কবি এবং অন্যান্য কবিতা

আতিক আবদুল্লাহ

কবি

শব্দ‌ই আশ্রয়; জেগে ওঠা সৃষ্টির আশ্চর্য যন্ত্রণা

এরপর সমস্ত পতনজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়া অন্ধকার

 

গ্রীষ্ম শুরু হলে মনের ভেতর ওম জন্মায়

 

বুঝতে পারি মুহূর্তে শব্দের আদর।

 

তারপর ত্রিকোণমিতির ঘোর থেকে বেরিয়ে সামনে পড়ে

তোমার সুন্দর নাম; নোঙর ধীরে পড়ে যায়

 

ঘুম শব্দের চেয়ে আমার পছন্দ তার নোলক।

 

শব্দ‌ই যন্ত্রণা; জেগে ওঠা মৃত্যুর আশ্চর্য আনন্দ

এরপর সমস্ত পতন জুড়ে ছড়িয়ে যাওয়া আলো

 

বসন্ত শুরু হলে মনে হয় এখন‌ই চলে যাওয়া ভালো।

 

অনুবাদহীন আমার আলহামদুলিল্লাহ

শহরে অবসর-গল্প এলে

আমি একা ঘুমিয়ে পড়ি রোজ।

আর ঠিক তখন‌ই

মৃতদেহের সামুদ্রিক যাপন

আমার স্বপ্নকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।

 

অথবা মৃত মরুভূমির

কোন‌ও এক একাকী বালির একান্ত আপন স্বর

আমার চোখের উপর পড়ে; আমি জীবিত হ‌ই।

 

মানুষের সামুদ্রিক ভিড়

আমার কৌতূহলে চুমু খায়, দেহ ছুঁয়ে রক্তে

প্রবেশ করে, রক্তের লাল রং

মৃত্তিকার মতো চোখে অনন্ত ভাবুক এঁকে দেয়।

 

আঙুলের মতো আশ্চর্য আত্মীয়

কোথাও পাইনি দেখে হাত ডোবাই জলে,

অনন্ত অপেক্ষা‌র পর

কিছুই সঞ্চয় থাকে না বুঝে যাই;

চাষীর নগ্ন হাত থেকে ফসলের সুগন্ধ ভেসে এলে

আমি মুগ্ধ নেমে যাই প্রাচীন মাটির শরীরে।

 

আশ্চর্য দেখি

পাখির বাসার নীচে মানুষের সন্দিগ্ধ ঘর

মুগ্ধ বেঁচে থাকে সমস্ত বর্ষা,

জল জমে গেলে একটি ভেজা পতঙ্গ লাফ দেয়;

ফড়িংয়ের চেয়ে আশ্চর্য সুখী

আর কেউ নেই ভেবে শিশুর মতো রাস্তা

পেরিয়ে যাই;

সমস্ত যাপনে জমে ওঠে সিজদা ও আশ্চর্য ঊর্ধ্বগামিতা

 

আসলে

কচু পাতার পুরুষ্ট দেহ, ঘাসের আপন

কন‍্যারা

মাটির নিবিড় ছোঁয়া,

চিৎ হয়ে দেখা অল্পবয়সী ঘরের আঙুল

এবং আরও অনেক আড়াল-প্রিয়রা

আমার একান্ত অনুভব, একাকী দৃশ‍্যবিন্দু

এবং আমার অনুবাদহীন ‘আলহামদুলিল্লাহ’।

 

রাতের যেখানে আমি হয়ে উঠি সিজদা-মানব

পাথর। অথবা তার মতো। সংখ্যার পরবর্তী ধাপে

যা কিছু হিসেব, সেরকম দীর্ঘ কিছু রাত।

 

ফসলের খেতে নক্ষত্র নেমে আসে। ছিঁড়ে ফেলে

হলুদ অভ্যাস। গান। ঘুম।

 

পাথর ভেঙে যায়। বেরোয় কিছু চারা। কিছু ফুল।

কিছু রাত দীর্ঘ সিজদা ভালোবাসে।

 

কবুলনামা

১.

কবুল বলবার পর ধূসর পাণ্ডুলিপি ছেড়ে

ফিরে যায় ধুলোর সেপাই

বিহ্বল নিস্তব্ধতা জমা রাখি চোখের সাঙাতে

ধ্বনিগুচ্ছ ছড়িয়ে পড়লে

শিশিরের শব্দের ভিতর নিজেকে বলি

মাহরাম বিদায় নিলে তোমাকে বলতে হবে

সরে যেতে পারে আজ তোমার নিকাব

২.

পুরুষ আজন্ম কথক।

তারপর দেখা হয় মেয়েটির সাথে; দিঘল এক মেয়ে।

পুরুষ আদতে শ্রোতা—কথা বলো বেগম সাহেবা।

৩.

পুরনো স্থাপত্যের গায়ে আয়াত-অভ্যাসে

আমিও মুহূর্তে ঐতিহাসিক-

 

এই প্রস্তাবে

তোমাকে আবিষ্কৃত বলে আমাদের ভ্রম হল খুব।

 

তারপর, গোধূলি অথবা অন্যরা ফিরে গেলে

সৌধ নির্মাণ ফেলে আমি শুধু তোমাকে চেয়েছি

৪.

আমার আঙুল থেকে খসে গেছে বিবর্ণ নূপুর

চাদরে জমেছে কিছু অবেলায় হেমন্তের চাঁদ,

সন্ধের পর পুনরায় সন্ধেরা সার বেঁধে চলে গেলে

তোমার মুখের কাছে জমিয়েছি আলো-লন্ঠন;

বুঝেছি, তোমার চোখের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কবিতা

পড়িনি আর।

৫.

সদ্য দেখেছিলাম তাহার পরে

মৌরি ফুলের গন্ধে সারা মুখে

সেই মেয়েটি নোঙর ভালোবাসে।

তেমন করে পা মেলাব বলে

রাত হয়ে যায় গলির বাঁকে রাতে

পথে প্রবাসে কেবল তাহার মুখে

মধ্যপ্রাচ্য পাহাড় খেলা করে।

ঝরনা কাঁদড় নরম কাশফুলে

পায়ের নীচে বালির অনুভবে

পশু ও তার চারক গেছে গাঁয়ে।

খ পরানো নাকের নোলক তুলে

কবুল বলো কবুল তার চোখে

সদ্য দেখেছিলাম তাহার পরে

মৌরি ফুলের গন্ধে সারা মুখে

সেই মেয়েটি বধূর সাজে বসে।

৬.

আরেকটু নির্জনতা থেকে কুড়িয়ে নেবো

নুড়িপাথর বালি,

চৌরাস্তার মোড়ে হাত রাখলেই ঘুম উড়ে যাবে

পায়ের পদচিহ্ন ঢেকে যাবে হাওয়ায় হাওয়ায়,

অধিবেশন শেষ হলে বলব

ফিরতে দেরি হলে চোখের কিনারে

তুমি পরিয়ে নিও আগল;

শালুক বা পদ্ম নিয়ে ফেরবার পথগুলো

হঠাৎ-ই দীর্ঘ মনে হলে

ভেবে নেবো

সামান্য নির্জনতা আদতে আজ মদিনা নগর।

 

‘সহৃদয়হৃদয়সংবাদী’

মিছিলে কেমন হেঁটেছি সে খবর

ছেপেছে সাময়িকী; ছাপেনি তোমায় অকারণ।

এদিকে শাঙখ দীর্ঘ পড়ে থাকে

সাথে কিছু ব্যর্থ নীল ফুল,

বালিগুলো জামা ছুঁয়ে পড়ে থাকে কাছে

শূন্য পকেটে জমে মনখারাপ।

শিকড়ের নীচে যেখানটা অন্ধকার সেখানে

সাময়িকী থেকে শব্দ খুঁড়ে খুঁড়ে তোমাকে খুঁজেছি—

অথচ আমায় কেউ বলেনি

তারা আজ বহুকাল ছাপে না তোমায়।

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷