জওয়ানির ইশতেহার
যদি তোমার সাফল্যে রাঙাতে চাও দিন-দাহার,
তবে তোমাকে হয়ে উঠতে হবে একজন খাঁটি বিশ্বাসঘাতক।
এমন সম্ভব নয়—প্রতিটি আয়নায় তোমার ছবি হবে
একই রকম, কিংবা কারও খেয়ালে তুমি নিষ্ফল নও।
তাই, বিশ্বাসকে তোমার করতে হবে গলা টিপে খুন—
আত্মীয় ত্যাগের কাঁধে হবে আত্মত্যাগের সূচনা।
ঝিনুকের বুকে মুক্তোদানার মতো—
মা-বাবা লালন করেন স্বপ্ন,
এবং তোমাকে গড়ে তুলতে চান সেই স্বপ্নের ছাঁচে,
ব্যক্তিজীবনের ব্যর্থতাকে সফলতায় রূপান্তর
করতে চান তোমার মুখপানে চেয়ে—
এতে রয়েছে নিষ্কলুষ সরলতা,
আশাবাদী কোনো প্রাণীই ব্যতিক্রম নয় এর।
পূতপবিত্র এই দুর্গের প্রাকার ভেঙে,
কেবল বিশ্বাসঘাতকতাই তোমায় পৌঁছাতে পারে
আত্মপরিচয়ের প্রথম ধাপে।
ওস্তাদ ও গুরুজন—যাদের বসবাস বিগত সময়ে—
তারা স্বপ্ন দেখেন গাণিতিক সূত্রে।
দক্ষ ভাস্করের মতো তোমাকে তৈরি করতে চান
অতীতজয়ী কোনো মহানায়কের আদলে,
অথচ তোমাকে হতে হবে ভবিষ্যতের নকিব।
তাদের সব আশা ছাইদানিতে ফেলে, সব বিশ্বাস হত্যা করে
তোমাকে হতে হবে মুক্ত বিহঙ্গম—
দুরন্ত বাজ তুমি, আশিয়ান তোমার আসমান।
শৈশব ও কৈশোরের উত্তাল দিনগুলি
আনন্দ-বেদনার স্মৃতিসমেত কেটেছে যাদের সাহচর্যে,
যারা বসবাস করে তোমার অন্তরে, অভ্যন্তরে,
যাদের হাসিমাখা মুখ ছাড়া ভাবা যায় না দূর ভবিষ্যৎ—
একদিন তাদের নজরে তুমি হয়ে উঠবে আজনবি,
তোমার কথা যেন সান্ধ্যভাষা
কিংবা শত কোটি আলোকবর্ষ দূরের পৃথিবীসদৃশ গ্রহ।
তুমি চাইবে সৈনিকের মতো তাদের পায়ের সাথে পা
মিলিয়ে চলতে, কিন্তু হঠাৎ দেখবে তুমি মেঘের ওপর
আর তারা তখনও নির্মোহ নিশ্চিন্তে হাঁটছে মাটিতে—
ঠিক তখনই গলায় পরে নাও বিশ্বাসহন্তার স্বর্ণপদক,
আর খুঁজো বিশ্বাসঘাতকতার প্রয়োজনে নতুন বন্ধু।
সেল্ফ-পোর্ট্রেট
এক কল্পিত আশ্রয়, নিজেরই সৃষ্টি—
পড়ে গেলে যে ধরে ফেলবে এমন ধারণায়,
আছড়ে পড়ি আমি আমারই মাঝে
যত দূরেই যাই, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে
ফিরে আসি নতুন সীমান্তে,
নীড়হারা পাখি আপন নীড়েই ফিরে
আমাতেই আমি সহবাসী—
সৌন্দর্যের আড়ালে কদর্যতায়
আপনারই পাঁকে ডুবে মরি
দিনমানের প্রতিটি রঙ—
সময়ের ফেরে গল্পের চর্বিত চর্বণ :
নিঃশব্দের চিখ
বায়ুহীন গ্লাসে অগ্নি
ধুলোর আশ্রয়ে জলকণা
কাটা আঙুলের দপদপ অনুভব
কিংবা আশাবাদের আবাদ—
সসীমের মাঝে অসীমের পরিহাস
সত্যমার্গ
গভীরে যাও আরও, মুক্তো-তালাশি তুমি
ভুলে যাও ফিরবার পথ—
সিদ্ধান্ত দেওয়ার তুমি নও কেউ
আলমে মেসালের পবিত্র ইশারায়
তোমার সামনে হাজির হয় ঘটনার ঘনঘটা।
দুই আর পাঁচে করো গুণ অথবা যোগ—
একমাত্র দুঃখই হয় তোমার পথসঙ্গী,
জীবন হয় পাপে পঙ্কিল।
অনির্বাণ এই অগ্নি থেকে মুক্তি বাসনা হয় যদি
তবে নিয়তির রজ্জুতেই দাও আত্মহুতি
স্বাধীন ইচ্ছায় হাতে নাও এশকের জহর :
নারীর হৃদয়—
আহা, সে তো ‘দোজখপুর বেহেশত’,
সোনার হরিণ নেই জেনেও রামচন্দ্রের
মায়ামৃগের পেছনে ছোটা।
এশক চায় চিরস্থায়ী বাঁধন
কিন্তু স্থান ও সময়ের প্রভাবে
অভিন্ন থাকে না নশ্বরের আবেদন।
মুক্তো-তালাশির কখনও লক্ষ্য হয় না ঝিনুক
আলেয়াকে আরাধ্য বানায় না কোনো বুক।
তাই এশকের নুর—
তাজাল্লিতে যার ছাই হয় কোহে তুর,
জখমি হৃদয়ে অজানা ঠাটে বাঁধো তারই ধূন
দিন ভুলে তার মদিরাতেই হও চুর।
আশেক হয় মাশুকের রঙে রঙিন—
খুঁজে নাও আপন নফসে অবিনশ্বরের চিন,
দিল লাগাও পেতে তারই সন্ধান—
হাতছানি দেয় দেখো ‘লা জমান লা মাকান’!
বাহ, শব্দের বহতা বেখাপ্পা নয়। প্রীত হলাম!
সুন্দর লিখেছেন!
মা শা আল্লাহ।
পুলকিত না হয়ে পারলাম না।
কবিতার নাম ও কামে একদম পারফেক্ট বলে মনে করি।