জুলাইয়ের স্মৃতিরক্ষা, ইতিহাস ও ডকুমেন্টস সংগ্রহ করা নিয়ে কাজ করা সংস্থা জুলাই রেকর্ডস ২০২৫ এর মার্চের ১৮ তারিখ শহিদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত’র মায়ের এই ইন্টারভিউটা নেন। জুলাই রেকর্ডসের পক্ষ থেকে এই সাক্ষাৎকারটা গ্রহণ করছেন কাজী ওয়ালী উল্লাহ ও সুলাইম মাহমুদ। সাথে ছিলেন সানজিদ সাগর ও আবু নাসের তারেক।
কাজী ওয়ালীউল্লাহ : আন্টি, আপনার ছেলে শহিদ শান্ত’র ব্যাপারে বলেন আমাদেরকে।
কোহিনূর আক্তার : আমি একটা প্রাইভেট স্কুলে চাকরি করি। আমার ছেলে শান্ত বাসায় থাকতো আমার সাথে। কলেজে পড়তো। অবসর টাইমের জন্য দুইটা টিউশনি নিয়ে দিছিলাম শান্তকে। অবসর সময়ে পড়ানোর জন্য। সকালে ওর অবসর থাকে। আমার একটা মেয়ে আছে। মেয়েটাকে একটা কোচিং-এ দিছি। সকাল ৬টায় শান্ত নিয়ে যাইতো ওর বোনরে। ১৬ জুলাই মেয়েটা পাশের বাসার এক ছেলের সাথে যায় কোচিং-এ। ও আর উঠে না ওইদিন। আমি স্কুলে যাওয়ার আগ দিয়ে বলি, বাবা দরজাটা বন্ধ করে শোও! ঘরে তো কেউ ছিলো না। আমি আমার মেয়ে আর শান্তই থাকতাম বাসায়। ওর বাবা বাড়িতে থাকে না, জানেন মনে হয়।
স্কুলে যাওয়ার আগে ওর জন্য নাস্তা আর দুপুরের খাবার বানায়ে রেখে যাইতাম। সকালে চা-পরোটা ছাড়া কিছু খাইতো না। পরোটা-চা বানায়ে রেখে যাইতাম। ও উঠে খাইতো।
তো ওইদিন আমি স্কুলে চলে গেছি। স্কুল শেষ হয় ১.৪০-এ। তারপর টিউশনি ছিলো। সব শেষ করে ৩টায় বের হই আমি। শান্তর ৩টা টিউশন ছিলো, একটা সাড়ে ১১টায়। একটা ৩টায়। একটা সন্ধ্যা ৭টায়। এইদিন মানে ১৬ জুলাইয়েও টিউশনে যায় শান্ত। সাড়ে ১১টারটায় যায় । তিনটারটায় যায় আগে আগে। দুইটার দিকে। টিউশনিটা ছিলো ব্যারিষ্টার কলেজের এদিকে। খুব তাড়াহুড়া করে নাকি পড়াইছিলো। বলছে আজকে একটু কম পড়াই, পরদিন আশুরার বন্ধ থাকবে, বেশি করে পড়ায়ে দিবে। আমি তো জানি না আন্দোলন এতো উত্তাল এদিকে। ওরা জানে। আগ থেকেই নাকি ঠিক করে রাখছিলো কালকে যাবে আন্দোলনে। এসব কিছুই জানতাম না আমি। স্কুল শেষ করে আমি আসলাম বাসার কাছাকাছি। আমার সাথে আমার মেয়ে। ওর নাম সুমাইয়া। রোডের এপাশে বাসা আমার, ওপাশে স্কুল। রাস্তা ক্রস করে আসার সময় ও ‘সুমাইয়া সুমাইয়া’ বলে ডাকতেছে। বোনকে ডাকতেছে। আম্মুকে ডাকে নাই রাস্তা দেখে। তারপর ডাক দিয়ে ব্যাগ থেকে বাসার চাবিটা বের করে হাতে দেয় আমার। অথচ বাসার চাবি দুইটা। একটা ওর কাছে থাকে। একটা আমার কাছে। কখনো এমন হয় না যে ওর চাবিটা আমাকে দিয়ে দেয়। ওইদিন মনে হয় বুঝতে পারছিলো ও যে আর ফিরবেনা ঘরে। মা’রে চাবি বুঝায়ে দিয়ে গেছে এজন্য। হাসি হাসি মুখে বললো চাবিটা নাও আম্মু।
খুব নূরানী লাগতেছিলো আমার ছেলের চেহারা ওইদিন। খুব মায়াবী। চাবি দিয়ে চলে যাইতেছিলো ও। কাঁধে কলেজব্যাগ। আমি ডাক দিলাম আব্বু কই যাও। তোমার না টিউশনি আছে। টিউশনির খুব তদারকি করতাম আমি। আমার স্কুলের স্টুডেন্ট ওরা। কোন কমপ্লেন যেন না আসে। ও বলে আম্মু আমি একটু ২ নাম্বার গেট যাবো। আর আদ্রীতারে পড়াই দিছি দুইটার সময়। আমি বলি তোমার তো আরেকটা টিউশন আছে বাবা। ছেলেটা নাইনে পড়তো। পরীক্ষা ছিলো। বলছি ওরে পড়াবা না? বলে আম্মু আমি মাগরিবের আগেই চলে আসবো। এরপর বাসায় চলে যাই আমি। বাসায় কিছু টিউশন ছিলো আমার। ওগুলা শেষ করি, লাঞ্চ করি। তারপর তো বিকাল হয়ে আসলো। ও তো আসার কথা ছিলো সন্ধ্যায়। ও বাহিরের কিছু খাইতো না। চা-পরোটা পছন্দ করতো। ওর জন্য চা রেডি করিতেছিলাম, পরটা বানাইতেছিলাম যে, আসলে খাবে। এরমাঝে আমি ওর বোনকে বললাম, তোমার ভাইয়ারে কল দাও একটা। মেয়ে বললো আম্মু, ভাইয়ার মোবাইল তো বন্ধ। আমি অতো চিন্তা করি নাই। মোবাইল টিপতো তো অনেক। সবসময় চার্জ থাকতো না। ভাবলাম এমন কিছুই হবে। পরে চা বানাই নাই আর। ঠান্ডা হয়ে যাবে ভেবে। পরোটাও কাই করে রেখে দিছি। এরমাঝে দুইটা ছেলে আসে ওর কলেজের, একই কলেজে পড়তো। আমাদের এলাকার। ওরা খবর পাইছে যে ফয়সাল ডেড। ওদের সাথের সবাই বলে দিছে আন্টি যেন বুঝতে না পারে। এরমধ্যে একটা ছেলে আন্দোলনে যায় নাই ওইদিন, ওর ইন্টার পরীক্ষা ছিলো। বাকি যারা আন্দোলনে গেছিলো শান্তর সাথে, ওরা কেউ বাসায় ফিরতেছিলো, কেউ পথের মধ্যে ছিলো। যে যেখান থেকে শান্তর খবর পাইছে, কেউ আমার কাছে এসে বলার সাহস করে নাই। সবাই মেডিকেলে চলে গেছিলো।
আমার বাসায় আসা ছেলেটার নাম ছিলো নোমান। ওকে শান্তর এক বন্ধু ফোন করে বলছে যে শান্ত তো ডেড, আন্টিকে কীভাবে বলবি! কীভাবে নিয়ে আসবি হাসপাতালে। নোমানের বাড়ি ছিলো পতেঙ্গা। ও সেখান থেকে আসছে আমাকে বলার জন্য। আমি তো জানি না কি দুঃসংবাদ নিয়ে ও আসছে। অনেকদিন পর আসছে, আমি তো খুশি। নাস্তা রেডি করতেছি, শান্ত আসবে। একসাথে খাবে। ও আমার পাকঘরে পিছনে এসে দাঁড়ালো। বললো আন্টি একটু কথা আছে, ভেতরে আসেন। তারপর বলে আন্টি একটু রেডি হন। আমাদের সাথে মেডিকেলে যাইতে হবে একটু। আমি বলি কেন? ওরা বলে শান্তর গায়ে গুলি লাগছে। আমি তখনো শক্ত আছি এই ভেবে যে গুলি লাগছে, মরে তো নাই। পুলিশ হয়তো পায়ে গুলি করছে, বা ছিটা গুলি করছে। আমি তো জানিনা আমার কি সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি শুনে খাটে বসে পড়লাম। শক্ত থাকার চেষ্টা করলাম। ওর বাবা থাকে না এখানে। আমি সহজে কিছু জানাই না তাকে। নিজে অসুস্থ হলে বা বাচ্চারা অসুস্থ হলে নিজে সব মোকাবেলা করি, বলি না কখনো। এখনও শক্ত থাকার চেষ্টা করলাম। ওদের জিজ্ঞেস করলাম শান্তমনিরে কই ভর্তি করাইছে? ওরা বললো আন্টি চিটাগং মেডিকেলে। আমি বলি প্রাইভেটে কেন করায় নাই! চিটাগং মেডিকেলে তো ভালো ট্রিটমেন্ট হয় না। আমার কাছে কিছু টাকা ছিলো, সবসময় থাকে কিছু টাকা, ওগুলা নিলাম। ওরা বললো আন্টি তাড়াতাড়ি আসেন। দোয়া করেন, খারাপ কিছু যেন না হয়। এগুলা ছিলো সব মিথ্যা সান্ত্বনা। আমি তো জানি না। এর অনেক আগেই খারাপ কিছু হয়ে গেছে। তারপর একটা সিএনজি করে মেডিকেলে আসলাম। আসার সাথে সাথেই মিডিয়ার লোকেরা দৌড়ে আসতেছে আমার কাছে। ওর বড় ভাইয়েরা মিডিয়ার লোকদের বাধা দিয়ে রাখছে যাতে আমি বুঝতে না পারি। যাওয়ার সাথে সাথে শুনি পাঁচলাইশ থানার ওসি আমারে ডাকতেছে, ফয়সালের মা কোথায়, ফয়সালের মা কোথায়! আমি তো দৌড়ে গেলাম যে, আমার বাবা বুঝি ডাকতেছে আমারে। আমারে তো ভিতরে যেতে দেয় না। আমি বারবার জিজ্ঞেস করি, কেন যাইতে দেয়না আমারে ভিতরে।
কাজী : আপনি ভাবছেন শান্ত ডাকতেছে আপনাকে?
মা : হ্যাঁ। ওই যে ফয়সালের মা কোথায় বললো। আমি ভাবছি আমার বাবা ডাকে আমাকে। এজন্য খুঁজতে আসছে আমাকে। আমি তো দৌড়ায়ে গেছি। আমারে তো ঢুকতে দেয় না, শুধু নাম ঠিকানা নিছে। তখন পর্যন্ত শান্ত বেওয়ারিশ ছিলো। ওমর ফারুক, ওয়াসিম সবাইর গার্জিয়ান আসছে আগে। শান্ত’র তো কেউ ছিলো না হসপিটালে। ওর বন্ধু-বান্ধব কাউকে এলাউ করেনাই পুলিশ।
কাজী : এটা কি রাতেই?
মা : হ্যাঁ মাগরিবের অনেক পর। মাগরিবের আগ দিয়ে নোমান আনতে গেছিলো আমাকে। এরপর সবাই আমাকে নিয়ে খুব ব্যস্ত। এখানে বসতে বলে, ওখানে বসতে বলে। সান্ত্বনা দেয়, শান্ত হইতে বলে। আমি বলি আমাকে আমার শান্তমনির কাছে নিয়ে যান, ওখানে গেলে শান্ত হয়ে যাবো আমি। কিন্তু কেউ তো নিয়ে আর যায় না ওখানে। একবার ওসির অনুমতি নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছিলো, কিন্তু আমার আত্মীয়স্বজনরা বাধা দিছে। কারণ সেই অবস্থায় আর কন্ট্রোল করা যাবে না আমাকে।
কাজী : আপনি কি তখনো বুঝেন নাই শান্ত মারা গেছে?
মা : না তখনো বুঝিনাই। পরে অনেক সময় পর নার্সদের বসার জায়গায় নিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বসাইছে আমাকে। তখন শহিদ ওমর ফারুকের বাবা নাকি শ্বশুর আমাকে এসে বলে আপনি একটু শান্ত হোন। আমাদের একটা লোক মারা গেছে, শান্তর ওখানে যেতে কিছু সময় লাগবে। তখন তো কেমন লেগে উঠছে আমার যে, তাদের লোক মারা গেলে আমার শান্তরে দেখতে সময় লাগবে কেন! আমি বুঝিতেছিলাম না আমি কি স্বপ্ন দেখতেছি না বাস্তবে আছি। ওখানেই মাথা ঘুরে পড়ে যাই আমি। কীভাবে বহন করবো এই বোঝা আমি। কীভাবে!
এরপর সেন্স আসলে প্রশাসন, শান্ত’র বন্ধুবান্ধব সবাই ব্যস্ত আমাকে নিয়ে। ওই ওসি আবার বলতেছে ফয়সালের মা’কে থানায় নিয়ে যাওয়া লাগবে। তারপর আস্তে আস্তে ধরে আমাকে নিয়ে গেলো থানায়। অনেকগুলি পেপারে সাইন করাইলো। পোস্টমর্টেম পেপার, ডেথ সার্টিফিকেট। এরপর আমি বুঝে গেছি আমার মানিক তো আর নাইরে। আর নাই….
এরপর যাকে দেখছি তাকে জড়ায়ে ধরে কান্না করতেছি। বলতেছি… কে আমার শান্তমনিরে নিয়ে গেছে আন্দোলনে। কে শেষ করে দিছে আমার মানিককে। সব পেপার সাইন করার পর আবার মেডিকেলে নিয়ে যায় আমাকে। আবার বসায়ে রাখে। তারপর নোমান এসে বলে আন্টি, সর্বনাশ হয়ে গেছে। শান্ত ভাইরে পোস্টমর্টেমে নিয়ে গেছে। সর্বনাশ তো অনেক আগেই হয়ে গেছিলো। অনেক আগেই…
আমি ওরে বললাম। পুলিশ অফিসারের কাছে আমাকে নিয়ে চলো, আমার ছেলেকে পোস্টমর্টেম যেন না করে। ছোটবেলায় মুরগী জবাই করা যাইতো না ওর সামনে। কোরবানির গরু জবাই করা যাইতো না। রক্ত দেখলে লাফাইতো আমার ছেলে। আমার সেই ছেলেটাকে এতো রক্তাক্ত কে করলো! কেন করলো। ওর তো কোন দোষ ছিলো না। একটা ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলনে গেছে আমার ছেলে। ওর তো কোনো দোষ ছিলো না! কেন মারলো আমার ছেলেকে… ( কান্না করতে করতে)
তোমরা এতগুলা মানুষ থাকতে কীভাবে ওরা নিয়ে গেছে আমার শান্তমনিকে। তোমরা কেন আটকাও নাই। আমাকে ছাইড়া দাও আমি যাবো ওখানে। পরে সবাই দৌড়ায়ে গেছে পোস্টমর্টেমের ওখানে। কিছুই করতে পারিনাই আমরা। শান্তমনিকে করাই ফেলছে পোস্টমর্টেম। পরে লাশ নিয়ে আসার পর আবার ডাক দিছে আমাকে। আমি ছাড়া তো কারো কাছে দিবে না লাশ। আমার হাতেই দিবে। আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারি না আমার শান্তমনি মারা গেছে। আমার মনে হইতেছিলো অন্যকারো লাশ দিবে। আমার শান্ত তো মরে নাই। ওর লাশ কই পাবে। তারপর গাড়িতে করে চলে আসে লাশ। লাশ আসার পর ওর বন্ধুবান্ধবরা বলে আন্টি একটু পুলিশ কমিশনারকে বলেন শান্ত’র একটা জানাজা যেন এখানে করতে দেয়। আমি গিয়ে বললাম, স্যার শান্ত’র জন্ম এখানে, বেড়ে উঠা এখানে। এখানে ওর একটা জানাজা করতে দেন। ওরা মানা করে দিছে, বলে না। লাশ দেওয়া যাবে না। পুলিশ প্রটোকল দিয়ে লাশ বাড়িতে পৌঁছায় দিবো আমরা। মৃত্যুর পর পুলিশ প্রটোকল দেয়। জীবিত থাকতে কেন দিলো না প্রটোকল আমার বাবারে। তাইলে তো এত সর্বনাশ হইতো না আমার! কেন মেরে ফেললো আমার মানিককে ওরা।
আমার স্বপ্ন ছিলো আমার ছেলেকে স্টুডেন্ট ভিসায় বাইরে পাঠাবো। পড়ালেখা করে মায়ের জন্য এওয়ার্ড আনবে আমার ছেলে। আল্লাহ আমাকে এত বড় এওয়ার্ড দিলো এখন। নিয়ে গেলো আমার বাবারে…
লাশ দেওয়ার পর শান্ত’র বড়ভাই, এমন দুইটা ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওদের নামে শান্ত’র হত্যা মামলা দেয়। তারপর চারটার দিকে বের হই আমরা ২ নম্বর গেট থেকে। বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয় লাশ। পরদিন দুপুরে যোহরের পর কবর দেওয়া হয় আমার শান্তমনিকে। জানাজা হয় দুইটার দিক।
কাজী : আপনি কখন দেখেন আপনার ছেলেকে?
মা : পোস্টমর্টেমের পর। তার আগে তো দেখায় নাই। দেখাইতে চাইছিলো, আমার এক আপা দেখাইতে দেয় নাই। দেখাইলে তো রাখা যাবে না আমাকে।
কাজী : যে দুইজন কে এরেস্ট করছে ওরা কি শান্তর সাথেই ছিলো?
মা : হ্যাঁ। শান্তর বড়ভাই ওরা। শান্তই ছিলো সবার ছোট।
কাজী : ওরা কি চট্রগ্রামের?
মা : হ্যাঁ। এখানকার’ই।
কাজী : উনারা ছাড়া পায় কবে?
মা : ৭ ই আগষ্ট। স্বাধীনের দুইদিন পর।
কাজী : আপনারা বাড়ি থেকে চিটাগং ফিরেন কবে?
মা : ২৭ তারিখ।
কাজী : আমরা শুনছিলাম যে বাড়িতেই থাকবেন?
মা : শান্তর বাবা বলছিল থাকতে বরিশাল। কিন্তু আমার ভালো লাগে না। এখানে সবাই আসে শান্ত’র পরিচিতরা। বন্ধুবান্ধবরা। ওদের মাঝেই খুঁজে পাই আমার শান্তকে। রোজার মধ্যেও আসছে ওর বন্ধুরা। আমি তো সারাদিন কান্না করি। দেখতে আসছিলো আমাকে। আমার ছেলেটা খুব ধার্মিক ছিলো। ক্লাস ৫ থেকেই রোজা-খতম তারাবি মিস দিতো না। এই খতম তারাবীর জন্য কোথাও বেড়াইতে যাইতো না আমার ছেলে। কোথাও দাওয়াতে গেলে দৌড়ে দৌড়ে আসতো তারাবি ধরতে। আজকে কে পড়ে সেই তারাবি। কে রাখে আর রোজা…
একটা রোজা কাজা করতো না। রোজায় এক ওয়াক্ত নামাজ মিস দিতো না। কোরআন তেলাওয়াত করতো। ইসলামি বই পড়তো, সাহিত্য পড়তো। সবসময় দোয়া করতো শহিদ হওয়ার জন্য। সবসময় বলতো শহিদি মৃত্যুর কথা। আল্লাহ আমার ছেলের শাহাদাত কবুল করুক। শহিদি মৃত্যু চাইতো। নোমানকে বলতো নোমান শহিদি মৃত্যু কতো উত্তম! কোন হিসাব নাই, বিচার নাই। মরার পরই জান্নাত। ওর ফেসবুক আইডিতেও লেখা ছিলো এটা। ১৬ তারিখ শহিদ হয় শান্ত। ১২ তারিখও শাহাদাতের গজল শেয়ার দেয় ফেসবুকে। ওর ফেসবুকে লেখা ছিলো, রবের সামনে কি নিয়ে দাঁড়াবো নেক আমলের থলিটা শূন্য, বেলাটাও ফুরিয়ে এলো। কতটুকুই বা বয়স আমার বাবার। এই বয়সেও এসব ভাবতো সে। ওর ফেসবুক দেখলে দেখবেন সবসময় এসব নিয়ে চিন্তা করতো আমার ছেলে। আমার শান্তমনি…
কাজী : ওর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিলো?
মা : কীভাবে বুঝাবো বলে। মায়েরা তো ছোটবাচ্চাকে একটু আদর করে বেশি। ভালো জিনিসটা ছোট সন্তানকে দেয়। আমার এমন ছিলো না। আমি শান্তকে দিতাম। শান্ত’র জন্য আদর ছিলো বেশি। আমার মেয়েটা কিছু চাইলে দিতাম না। মেয়েটাকে বলতাম তোমাদের জন্যই তো জমাই রাখি মা। ও বলতো তুমি তো জমাই রাখো ভাইয়ার জন্য। মেয়েটাও জানতো আম্মু ভাইয়াকে আদর করে বেশি। আমি বলতাম তোমার জন্য তোমার ভাই’ই করবে। অনেক মিতব্যয়ী ছিলো আমার ছেলে। অনার্স পড়ুয়া একটা ছেলে একটা কলম লাগলেও আমাকে বলতো। আমি কিনে দিতাম। নিজ থেকে ৫ টাকা খরচ করতো না আমার বাবা। কিছু লাগলে আমাকে বলতো। আম্মু একটা গেঞ্জি লাগবে, একটা ঘড়ি লাগবে। কিছু কিনতে গেলে বলতো আম্মু তুমি পছন্দ করো। মায়ের পছন্দ ছিলো ওর পছন্দ….
কাজী : কেউ কি আপনার সাক্ষাৎকার নিছে আর?
মা : হ্যাঁ অনেকে। বিটিভি, চ্যানেল 24, আরটিভি, এনটিভি। কয়দিন আগে নিছে তথ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন জায়গা থেকেই নিছে।
কাজী : এগুলো কি প্রচার করছিলো?
মা : হ্যাঁ। চ্যানেল 24। ডিবিসি নিউজ। ওরা প্রচার করছে। দেখাইছেও আমাকে। বিটিভি ২৩ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারিও প্রচার করছিলো টিভিতে। তারপর আইডিয়াল কলেজ, এমইএস কলেজ, এটা শান্তর কলেজ। এখানেসহ আরো বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনী হইছে সাক্ষাৎকারের।
কাজী : ভালো লাগে শান্তর কথা বলতে মানুষকে?
মা : কী ভালো লাগবে আর। আমি তো ঠিক নাই। হাঁটতেছি এমন সময় ওই চিত্রটা মনে পড়ে যায় যে, নোমান আসছিলো আমার কাছে শান্তর মৃত্যু সংবাদ নিয়ে। ওর কীভাবে সাহস হলো মায়ের কাছে এই সংবাদ দেয়ার। কোন ডাক্তার এত সাহস করে আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করছে। এসব মনে পড়ে সবসময়। ওরা কোন সাহসে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে গেছে শান্তর লাশ দেখাইতে। এসব মনে পড়লে শরীরে শক্তি থাকে না আমার। নিস্তেজ হয়ে পড়ি আমি। নিজেরে এখন স্বান্ত্বনা দেই এই বলে যে আল্লাহ আমার ছেলেকে শহিদ হিসেবে কবুল করছেন। আমি চাইছিলাম আমার ছেলেকে এভাবে গড়তে, মানুষ যেন ভালোবাসে তাকে। সবসময়। ওর নাম ছিলো শান্ত। নামের মতোই শান্ত ছিলো আমার মানিক। মিডিয়া থেকে লোকজন এসে যখন জিজ্ঞেস করতো, শান্ত কেমন ছিলো। মানুষ বলতো ওর নামের মতোই শান্ত ছিলো। খুব নিরীহ শান্ত ছিলো আমার ছেলে। আল্লাহর রহমতে আমি আমার ছেলেকে তেমন করেই গড়ছি। হয়তো এতদিনই তাকে পালনের যোগ্যতা ছিলো আমার। এরপর আল্লাহ উঠায় নিছে তার হেফাজতে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমার মানিককে ভালো রাখে পরপারে। শান্তিতে রাখে। আপনারা দোয়া কইরেন আমার শান্তর জন্য। আল্লাহ যেন ভালো রাখে ওরে।
কাজী : বুলেট কয়টা লাগছে?
মা : একটা। ছোট বুলেট। নরম ছিলো ও। ফুসফুসে আটকায় গেছে। কেউ বলে হার্টঅ্যাটাক করছে। কিন্তু রিপোর্টে আসছে ফুসফুসে আটকায় মারা গেছে।
কাজী : বুলেটটা কি মানুষ মারার মতো?
মা : হ্যাঁ স্টিলের বুলেট। সন্ত্রাসীদের গুলিতে মরছে আমার ছেলে।
কাজী : পুলিশ গুলি করে নাই?
মা : না ওইদিন পুলিশ গুলি করে নাই।
কাজী : আপনারা বাসা পাল্টাইছেন ওটা।
মা : হ্যাঁ। এখন আমার চাকরি এখানে। সিএমপি স্কুল এন্ড কলেজ। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশের পর এখানে চাকরি হয়। তখন পুলিশ আসছিলো আমাদের বাসায়। উপদেষ্টারও বলার আগে। দেখছে বোন ছোট। জিজ্ঞেস করছে কী করি আমি, বলছি প্রাইভেট স্কুলে জব করি। তারপর এক পুলিশ জিজ্ঞেস করছে উনাদের স্কুলে চাকরি করবো কিনা, তারপর তৎক্ষনাৎ এখানে চাকরি হয়।
কাজী : উনারা কবে আসছিলো?
মা : ১১ তারিখ। তখন তো পুলিশের উপরও অনেক চাপ। কমিশনার, ডিআইজি, সমন্বয়কদের মধ্যে রাফিসহ কয়েকজন আরো অনেক মানুষ মিলায়ে প্রায় ১০০ এর মতো হবে, আসছে বাসায়। পরে কমিশনার রাফি’কে বলছে আমার সিভি নিয়ে যাইতে এই স্কুলে। রাফি যায় নাই তখন, বন্দর থানার পুলিশের গাড়িতে করে পরদিন নিয়ে আসছে এখানে আমাকে। ওইদিন মানুষের কারণে কলোনি ব্লক হয়ে গেছিলো। তখনো পুলিশ প্রশাসন কাজে ফিরে নাই। পরদিন ১২ তারিখ পুলিশ অফিসিয়ালি ডিউটিতে ফিরছে। আমাকে এখানে এনে সংবাদ সম্মেলনও করছে উনারা। ১৩ তারিখ জয়েন করছি আমি স্কুলে।
কাজী : ভালো লাগে এখানে?
মা : হ্যাঁ। এটা স্বায়ত্তশাসিত স্কুল। আগেরটা তো ছিলো প্রাইভেট।
কাজী : বেতন কেমন ধরছে?
মা : এদিকে বাসা ভাড়া বেশি। সব হিসাব করে একটু বাড়ায়ে ধরছে আরকি। এক বছর পর পার্মানেন্ট করে এমনিতে। আমাকে প্রথম থেকেই পার্মানেন্ট করে নিছে। এগুলো হইছে পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে।
কাজী : এই বাসার ভাড়া কতো?
মা : ৮ হাজার ১০০ টাকা।
কাজী : তখনই চলে আসছেন এই বাসায়?
মা : হ্যাঁ। ১৩ তারিখ চাকরি হবার পর চলে আসছি।
কাজী : আগের বাসায় কদিন ছিলেন?
মা : তিন বছর প্রায়।
কাজী : বাসা ছেড়ে আসতে মনে চাইছিল?
মা : মানুষ বলছে যে ওখানে থাকলে আরো বেশি মনে পড়বে শান্তকে। তাছাড়া আমার এই স্কুল অনেক দূর হয়ে যায়। ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমও ভালো না। অনেক পথ। বারোটায় স্কুল ছুটি হইলে আসতে আসতে চারটাও বেজে যেতো। বর্ষার দিন ছিলো। রোড-ঘাটে পানি উঠতো। সব বিবেচনা করেই ছেড়ে আসছি আরকি। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। এখন একটা দোয়াই করি আল্লাহ যেন আমার ছেলের শাহাদাত কবুল করে। এটুকুই চাওয়া এখন।
কাজী : প্রথম দিনই শহিদ হয় শান্ত?
মা : হ্যাঁ। প্রথমদিনই। আবু সাইদ, ওয়াসিম, ওমর ফারুক, শান্ত একইদিনে শহীদ হয়।
কাজী : আপনি তো হাসিনার শাসন দেখছেন, তারপর এখন কোন পরিবর্তন দেখতে পান? হাসিনাকে নিয়ে কোন মন্তব্য?
মা : পরিবর্তন বলতে… হাসিনা যদি দাবিগুলা মেনে নিতো, তাইলে তার এতো অপদস্থ হওয়া লাগ্তো না। তার ক্রেডিটও বজায় থাকতো। আমি ঘরের মা। আমার সন্তানেরা যদি কিছু চায়, সাধ্যের মধ্যে হলে তা দেওয়া উচিত আমার। হাসিনা নাকি দেশমাতা ছিলো। জনগণ তো তার সন্তানের মতো। এই যে ছাত্ররা তারাও তার সন্তানের মতো। কিন্তু সে তাদের ন্যায্য দাবি মানে নাই। গুলি করছে। দুই হাজারের উপর মানুষ মারছে। কত কত মানুষ আহত করছে। আমাদের ওদিকে এক লোকের চোখে গুলি লাগছে, তার চোখ ডিম পঁচে গেলে যেমন হয়, তেমন হয়ে গেছে। কি ভয়াবহ অবস্থা। মাঝেমধ্যে ভাবি, আল্লাহ আমার ছেলেকে শাহাদাতের জন্য কবুল করছে, যদি আহত হইতো, বেডে শুয়ে কাতরাইতো। সেটা তো আমি নিতে পারতাম না মেনে। আমার ছেলেটা নরম ছিলো। ওর শরীরও নরম ছিলো। কিন্তু বুকভরা সাহস ছিলো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলো। পাথর নিছিলো মারার জন্য। এইসময় গুলি লাগে বুকে। শহিদ হয়ে যায়।
কাজী : শান্ত কি আন্দোলন নিয়ে আলাপ করতো আপনার সাথে?
মা : না। তেমন না। আমি জানতামও না আন্দোলন এতো উত্তাল। কিন্তু বলতো যে মা আমাদের চাকরি হবে না এদেশে। সবখানে কোটা। এজন্যই আমি বিদেশে পাঠাইতে চাইছিলাম ওরে। কয়দিন পর পাসপোর্টও বানাইতে দিতাম। আমার ভাই আছে বিদেশে। কোরবানির ছুটিতে ভাই দেশে আসে ২১ দিনের জন্য। শান্তকে দেখে আমার আম্মার দিকে তাকায়ে বলে ‘মা, ভাগিনা তো আমাদের ছাড়ায়ে গেছে লম্বায়। ওকে বিদেশ নিয়ে যাবো।’ আমার তিনভাই মিলে বিদেশে ফ্যাক্টরি দেওয়ার কথা ছিলো। শান্তকে সেটার ম্যানেজার বানানোর কথা ছিলো। আমার একটা আশাই ছিলো, ছেলে বিদেশ যাবে স্টুডেন্ট ভিসায়। পাশাপাশি জব করবে। কিন্তু আল্লাহ তো শাহাদাতের জন্য কবুল করে নিলো।
কাজী : জুলাই-আগষ্ট শহীদদের বিচার নিয়ে যে দাবী উঠতেছে আপনার কি মতামত এই ব্যাপারে?
মা : বিচার তো অবশ্যই দাবি করি। আমাদের সন্তানদের যারা খুন করছে, তাদের বিচার চাই। এমনভাবে বিচার করা হোক যাতে ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী মায়ের বুক এভাবে খালি করতে না পারে। ভয় পাই।
কাজী : শান্তর একটা ছোট বোন আছে। ওকে কীভাবে সামলাইছেন?
মা : আমি তো শুনাই নাই ওর বোনরে। আমি আগে একটা কথা বলছিলাম যে আমি সবসময় এসব ব্যাপারে শক্ত থাকার চেষ্টা করি। কারণ ওর বাবা নাই এখানে। আমার সব মোকাবেলা করা লাগে। যখন নোমান খবর নিয়া আসে, তখন তো জানি না এতো কিছু। আমি মেয়েকে বলছি তুমি কাপড়চোপড় গুছায়ে রাইখো। তোমার ভাইয়াকে ভর্তি করার পর তোমাকে এসে নিয়ে যাবো আম্মু। পরে তো নেটে সব দ্রুত ভাইরাল হয়ে গেলো। মানুষ আমাকে ফোন দিতেছিলো শুধু। আমি শুধু চেষ্টা করছি মেয়েটা যেন না জানে। কীভাবে জানাবো ওকে। বাইরে থেকে কেউ একটা চকলেট দিলেও বাসায় এসে ভাইবোন ভাগ করে খেতো। কবুতরের জোড়ের মতো ছিলো দুইজনে। কীভাবে আমি ওর বোনকে ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ দিতাম!
মেডিকেলে যখন আমি কান্না করি, মেয়েটাও আমার দেখাদেখি কান্না করে। আমি ওরে ভুলায়ে রাখি। বলি মা, কান্না কইরো না, মানুষ খারাপ বলবে। তখনও জানি না আমি শান্ত’র কোথায় গুলি লাগছে। মেয়েটাকে বাসায় রেখে গেছিলাম। পুলিশ আমি ছাড়া কাউকে যাইতে দিবে না ওরে আনতে। আমি গেলাম পুলিশের গাড়িতে করে। এদিকে নেটে তো সার্কুলার হয়ে গেছে সংবাদ। আমি আশেপাশের, কলোনির সবাইকে বলে দিছি খবরদার, আমার মেয়ে যেন বুঝতে না পারে। বুঝতে পারলে পাগল হয়ে যাবে ও। কলোনির সবাই কান্নাকাটি করতেছিলো। বললাম না আমার শান্তমনি এমন এক ছেলে ছিলো, নম্র, ভদ্র, নামাজি, কালামি, সুসন্তান ছিলো। সবাই পছন্দ করতো ওরে। সবাই। আমার পাশের ফ্ল্যাটে এক মহিলা ছিলো। উনার বাবা নাই। উনি কান্না করছে আর বলছে আমার বাবার মৃত্যুতেও এমন শোক পাই নাই আমি। শান্তর মৃত্যুতে যেই শোক পাইছি। এমনি ছিলো আমার ছেলে। এমন ভালোবাসতো মানুষ ওরে।
আমি পুলিশের গাড়ি নিয়ে বাসায় যাবার পর ওর বোন বলে, আম্মু ভাইয়া কই? আমি বলি মা তোমার ভাইয়ারে বরিশাল গিয়ে ভর্তি করাবো। এখানে কে দেখবে ওরে। ওখানে তোমার আব্বু আছে, মামি আছে। এসব বলে আমি ভুলায়ে রাখছি মেয়েরে। আমি ওর সামনে কান্না করি নাই। চাপায়ে রাখছি। ও যেন না বুঝে কিছু!
আমরা গাড়ির সামনে বসছি, পিছনে শান্ত’র টিচার আর একটা আঙ্কেল শান্ত’র। ঢাকা মহানগর পার হবার পর ফজরের নামাজের সময় হইছে। গাড়ি থামাইছে। আমার মনে পড়ে গেছে শান্ত তো ফজরে উঠতো সবসময়ই। আমি রাখতে পারি নাই আর, চিৎকার দিয়ে উঠছি। ওর আঙ্কেলের ফোনে কে যেন কল দিছে। উনি মোবাইলে বলতেছিলো যে, শান্ত’র লাশ নিয়ে যাচ্ছে। তখনই ওর বোন কানখাড়া করে ফেলে যে, কি বলে এগুলা! তারপর তো কান্না শুরু করছে। আমি তো আর মানায়ে রাখতে পারি না। এতক্ষণ ভাবছিলো ভাইয়াকে বুঝি স্যালাইন দিয়ে রাখছে। এখন শুধু বলে আমার ভাইয়া কই, আমি আমার ভাইয়ার কাছে যাবো। ও তো পরে দেখছে আমি এতো ভেঙে পড়ছি। এরপর থেকে ওর ভাইয়াকে নিয়ে কোন ভিডিও বা লেখা ও আমাকে দেখায় না। নিজে লুকায় লুকায় দেখে। ফেসবুক ইনস্ট্রাগ্রামে চেক করে কেউ ওর ভাইকে নিয়ে কিছু লিখছে কিনা! একা একা পড়ে ওগুলি। আমাকে দেখায় না। শান্তর বন্ধুরা প্রায় আসে। এক দুইদিন পরপর আসে। কিছুদিন না আসলে মেয়েটা বলে আম্মু, ওই ভাইয়াটাকে একটু আসতে বলো। ওকে একটু আসতে বলো। আমার মেয়েটা এমন ব্যাকুল হয়ে গেছে। একা হয়ে গেছে।
কাজী : ও কি এখন আমাদের সামনে আসবে?
মা : না। ও মিডিয়ার সামনে আসে না। কারো সামনে আসে না। সবশেষে খোদা যদি আমার ছেলেকে শহিদ হিসেবে কবুল করে, তাহলেই আর কোনো আফসোস আমার থাকবে না। আল্লাহ যেন কবুল করে আমার ছেলেটাকে…