নেসারুদ্দীন রুম্মান-এর ৫টি কবিতা

নেসারুদ্দীন রুম্মান

সকাল হব

ভাবছি, এখন সকাল হব।

মিষ্টি কোমল রোদের আলো

কাল যখনই চোখের পাতায়

শীতল-পেলব আভ ছড়াল

তখন থেকেই ভাবছি কেবল—

এখন আমি সকাল হব।

 

সকাল কেমন ঝঞ্ঝাবিহীন—

ফুলের মতো, পাখির মতো,

শান্ত-নিবিড় জলের মতো

যায় বয়ে যায় কেবল শুধু;

সকাল তো আর রাতের মতো রাত কভু নয়—

পীড়ায় কাতর কান্নামাখা বিরান ধু ধু।

 

সকাল এতই স্নিগ্ধ সপ্রাণ

ত্রিকালভোলা স্বর্গীয় গান—

ভাবতে গেলেই বেমক্কা সব শব্দ ভুলি;

তোমার দিঘল চুলের মতো

হুড়মুড়ি খাই জঘন-পাশে,

মগ্ন কোথাও মত্ত-মাতাল ভৃত্য দুলি।

 

অবধি কেবল যন্ত্রণা পাই বুকের ভেতর—

আর কত কাল পুঁজ জড়িয়ে নষ্ট রব,

তারচে বড় সপ্রাণ স্নিগ্ধ ভোরের মতো—

এবার আমি পণ করেছি—সকাল হব।

 

৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ঈসাব্দ

মাদরাসা মারকাযুন নূর, ঢালকানগর, ঢাকা

 

 

ঝিনুক

তোমার পায়ের নরম গোড়ালির কাছে

পড়ে আছে একটি ঝিনুক,

শততল অপেক্ষা নিয়ে;

তার বুক জুড়ে কাঁপছে একটি কথা—

‘মেয়েটি আমায় চিনুক।’

 

১১ মার্চ ২০১৬ ঈসাব্দ

ছিন্নকুটির, স্বামীবাগ, ঢাকা

 

 

লাবণ্য, মলিনতা ও ছোঁয়া

ধুলোগুলো তোমাকে ছোঁয় না,

তোমাকে ছোঁয় না

ভাগাড়ের বদবু বাতাস,

মোমের শরীর ব্যেপে মেপে-মেপে ফুটে থাকে সুরভিত স্বেদ,

লকলকে ধোঁয়ারাও তোমাকে ছোঁয় না।

 

তোমাকে ছোঁয় কি তবে? আটপেরে দীঘল জীবন?

যার কথা ভাবো-ভাবো একা, তাকে-ঘেরা নীল নিরজন?

তোমাকে ছুঁয়েছে বেশি নাকি সেই করুণ বিকেল,

যে বিকেলে কোন যেন কার

না-ছোঁয়ারা হৃদয়ের তলে

দিয়েছিল ব্যথার অপার?

 

না-ছোঁয়ারা ছোঁয় যদি এত,

এত যদি তার তাপ-আঁচ

তবে কেন প্রেমিকেরা প্রেমিকার তরে

পাঠায় না এই রোগ, মহামারি—এমন ছোঁয়াচ?

 

আমি তো তোমার প্রতি

না-ছোঁয়া ছোঁয়ার এক মাদি প্রজাপতি

পাঠিয়ে দি’ হররোজ হরবোলা পাখির ঠোঁটে,

সেই পাখি গায়,

প্রজাপতি ডানা ঝাঁপটায়—

আলগোছে রেখে আসে আমার পরাগ,

সালোয়ারে-ওড়নায় আরও ফোটো তুমি,

আরও বাড়ে আমাদের—কেন যেন—বিমূঢ় বিরাগ…

 

অহমের পায়েলের অসহ্য রিনরিনরিন

তুলে তুমি জমা কর এই বুকে ধ্রুপদ মলিন—

অবশেষে এইটুকু সার-সংক্ষেপ :

লাবণ্য তোমাকে ছোঁয়, মলিনতা তোমাকে ছোঁয় না…

 

৩রা জুন ২০১৭ ঈসাব্দ

শ্যাওলা, ছায়ানীড়, ফরিদাবাদ, ঢাকা

 

 

হৃদয়ের বোন

এই যে পথচারী তুমি,

এই যে তুমি এবং আর

মলমলে নীল সালোয়ার

হাঁটতেছে পথের ওপর…

হাঁটতেছে… হাঁটতেছে… হাঁটতেছে…

ঘাঁটতেছে আমার ভেতর।—

 

ঘাঁটতেছে আমার ভিতর

নিরুপায় একটি ইতর,

অথচ জানছ না তুমি!—

জানছ না এই যে কারণ:

আমি তার হাতে-পায়ে ধরে

আমি তারে কোমল শাসায়ে,

বলি: ‘তুমি হৃদয়ের বোন।’

 

বলি তারে হৃদয়ের বোন,

অথচ হৃদয়

ক্রুর ও গোপন

কামনার দাঁত মেলে তার;—

সেই দাঁত দেখে আমি বিপুল হতাশ!

দরদর করে ঘামে হৃদয়ের ঘাস;

অসহায় চোখে বলি আবার যখন:

‘কামনারা, সে আমার হৃদয়ের বোন…’

 

কামনারা হিসহিস বলেছে তখন:

‘বল যারে হৃদয়ের বোন

তবে তার নরম ভুবন

চোখ টিপে শিশ দেয় কেন?

বুকভরে বিষ দেয় কেন

দলমলে তাহার জঘন?

শেমিজের নিবিড় আড়াল

হতে তার উলোলিত ভার

এতটা ফেরার পরে ফের কেন ডাকছে আবার?

আর কেন তার বাঁকা কটি

আর কেন ভুরুর ধনুক

আর কেন কোমল নরম—

বেড়ালের মতো কত তার—

দিয়ে যায় সতত সবক

শততর কামের কলার?’

 

এই সব জিগাশার

নিশা নিয়ে বসে থাকি,—বসে থাকি—সদ্বিধ ধূমল;

মানুষের পাশাপাশি আমি এক পুরুষ, সে নারী—

এই বুঝি,—এই বুঝি এই সব জিগাশার তল।

 

১২ জুলাই ২০১৮ ঈসাব্দ

মজনু মহল, ফরিদাবাদ, ঢাকা

 

ক্রাইসিস

কোথাও—

আমি কি একটি পথ?—দূর হারিয়ে যাওয়া?

কিবা একটি পাথর?—থমথমে এক ব্যাপার?

নাকি আমি পাখি?—

ডালের মগে উঠে সুরটা সেধে রাখি?

নাকি একটি পায়ের ক্লান্তি ধরে থাকি?—

 

নাকি আমি বোধ?—সংবেদনায় ঘামা?

অঙ্ক করে রোজ পঙ্ক ঠেলে নামা—

গড়পড়তায় হাজির হয়ে নোংরা ঘাঁটার শেষ—

সবার আছে, তোমারও থাক—ওরকম অভ্যেস;—

 

আমি ও-তে বীতাগ্রহী, আমার ও-তে কী!

থমথমে এই হঠাৎ-রাতের শ্রাবণ-অমা জুড়ে

উদাস-দিকে ডাকল কেকা, উড়ল জোনাকি…

 

১৩ জুলাই ২০১৯

ঠিকানা, ফরিদাবাদ, ঢাকা

 

 

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
7 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
আবিদ হাসান
আবিদ হাসান
1 year ago

দারুন লেগেছে।

আবদুর রহমান আদ-দাখিল
আবদুর রহমান আদ-দাখিল
1 year ago

ভালো লেগেছে।

হাফিজুর রহমান
হাফিজুর রহমান
1 year ago

সুন্দর। কিন্তু নেসারুদ্দীন রুম্মান এখন কবিতা লেখেন না। কষ্টের ব্যাপার বটে।

আমান
আমান
1 year ago

২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কবিতা পেলাম। এখন ২০ থেকে ২৩ পর্যন্তও চাই!

একবসায় পড়েছি। বেশ ভালো লেগেছে। আবার পড়ব এসে সুযোগ হলে।

Ejtihad Mahmud
Ejtihad Mahmud
1 year ago

সুন্দর

মাহফুজ তাসনিম
মাহফুজ তাসনিম
1 year ago

ভালো লেগেছে বেশ।

A. Sami
A. Sami
1 year ago

very gooooooooooooooood

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷