে অনুসরণ করবে। এবং এমন কোনো একক শিক্ষাবোর্ডও ছিল না, যার অধীনে পাঠ্যক্রমের বইপত্র আরবিতে তৈয়ার করা হবে। সেক্ষেত্রে সিলেবাস তৈরিতে শিক্ষার্থীদের বয়স, মেধা, আগ্রহ ইত্যাদি বিষয় লক্ষ রাখা অবশ্যকর্তব্য। একইসাথে জরুরি যাতে শিক্ষা সিলেবাস সহজতর থেকে সহজ; সহজ থেকে কঠিন; কঠিন থেকে কঠিনতর—এমন করে আগায়; যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহ পায় এবং যথাযথ ফায়দা নিতে পারে। পাশাপাশি এটাও সমান লক্ষণীয় যে, পাঠ্যক্রম যাতে যুগোপযোগী হয়, যার ফলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক বিশ্বের খবরাখবর ও আগ্রগতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে এবং পাঠ্যবই অনুশীলনমূলক হওয়া চাই, যাতে শিক্ষার্থীরা অনুশীলন সমাধান করে নিজেরাই বুঝতে পারে এবং পড়া তাদের হৃদয়ে বসে যায়।

ভালো মাদরাসা ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব :

ভালো মাদরাসা না থাকা ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব, পশ্চিমবঙ্গে আরবি ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা। এটা দুঃখজনক যে, পশ্চিমবাংলায় ভালো মাদরাসা নেই। এখানে স্থানীয় এমন কোনো দ্বীনি মাদরাসা নেই যা দেশের ভেতর-বাইরে কোথাও কোন সরকারি বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত আছে। তাই এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী অন্য প্রদেশে—বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে—চলে যায় এবং ওই ক্লাসগুলোরই পুনরাবৃত্তি করে যেগুলো সে আগেই পড়ে এসেছে। ফলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বা বাহিরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার সুযোগ তাদের হয় না। মাদরাসাগুলো প্রশিক্ষণ কোর্স ও সেমিনার আয়োজন করে না, এবং ভালো বেতনের ভয়ে যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদেরকেও নিয়োগ দেয় না। সরকারি মাদরাসাগুলোর হালত তো আরও খারাপ। এমন শিক্ষকমণ্ডলির দ্বারা সেখানে শিক্ষা দেওয়া হয়, যাদের আরবি ভাষা বোঝার, পড়ার ও লেখার কোনো যোগ্যতা নেই। যে ভাষা তারা নিজেরা জানেন না, কীভাবে সে ভাষা তারা ভিন্নভাষী শিক্ষার্থীদের শেখাবে!

সমৃদ্ধ লাইব্রেরির অভাব :

একটা মাদরাসায় একটি ভালো ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি থাকা অতীব জরুরি। শিক্ষার্থীরা এখান থেকে আজল ভরে জ্ঞানের সুধা গ্রহণ করতে পারে এবং নিজেদের জ্ঞানপিপাসা মেটাতে পারে। জ্ঞানসাধনার জীবনে শিক্ষার্থীদের জন্য পানি-বায়ুর মতোই একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরির প্রয়োজন। কিন্তু সিংহভাগ মাদরাসাতেই সমৃদ্ধ লাইব্রেরি নেই। কিংবা থাকলেও তা নামকা ওয়াস্তে। সেখানে মৌলিক প্রধান বইগুলো নেই ও আরবি ভাষার মূল্যবান গ্রন্থগুলোও নেই। তো কীভাবে একজন আরবি-শিক্ষার্থী এ অবস্থায় ব্যক্তিগত মুতালাআ করবে অথবা নিজের জানাশোনা বাড়াবে এবং কীভাবে নিজের মধ্যে ভাষিক ও ইলমি যোগ্যতা তৈরি করবে?

আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি :

আমরা জানি যে, বর্তমান যুগ হলো বিজ্ঞান ও টেকনোলজির যুগ। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের জীবন—বিশেষত আমাদের ইলমি জীবন—আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভাব্য সল্প সময়ে ও সহজতর পদ্ধতিতে আমরা নিজেদের কাজ সম্পাদন করতে পারি। বাঙালি আরবিভাষা শিক্ষার্থীদের জন্য চার দক্ষতা তথা : পড়া, লেখা, শোনা ও বলা—এ চার ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানো সহজ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক উপায়-উপকরণশূন্য—ভাষা-সাহিত্য ম্যাগাজিন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি সেখানে নেই। ফলে আধুনিক উপায়-উপকরণ ছাড়া ভাষাশিক্ষার্থীর জন্য এ সকল দক্ষতা অর্জন বিরাট বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।

দৈন্য ও দারিদ্র :

পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের সম্পর্কে আমরা জানি তারা উন্নয়নে কতটা পশ্চাৎপদ এবং কতটা দৈন্য ও দুর্দশার স্বীকার। বরং এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও শুধুমাত্র ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে এখানে নিত্যদিন মানুষের মৃত্যু ঘটে[14]. مسلمو ولاية البنغال الغربية الهندية يموتون جوعا!، ظفر الإسلام خان، جريدة الرياض، إبريل، 2005م، العدد 13430 আর নব্বই শতাংশেরও বেশি[15]. وفقا لإحصاءات الهند الرسمية عام 2001م মুসলমান এখানে গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। সেখানে তাদের কোনো আয়-রোজগারের উপায় নেই। এবং আমরা খুব ভালো করেই জানি যে, শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থের কী পরিমাণ প্রয়োজন। একজন শিক্ষার্থী অর্থ ছাড়া শিক্ষার্জন করতে বা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। মুসলিম শিশুদের একটা বড় অংশ দৈন্যদশার কারণে ছোট বয়সেই কাজে জড়িয়ে পড়ে, এবং জীবিকার প্রয়োজনে প্রদেশ কিংবা দেশের বাহিরে পর্যন্ত অনেকে চলে যায়; অথচ কথা ছিল তারা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করবে এবং দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবে। অতএব, আমার দৃষ্টিতে মুসলিমদের মাঝে অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতার বিস্তার ঘটার এবং আরবিশিক্ষার প্রতি আগ্রহের অভাব দেখা দেওয়ার সবচে বড় কারণ দৈন্য ও দারিদ্য।

শিক্ষা-কর্মক্ষেত্রের অভাব ও সরকারের অগুরুত্ব :

বাস্তবিকপক্ষে, আরবিশিক্ষা ও আরবিচর্চা এটা মুসলমানদের দ্বীন ও সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত। কারণ কোরআন ও হাদিসের ভাষা আরবি ভাষা। তবে একজন আরবি ভাষা শিক্ষার্থী তার পড়াশোনা পূর্ণ করার পর নিজের জীবন পরিচালনার জন্য তার অর্থ ও রুপির প্রয়োজন। আমরা দেখি, আরবি ভাষাশিক্ষার্থীরা তাদের সার্টিফিকেট নিয়ে এখানে সেখানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোনো প্রাইভেট বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাচ্ছে না। ফলাফলরূপে শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আবেদন থাকবে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের কাছে, তারা যাতে এই ‘নিপীড়িত’ ভাষার প্রতি গুরুত্বশীল হয় ও এর প্রতি সুবিচার করে এবং এর শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করে। নিদেনপক্ষে মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শূন্যপদগুলো সুষ্ঠভাবে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।।

আরবির পরিবেশ না থাকা :

যেকোনো ভাষা চর্চার জন্য সে ভাষার পরিবেশ থাকা জরুরি। আমরা দেখি একটি শিশু কীভাবে তার মা বাবা ও পরিবার থেকে একটি ভাষা শিখে ফেলে; সে ভাষার পরিবেশ থাকার ফলে। ঠিক তেমনই একজন ভাষাশিক্ষার্থী তার ক্লাস বা মাদরাসার পরিবেশে নিজের শিক্ষকের মাধ্যমে বা নিজের চেয়ে ভালো ছাত্রের মাধ্যমে একটি বিদেশি ভাষা শিখতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মাদরাসা কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরবিচর্চার সেই পরিবেশ নেই। দেখা যায় শিক্ষকরা ক্লাস করাচ্ছেন বা প্রফেসর স্পিচ রাখছেন সবকিছু উর্দু বা বাংলাতে, আরবিতে না। তাহলে যে ছাত্র আরবি শুনে-শুনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি, আরবির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেনি, সে ছাত্র কীভাবে আরবিতে কথা বলতে পারবে বা আরবি ভাষায় দক্ষতা লাভ করতে পারবে?

প্রয়োজনীয় ডিকশনারি ও অভিধানের অভাব :

একটি বিদেশি ভাষা শেখার জন্য অভিধানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অভিধান ভাষাশিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক শিক্ষক। শিক্ষার্থী যখন ইচ্ছা তা থেকে ফায়দা নিতে পারে। আরবি ভাষা নিঃসন্দেহে বাঙালির জন্য একটি বিদেশি ভাষা, অতএব আরবি শেখার জন্য তাদের অভিধানের প্রয়োজন কী পরিমাণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্ত আমরা কোনো পুরনো বা আধুনিক আরবি-বাংলা, বাংলা-আরবি অভিধান পাই না। যার ফলে শিক্ষার্থীদের একটি নতুন আরবি শব্দার্থ জানতে হলে বা একটি বাংলার আরবি শব্দ জানতে হলে পরিস্থিতি খুবই সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়ায়।

 

উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধানে প্রস্তাবিত পরামর্শ :

এতক্ষণের আলোচনা থেকে যেসকল সমস্যা ও বিপত্তি আমাদের সামনে এসেছে সেগুলোর সমাধানে আমি কিছু প্রস্তাব রাখব :

  • আরবি ভাষা অধ্যয়ন করার সময় যে সমস্যাগুলি দেখা দেয় তা কাটিয়ে উঠতে ছাত্র, শিক্ষক এবং মাদরাসাকর্মীদের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও সংকল্প প্রয়োজন। আরবিতে একটি বিখ্যাত উক্তি আছে : “যে চেষ্টা করে সে ফল পায়।”
  • সাধারণভাবে সরকার এবং বিশেষ করে মুসলমানদেরকে আধুনিক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এবং দেশের ভেতর ও বাইরের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং ভার্সিটিগুলোর সাথে সেগুলোর যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে, যাতে করে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও দীর্ঘ পড়াশোনা করা সহজ হয়। যেমন জামেয়া ইসলাহুল মুসলিমিন জামেয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার সাথে সংযুক্ত ছিল।
  • বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী এবং ছাত্রদের বয়স ও রুচি অনুযায়ী শিক্ষাকোর্স গ্রহণ করতে হবে, এবং মাদরাসা ও জামেয়ার অধীনে শিক্ষাবোর্ড তৈরি করতে হবে, যার তত্ত্বাবধানে পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হবে।
  • মাদরাসা, কলেজ ও জামেয়ার আরবি বিভাগের খালি পদগুলোতে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, এবং নির্বাচন খুব নিরপেক্ষভাবে করতে হবে, যাতে দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে একটি সঠিক সুন্দর আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্ভব হয়।
  • ক্লাসে এবং ক্লাসের বাইরে সর্বদা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলের চেষ্টা থাকবে বলা, শোনা, লেখা ও পড়ার মাধ্যমে একটি সুন্দর আরবিচর্চার পরিবেশ গড়ে তোলা। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় উদাহরণ হতে পারে। আল্লহর রহমতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয় অতি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে এটি জামেয়া মিল্লিয়া, ইসলামিয়া ও জাওহারুল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে পৌঁছে যাবে।
  • আরবি শিক্ষায় আধুনিক অডিয়ো-ভিজ্যুয়াল টেকনলজি ব্যবহার করা। যেমন ভাষা ল্যাবরেটরি, শ্রবণযন্ত্র, ভিডিয়ো টেপ, ভিডিয়ো স্লাইড, কম্পিউটার ডিস্ক ও ফোন ইত্যাদি, যাতে যথাদ্রুত শিক্ষার্থীরা উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।
  • এখানে নতুন প্রজন্মের কিছু শিক্ষকের কথা বলা দরকার, যারা ফেসবুক-হোয়াটসআপের মতো আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আরবি ভাষার খেদমতে লেগে আছেন। তাদের শীর্ষে আছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইদুর রহমান, গুরবেঙ্গু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহেদি হাসান এবং মুহাম্মদ নাজমুল হক এবং অন্যান্য তরুণ অধ্যাপক যারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা নিচ্ছেন এবং অন্যদেরও ফায়দা দিচ্ছেন।

 

উপসংহার :

আমাদের এতক্ষণের আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, প্রাচীনকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গে আরবি ভাষা শিক্ষা চলে আসছে, তবে এর বাসিন্দারা আরবি ভাষা এবং বাংলা ভাষার ফর্ম, ব্যাকরণ, প্রকাশভঙ্গি ইত্যাদি পার্থক্যের কারণে এ ভাষা অধ্যয়ন করতে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এটি একটি দিক, অন্যদিক হলো, মানসম্পন্ন বিদ্যালয়ের অভাব, যোগ্য শিক্ষকের অভাব, মৌলিক-প্রাচীন মূল্যবান গ্রন্থসমৃদ্ধ লাইব্রেরির অভাব, আর এগুলোর প্রতি সরকারের গুরুত্বের অভাব ছাড়াও জ্ঞানচর্চার পরিবেশের অভাব। ইত্যাদি ইত্যাদি। সরকার এবং বিশেষ করে মুসলমানদের অবশ্যই এই দিকগুলোর খুব যত্ন নেয়া দরকার। এবং দরকার দৃঢ়ভাবে সমস্যাগুলির মোকাবেলা করতে শেখা।

তথ্যসূত্র:

তথ্যসূত্র:
1 البعث الإسلامي، العدد الثامن، مارس 2014م، ص:3
2 طبقا لإحصائيات الهند الرسمية عام 2001م
3 Muslim in West Bengal: trend of population growth and educational status by Nazmul Hussain, page no.41.
4 . اللغة العربية في الهند عبر العصور، خورشيد أشرف إقبال الندوي، ص: 11
5 Abdul Karim, social history of the muslim in West Bengal,  p. no.25

،  نقلا عن بحث جامعي “المدارس الإسلامية لولاية البنغال الغربية ودورها في الدراسات العربية” تم تقديمها من سعيد الرحمن لنيل شهادة ما قبل الدكتوراه في جامعة جواهر لعل نهرو عام 2007، ص:2.

6 ، نقلا عن المصدر المذكور، ص: 3.Jagadish Sarkar Narayan, Islam in Bengal, page no. 20
7 . الدراسات العربية في البنغال الغربية خلال القرن العشرين: دراسة تحليلية، بحث جامعي تم تقديمه من محمد سعيد الرحمن لنيل الشهادة ما قبل الدكتوراه في جامعة جواهر لعل نهرو عام 2009، ص: 34.
8 سورة يوسف: الآية، 2
9 مساهمة دار العلوم ديوبند في الأدب العربي، الدكتور زبير أحمد فاروقي، ص: 19
10 البعث الإسلامي، ذو القعدة، 1397هـ، ص: 61
11 .المسلمون في الهند، أبو الحسن علي الحسني الندوي، ص: 132
12 تاريخ العربية وآدابها، محمد الفاروقي ومحمد إسماعيل المجددي، ص: 11
13 . تاريخ العربية وآدابها، محمد الفاروقي ومحمد إسماعيل المجددي، ص: 11
14 . مسلمو ولاية البنغال الغربية الهندية يموتون جوعا!، ظفر الإسلام خان، جريدة الرياض، إبريل، 2005م، العدد 13430
15 . وفقا لإحصاءات الهند الرسمية عام 2001م

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷