আমার এক বন্ধুর ইংরেজি লেখালেখির প্রতি ভক্তি ছিল খুব। মুম্বাই সফরে সে আমাকে ইন্ডিয়ান ম্যাগাজিন অ্যান্ড রিভিউয়ে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল দেখায়। আর্টিকেলের বিষয়বস্তু ছিল, জেবুন্নেসার জীবন। লেখাটি দেখে খুব মর্মাহত হই। এমন একটি নামজাদা ম্যাগাজিনের সাথে লেখাটি কোনোভাবেই যাচ্ছিল না। একদম বাজারি কিচ্ছা। এই ধাঁচের আরেকটি লেখা ছিল আকিল খাঁন রাজির—লজ্জাজনক ও বাজারি। এরও বেশি বেদনার যে ব্যাপারটি ছিল, খোদ মুসলিম নামধারী বাজারি লেখকরাই জেবুন্নেসাকে নিয়ে যা-তা লিখে রেখেছে। না আছে এর কোনো সত্যতা, না আছে কোনো ভিত্তি। স্রেফ টাকার লোভে। এই যখন ব্যাপার, তখন খেয়াল হলো, জেবুন্নেসাকে নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ কিছু লিখি। যেখানে কোনো মিথ্যার বেসাতি থাকবে না। উপকার আর কি, মানুষ শুদ্ধ ও সঠিকটা জানতে পারবে; এটুকুই।
কবির জন্ম, কবিতার বেড়ে ওঠা
আওরঙ্গজেবের প্রথম সন্তানই ছিলেন জেবুন্নেসা। মা, দিলরাস বানু বেগম। শাহনেওয়াজ খাঁনের কন্যা ছিলেন দিলরাস। শাহনেওয়াজের প্রকৃত নাম, বদিউজ্জামান। সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়ে লাভ করেন শাহনেওয়াজ উপাধি। সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলেও রাখেন অসামান্য ভূমিকা। ব্যক্তি যোগ্যতায় তো উজ্জ্বল ছিলেনই, সেইসাথে বংশীয়ও।
১০৪৭ হিজরির ঘটনা। সম্রাট শাহজাহানের ক্ষমতার বয়স তখন দশ। আওরঙ্গজেবের সাথে মেয়ে দিলরাসের বিয়ে দেন শাহনেওয়াজ। চার লাখ স্বর্ণমুদ্রা নির্ধারিত হয় মোহর। তালিব কালিম লিখেছেন—আকদের ভেতর দিয়েই যেন দুটি রত্ন সম্মিলিত হল।[1]মা’সিরুল উমারা, দ্বিতীয় খন্ড; পৃষ্ঠা : ৬৭০-৬৭১
জেবুন্নেসার জন্ম বিয়ের দ্বিতীয় বছর। মাস ছিল ১০৪৮ হিজরির শাওয়াল। আলমগীরের সভাসদদের ভেতর আমানুল্লাহ খাঁন ছিলেন একটু ব্যতিক্রমী—প্রোজ্জ্বল। তার মা হাফেজা মারইয়ামও ছিলেন শিক্ষিতা। জেবুন্নেসা যখন একটু বড় হন, পড়াপড়ির বয়সে পৌঁছন; আমানুল্লাহ খাঁনের মা হাফেজা মারইয়ামকেই জেবুন্নেসার শিক্ষিকা করেন আওরঙ্গজেব। তার সান্নিধ্যেই প্রথম কুরআন শিখে ওঠেন জেবুন্নেসা।[2]মা’সিরুল উমারা, দ্বিতীয় খন্ড; পৃষ্ঠা : ৮২৮ হিফজ সম্পন্ন হয় তার। খুশি হয়ে শিক্ষিকাকে তিন হাজার আশরাফিও হাদিয়া কারেন আওরঙ্গজেব।[3]মা’সিরু আলমগীরী; পৃষ্ঠা : ৫৩৮ পাশাপাশি আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের পাঠও যে চূড়ান্ত করেছিলেন—এই ব্যাপারে কারুর দ্বিমত নেই। সমকালীন বড় বড় আলিম, ফাজিলরাও তার খেদমতে হাজির হতেন। তবে তার শিক্ষকদের ভেতর অন্তরস্থ ছিলেন মোল্লা সাঈদ আশরাফ মাজেন্দ্রানি৷ ইনি ছিলেন মোল্লা সাঈদ তাকি মাজলিসির নাতি৷ আলমগীরের উদ্বোধনী সভায় ইরান থেকে অতিথি হয়ে এসেছিলেন। পরে তাকেই জেবুন্নেসার শিক্ষক করে রাখেন আলমগীর।[4]সারু আজাদ, তাযকিরায়ে মোল্লা আশরাফ জেবুন্নেসার বয়স তখন একুশ। এখান থেকেই ধারণা করা যায়, তৈমুরদের ভেতর নারীশিক্ষা কতোটা সম্প্রসারিত ছিল তখন। গদ্য ও পদ্যের কারিকুরি মোল্লা সাঈদ মাজেন্দ্রানি থেকেই রপ্ত করেছিলেন জেবুন্নেসা।
মোল্লা আশরাফ যেমন কবি ছিলেন; কবিত্বের গুণপনায়ও পরিচিতি ছিল তার৷ জেবুন্নেসার শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন একাধারে ১৩-১৪ বছর। ১০৮৩ হিজরিতে দেশে ফেরার ইচ্ছে জাগে। জেবুন্নেসার কাছে কাসিদা লিখে পাঠান। দেশে ফেরার তাড়না লকলকে কবিতা হয়ে ঢলে পড়েছিল এভাবেই—
یک بار از وطن نتواں برگرفت دل
درغربتم اگرچہ فزوں ست اعتبار
প্রবাস জীবন নিঃশঙ্ক হলে কি হবে!
মাতৃভূমিকে কি আর ঝেড়েপুছে ভুলে যাওয়া যায়?
ایں پیش و قرب و بعد تفاوت نمی کند
گو خدمت حضور بنا شد مر اشعار
কাছে বা দূরের এই থাকা না থাকায় কোনো রাত-দিন নেই
আমার না থাকা জুড়েও সেবাসঙ্গী হবে আমারই অগুণতি কবিতা।
نسبت چو باطنی ست چہ دہلی چہ اصفہان
دل پیش تست من چہ بہ کابل چہ قندہار
সম্পর্ক তো হৃদয়ের; দিল্লিই থাকি বা ইস্পাহান—কী আসে যায়?
হৃদয় তো সপেই দিয়েছি কাবুলকে; কান্দাহারে থাকলেই বা কী![5]সারু আজাদ, তাযকিরায়ে মোল্লা আশরাফ মাজেন্দ্রানি
জেবুন্নেসা যে ধারার শিক্ষা পেয়েছিলেন, তার মনভূমি গড়ে ওঠেছিল যেভাবে—সেখানে রাজনীতির কোনো স্থান নেই। পরিচিতিও নেই। এজন্য আলমগীরকেও ভুগতে হয়েছিল। বদনাম থেকে পিঠ বাঁচেনি।
১০৯১ হিজরিতে রাজপুতরা যখন আলমগীরের বিরুদ্ধে গণবিপ্লবে নামে; তাদের মোকাবেলায় শাহজাদা আকবরকে বাহিনী দিয়ে যোধপুরের দিকে পাঠান আলমগীর। রাজপুতদের প্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে নিজেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন শাহজাদা। আলমগীরের বিরুদ্ধে বাহিনী নিয়ে এগিয়ে যান আকবর। জেবুন্নেসা আর আকবর ছিলেন আপন ভাই-বোন। চিঠিপত্রও লেনদেন হতো তাদের। এমন একটি চিঠি একবার আলমগীরের হস্তগত হয়। জেবুন্নেসার বাৎসরিক বেতন বন্ধ করে দেন আলমগীর। যার পরিমাণ ছিল চার লাখ। জব্দ করা হয় তার সহায়-সম্পত্তিও। সালিম গড় দূর্গে নির্বাসিত হন জেবুন্নেসা।[6]মা’সিরু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ৩০৪ কিন্তু ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়, বেশ দ্রুতই বেকসুর প্রমাণিত হয়েছিলেন। তাকে ক্ষমাও করে দেয়া হয়েছিল। ১০৯৪ হিজরিতে হামিদা বানু বেগমের (রুহুল্লাহ খাঁনের মা) মৃত্যু হলে বিদায়ী আয়োজনের জন্য জেবুন্নেসাকে রুহুল্লাহ খাঁনের ঘরে পাঠান আলমগীর। ওই বছরই যখন আলমগীরের ছোট ছেলে শাহজাদা কাম বখসের[7]মা’সিরু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ২২৫ বিয়ে হয়, জেবুন্নেসার প্রাসাদেই আয়োজিত হয়েছিল অনুষ্ঠান। সেদিন পাইক-পেয়াদা-সহ রাজ্যের পদস্থ সকলেই জেবুন্নেসার প্রাসাদে গিয়েছিলেন। জেবুন্নেসা বিয়ে করেননি৷ মিথ আছে, তৈমুর সুলতানারা নাকি বিয়ে করেন না। ইউরোপীয় লেখকরা বিষয়টিকে এতটাই প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন যে, রাজ পরিবারের নারীদের বদনাম ছড়ানোটা সহজ হয়েছে আরো। কিন্তু বিষয়টি গোড়া থেকেই ভুল। একদমই অমূলক। খোদ আলমগীরের দুই কন্যাই ঝুবদাতুন্নেসা ও মেহেরুন্নেসা যথাক্রমে সিপিহর শিকোহ ও শাহজাদা মুরাদের ছেলে আজাদ বখশের পত্নী ছিলেন। মা’সিরু আলমগীরী গ্রন্থে এই বিয়ে দুটির ইতিহাস ও যৎসামান্য বিবরণও লেখা আছে। বইয়ের শেষাংশেও রয়েছে তাদের আলোচনা।
জেবুন্নেসাকে অনেক কদর করতেন আলমগীর৷ জেবুন্নেসা যখন বাইরে থেকে আসতেন; তাকে স্বাগত জানাবার জন্য শাহজাদাদের পাঠিয়ে দিতেন সম্রাট। ভ্রমণ বা অবসর, সবসময়ই তাকে সঙ্গে রাখতেন আলমগীর। কাশ্মীরের দুর্গম সফরেও জেবুন্নেসা সঙ্গী ছিল তার৷ কিন্তু আলমগীর যখন দক্ষিণাত্যের দিকে অভিযানে বেরোন; নিজের ইলমি একাগ্রতা বিনষ্ট হবে জন্যে হয়তো প্রাসাদ ছেড়ে বেরুতে চাননি জোবুন্নেসা। রয়েই গিয়েছিলেন। আলমগীরের সঙ্গী হয়েছিলেন জেবুন্নেসারই ছোট বোন ঝিনাতুন্নেসা। ইতিহাসে তার আলোচনা তাই ফিরে ফিরে আসে৷ জেবুন্নেসা দিল্লিতেই ছিলেন। ১১১০ হিজরিতে দিল্লিতেই ইন্তিকাল করেন। সেখানেই সমাহিত হন। আলমগীরের ৪১ বছরের কন্যাসঙ্গী ছিলেন জেবুন্নেসা। জান্নাতে প্রবেশীয় উপাদানে প্রোজ্জ্বল তার জীবন। দক্ষিণাত্যের বিজয়াভিজানে তখন ব্যস্ত আলমগীর৷ কন্যার মৃত্যু সংবাদে ব্যথাভারে নুয়ে পড়েন যেন! চোখ অজান্তেই ভিজে ওঠে। তবুও সামলে উঠতে পারেন নি। সৈয়দ আমজাদ খাঁন, শাইখ আতাউল্লাহ ও হাফেজ খাঁনের নামে হুকুম জারি করেন তখনি—দ্রুত তার ঈসালে সাওয়াবের জন্য দান-খয়রাত করুন। মাকবারা তৈরি করান।[8]সফহাতু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ২৬২ কোলকাতা থেকে প্রকাশিত খানি খাঁনের সংস্করণে জেবুন্নেসার নাম ও ঘটনাপঞ্জি ১১২২ হিজরি পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু এটি পরিষ্কার ভুল। লেখকরা ভুলে বা সজ্ঞানে ঝিনাতুন্নেসার জায়গায় জেবুন্নেসার নাম ব্যবহার করেছেন।
ইলমি কামালিয়্যাত ও সাধারণ আচার-অভ্যাসের ফিরিস্তি
মোটামুটি সব ইতিহাসবিদই জেবুন্নেসার ইলম বিষয়ে পরিষ্কার বয়ান রেখেছেন—আরবি ও ফার্সি সাহিত্যে ভালো দখল ছিল তার। নাস্তা’লিক, নুসখ ও শিকাস্তা খত বেশ ভালো লিখতেন। কিন্তু এই সমস্ত খতের একটিতেও তার কোনো লেখাজোঁকা বহাল তবিয়তে বর্তমান নেই। বাদবাকি ছদ্মনামে তার লেখালেখি কিংবদন্তি হয়ে আছে। ছদ্মনামে যা কিছু কবিতা এযাবৎ ছেপে এসেছে; এগুলো মূলত তারই—এই যে দাবি, এটি সত্য নয়৷ ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য কোনো গ্রন্থেই তার কবিতা ও ছদ্মজীবিতার কোনো নজির নেই। মৌলভি গোলাম আলি আজাদ তার ইয়াদে বায়জায় লেখেন—
“তার নামে কবিতার এই লাইন দুটি শোনা যায়” বলে দুটি লাইনই কেবল উল্লেখ করেন। আমার কথা হলো, কবিতা যখন তারই, তবে দু’লাইন কেন?
মাখঝানুল গারায়েব নামে আহমাদ আলি সান্দিলভির একটি গ্রন্থ আছে। বইটির লেখক বিপুল ফার্সি কাহিনি আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। এই তাবৎ গল্প-কাহিনি থেকেও জেবুন্নেসার কবিতা ও জীবন আলাদা করে এনেছেন নিপুণ কায়দায়! জেবুন্নেসাকে নিয়ে আলি সান্দিলভি লেখেন—
“সর্বপরি তার কবিতার কোনো পাণ্ডুলিপি চোখে পড়েনি। কিন্তু নির্বাচিত কলাম গোচরে এসছে; তবে সেগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ওই কলামে তার উস্তাদদের সূত্রে বর্ণিত কবিতায় ‘বরাবর বেগম’ লেখা ছিল।”
এরপরে আর তার কবি হবার বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না আসলে৷ কিন্তু এইটুকু তো পরিষ্কার, তার কাজগুলো হারিয়ে গিয়েছিল। এই লেখায়ই মোল্লা সাঈদ আশরাফের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আলি সান্দিলভি লিখেন—জেবুন্নেসার কবিতা একজনের কাছেই সংরক্ষিত ছিল—ইরাদাত ফাহাম৷ পাণ্ডুলিপিটি কূপে পড়ে যায়৷ এই প্রেক্ষাপটে একটি গল্পও লিখেন মোল্লাজি৷ গল্পটি সামনে আসবে। পাণ্ডুলিপিটি কবিতারই ছিল খুব সম্ভব। আলি সান্দিলভির লেখায় জেবুন্নেসার নামে কবিতার এই পঙ্ক্তি-জোড়ারও উল্লেখ আছে—
بشکند دستے کہ خم در گردن یارے نشد
کور بہ چشمے کہ لذت گیر دیدارے نشد
সেই অপরিপক্ব হাত ভেঙ্গে যাক, বন্ধুর মাথায় সুকুন বিলোয় না যে হাত!
তার তো অন্ধ থাকাই ভালো, চোখ থাকতেও যে কিনা দেখতে পায় না কিছুই!
صد بہار آخر شد و ہر گل بہ فرقے جا گرفت
غنچہ باغ دل مازیب دستارے نشد
শত বসন্ত শেষ হয়ে গেল; সব ফুল ঝড়ে পড়ল মাটিতে
তবু আমার হৃদয় বাগের কলির আর পাঁপড়ি মেলা হল না!
জেবুন্নেসার লেখালেখি থেকে জেবুল মানশাতের আলোচনা, আলি সান্দিলভির লেখায় সবই এসে থাকবে। তাজকিরাতুল গারায়েব-এ আলি সান্দিলভি লিখেন—জেবুন্নেসার চিঠিপত্র ও চরিত আমি দেখেছি৷
জ্ঞানসাধনা
জেবুন্নেসা নিজে কিছু লিখুন না লিখুন শাস্ত্রজ্ঞদের দিয়ে ঠিকই লিখিয়ে নিয়েছেন। মৌলভি গোলাম আলি আজাদ ইয়াদে বায়জায় লেখেন—
তার কৃতজ্ঞতার ছায়াতলে অসংখ্য কবি, পণ্ডিত ও শাস্ত্রকার স্বস্তি লাভ করেছিল। তার নামে বহু বই ও চিঠি রচিত হয়েছে।
বাস্তবিকার্থেই জেবুন্নেসার দরবার ছিল একটা অ্যাকাডেমি। তাবৎ বিষয়ের আলেম-ফাজেলরাই সেখানে থাকতেন৷ তাদের নিমগ্নতাই ছিল দিনমান লেখা ও লেখালেখিতে ডুবে থাকা। এই বইগুলো তার নামেই লেখা হতো। অথবা নামের শুরুর অংশটা হতো তার নামে—জেব শব্দে। বেশিরভাগ লেখক, ঐতিহাসকই এখানটায় ধোঁকা খেয়েছেন। আর সেগুলোকে জেবুন্নেসার লেখা হিসাবে ধরেও নিয়েছেন কেউ কেউ।
জেবুন্নেসার অ্যাকাডেমিক দরবারে হওয়া উল্লেখযোগ্য কাজের ভেতর তাফসিরে কাবিরের অনুবাদটিও মর্যাদা পাবার দাবি রাখে। ইমাম রাজির তাফসির থেকে বিশুদ্ধ কোনো তাফসির না থাকার বিষয়টা তো স্বীকার্যই। দাবিটি মোটেও বালখিল্য বা বাতুলতা নয়। কাশ্মীর প্রবাসী সাইফুদ্দিন আরদবেলিকে তাফসিরটি ফার্সি অনুবাদেরও নির্দেশ দেন জেবুন্নেসা। কাজটি সম্পন্নও হয় যথারীতি৷ নাম রাখা হয়, জেবুত তাফাসির। কিছু লেখক এখানেও ভুলে বা স্বজ্ঞানে সাইফুদ্দিন আরদবেলির করা তাফসিরটিকে জেবুন্নেসার কর্ম বলে চালিয়ে দিয়েছেন!
লেখালেখি ও সংকলনের জন্য অ্যাকাডেমিক ধাঁচের যে অসামান্য দরবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জেবুন্নেসা; সেইসূত্রে একটা বৃহৎ কলেবরের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার বিষয়ও তুমুলতা পেয়েছিল। লেখকরা যাতে উপকৃত হতে পারেন। পরবর্তীতে তার হাতেই মহান সেই লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মা’সিরু আলমগীরী[9]মা’সিরু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ৫৩৯ লেখকের বর্ণনা—এমন লাইব্রেরির জুড়ি মেলা ভার! লেখকের ভাষ্যই সরাসরি তুলে ধরছি—
در سركار عاليه كتاب خا نه گرد آمده بود که به نظر هيچ يکے در نيامده باشد.
সদা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন জেবুন্নেসা। তাতে উপকার যেটা হয়েছে, আলমগীরের আপাত মেজাজি তাপটা ঢাকা পড়ে গেছে পুরোপুরিই। আলমগীরের দরবারে কবিসভা হতো আগ থেকেই৷ ফয়জী, তালিব, আমলি, কুদসি ও তালিমরা পারফর্ম করতেন সেসব মজমায়। মজমাটি বন্ধ করে দেন আলমগীর। যেন-বা হঠাৎ-ই সম্বল হারিয়ে ফেলেন কবিরা৷ জেবুন্নেসার হস্তক্ষেপেই পুনরায় চালু হয় মজমাটি৷ বিবিধ বিষয়ে শের, কাসিদা ও নযম লিখে লিখে পেশ করছিলেন পারফর্মাররা। খাসা উপহারও বাগিয়ে নিচ্ছিলেন। জেবুন্নেসার কাব্যপ্রীতি এতটাই ব্যাপক ছিল, ঘরোয়া বিষয়াদিতেও কাব্য করতেন! এমন ধারার কিছু বর্ণনাও হৃদয়জ শোনাবে৷ ইতোপূর্বে আমরা বলে এসেছিলাম, জেবুন্নেসার কবিতার গোপন পাণ্ডুলিপিখানি ছিল ইরাদাত ফাহাম নামের এক লোকের কাছে৷ তার কাছ থেকেই পাণ্ডুলিপিটি কূপে পড়ে যায়। এই অমার্জনীয় ভুলের পক্ষে উকালতি করতে গিয়ে জেবুন্নেসা বরাবর একটি কালোত্তীর্ণ কবিতাটিই লিখে ফেলেন মোল্লা সাঈদ মাজেন্দ্রানি। কিয়াদাংশ পড়া যাক—
اے ادا فہمے کہ پیشت فاضلان عصر را
شستن مجموعہ اندیشہ باب افتادہ است
হে পূর্ণজ্ঞানী! যার সামনে কিনা কালের বিজ্ঞজনেরা কিতাবের একটি অধ্যায়ই ফেলে দিয়েছে ভয়ে!
در خم افلاطون زیاد دانشت سرخوش بود
ہمچو مخمورے کہ در فکر شراب افتادہ است
তেমনই নেশাগ্রস্থ হয়েছে সে-ও, যে কিনা পড়েছে মাদকের চিন্তায়!
آب حسرت در دہان اختران گرویدہ است
آتش غیرت بہ جان آفتاب افتادہ است
আফসোসের পানি তারকার মুখে ধাবিত হয়েছে
আত্মমর্যাদার অনল ভেঙ্গে দিয়েছে সূর্যের সাহস!
ذہن صافت تا علم گردید در دانشوری
طبع افلاطون زبس دراضطراب افتادہ است
তোমার পরিচ্ছন্ন চিন্তা-বলেই আজ তুমি জ্ঞানী
আর সেই জ্ঞানই তোমাকে আফলাতুনের স্বভাবজাত ব্যস্ততায় ফেলে দিয়েছে।
دفتر فرہنگ در چنگش مجزا گشتہ است
از کفش مجموعہ دانش در آب افتادہ است
বুদ্ধিমত্তার লাইব্রেরি তার সেতারায় টুকরো টুকরো হয়।
তার বাহুশক্তির মুকাবেলায় জ্ঞানীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে পানিতে!
آں مرصع خواں گہر ریزی کہ باشد جلوہ گر
دُر الفاظش بسے با آب و تاب افتادہ است
জলের গভীরে থাকা ওই মূল্যবান পাথর বসানো দস্তরখান যেমন আলোকিত করে চারপাশ—
তার কথার মুক্তাও তেমনি; জল-স্থলে ছড়িয়ে আছে অনেক—যেগুলো আলোকিত করে মানুষের হৃদয়।
نہ ہمیں از یاد معدن رفت لعل آبدار
گوہرغلطاں ہم از چشم سحاب افتادہ است
উজ্জ্বল হিরার সন্ধানে সেখানে যাইনি
রত্নপাথরের ঘুর্ণন পর্দাবৃত করেছে চোখ!
بحر شعر آبدارش تازہ طوفان کردہ است
کشتیش در چار موج اضطراب افتادہ است
তার আলোকিত, সূক্ষ্ম জ্ঞানের সাগর তুফানকে করেছে উতলা—
তার নৌকা ধাওয়া করেছে দুর্ভাবনার তরঙ্গে।
آہ ازیں غم در دل پیر و جواں پیچیدہ است
لرزہ زیں ہیبت بہ جانِ شیخ و شاب افتادہ است
আহ! বুড়ো ও যুবাদের হৃদয় ভেঙ্গে পড়েছে এই চিন্তায়—
এই ভয়ে তাদের অন্তরে ধরেছে কাঁপন।[10]এই কবিতাগুলি তাযকিরায়ে মাজমাউল গারায়েবে আশরাফ সাঈদের জীবনিতে লেখা হয়েছে।
নিয়ামত খাঁন আলি ছিলেন একজন প্রশিদ্ধ কবি। টেবিলে লাগানো হয়, এমন একটি শৈলী একবার বিক্রির জন্য জেবুন্নেসার সামনে পেশ করেন কবি খাঁন। জেবুন্নেসারও মনে ধরে হয়তোবা, রেখে দেন। কিন্তু সম্মানি পাচ্ছিলেন না নিয়ামত খাঁন। এদিকে সময় গড়িয়ে গেছে অনেক! রাজদরবারের ধারাই তো অনেকটা এমন। সেই ক্ষোভে চার লাইন কবিতা লিখে অন্দরে পাঠিয়ে দেন নিয়ামত খাঁন আলি—
اے بند گیت سعادت اختر من
درخدمت تو عیاں شدہ جوہر من
আরে, আপনার উপাসনা তো আমার সৌভাগ্যের কারণ
আপনার সেবায় আমার রত্ন প্রকাশিত হয়েছে।
گر جیغہ خریدنی ست پس کو زر من
در نیست خریدنی بزن بر سر من
যদি তুমি জিগাহ (একজাতীয় অলংকার; পাগড়ির উপর বাঁধ হয় এমন) ক্রয় করে থাকো, সেটা আমারই স্বর্ণ।
আর যদি তা ক্রয় না করো, তবে তা হবে আমার মাথায় আঘাত।
(কেনার ইচ্ছে থাকলে মূল্য পরিশোধ করুন। নয়তো আমার জিনিস আমাকে ফিরিয়ে দিন!)
জেবুন্নেসা পাঁচ হাজার রৌপ্যমূদ্রায় মূল্য পরিশোধ করেন ঠিকই, কিন্তু কুলগিটি ফিরিয়ে দেন![11]খাঝানায়ে আমেরা, তাযকিরায়ে নিয়ামত খাঁন আলি
মোল্লা সাঈদ আশরাফ ছিলেন জেবুন্নেসার শিক্ষক। জেবুন্নেসার গদ্য ও পদ্যের হাতেখড়ি তার হাতেই। বেশ উঁচু দরের কবি ছিলেন তিনি। যেখানে যা লেখা হয়েছে জেবুন্নেসাকে নিয়ে ঘুরেফিরেই এসেছে তার নাম। জেবুন্নেসাও অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন তাকে৷
একবার প্রিয় শিক্ষকের কাছে একজন পরিচারিকা পাঠিয়ে লিখেন—ওকে রেখে দিন৷ শিক্ষকের মেজাজের সাথে পরিচারিকাটি খাপ খায়নি৷ জবাবি চিঠিতে এভাবেই জানিয়ে দেন সেকথা—
قدر دانشور شناسا نور چشم عالما
ایکہ ہرگز قدرت ہم چشمیت حور انداشت
জ্ঞানীদের মূল্যায়ন নির্ণিত হয় জ্ঞানের আলোয়
তোমার চোখে তোমার মর্যাদা কিন্তু জান্নাতি হুরের মতোই!
জেবুন্নেসা কৌতুকপ্রিয় হলেও অতটা পাতলা ছিলেন না। শাহি বেগমদের দরবারে এমনতর ভারসাম্যহীন আচরণ অমার্জনীয়। প্রাসঙ্গিক একটা গল্প বলি। একবার জেবুন্নেসার ফুপি (আরা বেগম) বাগানে ঘুরতে বেরোন৷ চতুর্দিকেই পর্দা খাটিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ মীর সাঈদী তেহরানি ছিলেন একজন প্রতিথযশা কবি। প্রাসাদেরই কোনো এক কামরায় লুকিয়ে আরা বেগমের সাওয়ারি করে যাওয়া দেখছিলেন৷ আরা বেগমের বাহনটি তার সামনে দিয়ে যাবার সময় হঠাৎই কবির মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়—
برقع بہ رخ افگندہ برد ناز بہ باغش
تا نگہت گل بیختہ آید بہ دماغش
চেহারা পর্দাবৃত করে বাগানে প্রেমের ছলনা করছ?
যাতে তোমার চাহনি গোলাপ ছড়িয়ে তার হৃদয়ে আসতে পারে!
আরা বেগমের আদেশ—কবিকে আমার সামনে নিয়ে এসো! কবি এলে তাকে দিয়ে বারকয়েক আবৃত্তি করে শোনেন পঙ্ক্তিগুলো। পাঁচ হাজার রৌপ্যমূদ্রা হাদিয়া করেন তাকে। পাশাপাশি, শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাবারও আদেশ করেন তখনি![12]খাঝানায়ে আমেরা, সাঈদি তেহরানি (মানে, সে বেয়াদবি কেন করল; এই হচ্ছে কথা!) এই ঘটনা থেকেই রাজপরিবারের বেগমদের তাজিমের স্তর আঁচ করা যায়!
আচার-অভ্যাস
একদিকে জেবুন্নেসা ছিলেন পরিমিত কৌতুকবোধসম্পন্না। আরেকদিকে আবার সম্রাট শাহজাহানের নাতনি৷ রুচিশীলতাই বলি আর রাজকীয় জৌলুস—দুদিকেই ছিলেন সমান সচেতন। আলমগীরের আমিরদের ভেতর নিয়ামাতুল্লাহ খাঁনের নৈকট্যপ্রাপ্তির কথা তো বরিতই। জেবুন্নেসারও মীর খানসামা ছিলেন তিনি৷[13]মা’সিরুল উমারা, দ্বিতীয় খন্ড; তাযকিরায়ে এনায়েতুল্লাহ খাঁন; পৃষ্ঠা : ৮২৮ কাশ্মীরজুড়েই দৃষ্টিনন্দন জায়গা ও নন্দিত ঝরনা ছড়িয়ে আছে। ওখানের একটি ঝরনা নাম ছিল আহওয়াল৷ জেবুন্নেসার জায়গীর ছিল সেটি। ঝরনাটির পাশে জেবুন্নেসা একটি বাগানঅলা প্রাসাদ নির্মাণ করেন৷ ১০৭৪ হিজরিতে যখন কাশ্মীর যান আলমগীর; একদিন অবস্থান করেছিলেন সেখানে৷ রীতি মেনেই তাকে স্বাগত জানান জেবুন্নেসা। তার থেকে পয়সাও রাখেন![14]আলমগীরনামা, কলকাতা সংস্করণ; পৃষ্ঠা : ৮৩৬ ১০৯০ হিজরিতে সেখানে একটি বড় তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল৷ মজবুতির কথা যদি বলি, সিসাঢালা প্রাচীর! যার প্রশংসায় নিয়ামত খাঁন আলি ছোটখাটো একটি মাসনবিই লিখে ফেলেন যেন-বা! কিছু ছটা তুলে দিচ্ছি—
ازاں خرگاہ طلقش چشم بد دور
کہ شد از جلوہ اش نور علی نور
তার ওই বাকশক্তির তাঁবু থেকে কূদৃষ্টি দূরে থাক
যার রৌশনিতে সবকিছু হয়েছে আলোকিত।
تعالی اللہ چہ روشن بارگاہے
کدورت را در ین جا نیست راہے
হে আল্লাহ! কী আশ্চর্য আলোকিত দরবার!
এখানে বেদনা আসার পথ কোথায়?
زنورش گشتہ خیرہ چشم کوکب
کمینہ خانہ زادش ماہ نخشب
তার নূরে থমকে গিয়েছে নক্ষত্রের দৃষ্টিও
তার পাথেয় দরিদ্রদের ঘরে হয়েছে নখশবের (তুরস্কের একটি শহর) চাঁদ।
فروغش گرچنیں دارد جہاں تاب
کسے شب را نخواہد دید در خواب
তার আলো যদি পৃথিবীকে এভাবেই আলোকিত করে
কেউ স্বপ্নেও রাত দেখতে পাবে না।
چو عاجز گشت نطقم از ثنایش
شدم جویائے تاریخ بنایش
আমার বাকশক্তি যখন তার প্রশংসা করতে অপারগ
তার নতুন ইতিহাস খু্ঁজে ফিরছি তখন।
پے تاریخ آں گفتار زمانہ
برد زنگ دلم آئینہ خانہ
ইতিহাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সে কালের কথোপকথক—
আমার হৃদয়ের জং দূর করে হৃদয়কে বানাবে আয়নাঘর।
ভাইদের প্রতি ভালোবাসা ছিল তুমুল। ১১০৫ হিজরিতে আজম শাহ যখন কঠিন হাঁপানিতে আক্রান্ত হন, জেবুন্নেসা এই ভেবে তার সেবা করে গেছেন; পুরো অসুস্থতাকালীন সময়ে তার দেয়া খাবার ছাড়া আর কিছুই সে খেতো না। যখন কিনা মুহাম্মদ আকবর আলমগীরের সাথে বিদ্রোহ করে রাজপুতদের সাথে গিয়ে জোট বাঁধে তখনো জেবুন্নেসা আকবরের সাথে ভাতৃত্বসুলভ আচরণ বজায় রেখেছিলেন। চিঠিও চালাচালি হতো নিয়মিত। যার দায়ে তার মাসোহারা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। জব্দ করা হয় জায়গীর৷[15]মা’সিরুল উমারা, প্রথম খন্ড; পৃষ্ঠা : ৫৯৯; মা’সিরু আলমগীরীতে জেবুন্নেসার … Continue reading
তাকে জড়িয়ে লতানো গল্পেরা
জেবুন্নেসাকে নিয়ে অসংখ্য গালগল্প জাল বুনে আছে৷ ইউরোপীয় লেখকরা যেগুলোতে রঙ চড়িয়েছেন। সেখান থেকে একটা গল্প বলি—
আকিল খাঁনের সাথে জেবুন্নেসার ছিলো ঘোরতর প্রেম। আবডালে জেবুন্নেসা কখনো-বা তাকে প্রাসাদে ডাকতেন। আকিলের উপস্থিতি একদিন টের পেয়ে যান আলমগীর। বাথটাবে পালিয়ে লুকোন আকিল! ভোলানাথ সেজে ওই বাথটাবেই গরম পানি ঢালতে বলেন সম্রাট। আকিল তখনো সিটিয়ে, কোনো রা নেই; না জানি ভেদ খুলে যায়! গরম পানিতেই পুড়ে মরতে থাকেন এই ইস্পাত-হৃদয়ের খাঁন! মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তেই এই কালজীয় চরণদুটি গেয়ে ওঠেন আকিল—
بعد مردن زجفائے تو اگر یاد کنم
از کفن دست برون آرم و فریاد کنم
মৃত্যুর পরে যদি তোমার জুলুমের কথা স্মরণ করি—
কাফনের ভেতর থেকে হাত বের করে হলেও আল্লাহর কাছে অভিযোগ দায়ের করব!
আকিল খাঁনের আদ্যোপান্ত জীবন মা’সিরুল উমারায় পাওয়া যাবে। যেহেতু কবি ছিলেন, সমসাময়িক গ্রন্থাদিতে খুচরো আলাপ তো থাকবেই৷ কিন্তু এই লতানো গল্পের কোনো ডগা পাইনি কোথাও! আরো যেসব বইয়ে তাকে নিয়া আলাপ ছিল আর যেগুলো কিনা বরিত ও প্রামাণ্য সেগুলির ভেতর আলমগীরনামা, মা’সিরু আলমগীরী, মা’সিরুল উমারা, তাযকিরায়ে শারখোশ, খাঝানায়ে আমেরা, সারু আজাদ ও ইয়াদে বায়জা অন্যতম। এগুলোর একটিতেও আকিল-জেবুন্নেসা বিষয়ে কোনো আলাপ নেই৷ এক বর্ণও না। কিন্তু তার মৃত্যু-বিষয়ে কমবেশ সবাই কলম ধরেছেন। ১১০৭ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন আকিল।
এই ঘটনাটিও ব্যাপক প্রসিদ্ধি পায়—
একবার এই পঙ্ক্তিটি লিখে থ বনে যান জেবুন্নেসা—
ازهم نمي شودز حلاوت جدا لبم
এই স্বাদ থেকে আমার ঠোঁট বিচ্ছিন্ন হবে না—
খুব করে চেয়েও পরে আর কিছু লিখতে পারছিলেন না৷ নাসের আলির কাছে পাঠিয়ে দেন পঙ্ক্তিটি। শেষে নাসের আলিই মিলিয়ে দেন—
از ہم نمی شود زحلاوت جدا لبم
شاید رسید بر لبِ زیب النسا لبم
এই স্বাদ থেকে আমার ঠোঁট-বিচ্ছিন্ন হবে না—
কেননা আমার ঠোঁট জেবুন্নেসার ঠোঁট স্পর্শ করেছে!
যারা তৈমুরদের শানশৌকত, কেরদারি ও জেল্লাবিষয়ে ওয়াকিবহাল তারা তো জেনেই থাকবেন—দুঃস্বপ্নেও নাসের আলি এমন বেয়াদবির সাহস রাখেন না যে তার হয়ে দু’কলম লিখবেন! তাও এমন কিছু!
উৎসগ্রন্থ : মাকালাতে শিবলী
পৃষ্ঠা : ১১২
লেখক : শিবলী নুমানি
প্রকাশনা : অসি প্রেস, লাখনৌ।
তথ্যসূত্র:
↑1 | মা’সিরুল উমারা, দ্বিতীয় খন্ড; পৃষ্ঠা : ৬৭০-৬৭১ |
---|---|
↑2 | মা’সিরুল উমারা, দ্বিতীয় খন্ড; পৃষ্ঠা : ৮২৮ |
↑3 | মা’সিরু আলমগীরী; পৃষ্ঠা : ৫৩৮ |
↑4 | সারু আজাদ, তাযকিরায়ে মোল্লা আশরাফ |
↑5 | সারু আজাদ, তাযকিরায়ে মোল্লা আশরাফ মাজেন্দ্রানি |
↑6 | মা’সিরু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ৩০৪ |
↑7 | মা’সিরু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ২২৫ |
↑8 | সফহাতু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ২৬২ |
↑9 | মা’সিরু আলমগীরী, পৃষ্ঠা : ৫৩৯ |
↑10 | এই কবিতাগুলি তাযকিরায়ে মাজমাউল গারায়েবে আশরাফ সাঈদের জীবনিতে লেখা হয়েছে। |
↑11 | খাঝানায়ে আমেরা, তাযকিরায়ে নিয়ামত খাঁন আলি |
↑12 | খাঝানায়ে আমেরা, সাঈদি তেহরানি |
↑13 | মা’সিরুল উমারা, দ্বিতীয় খন্ড; তাযকিরায়ে এনায়েতুল্লাহ খাঁন; পৃষ্ঠা : ৮২৮ |
↑14 | আলমগীরনামা, কলকাতা সংস্করণ; পৃষ্ঠা : ৮৩৬ |
↑15 | মা’সিরুল উমারা, প্রথম খন্ড; পৃষ্ঠা : ৫৯৯; মা’সিরু আলমগীরীতে জেবুন্নেসার জায়গায় ঝিনাতুন্নেসা লিখা হয়েছে—আক্ষরিক ভুল এটি৷ |