ভূমিকা :
আধুনিক আরবি কথাসাহিত্যে কেবল একটি কাজের সুবাদেই কানাফানি বিশেষ এক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারেন। সেটি ১৯৫৬ সনে প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস ‘রিজাল ফিশ্ শামস’ (ইংরেজিতে ‘ম্যান ইন দ্য সান’ শিরোনামে ১৯৭৮ সালে এটির অনুবাদ করেছেন হিলারি কিলপ্যাট্রিক)। মূলত এ উপন্যাসে গল্পের বিষয় ও ঔপন্যাসিক বর্ণনাভঙ্গ—দুটি বিষয়ই উপন্যাসটিকে আধুনিক আরবি সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া উপন্যাসটি সেই অন্ধকার সময়ের মাঝে প্রকাশ পায়, যখন আরব রাষ্ট্রগুলো অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক স্বাধীনতা উপভোগ করে এবং প্রায়শই বেদনাদায়ক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপ্লবের সময়কাল অতিক্রম করে। ঠিক এই অস্থির ডামাডোল ও যন্ত্রণাকাতর পরিস্থিতির মাঝে ১৯৪৮ সালে আবার তাদের বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্যের সাথে ইসরায়েল নামক নতুন এক রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথে সমঝোতা করতে হয়। ফলে দেখা যায়, তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত আকারের এ উপন্যাসের গল্পভাষ্যেই ক্রোধ ও হতাশার সংযোগকে কুশলি রচনায় পুনঃপুন ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন গাসসান। যে ক্রোধ ও হতাশার সাথে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন প্রজন্ম তাদের আশ্রয়হীন ভাগ্যর মুখোমুখি হয়েছিল। আর এ মুখোমুখি হওয়াটা হয় নতুন ইহুদি রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে অথবা নিজের স্বদেশ থেকে নির্বাসিত প্রবাসে।
সুতরাং নিঃসন্দেহে ‘রিজাল ফিশ্ শামস’ একটি শক্তিশালী কাজ। যা কেবল সমগ্র আরব বিশ্বের পাঠকদের চিন্তাকেই নয়, বরং আরবি সাহিত্য সমালোচকদেরও ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। যে মনোযোগ একইভাবে জয়ধ্বনিত হয়েছে তার ছোটোগল্পের ক্ষেত্রেও। কী ভাষার সরলতা কিংবা গল্পের বুনন—প্রতিটা গল্পেই কানাফানি তাঁর বেদনাব্যঞ্জক শৈল্পিক স্বরটা বজায় রেখেছেন। যেমন দেখা যাচ্ছে, সাহিত্যের চিরাচরিত সেই সুস্বাদু শব্দগুলো পরিত্যাগ করে বহু জায়গাতেই তিনি সোজাসাপ্টা আরবদের কথ্য শব্দের ব্যবহার করছেন। অথচ, এতে বর্ণনার আবেদন এতটুকু কমে নি। বরং তা যেন পীড়িতের তরে আরও জীবনঘনিষ্ঠ, আরও প্রকট হয়ে ওঠে। তার গল্পগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লেই যা স্পষ্ট বোঝা যায়। মাত্র ছত্রিশ বছরের জীবনে শিল্পের বিবিধ শাখায় অবগাহন করলেও কানাফানি সবচেয়ে উদারহস্ত ছিলেন ছোটোগল্পে। নিজের স্বদেশ–মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য সমস্ত জীবন উজাড় করে দেয়া এই বিপ্লবী তাঁর প্রতিবাদ জানিয়েছেন গল্পে গল্পে। যে গল্পের শক্তি এমনই ভয়ানক, ভূঁইফোড় হয়ে গজানো ইসরায়েল তা সহ্য করতে না পেরে অমিত প্রতিভাধর এই লেখককে খুনই করে ফেলে।
বস্তুত কানাফানি ছিলেন বহু প্রতিভার অধিকারী অমিত সম্ভাবনাময় এক শিল্পী। ছোটোগল্প, উপন্যাস এবং নাটকের পাশাপাশি সাংবাদিকতামূলক নিবন্ধ এবং গবেষণাধর্মী বহু লেখাপত্রই লিখেছেন তিনি। বেশ ক’টি আরবি প্রকাশনা সংস্থা যেমন, দার আল–তালিয়া, মুয়াসসাসাত, আল–আরাবিয়া এবং মানশুরাত আল–রিমালসহ বহু প্রকাশনা সংস্থাই তার সংগৃহীত কাজের সংস্করণ প্রকাশ করেছে। তদুপরি তার অসংখ্য রচনাই ষোলটি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এসব ছাড়াও ছিলেন একজন মেধাবী চিত্রশিল্পীও। তাঁর হত্যার পর, তাঁর কিছু উপন্যাস এবং গল্পের উপর ফিচার এবং শর্ট ফিল্ম নির্মিত হয়। যেমন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘রিজালুন ফিশ্ শামস’ বা ‘মেন ইন দ্য সান’ ১৯৭৩ সালে ‘দ্য ডিসিভড’ নামে একটি ফিচার ফিল্মে চিত্রিত হয়। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মিশরীয় চলচ্চিত্রকার তৌফিক সালিহ এবং প্রযোজনা করেছেন দামেস্কের জেনারেল ফিল্ম ইনস্টিটিউশন। ছবিটি ১৯৭৩ সালে আরব এবং আফ্রিকান সিনেমার জন্য কার্থেজ ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন পুরস্কার জেতে। এমনকি অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকই ছবিটিকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচনা করেন। তদুপরি সেরা ১০০ আরব সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রের তালিকায় দশম স্থানও অধিকার করে এটি।
লেখালেখির স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৬৬ সালে বৈরুতের ফ্রেন্ডস অফ দ্য বুক সোসাইটি কানাফানিকে তাঁর ‘মা তাবকা লাকুম’ উপন্যাসের জন্য বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়াও তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৪ সালে তাকে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন অফ ডেমোক্রেটিক জার্নালিস্ট প্রাইজ’ এবং ১৯৭৫ সালে এশিয়ান অ্যান্ড আফ্রিকান লেখক ইউনিয়ন কর্তৃক সাহিত্যে অবদানের জন্য ‘লোটাস’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৯০ সালে সালে পিএলও তাকে শিল্প–সাহিত্য, সংস্কৃতির জন্য জেরুজালেম পদক প্রদান করে।
আধুনিক আরবি সাহিত্যের বিস্ময়কর তেজদীপ্ত এই লেখককে ১৯৭২ সালের ৮ জুলাই বৈরুতে হত্যা করা হয়। তাঁর গাড়িতে রাখা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের বোমা বিস্ফোরণে ভাইঝি লামিস–সহ শহিদ হন মহান এই লেখক। তাকে বৈরুতে দাফন করা হয়।
নিম্নোক্ত সাক্ষাৎকারটি মূলত গাসসান কানাফানির মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পূর্বে নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন কানাফানির সাহিত্যবিশেষজ্ঞ একজন সুইডিশ লেখক। যার কাছে নিজের জীবন, বিপ্লব, রাজনীতি, সাহিত্য এবং ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলনসহ বহু বিষয়েই একান্তে আলাপ করেছিলেন গাসসান। নিজের পুরো বৈপ্লবিক জীবনে যেটিই তাঁর একমাত্র সাক্ষাৎকার বলে বইপত্রে উল্লেখ আছে। ফলে নানা কারণেই ইতিহাসে এর সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক মূল্য আছে বলে মনে করি। সাক্ষাৎকারটি فلسطينية شؤون এর ছত্রিশতম সংখ্যায় জুলাই ১৯৭৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। তারপর الثقافية رمان সাময়িকী ২০২২ সালে পুনরায় এটি ছাপলে Samidoun, Palestinian prisoner solidarity network ওয়েবজিনে ইংরেজি ট্রান্সলেশনে প্রকাশ পায়। কানাফানিকে নিয়ে ইতোপূর্বে যদিও অল্পবিস্তর পড়াশোনা ছিল আমার। তাঁর সামগ্রিক লেখাপত্রও খুঁজে দেখা হয়েছে। কিন্তু বহুদিন পর আচমকা তাঁর এই ইন্টারভিউটি পেলে, সত্যিই আপ্লুত হই। মূলত এমন দীর্ঘ সাক্ষাৎকারগুলো সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। এতে একজন লেখকের বিশ্বাস, তৎকালীন জীবন ও ইতিহাসের খুব পরিস্কার একটি চিত্র পাওয়া যায়। উপন্যাস ও গল্পের চেয়ে সাক্ষাৎকারে যে চিত্রগুলো অধিকতর পরিচ্ছন্ন হয়ে ফুটে ওঠে। সুতরাং যা ভেবেছি তাই, মানে সাক্ষাৎকারেও কানাফানি তাঁর সংগ্রাম ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। প্রতিটি প্রশ্নোত্তরে এমন দৃঢ়তা, এমন প্রতিজ্ঞা ও আশাবাদ—যা পড়তেই আশ্চর্য এক বিশ্বাসের জন্ম হয় নিজের ভেতর। সেইসাথে গ্রাস করে গোপন একটা হাহাকারও। ভাবি, একজন লেখক কতেটা রাজনীতিসচেতন ছিলেন! কি নির্ভীক ছিল তাঁর কলম। সাকুল্যে অল্প ক’বছর মাত্র লেখার জীবন। অথচ কি বৈচিত্র্য তাতে। তাঁর গল্প, উপন্যাস, নিবন্ধ—প্রতিটি লেখাই যেন বিপ্লব। প্রথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। আবার সম্পাদনা করেছেন জর্জ হাবাশ প্রতিষ্ঠিত palestine popular front এর তুমুল আলোচিত পত্রিকা ‘আল হাদাফ।’ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাথমিকভাবে যে পত্রিকার প্রভাব অতি গুরুত্বপূর্ণ।
: গাসসান, আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কি কিছু বলবেন আমায়?
গাসসান কানাফানি : আমার মনে হয় আমার গল্পটি ভীষণভাবে ঐতিহ্যগত ফিলিস্তিনি পটভূমিকে প্রতিফলিত করে। এগারো বছর বয়সে ফিলিস্তিন ছেড়েছিলাম আমি এবং একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। বাবা একজন আইনজীবী ছিলেন এবং আমি একটি ফরাসি মিশনারি স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এ মধ্যবিত্ত পরিবারটি ভেঙে পড়ে। আমরা উদ্বাস্তু হয়ে যাই আর বাবা তার অতিশয় শ্রেণিগত শেকড়ের বন্ধনের কারণে অচিরেই কাজ বন্ধ করে দেন। কেননা ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার পর কাজ চালিয়ে যাওয়া তার কাছে আর বোধগম্য হয়নি। যা তাকে তার সামাজিক শ্রেণি পরিত্যাগ করতে এবং নিম্ন শ্রেণিতে চলে যেতে বাধ্য করবে। যা সহজ নয়। ফলে পরিবারকে সাহায্য করতে শিশু এবং কিশোর বয়সেই কাজ শুরু করি আমরা। তারপর গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরির মাধ্যমে নিজের শিক্ষা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে শিক্ষকতার জন্য উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। আদতে এটি একটি যৌক্তিক সূচনা ছিল। কারণ এটি আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করতে সাহায্য করেছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে [দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়] আরবি সাহিত্য বিভাগে তিন বছরের জন্য ভর্তি হই এবং রাজনৈতিক কারণে সেখান থেকে আমাকে বরখাস্ত করা হয়। তারপর কুয়েত গিয়ে ছয় বছর থাকি। সেখানে নব উদ্যমে লেখাপড়া শুরু করি।
মূলত আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫২ সালে। যখন আমার বয়স ছিল চৌদ্দ বা পনেরো বছর। সেই একই বছর বা ১৯৫৩ সালে, ডক্টর জর্জ হাবাশের সাথে দামেস্কে প্রথম দেখা হয় আমার। তখন একটি ছাপাখানায় প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ করতাম। সেসময় কে আমায় আল–হাকিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তা মনে নেই, তবে তার সাথে আমার সম্পর্কটা সে সময়ই শুরু হয়েছিল। তারপর শীঘ্রই (Arab Nationalist Movement) আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগদান করি এবং এভাবেই নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করি। কুয়েতে থাকাকালীন আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলাম আমি, যেটি এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু দ্বারা কুয়েত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৬০ সালে আমাকে পার্টির সংবাদপত্রে কাজ করার জন্য লেবাননে চলে যেতে বলা হয়। পরে ১৯৬৭ সালে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের সাথে কাজ করতে বলা হয়, যেটি আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফিলিস্তিনি শাখা। ১৯৬৯ সালে আমি ‘আল–হাদাফ’ পত্রিকায় কাজ শুরু করি, যেখানে এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
: আরবি সাহিত্যে পড়াশোনার ফলে কি লেখালেখি শুরু করেছিলেন?
গাসসান : না, আমি মনে করি আরবি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ আমার পড়াশোনার আগেই শুরু হয়েছিল। স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে তাহলে আমার এ আগ্রহ একটি জটিলতার ফলাফল ছিল বলেই মনে করি। মানে, যেমনটা আগেই উল্লেখ করেছি যে, ফিলিস্তিন ত্যাগ করার আগে একটি ফরাসি মিশনারী স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলাম আমি। কাজেই একজন আরব হিসেবে যেভাবে ভাষাটি রপ্ত করার কথা সেভাবে আরবি ভাষার অধিকারী হইনি। প্রকৃতপক্ষে যা আমার জন্য সেসময় বহু সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এমনকি আরবিতে পটু ছিলাম না বলে বন্ধুরা সবসময় আমাকে নিয়ে মজা করতো। মূলত যখন আমরা ফিলিস্তিনে ছিলাম, সোশ্যাল ক্লাস বা সামাজিক শ্রেণির কারণে তখন এই উপলব্ধিটি পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু যখন ফিলিস্তিন ত্যাগ করি, তখন বিভিন্ন শ্রেণির বন্ধুদের সঙ্গে আমার মেলামেশা হয়। যেখানে অতিসত্বর তারা লক্ষ করে আমার আরবি দুর্বল এবং কথোপকথনে প্রায়শই বিদেশি অভিব্যক্তির আশ্রয় নিই। বস্তত এ কারণেই, তথা নিজের এ সমস্যাটি নিরসনের জন্যই আরবি ভাষায় মনোনিবেশ করি। এটি সম্ভবত ১৯৫৪ সালের কথা। সে বছর একটা দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙ্গে যায়। ছয় মাস বিছানায় থাকতে হয়। তখনই আন্তরিকভাবে আরবি পড়তে শুরু করি।
: মানুষের ইতিহাসে আমরা এমন অনেক উদাহরণ উদ্ধৃত করতে পারি যারা তাদের ভাষা ‘হারিয়েছে’ এবং তারপর তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। আপনি কি মনে করেন এই প্রক্রিয়া একজন ব্যক্তিকে রাজনৈতিকভাবে বিকাশ করে?
গাসসান : জানি না। তবে তা হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতিতে আমি সম্পৃক্ত হয়েছি ভিন্নভাবে। ক্যাম্পে থাকতাম বিধায় জীবনের খুব প্রাথমিক পর্যায়েই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলাম আমরা। ফলে শৈশবে যে দুঃখজনক ও আবেগপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠেছি এবং তা উপলব্ধি করেছি, তার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সাথে এবং তাদের সমস্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকেছি আমি। কেননা, যে পরিবেশে থাকতাম তার রাজনৈতিক শিকড় আবিষ্কার করা আমার পক্ষে কঠিন কিছু ছিল না। তদুপরি যখন পড়াতে শুরু করি, তখন ক্যাম্পে যে শিশুদের পড়াতাম তাদের নিয়েও ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ক্লাসে একটা বাচ্চাকে ঘুমোতে দেখলে সবসময় রেগে যেতাম। তারপর যদিও খুব সহজেই তাদের এই নিদ্রার কারণটি আবিষ্কার করতে পারলাম যে, এই শিশুগুলো রাতে কাজ করত। মিষ্টি, চুইংগাম বা এজাতীয় কিছু সিনেমা হল ও রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা ক্লাসে খুব ক্লান্ত হয়ে আসত। এই ধরনের পরিস্থিতি অবিলম্বে ব্যক্তিকে সমস্যার মূলে নিয়ে আসে। যাতে শীঘ্রই আমার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, শিশুটির তন্দ্রা আমার প্রতি বা শিক্ষার প্রতি তার ঘৃণা বা অবজ্ঞার কারণে নয়। ঠিক যেমন একজন শিক্ষক হিসাবে আমার মর্যাদার সাথে এর কোনও সম্পর্ক ছিল না, কিন্তু এটা ছিল ঠিকই একটি রাজনৈতিক সমস্যার প্রতিফলন।
: বলা যায়, আপনার শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা আপনার সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
গাসসান : হ্যাঁ, এবং আমার মনে আছে এটি একদিন সরাসরি ঘটেছিল। যেমনটা আপনি জানেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অঙ্কন, পাটিগণিত, ইংরেজি, আরবি এবং অন্যান্য বিষয়সহ সবকিছু পড়ান। তেমনি একদিন আমি সিরিয়ান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সিলেবাস অনুসারে শিশুদের একটি আপেল ও একটি কলা আঁকা শেখানোর চেষ্টা করছিলাম। যেহেতু সেখানে পড়াচ্ছিলাম তাই সারাটা সময় আমাকে বইয়ের সাথেই লেগে থাকতে হয়েছিল। অতএব ওই মুহূর্তে যখন আমি ব্ল্যাকবোর্ডে এই দুটি ছবি যতটা সম্ভব ভালোভাবে আঁকার চেষ্টা করছিলাম, তখন দেখি নিজের না হওয়া একাত্মতার প্রবল এক বিচ্ছিন্নতাবোধ আঁকড়ে ধরেছে আমায়। এমনকি খুব ভালোভাবেই মনে আছে, ওই মুহূর্তে আমার এমন উপলব্ধ হয়েছে যে, শিগগির কিছু একটা করতে হবে। কেননা, আমার পেছনে বসা শিশুদের মুখের দিকে তাকানোর আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, তারা কখনও একটি আপেল বা কলা দেখেনি। তাই এ বিষয়গুলোই ছিল তাদের আগ্রহের শেষ জিনিস। এই ছবি দুটির মধ্যে কোনো সংযোগ ছিল না তাদের। আদতে তাদের অনুভূতি এবং এ অঙ্কনের মধ্যে সম্পর্কটা ছিল আন্তরিকতাশূন্য। বলা যায়, তা ছিল এমন এক চূড়ান্ত বাঁক, পরবর্তীতে নিজের জীবনের সমস্ত ঘটনার মধ্যে যে মুহূর্তটিকে স্পষ্টভাবে মনে রেখেছিলাম আমি। ফলে তড়িৎ বোর্ড থেকে অঙ্কনগুলো মুছে ফেলি এবং শিশুদের ক্যাম্প আঁকতে বলি। কিছুদিন পর পরিদর্শক বিদ্যালয়ে আসলে বলেন, সরকার নির্ধারিত কর্মসূচি থেকে বিচ্যুত হয়েছি আমি, যা আমাকে একজন ব্যর্থ শিক্ষক ছিলাম বলে প্রমাণিত করবে। মানে নিজেকে রক্ষার জন্য সরাসরি ফিলিস্তিনি কারণের দিকে নিয়ে গেল আমায়। আসলে এ ধরনের ছোট ছোট পদক্ষেপ সংগ্রহ—মানুষকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে ঠেলে দেয়, যা তাদের পুরো জীবনকে চিহ্নিত করবে।
: এ পয়েন্টটিতে মন্তব্য করি, আমি মনে করি যেভাবেই হোক একজন সমাজতান্ত্রিক হিসাবে আপনি যখন শিল্পে নিযুক্ত হন—শিল্পকে সরাসরি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সাথে সংযুক্ত করেন। একটি আপেল ও একটি কলা অঙ্কন করে যেটি স্পর্শ করেছেন। কিন্তু আপনার লেখার ক্ষেত্রে, এই কাজগুলো কি আপনার বাস্তবতা এবং বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত, নাকি এগুলো [সাহিত্যিক] ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত?
গাসসান : আমার প্রথম ছোট গল্প ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটির শিরোনাম ছিল ‘A new sun’ গাজার একটি ছেলেকে ঘিরে গল্পটি আবর্তিত। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিন সম্পর্কে লেখা যাবতীয় গল্পগুলো যখন পর্যালোচনা করি, তখন এ আমার কাছে স্পষ্ট যে, প্রতিটি গল্পই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটি পাতলা বা শক্ত তন্তু দিয়ে আমার জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত। আমার লেখার শৈলী সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছিল ১৯৫৬ এবং ১৯৬০ সালের মধ্যে। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে ১৯৬২ সালে। প্রথমদিকে ফিলিস্তিনকে আমি তার নিজস্ব সমস্যা হিসাবে লিখেছিলাম। সেইসাথে ফিলিস্তিনি শিশুদের সম্পর্কে, একজন মানুষ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে, তাদের আশা সম্পর্কে, আমাদের স্বাধীন–স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ব থেকে নিজেদের আলাদা করা ও ফিলিস্তিনি অনিবার্য তথ্য বা প্রকৃত অবস্থা হিসেবে ফিলিস্তিন সম্বন্ধে লিখেছিলাম। তারপর এ আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ফিলিস্তিনে আমি একটি সমন্বিত মানবিক প্রতীক দেখেছি। কেননা যখন একটি ফিলিস্তিনি পরিবার সম্পর্কে লিখি, আমি আসলে একটি মানবিক অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখছি। পৃথিবীতে এমন কোনো দুর্ঘটনা নেই, যা ফিলিস্তিনের ট্র্যাজেডির প্রতিনিধিত্ব করেনি। ফলে আমি যখন ফিলিস্তিনিদের দুঃখ–দুর্দশাকে চিত্রিত করি, বাস্তবে আমি ফিলিস্তিনিদেরকে সারা বিশ্বে দুঃখের প্রতীক হিসেবেই দেখছি। এমনকি এ–ও বলতে পারেন যে, ফিলিস্তিন আমার গল্পগুলোতে সমগ্র বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে। সাহিত্য সমালোচকরা এখন লক্ষ্য করতে পারেন যে, আমার গল্পগুলো কেবল ফিলিস্তিনি [ব্যক্তি] এবং তার সমস্যাগুলো সম্পর্কে নয়, বরং সেই সমস্যাগুলোতে ভুগছেন এমন একজন মানুষের মানবিক অবস্থা সম্পর্কেও। তবে হ্যাঁ, সম্ভবত সেই সমস্যাগুলো ফিলিস্তিনিদের জীবনে আরও পরিসষ্কার হয়ে উঠেছে।
: রাজনৈতিক বিকাশের সাথে কি আপনার সাহিত্যের বিকাশও ঘটেছে?
গাসসান : হ্যাঁ। কিন্ত কোনটি আগে–পরে তা জানি না। এই তো গত পরশু আমার একটি গল্প দেখছিলাম যেটির ওপর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। গল্পটি ১৯৬১ সালে লিখেছিলাম। কিন্তু এখন নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ছবিটি দেখেছি এবং হঠাৎই আবিষ্কার করি যে, চরিত্রদের মধ্যে সংলাপ, তাদের চিন্তাভাবনা, তাদের [সামাজিক] শ্রেণি, তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের ভিত্তি—সেই সময়ে আমার রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে অগ্রসর ধারণাগুলো প্রকাশ করেছে। সুতরাং বলতে পারি একজন ঔপন্যাসিক হিসাবে আমার ব্যক্তিত্ব একজন রাজনৈতিক অভিনেতা হিসাবে আমার ব্যক্তিত্বের চেয়ে বেশি পুষ্ট বা উদ্দীপিত হয়েছিল। আর তা সমাজ সম্পর্কে আমার বিশ্লেষণ এবং উপলব্ধিতে প্রতিফলিত হয়।
: আপনার লেখায় কি আপনার সমাজের বিশ্লেষণ প্রতিফলিত হয়, নাকি আপনিও আপনার বিশ্লেষণকে আবেগময়ভাবে রঙিন করেন?
গাসসান : বিশ্বাস করি শুরুতে আমার গল্পগুলো একটি আবেগপূর্ণ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ছিল। তবে এ কথা ঠিক বলতে পারেন যে, আমার লেখায় বাস্তবতার প্রতিফলন শুরু হয়েছিল ষাটের দশকের শুরু থেকেই। এই বাস্তবতা সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণ এবং এটি সম্পর্কে আমার লেখা আমাকে একটি সঠিক বিশ্লেষণের দিকে নিয়ে গেছে। আমার গল্পে বিশ্লেষণের অভাব রয়েছে। তদুপরি গল্পের চরিত্ররা যেভাবে কাজ করে, তারা যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়, যে কারণগুলো তাদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করে, গল্পে সেই সিদ্ধান্তগুলোকে স্ফটিক করার সম্ভাবনা ইত্যাদি বর্ণনা করে। তেমনি আমি যেমনটা বুঝি বিশ্লেষণ ছাড়াই আমার উপন্যাসে বাস্তবতাকে প্রকাশ করি। মানে বলতে চেয়েছি, আমার গল্পগুলো [আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে] বেশি বিকশিত হয়েছিল। আর তা হয়েছিল আমার আন্তরিক বিস্ময়ের কারণে, যখন কোনও একটি চলচ্চিত্রে গল্পের চরিত্রগুলোর বিকাশ অনুসরণ করেছিলাম এবং যা বিগত কয়েক বছর ধরে পড়িনি। বিস্মিত হয়েছিলাম যখন আমার চরিত্রদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে তাদের সংলাপ শুনেছিলাম এবং তাদের সংলাপকে একই সময়ে লেখা আমার রাজনৈতিক নিবন্ধগুলির সাথে তুলনা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তখন দেখেছিলাম, গল্পের নায়করা আমার রাজনৈতিক নিবন্ধগুলোর চেয়ে আরও গভীর এবং আরও সঠিক উপায়ে বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ করছে।
: বলেছেন ১৯৫৩ সালে যেদিন আপনি জর্জ হাবাশের সাথে দেখা করেছিলেন, সেদিন আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগদানের মাধ্যমে আপনার রাজনৈতিক কাজ শুরু করেছিলেন। (তারপর) কখন আপনি সমাজতান্ত্রিক তত্ত্ব গ্রহণ করেছিলেন? আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনটি তো শুরুতে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল না।
গাসসান : না, তা ছিল না। আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ঔপনিবেশিকতা, সাম্রাজ্যবাদ এবং প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলনের বিরুদ্ধে [নির্দেশিত] ছিল। তখন এর কোনো আদর্শিক গতিপথ ছিল না। যাহোক, এ আন্দোলনটি বিদ্যমান বছরগুলোতে তার নিজস্ব একটি সমাজতান্ত্রিক গতিপথ গ্রহণ করেছিল। মূলত Anti-imperialism বা ‘সাম্রাজ্যবাদ–বিরোধিতা’ সমাজতন্ত্রকে প্রেরণা দেয়, যদি তা যুদ্ধের মাঝখানে লড়াই বন্ধ না করে এবং সাম্রাজ্যবাদের সাথে চুক্তিতে না আসে। আর যদি এমনটা হয়, তাহলে সেই আন্দোলন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে পরিণত হতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ সংগ্রাম চালিয়ে যায় [এটা স্বাভাবিক] তাহলে সেই [সাম্রাজ্যবাদবিরোধী] আন্দোলন একটি সমাজতান্ত্রিক অবস্থানে উন্নীত হবে। আরব জাতীয়তাবাদীরা ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে এই সত্যটি উপলব্ধি করেছিল। বুঝতে পেরেছিল তারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে পারবে না, যদি না তারা নির্দিষ্ট [সামাজিক] শ্রেণির উপর নির্ভর না করে। সেই শ্রেণি; যারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শুধুমাত্র তাদের মর্যাদার জন্য নয়, বরং তাদের জীবিকার জন্য। এবং এই [রাস্তা] যা সরাসরি সমাজতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের সমাজে এবং আমাদের আন্দোলনে [আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন] আমরা মার্কসবাদী–লেনিনবাদী [নীতির] প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলাম এবং এই অবস্থানটি সমাজতন্ত্রের প্রতি আমাদের শত্রুতার ফল নয়, বরং আরব বিশ্বের কমিউনিস্ট দলগুলোর ভুলের ফল। এ কারণেই ১৯৬৪ সালের আগে আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য মার্কসবাদ–লেনিনবাদ গ্রহণ করা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে, বিশেষ করে জুলাই মাসে, পপুলার ফ্রন্ট মার্কসবাদ–লেনিনবাদের নীতিগুলো গ্রহণ করে এবং এইভাবে আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার একমাত্র গ্রুপ তারাই [ফ্রন্ট] ছিল। আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তার নাম পরিবর্তন করে সমাজতান্ত্রিক লেবার পার্টি রাখে। এটির ফিলিস্তিন শাখার জন্য এটিকে ‘পপুলার ফ্রন্ট’ বলা হতো। অবশ্যই, এটি সমস্যার একটি সরলীকরণ। আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যেই আমরা গড়ে উঠেছিলাম। তথাকথিত ডান–বামদের আন্দোলনের মধ্যে নিরন্তর লড়াই চলছিল। প্রতিটি রাউন্ডে, বামরা বিজয়ী হয়েছিল কারণ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের বিষয়ে আমাদের অবস্থান [ডানের অবস্থানের চেয়ে] ভালো ছিল। আর এর ফলেই মার্কসবাদ–লেনিনবাদ গ্রহণ করা হয়। তবে আমার ক্ষেত্রে এখন মনে করতে পারছি না যে, ফ্রন্টের মধ্যে যে দ্বন্দ্বগুলো দেখা দিয়েছিল, তাতে আমার অবস্থান ডান দিকে ঝুঁকেছিল নাকি বাম দিকে। কারণ ডান এবং বামের মধ্যে তখন সীমানা আলাদা করা হয়নি, যেমনটি এখন উন্নত রাজনৈতিক দলগুলোতে হয়। কিন্তু এটুকু আমি বলতে পারি যে, আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে আমিসহ এমন কিছু তরুণ উপাদান অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা কমিউনিজমের প্রতি বয়স্ক মানুষের সংবেদনশীলতা নিয়ে মজা করত। অবশ্য আমরা তখন কমিউনিস্ট ছিলাম না এবং কমিউনিজমের পক্ষেও ছিলাম না। তবে কমিউনিজমের প্রতি আমাদের সংবেদনশীলতা বড়দের তুলনায় কম ছিল। ফলস্বরূপ, নতুন প্রজন্ম আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে মার্কসবাদী–লেনিনবাদী আন্দোলনে পরিণত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। এর প্রধান কারণ ছিল আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য দরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। পেটি বুর্জোয়া বা বড় বুর্জোয়াদের সদস্য সংখ্যা ছিল সীমিত। তারাও এই আন্দোলন চালিয়ে যাননি, বরং যোগদানের দুই বছরের মধ্যেই আন্দোলন ছেড়ে দেন। [এই শ্রেণির] নতুন সদস্যরাও যোগ দিয়েছিলেন, যারা পরে [কিছুদিন পরে] তাদের পালা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ফলে কেবলমাত্র দরিদ্র শ্রেণির লোকেরাই এতে অব্যাহত ছিল এবং শীঘ্রই তারা আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যে একটি প্রেসিং ফোর্স গঠন করেছিল।
চলবে…