“এইসব বিষণ্ণতাকে পাত্তা দিও না,” ওর কথা শুনে মুখ তুলে তাকাই। উষ্ণ হাসিমাখা মুখ ওর। “তাহলে কিন্তু আলোভরা দিন তোমার দিকে তাকায় থাকলেও তুমি দেখবা না।”
“কীসের কথা বলতেসো?”
“আমি শুধু এইটা বুঝাইতে চাইতেসি যে, এখন পরিস্থিতি যত খারাপই হোক, সবকিছু তো আর এখানেই শেষ না। জীবনের মোড় পরিবর্তন করা এখন কঠিন ঠিকই কিন্তু কেমন পরিবর্তন প্রয়োজন সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও ভিন্ন ভিন্ন নিতে হয়। তোমাকে আমি বিজ্ঞানের ভাষায় বুঝাই। দেখো, ক্যান্সার আর ফোঁড়ার চিকিৎসা তো আর একরকম হয় না, তাই না?”
আমি হেসে ফেলি। “তুমি কবে থেকে ডাক্তারি ভাষা শেখা শুরু করসো?”
ওর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। “আমার মতো শিল্পীরা জীবন থেকে শেখে। পারলে আমাকে ভুল প্রমাণ করো।”
“ওয়েল, ক্যান্সার হইলে টিউমারটাকে ফেলে দেয়ার জন্য সার্জারি করা লাগে কিন্তু প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। অনেক কিছু মাথায় রেখে করতে হয়।”
“আর ফোঁড়া হইলে?”
“ওইটার কাজ স্যালিসাইলিক এসিডেই হয়ে যায়।”
“আর যখন ক্যান্সারের সার্জারি সফল হয়, রোগী যখন নতুন জীবন ফিরে পায়, তখন কি তার জীবন আগের চেয়ে ভালো হয় না?”
আমি মাথা নাড়ি।
“তোমার কি মনে হয় না এই সিরিয়ান স্বৈরাচার একটা ক্যান্সারের মতো? যেটা সিরিয়ার শরীরে যুগযুগ ধরে বেড়ে উঠতেসে। এক্ষেত্রে ক্যান্সারের কাছে হার মানার চেয়ে সার্জারির রিস্ক নেয়া ভালো না? সমস্যা যখন শেকড়-বাকড় ছড়িয়ে ফেলে তখন পরিবর্তন সহজে আসে না। বিশাল ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে।”
আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকি।
“এখনও আলো আছে, সালামা,” ও বলতে থাকে। “যন্ত্রণায় ভুগতে হইলেও গত পঞ্চাশ বছরে এই প্রথম আমরা মুক্ত।”
আমার চুলের ভেতর ওর আঙুল ভারী হয়ে আসে।
“তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি থেকে যেতে চাও,” আমি বলি।
ও অর্থবহ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। যেন আমার বুকের গোপনে কী আড়াল করে রেখেছি তা ওর জানা। “এই লড়াই শুধু সিরিয়াতেই সীমাবদ্ধ না, সালামা। এই লড়াই এখন সবার।”
ওর সতর্কভাবে চয়ন করা প্রতিটি শব্দ আমার কর্ণকুহরে দুলতে দুলতে প্রবেশ করে, স্নায়ুকোষের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কে গিয়ে কানের পর্দায় প্রতিধ্বনিত হয়। শব্দেরা মস্তিষ্কের কোষের মধ্যে ছোট ছোট বীজের মতো বপিত হয়ে যায় যেন। “আচ্ছা, তুমি কেন আমার মত ত্যক্ত-বিরক্ত হওনি, বলো তো?” আমার নিছক ঠাট্টা কেমন যেন রুক্ষ আর সত্যের চেয়েও কঠিন হয়ে কানে বাজে।
হামযা যখন গ্রেফতার হয় লায়লার জীবনে দুইটা বড় পরিবর্তন আসে। প্রথম পাঁচ সপ্তাহে ওকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দেয়া যাচ্ছিল না। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে এমন কান্নায় ভেঙে পড়েছিল যে ওর গলা ভেঙে গিয়েছিল। তারপর একদিন হুট করেই ও আবার আগের রূপে ফিরে যায়। বনে যায় সেই শান্ত, সদা হাস্যময়ী মেয়েটা যে পুরো হোমসকে আলোকিত করে রাখতে পারে।
“প্রথমত, আমরা কেউই নিখুঁত না”, লায়লার কথা শুনে আমার স্বস্তি হয়। ও বলতে থাকে, “তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো, আমি টের পাই। তোমার ত্যাগ আর কোমলতা তো আমিই দেখি। কী কী হারালাম তারচেয়ে কতটুকু আশা বাকি আছে সেই হিসাবটাই আমার কাছে জরুরি। আমার বুকে এখনও ভালোবাসার অনুভূতি টিকে আছে তোমার কারণেই। কারণ ওকে যখন… যখন ওরা ধরে নিয়ে গেছে, আমার পাশে তুমি ছিলা।”
লায়লার চোখের কোনা থেকে বিন্দু বিন্দু অশ্রুফুল গাল বেয়ে ঝরতে শুরু করে চিবুকে পৌঁছানোর আগেই আমি ধরে ফেলি। বোমা হামলা শুরু হওয়ার দিনগুলোতেই ও বাবা-মাকে হারিয়েছে। আর সেই শোক কাটতে না কাটতেই, মাত্র এক সপ্তাহর মাথায় আমরা মা-বাবা আর হামযাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলি। সবচেয়ে বড় কষ্ট এই জায়গায় যে, বাবা আর হামযা আদৌ বেঁচে আছে কি না-তাও জানি না আমরা।
ওরা বেঁচে নাই ভাবাটাই আমার জন্য সহজ। লায়লার জন্যেও। প্রতিদিনের যন্ত্রণার চেয়ে মরণই বহুগুণে ভালো।
“পৃথিবীর সবাই যদি তোমার মতো হইতো!” আমি বিড়বিড় করে বলি।
লায়লা সামান্য কাঁপা কাঁপা হাসি দেয়। ওর হাত টেনে আমি শক্ত করে মুঠোয় পুরে নিই। হঠাৎ বাইরের প্রচন্ড শব্দে আমরা লাফ দিয়ে উঠি। এতক্ষণের সমস্ত উষ্ণতা উবে গিয়ে চারপাশ আবার শীতল করে তোলে। লায়লা চোখ বন্ধ অবস্থায়ই আমার হাত চেপে ধরে। দুজনে একসাথে দুআ করি যেন যা ভাবছি তা না হয়। আল্লাহ! এটা যেন না হয়। প্লিজ আল্লাহ! এটা যেন কোনো রেইড না হয়!
আমার হৃদস্পন্দন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু আর কোনো শব্দ রাতের নিস্তব্ধতাকে খানখান করছে না দেখে লায়লা আশ্বস্ত হয়।
“বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছেড়” ভয়ের রেশ লুকানো স্বরে ও ফিসফিস করে বলে ওঠে।
“তাহলে তো গিয়ে এখন বালতি নিয়ে আসতে হবে।” আরেকবার বজ্রপাতের শব্দ শোনার সাথে সাথে আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়াই। লায়লার কোলের আরাম ছেড়ে উঠতেই আমার মাথা সামান্য দুলে উঠছে।
“দুআ করতে ভুলো না যেন। বৃষ্টির সময় দুআ কবুল হয়।” ও আমাকে মনে করিয়ে দেয়।
বারান্দার দরজা খুলে বালতিগুলো বাইরে রাখতে গিয়ে মনে হচ্ছে বাতাস আমাকে এখনই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। বাতাসে গা জুড়িয়ে যায়। আমার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হয়ে আসে। আকাশ থেকে ঝিরঝির করে পড়তে থাকা মেঘের টুকরোগুলোয় আমি বুকভরে শ্বাস টেনে নিই। ছাইরঙা ঘন মেঘেরা আমাদের জীবন ছারখার করে দেয়া যুদ্ধবিমানের বিপরীতে যেন রক্ষাকবচ।
তারপর, লায়লার ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। নিজের ঘরে এখন আর ঘুমায় না ও। ওখানে হামযার হাজারো স্মৃতি। এই বাসায় আসার পর থেকে আমিও কোনোদিন ওই ঘরে যাইনি। আমার ভাইয়ের ক্লোজেটে ঝুলে থাকা কাপড়, নাইটস্ট্যান্ডে রাখা ওর প্রিয় ঘড়িটা আর বিয়ের দিন লায়লার চিবুকে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর হাসিমুখে তোলা ছবিটা—এসবের কিছুই আমি আর দেখতে চাই না।
লায়লা সোফায় ঘুমায় এখন। ওকে আমি বালিশ আর কম্বল এনে দিই। ওর চোখজোড়া কেমন কুয়াশাচ্ছন্ন, যেন দূরে কোথাও হারিয়ে গেছে। এই চাহনি আমি চিনি। ও এখন পেছনের দিনগুলোতে চলে গেছে যেখান থেকে আমি ওকে ফেরত আনতেও চাই না। স্মৃতিরা কেবল বেদনাই জাগায়, তবু এটাই আমাদের প্রিয় মানুষদের দেখতে পাওয়ার একমাত্র উপায় এখন—তাদের শব্দগুলো রেকর্ডের মতো বারবার বাজাই, কল্পনাশক্তি খাটিয়ে সেগুলোকে মনমত বাড়াই, কমাই অথবা কোমল করে শুনি। লায়লা এবার পুরোপুরি মাসেল মেমোরিতে ভর করে বালিশে হেলান দেয়।
অবশেষে ওর দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়ে আমার দিকে পড়ে। ও এমনভাবে আমাকে নাম ধরে ডাকে, যেন আমি যে এতক্ষণ এখানেই ছিলাম তা ও জানেনা।
“তোমার পানি লাগবে? নাকি প্যানাডল দিব একটা?” আমি জিজ্ঞেস করি।
“আরে না, না। বাবু আজকে খুব ভদ্র।”
“আম্মুর কথা ভেবে সংযত আচরণ করছে মেয়ে।”
“মেয়ে?” কোমল স্বরে প্রশ্ন করে ও। চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায় মুহূর্তেই।
আমি মাথা নাড়ি। “হ্যাঁ, মেয়ে। আই ক্যান ফিল ইট!”
“সত্যিই?” লায়লার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। “তাহলে এটা কি তোমার ডাক্তারি নিরীক্ষায় দক্ষতার প্রমাণ?”
“যতদিন ধরে আমি এই কাজ করতেসি, এতদিনে যে কারোই এসব ব্যাপারে সিক্সথ সেন্স তৈরি হয়ে যায়। ফার্মাসিস্ট হিসেবে আমাকে ভরসা করতে পারো।” আমি চোখ টিপে বলি।
ও হাসে। “তোমাকে তো আমি নিজের চেয়েও বেশি ভরসা করি।”
“বাব্বাহ! তাহলে তো আমার অনেক দায়িত্ব!” আমি মুষড়ে পড়ার ভান করি আর ও হাসে। “কোনো নাম ভাবসো?”
“ওয়েল, আমি আর হামযা যখনই ভবিষ্যতের জন্য নাম ঠিক করতে বসতাম, ও সবসময় ছেলেদের নাম ভাবত। ছেলে বাবু চাইত ও। বলত যে, প্রথম বাবু মেয়ে হইলে নাকি ও অনেক কোমল হয়ে যাবে। এত কোমল হবে যে, মেয়ের কোনো আবদার ও ফেলতে পারবে না।”
“হাহ, সেইটা আমরা ভালো করেই জানি যে ও মেয়ের পায়ের সামনে নিজেরে কার্পেটের মতো বিছায়ে দিবে।”
“এজন্যই আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে,” অস্ফুট স্বরে বলে উঠে ও। “এখানে ওকে কী করে জন্ম দিই? যদি শুধু তুমি আর আমি হতাম, সালামা, আমি কখনো হামযাকে রেখে যেতাম না। কিন্তু… ওর সন্তানের বিষয় এটা। আমার বাবু এটা।”
আমার শ্বাস আটকে আসে।
ল্যাভেন্ডার জীবাণুনাশক ও প্রদাহ উপশমকারী। বেগুনি রঙের পাপড়ি। অনিদ্রার জন্য ব্যবহার্য। ল্যাভেন্ডার। ল্যাভেন্ডার। ল্যাভে—
“তু-তুমি নামের কথা বলতেসিলা না?” কোনোমতে বলতে সক্ষম হই।
“হ্যাঁ,” এক মিনিট চুপ থেকে ও জবাব দেয়। “যদি ছেলে হয়, তাহলে মালিক। আর মেয়ে হইলে—”
“সালামা,” আমি বাগড়া দিই।
“তুমি কীভাবে জানো?” ও খাবি খায়।
আমার বিশ্বাস হয় না। “এ্যাহ? আমি তো মজা করতেছিলাম।”
“যদি মেয়ে হয় আমি সত্যিই ওর নাম সালামা রাখব।”
“অবশ্য রাখবা না কেন? সালামা এত সুন্দর একটা নাম।” বোকা বোকা হাসিতে জবাব দিই আমি।
লায়লাও হাসে। “হ্যাঁ, ঠিকই তো।”
আমি তড়িতে ওর পেটের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলি, “শোনো, তুমি কিন্তু মেয়েই হবা। ফুপ্পি তোমাকে অনেক ভালোবাসে, সালুমি!”
লায়লার চোখে জমে থাকা বেদনারা অনেকটাই মিলিয়ে গেছে, কিন্তু কিছুটা রেশ এখনও রয়ে গেছে। ওইটুকুই আমার অন্তরে অনুশোচনার শেল হয়ে বিঁধতে যথেষ্ট। আমি লম্বা করে শ্বাস টেনে নিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ি।
“গুড নাইট।” ওর মাথার চুল গুছিয়ে দিয়ে কম্বলটা ভালো করে জড়িয়ে দিই ওর গায়ে।
জবাবে লায়লা আমার হাতে চাপ দেয়।
ওকে স্বপ্নের অতল গহ্বরে পাঠিয়ে দিয়ে তবেই আমি ভেতরের ভয়টা প্রকাশ করি। ওর বলা শব্দগুলো আমার মাথায় লুপের মত প্রতিধ্বনিত হতেই থাকে।
তোমাকে তো আমি নিজের চেয়েও বেশি ভরসা করি।
“কী করবা তুমি এখন?” অন্ধকার কোনা থেকে খওফের প্রশ্ন শুনে আমি লাফ দিয়ে উঠে বুক চেপে ধরি।
“কী?”
ও বের হয়ে আসায় ছায়াটা মিলিয়ে যায়, ওর চোখ জ্বলজ্বল করছে। “আ’মের বিষয়ে কী করবা?”
“আমি জানি না।”
“তার মানে তুমি কিছুই করবা না।”
“তার মানে আমি জানি না।” উদ্বেগটুকু আমি গিলে ফেলি। “আমাকে একা থাকতে দাও!”
ও আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করছে দেখে আমি নিজের হাঁটু দুটো বুকের কাছে চেপে ধরে আরো সংকুচিত হওয়ার চেষ্টা করি।
“তুমি যা বলসো আমি তাই করছি। আ’মের সাথে কথা বলসি। এখন দাম বেশি সেটা কি আমার দোষ?”
খওফ কোনো জবাব না দিয়ে একটা সিগারেট বের করে দুই ঠোঁটের মধ্যে রাখে। ওর স্মোকিং আমাকে দাদুভাইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। দাদুভাই—আল্লাহ তার রূহকে শান্তি দান করুন—ধোঁয়ায় একটান দেয়ার আগে কোনো জবাব দিতেন না। কিন্তু দাদুর মুখে মৃদু হাসি থাকত আর আমার দিকে এমন গর্বভরে তাকাতেন উনি, সেসবের ছিঁটেফোঁটাও খাওফের মধ্যে নাই। কিচ্ছু না।
“না, তোমার দোষ না। কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি হার মেনে নিয়েছো। কিন্তু লায়লাকে তুমি বলেছো না ওর সাথে দর কষাকষি করবে?”
আমি কাঁধ ঝাঁকাই।
ও বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকায়। “তোমার উদ্যম তো অপূর্ব!” টিটকারি করে ও। “এভাবে হবে না। তোমার অবশ্যই নৌকা নিতে হবে।”
“আমার তো সাধ্যের সীমা আছে। কী চাও তুমি খাওফ?” ক্লান্তি আমাকে জেঁকে ধরে।
“কেন? তোমার নিরাপত্তা ছাড়া কী চাইব?” কাষ্ঠহাসি দিয়ে বলে ও, “তুমি না বিশ্বাস করো আমি তোমার ডিফেন্স মেকানিজম?”
আমার বুক কাঁপে।
খাওফ আমার দিকে এগিয়ে এসে দাঁড়ালে আমি অবচেতন মনেই পিছিয়ে যাই। “সালামা, এতদিনে তোমার এইটুকু তো জানার কথা। আমি তোমার মতো ক্লান্ত হই না, আমার কোনো যন্ত্রণার অনুভূতিও নেই, আর আমি যা চাইছি তা না পাওয়া পর্যন্ত আমি থামব না। আমার বিরুদ্ধে যাওয়া মানে তোমার নিজের বিরুদ্ধে যাওয়া।”—ও আঙুল ঘোরাতেই আমার পালস বেড়ে যায়, ঘন আঁধারে চারদিক ডুবে গিয়ে ফুটে থাকে শুধু ওর বরফের মত নীল চোখ, জ্বলজ্বলে দাঁতের পাটি—“তুমি জিততে পারবা না।”
আমি কিছুই দেখতে পাই না। বাইরের ক্ষীণ প্রতিবাদের আওয়াজও আর কানে আসছে না। আঁধারিয়া এই অতল গহ্বরে আমরা দুইজন ছাড়া যেন আর কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। ও আমার দিকে হাত বাড়ায় কিন্তু ছোঁয় না। তবু ওর প্রভাব আমার উপর এত তীব্র যে আমি কাঁপতে কাঁপতে বরফের মত জমে যাই।
“আমি অসীম, যা তুমি নও,” ও ফিসফিস করে বলে। ওর তাক করা আঙুল আমার গলা ছোঁয় না তবু আমার দাঁত এমনভাবে কিড়বিড় করে ওঠে যেন ওর নখের ধার আমাকে বিঁধছে।
“যেভাবেই হোক, নৌকার ব্যবস্থা তুমি করবা!”
চলবে…