খৈয়ামের জীবচরিতের উৎস ও সূত্র : একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা (২য় কিস্তি)

মূল : সাইয়িদ সুলাইমান নদবী

আবদুস সাত্তার আইনী

খৈয়ামের জীবচরিতের উৎস ও সূত্র : একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা

অধুনা প্রাপ্ত দুটি নতুন উৎস : খারীদাতুল কাস্‌র ওয়া জারীদাতুল আস্‌র এবং তারীখ হুকামায়িল ইসলাম

বর্তমান সময়ে প্রাচীনত্বের বিচারে খৈয়াম সম্পর্কে দুটি অত্যন্ত প্রাচীন উৎসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মধ্যে একটি হল ইমাদুদ্দীন কাতিব আলইস্ফাহানি কর্তৃক রচিত খারীদাতুল কাস্‌র ওয়া জারীদাতুল আস্‌র (خريدة القصر وجريدة العصر) এবং দ্বিতীয়টি হল আবুল হাসান বাইহাকী কর্তৃক রচিত তারীখ হুকামায়িল ইসলাম (تاريخ حكماء الإسلام)

ইমাদুদ্দীন কাতিব ৫৭২ হিজরিতে খারীদাতুল কাস্‌র নামে আরবি ভাষায় কবিসাহিত্যিকদের জীবনচরিত রচনা করেন। এই গ্রন্থের কপি লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। ‘খুরাসানের কবিকুল’ শিরোনামাধীন ২৩৮ নং পাতায় ওমর খৈয়ামের অবস্থা বিবৃত হয়েছে। আবদুল ওয়াহাব কাযবিনী চাহার মাকালার টীকাগ্রন্থের শেষ পরিশিষ্টে ৩৫৯ পৃষ্ঠায় এই গ্রন্থের বরাত দিয়েছেন।[1]চাহার মাকালার টীকাভাষ্য রচনা করেছেন মূলত আবদুল ওয়াহাব কাযবিনীর পুত্র … Continue reading কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এই যে, আল্লামা কাযবিনী নিজেও ওই মূল গ্রন্থটি (খারীদাতুল কাস্‌র) দেখেননি। কেবল উপর্যুক্ত গ্রন্থাগারে রেইনহার্ট ডোজি (Reinhart Dozy) কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পাণ্ডুলিপিতালিকায় (Manuscripts) ওই গ্রন্থটির নাম তাঁর চোখে পড়েছে। আমি উপর্যুক্ত গ্রন্থাগার থেকে ইমাদুদ্দীন কাতিবের সংশ্লিষ্ট বক্তব্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার এই যে, সফল হতে পারিনি।[2]খারীদাতুল কাস্‌র–এর পিডিএফ কপি এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। আগ্রহী পাঠকগণ তা … Continue reading

মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইমাদুদ্দীন কাতিব আলইস্ফাহানি পারসিক বা ইরানি ছিলেন। তিনি ইস্ফাহানে ৫১৯ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটান আব্বাসীয় মন্ত্রী আউনুদ্দীন ইবনে হুবায়রাহ্‌র (মৃত্যু : ৫৬০ হিজরি) দরবারে, তারপর মসুলে নুরুদ্দীন শহীদের (নুরুদ্দীন যানকি, ৫১১৫৬৯ হিজরি) দরবারে, তারপর মিশরে ও সিরিয়ায় সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর দরবারে। অবশেষে তিনি ৫৯৭ হিজরিতে সিরিয়াতেই মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সুলতান মাহমুদ সালজুকির মন্ত্রী আনু শিরওয়াঁ ইবনে খালিদ (মৃত্যু : ৫৩২ হি.) কর্তৃক ফার্সি ভাষায় রচিত সালজুকিদের ইতিহাস আরবিতে অনুবাদ করেন এবং আলবারকুশ শামী (البرق الشامي), আলফাতহুল কুসী ফিল ফাতহিল কুদসী (الفتح القسي في الفتح القدسي, বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ের ইতিহাস), খারীদাতুল কাস্‌র ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেন। খারীদাতুল কাস্‌র গ্রন্থে তিনি ইরাক, আজম, শাম, জাযিরা, মিসর, মাগরিব (দক্ষিণ আফ্রিকা)-এর ৫০০ থেকে ৫৭২ হিজরির কালপর্বের কবিদের জীবনচরিত লেখেন। তাদের মধ্যে ওমর খৈয়ামও রয়েছে। দেখুন : ইবনে খাল্লিখান, ওয়াফায়াতুল আয়ান।

ইমাদুদ্দীন কাতিব তাঁর গ্রন্থাবলি ছন্দোবদ্ধ আরবিতে লিখেছেন। আমার প্রত্যয় হয় যে, জামালুদ্দীন আলী ইবনে ইউসুফ আলকিতফী ইখবারুল উলামা বিআখবারিল হুকামা (إخبار العلماء بأخبار الحكماء) গ্রন্থে, যা তিনি ৬২৪ থেকে ৬৪৬ হিজরির মধ্যে লিখেছেন, খৈয়ামের অবস্থার বর্ণনা ইমাদুদ্দীন কাতিবের খারীদাতুল কাস্‌র থেকে হুবহু নকল করেছেন। জামালুদ্দীন আলকিতফী (৫৬৮৬৪৬ হিজরি) ইমাদুদ্দীন কাতিবের কিছুকাল পরেই (প্রায় ৫০ বছর পর) সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন; আইয়ুবী সুলতানগণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল এবং নিঃসন্দেহে ইমাদুদ্দীন কাতিবের রচনাবলির ভাণ্ডারও তাঁর সামনে ছিল। আলকিতফী যেভাষায় ওমর খৈয়ামের বর্ণনা দিয়েছেন তা ছন্দোবদ্ধ ও কাব্যিক, যা তাঁর রচনাশৈলীর সঙ্গে মেলে না, বরং ইমাদুদ্দীন কাতিবের রচনাশৈলীর সঙ্গে মেলে।

ইস্ফাহানে জন্মগ্রহণ এবং ইরাকে ও বাগদাদে অবস্থান করার ফলে ইমাদুদ্দীন কাতিবের ওমর খৈয়াম সম্পর্কে পুরোপুরি জানাশোনা ছিল। ওমর খৈয়াম যে বাগদাদে ভ্রমণ করেছিলেন এই তথ্যও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে জানিয়েছেন। ইমাদুদ্দীন কাতিব বাগদাদের নিযামিয়া মাদ্রাসায় পড়য়া ফকীহ ও মুহাদ্দিস ছিলেন। তাই তিনি ওমর খৈয়ামকে প্রশংসাসূচক বাক্যে স্মরণ করেননি।

ওমর খৈয়াম সম্পর্কে ইমাদুদ্দীন কাতিবেরও পূর্ববর্তী তথ্যউৎস রয়েছে। তা হল আবুল হাসান জহিরুদ্দীন আলী ইবনে যায়দ বাইহাকী (মৃত্যু : ৫৬৫ হিজরি) কর্তৃক রচিত তারীখ হুকামায়িল ইসলাম গ্রন্থটি। সম্প্রতি এই গ্রন্থের খোঁজ পাওয়া গেছে। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে এটির একটি কপি রয়েছে। এই গ্রন্থাকার সেই ব্যক্তি যাঁর উদ্ধৃতি মাওলানা খসরু আবারকুহী ফিরদাউস আততাওয়ারীখে দিয়েছেন। জহিরুদ্দীনের পিতা ওমর খৈয়ামের বন্ধু ছিলেন। জহিরুদ্দীন অল্প বয়সেই তাঁর পিতার সঙ্গে ৫০৭ হিজরিতে খৈয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তাঁর উপর্যুক্ত গ্রন্থ ৫৪৯ হিজরিতে লিখেছেন। এই গ্রন্থের কপিতে যেআরবি বাক্যে ওমর খৈয়ামের উল্লেখ রয়েছে তা ড. ওয়াইল বার্লিন থেকে নকল করে পাঠিয়েছেন এবং Bulletin of the School Of Oriental Studies, London Institution (১৯২৯)-এ প্রকাশিত হয়েছে।

আবুল হাসান জহিরুদ্দীন বাইহাকী কর্তৃক তারীখুল ইসলাম গ্রন্থের আরেকটি নাম হল তাতিম্মাতু সিওয়ানিল হিকমাহ (تتمة صوان الحكمة)। গ্রন্থটির সটীক ফার্সি অনুবাদ রশীদুদ্দীন ফাদলুল্লাহ্‌র (নিহত : ৭১৮ হিজরি) পুত্র গিয়াসুদ্দীনের আমলে দুর্‌রাতুল আখবার ওয়া লুমআতুল আনওয়ার (درة الأخبار و لمعة الأنوار) নামে সম্পন্ন হয়। (অনুবাদ করেছেন মুনশি নাসিরুদ্দীন ইবনে মুনতাজিবুদ্দীন আলইয়াযদি।) লাহোরের ওরিয়েন্টাল কলেজ ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিকভাবে গ্রন্থটি প্রকাশ করে জ্ঞান ও শাস্ত্রের প্রতি অনুগ্রহ করছেন। এতেও (পৃ. ৮৮) ওমর খৈয়ামের অবস্থার ওই বর্ণনাই দেওয়া হয়েছে যা জহিরুদ্দীন বাইহাকীর গ্রন্থে রয়েছে।

চলবে…

তথ্যসূত্র:

তথ্যসূত্র:
1 চাহার মাকালার টীকাভাষ্য রচনা করেছেন মূলত আবদুল ওয়াহাব কাযবিনীর পুত্র মির্জা মুহাম্মদ। গ্রন্থটি ১৯১০ সালে Leyden: E J Brill থেকে এবং Luzac & Co, London থেকে মুদ্রিত হয়েছে। অনুবাদক
2 খারীদাতুল কাস্‌রএর পিডিএফ কপি এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। আগ্রহী পাঠকগণ তা ডাউনলোড করে সংশ্লিষ্ট বক্তব্যটি দেখে নিতে পারেন। অনুবাদক।

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷