ইলুমিনাতি

রাকিবুল হাসান

ইলুমিনাতি : সিক্রেট সোসাইটিগুলো কি দুনিয়া চালায়?

ইন্টারন্যাশনাল এনসাইক্লোপিডিয়া অব সিক্রেট সোসাইটিজ এর লেখক অ্যালেন এক্সেলরডের সংজ্ঞানুযায়ী সিক্রেট সোসাইটি হতে হলে তাদের ভেতর তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। এক. এক্সক্লুসিভ হতে হবে। দুই. বিশেষ গোপন জ্ঞানের দাবিদার হতে হবে। তিন. সদস্যদেরকে বিশেষ সুবিধা প্রদানে ব্রতী হতে হবে। যুগে যুগে গড়ে ওঠা শত শত সিক্রেট সোসাইটির ভেতর এসব বৈশিষ্ট্যের দেখা মেলে।

একুশ শতকের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং সবচে বেশি চর্চিত গোপন সংগঠন ইলুমিনাতিও এর ব্যতিক্রম নয়।


ইলুমিনাতি কী, তারা কারা?

এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার তথ্যমতে ইলুমিনাতি শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ইলুমিনেটাস এর বহুবচন, যার অর্থ হলো আলোকিত, কিংবা প্রত্যাদেশ। অর্থাৎ যার উপর সুপারন্যাচারাল কোনো সত্ত্বার পক্ষ থেকে জ্ঞান আসে। ইসলামি পরিভাষায় আমরা যাকে বলি ওহি। ইতিহাসের নানা যুগে এই নামে একাধিক সংগঠনের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।


আদি ইলুমিনাতি

আদি ইলুমিনাতিদের ব্যাপারে সর্বপ্রথম তথ্য উদ্‌ঘাটন করেন উনিশ শতকের স্পেনিশ ইতিহাসবিদ মার্সেলিনো মেনেন্দে পিলায়ো (Marcelino Menéndez y Pelayo)। ১৪৯২ সালের দিককার এক ডকুমেন্টে ইলুমিনাতি শব্দটির স্পেনিশ উচ্চারণ আলুমিনাদোস শব্দটির উল্লেখ পান তিনি। তার ভাষ্যমতে তৎকালীন স্পেনে ইলুমিনাতিদের উত্থান ঘটেছিল ইতালির প্রভাবে। তাদের প্রধান নেত্রী ছিল মারিয়ে দ্য সান্তো দোমিঙ্গো (María de Santo Domingo)। স্পেনের শহর সালামানকার এক দরিদ্র শ্রমিকের মেয়ে। আনুমানিক ১৪৮৫ সালের দিকে তার জন্ম। সেসময় ক্যাথলিক খৃষ্টানদের প্রধান চারটি ধারা ছিল, তন্মধ্যে একটি ছিল ডোমিনিকান ধারা। কিশোরী বয়সে মারিয়ে দ্য সান্তো দোমিঙ্গো এই ধারায় যোগ দেয়।

কিছুদিন পর সে নিজেকে নবি দাবি করতে শুরু করে। যিশু খৃষ্ট এবং মেরির সাথে তার সরাসরি আলাপসালাপ হয় বলে দাবি করে। তাকে কেন্দ্র করে যে ধারা গড়ে উঠে, ইতিহাসে তারা আলোমব্রাডোস (alumbrados) নামে পরিচিত। তাদের আন্দোলনের মূল দাবিই ছিল—চর্চার মাধ্যমে কেউ নিজেকে আলোকিত করতে পারলে তার সাথে সরাসরি যিশু খৃষ্টের সাক্ষাৎ ঘটবে।

স্পেনের তৎকালীন শাসক দ্বিতীয় ফার্দিন্যান্দ তাকে ডাকে। এই সেই ফার্দিন্যান্দ যিনি ইসাবেলার সাথে মিলে স্পেন থেকে মুসলিমদেরকে বিতাড়িত করেছিল। মারিয়েকে রাজপ্রাসাদে ডেকে নিয়ে কথা বলে সে নিজেও তার মিশনে আশ্বস্ত হয় এবং এই আন্দোলনে যোগ দেয়। আরও একাধিক প্রভাবশালী শাসক মারিয়ের আন্দোলনের সদস্য ছিল। এখানকার ডোমিনিকান খৃষ্টানরা নতুন আন্দোলনের প্রতি বিরক্ত হয়ে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের নিকট পত্র পাঠায়। আলোমব্রাডো ইলুমিনাতিদের বিরুদ্ধে শুরু হয় চার্চের ইনকুইজেশন। ধীরে ধীরে স্পেনিশ ইলুমিনাতিদের অনেকে পালিয়ে যায়, বাকিরা আত্মগোপনে চলে যায়।

১৬২৩ সালের দিকে স্পেন থেকে এই আন্দোলন ফ্রান্সে যায়। কিন্তু মাত্র ১২ বছরের ভেতর ১৬৩৫ সাল নাগাদ তাদেরকে দমন করা হয়। তবে ১৭২২ খৃষ্টাব্দের দিকে ফ্রান্সে তাদের আরেকটি গ্রুপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সেসময় ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসছিল। সময়টা ছিল ফরাসি বিপ্লবের প্রাককাল। এসময় নানা সশস্ত্র গোষ্ঠির উদ্ভব হচ্ছিল। তেমনই একটি দল ছিল কমিসার্ড। ক্যাথলিক খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে এটি ছিল ফরাসি প্রোটেস্ট্যান্ট খৃষ্টানদের একটি দল। এই দল থেকে ভেঙ্গে আরেকটি দল গঠিত হয়, যারা ফ্রেঞ্চ প্রফেটস বা ফরাসি নবি হিশেবে পরিচিত। তাদের সঙ্গে তৎকালীন ফরাসি ইলুমিনাতিদের যোগসাজশ ছিল।

ইলুমিনাতিদের দ্বিতীয় আরেকটি প্রাচীন গ্রুপের কথা জানা যায়। সময়ের বিচারে তারা যদিও আলোমব্রাডোসদের চাইতে প্রাচীন, কিন্তু তাদের তথ্য উদ্‌ঘাটন হয়েছে আলোমব্রাডোসদের পরে। ১৬১৪ খৃষ্টাব্দে ফামা ফ্র্যাটারনিটাটিস নামে একটি লিফলেট প্রচারিত হয়। এতে ক্রিশ্চিয়ান গোজেনকুয়েজ (Christian Rosenkreuz) নামে এক জার্মান পরিব্রাজক ও গুপ্তজ্ঞানচর্চাকারীর কথা বিবৃত হয়েছে। ধারণা করা হয় ১৩৭৮ সালে তার জন্ম হয়েছিল। পরে দামেস্ক, ইয়েমেন, মিশর, ফেজ ইত্যাদি নানা শহর ভ্রমণের পর জার্মানিতে ফিরে এসে নতুন গুপ্তসংঘ প্রতিষ্ঠা করে। ইতোপূর্বে সে আলোমব্রাডোসদের সংস্পর্শেও এসেছিল।

বইয়ের ভাষ্যমতে সে জার্মানিতে এসে প্রথমে তিনজন এবং পরে আটজনকে শিষ্য বানিয়েছিল। তাদেরকে তার গুপ্তজ্ঞানে দীক্ষিত করার পর নানা দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়—তাদের জ্ঞান ও অস্তিত্বের কথা ১০০ বছর গোপন রাখতে হবে। ঠিক একশো বছর পর তার এক শিষ্য তার লাশ ও গোপন নথিপত্র খুঁজে পায়। তারা একে পুনরায় লুকিয়ে ফেলে এবং শিষ্যরা চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ইলুমিনাতিদের এই ধারাটি রোজিক্রুশিয়ান (Rosicrucians) নামে পরিচিত। বলা হয়ে থাকে বৃটিশ দার্শনিক ও রাষ্ট্রনায়ক স্যার ফ্রান্সিস বেকন এদের সাথে যুক্ত ছিল।


আধুনিক ইলুমিনাতি

বর্তমানে ইলুমিনাতিদের যে শাখাটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়, তাদেরকে বলা হয় বেভারিয়ান ইলুমিনাতি। বেভারিয়া বর্তমান জার্মানির একটি শহর। কিন্তু যে সময় গুপ্তসংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন বর্তমান জার্মানির অস্তিত্ব ছিল না। তখন এখানে ছিল দ্য হোলি রোমান এম্পায়ার।

হোলি রোমান এম্পায়ারের সাথে দ্বন্দ্ব চলছিল প্রতিবেশি ফ্রান্সের। ফ্রান্সে তখন রাজনতন্ত্রবিরোধী এবং গণতন্ত্রকামীদের উত্থানকাল চলছিল। ফ্রান্সের চিন্তকরা গণতন্ত্রের পক্ষে, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অনবরত লিখে যাচ্ছিলেন।

তাদের চিন্তার প্রভাব গিয়ে পড়ে বেভারিয়াতে বসবাসকারী পাগলাটে ধরনের এক প্রফেসরের উপর। নাম এডাম ওয়েইজহপ্ট (Adam Weishaupt)। বেভারিয়ার ইংগোশত্যাত (Ingolstadt) শহরে ১৭৪৮ সালে এডামের জন্ম। ওয়েইজহপ্টের পূর্বসূরীরা ছিল ইহুদি ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত খৃষ্টান। বারো বছর বয়সে তারা বাবা মারা যাওয়ার পর এক চাচার কাছে বড় হয়। চাচা ছিল জ্ঞানপিপাসু এবং পণ্ডিত লোক। তিনি তাকে খৃষ্টানদের একটি ধারা জেস্যুইট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। পড়াশোনা শেষে এডাম ওয়েইজহপ্ট ইউনিভার্সিটি অব ইংগোশত্যাত-এ ন্যাচারাল এন্ড ক্যানন ল এর প্রফেসর হিশেবে কর্মজীবন শুরু করে।

ওয়েইজহপ্টের জীবনে লক্ষ করলে দেখা যায় সবসময়ই তিনি ছিলেন অস্থিরমতি। বালক বয়সে চাচার লাইব্রেরিতে ফরাসি বিপ্লবের উপর প্রচুর বইপত্র পড়াশোনার পর তার উপলব্ধি ছিল—রাজতন্ত্র এবং চার্চ মানুষের চিন্তাকে আটকে রাখছে। মনে রাখতে হবে—সেসময় বেভারিয়া ছিল হোলি রোমান এম্পায়ারের অংশ। ফলে সেখানে ছিল কট্টর ক্যাথলিক খৃষ্টবাদের প্রভাব। রাজা সবসময় ফরাসি বিপ্লব নিয়ে আতঙ্কিত থাকতেন, কখন না জানি এটা তার রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে!

ওয়েইজহপ্ট মনে করতেন খৃষ্টধর্ম আধুনিক রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে সক্ষম না। সেসময় ইউরোপে ফ্রিম্যাসনদের বেশ প্রসিদ্ধি ছিল। প্রথাগত চিন্তার বাইরে বিপ্লবী ও বাস্তববাদী চিন্তার ধারক হিশেবে অনেকেই তাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিল। ওয়েইজহপ্টও ফ্রিম্যাসনে যোগ দিতে মনস্থ করেছিল। কিন্তু তাদের অনেক চিন্তার সাথে একমত হতে না পেরে নিজেই মানুষকে ‘ইলুমিনেট’ বা আলোকিত করার সিদ্ধান্ত নেন। ফ্রিম্যাসন, প্রাচীন মিশরীয় মিথলোজি আর ইহুদিদের রহস্যময় কাব্বালা ধারা থেকে ধার নিয়ে নিজেরই আরেকটা দল দাঁড় করিয়ে ফেলেন, ইতিহাসে যা পরিচিতি পায় ‘ইলুমিনাতি’ নামে।

১৭৭৬ সালের মে মাসের প্রথম রাতে ইংগোশত্যাতের জঙ্গলে টর্চলাইটের আলোতে যখন পাঁচজন লোক গোসল করে ইলুমিনাতি সংগঠন আর তাদের গুপ্তপ্রথার সূচনা করছিল, তাদের কেউই জানত না একুশ শতকে এসেও তাদের এই ক্ষুদ্র সংগঠন মানুষকে কীভাবে আচ্ছন্ন করে রাখবে। সে রাতেই ঠিক করা হয় ইলুমিনাতির গঠন ও পরিচালনা প্রক্রিয়া। সদস্যদেরকে তিনটি ধাপে বিভক্ত করা হয়। সংগঠনের রীতিনীতি আর আদর্শে যত বেশি বলীয়ান হবে, এক ধাপ থেকে উন্নতি ঘটবে পরের ধাপে।

প্রথমদিকে ইলুমিনাতি ওয়েইজহপ্টের ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ১৭৮২ সালে সংগঠনের ছয়শো সদস্যের কথা জানা যায়। অবশ্য ইলুমিনাতি যখন সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত ছিল, তখনই এর সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ২-৩ হাজারে পৌঁছেছিল।

এসময় ওয়েইজহপ্টের শিষ্যরা ছাড়াও বেভারিয়ার প্রভাবশালী অনেকেই ইলুমিনাতিতে যোগ দেয়। এদের ভেতর ছিল ব্যারন এডলফ ভন কেনিগে (Baron Adolph von Knigge)। আগে ফ্রিম্যাসন ছিলেন। ১৭৮৪ সালে ইলুমিনাতিতে যোগ দেওয়ার পর এর কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। তিন স্তর বিশিষ্ট সদস্যপদকে তেরো স্তরে ভাগ করেন। যদিও মূল ধাপ তিনটিই ছিল। কিন্তু প্রতিটির ভেতর একাধিক উপ-স্তর করা হয়। ইলুমিনাতিদের বিখ্যাত সেই সিম্বলে দেখা যায় তেরো স্তর বিশিষ্ট একটি পিরামিড। এটি এখান থেকেই শুরু। এর দ্বারা ইলুমিনাতিদের তেরো স্তর নির্দেশ করা হচ্ছে। এর উপরে আছে একটি চোখ। যা ফ্রিম্যাসনদের প্রতীক। ইলুমিনাতিদের পিরামিডের উপরও প্রতীকটি জুড়ে দেন ভন কেনিগে। ফ্রিম্যাসনে সবাইকে গোপন সাংকেতিক নাম দেওয়া হতো, ইলুমিনাতিতেও এর সূচনা হয় তার হাত ধরে।

১৭৮৯ সালে শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। এদিকে ইলুমিনাতির ভেতরেও শুরু হয় কোন্দল। তীব্র রেষারেষিতে টিকতে না পেরে ভন কেনিগে অবশেষে গুপ্তসংগঠন ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এসময় ইলুমিনাতির আরেক সাবেক সদস্য বেভারিয়ার শাসক বা গ্র্যান্ড ডাচেসের নিকট চিঠি লিখে ইলুমিনাতির সব গোপন কার্যক্রম ফাঁস করে দেন। এবং সতর্ক করেন যে তারা বেভারিয়াতেও ফরাসি বিপ্লবের মতো বিদ্রোহ সংগঠিত করতে চাচ্ছে।

১৭৮৭ সালের আগস্টে বেভারিয়ার ডিউক এক ডিক্রিতে ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং এর সাথে সম্পৃক্ততার সাজা মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। এর আগেও অবশ্য ১৮৮৪ ও ৮৫ সালে তাদের বিরুদ্ধে দুটি ডিক্রি জারি করা হয়েছিল।

এডাম ওয়েইজহপ্টের আখড়ায় অভিযান চালানো হয়। প্রাপ্ত নথিপত্রে দেখা যায় তারা শত্রু বিনাশে আত্মহত্যার পক্ষপাতী। গোপন কালি ও অন্যান্য অনেক সিক্রেট সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ওয়েইজহপ্টকে ইউনিভার্সিটি থেকে চাকরিচ্যুত করে পার্শ্ববর্তী আরেক শহরে নির্বাসিত করা হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় ইউরোপের অনেক দেশের একটি, জার্মানি, জার্মানির অনেক শহরের একটি—বেভারিয়ায় খেয়ালি প্রফেসরের ইচ্ছায় গড়ে উঠা অতি ক্ষুদ্র এক সংগঠন ‘ইলুমিনাতি’।

 

ইলুমিনাতি কি এখনো টিকে আছে?

আধুনিককালে ইলুমিনাতি টিকে আছে নাকি ১৭৮৭ সালের নিধনের ফলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে? বিষয়টি আজও তীব্র বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে ইলুমিনাতিদের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব সম্পর্কে তিনটি ধারণা জনপ্রিয়।

এক : ইলুমিনাতিরা ফ্রিম্যাসনের ভেতর মিশে গেছে। এবং ফ্রিম্যাসন যেহেতু এখনো টিকে আছে, তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, তাদের ঘোষিত সদস্য সংখ্যা ৫ মিলিয়ন বা পঞ্চাশ লাখ, তাই ফ্রিম্যাসনের ভেতর দিয়ে মূলত ইলুমিনাতিও টিকে আছে। ইলুমিনাতির প্রথম দিককার সদস্যরা যেমন অনেকেই ফ্রিম্যাসন থেকে এসেছিল। তদ্রূপ ইলুমিনাতির বিলুপ্তির পর তাদের অনেকেই পুনরায় ফ্রিম্যাসনে যোগ দেয়। ফলে নিজ নামে না হলেও ইলুমিনাতি এখনো বেশ দাপটের সাথেই টিকে আছে।

এই মতের সপক্ষে আছেন বিখ্যাত ফিজিশিস্ট জন রবিনসন। ১৭৯৭ সালেই তিনি মন্তব্য করেন যে ইলুমিনাতিরা ফ্রিম্যাসনদের ভেতর মিশে গেছে।

দুই : তাদের ব্যাপারে দ্বিতীয় মতটির উদ্ভব ঘটে তাদের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির পরপরই, ১৭৯৭ সালে। ফরাসি জেস্যুইট পাদরি ও লেখক এবে অগাস্টিন বাগুয়েল (Abbe Augustin Barruel) ১৭৯৭ সালে তার প্রকাশিত ফরসি বিপ্লবের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থে লেখেন যে ইলুমিনাতিরা ফরাসি বিপ্লবের মূল নটরাজ। ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন যে বিশ্বব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে, এর মূলে আছে ইলুমিনাতিরা। এখনো বিশ্বের কলকাঠি বহুলাংশে তাদের হাতে, তাদের নিয়ন্ত্রিত। ১৭৯৯ সালে তার বইটির প্রথম ইংরেজি ভার্সন প্রকাশিত হয় “Memoirs Illustrating the History of Jacobinism” নামে।

তিন : তৃতীয় ধাপে আছেন যারা মনে করেন ইলুমিনাতি পুরোপুরি কাল্পনিক বিষয় এবং মিথ। বর্তমানে ইলুমিনাতিদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের মতে—একুশ শতকে ইলুমিনাতি ধারণা জনপ্রিয়করণের জনক মার্কিন প্রযোজন ও নাট্যকার রবার্ট উয়িলসন, এবং তার সতীর্থ কেরি থর্নলি।

রবার্ট উয়িলসন প্লেবয় ম্যাগাজিনে কাজ করতেন। ১৯৬০ এর দশকে তাদের মনে হয়েছে পৃথিবীটা খুব বেশি নিয়ন্ত্রণবাদী, খুব বেশি আঁটসাঁট এবং ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যাচ্ছে। একে ভেঙ্গে ফেলা দরকার। ঠিক যেমন মনে হয়েছিল খেয়ালি প্রফেসর এডম ওয়েইজহপ্টের। এবং তা ভাঙ্গার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ভুল তথ্যের মাধ্যমে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেওয়া। সেই চিন্তা থেকে উয়িলসন আর থর্নলি যৌথভাবে মানুষের কাছে ইলুমিনাতিদের নিয়ে নানা চিঠিপত্র লেখতে শুরু করেন। যখন পাঠকরা অধিকতর তথ্য চেয়ে চিঠি লেখত, তারা আগের তথ্যের পুরো বিপরীত তথ্য দিতেন। এভাবে পাঠকদের মাঝে শুরু হয় কানাঘুষা, অস্থিরতা। তীব্র বেগে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ইলুমিনাতিদের বিশ্বনিয়ন্ত্রণের ধারণা।

এক দশক পর ১৯৭৫ সালে রবার্ট উয়িলসন আর রবার্ট শেয়া মিলে লেখেন ‘দ্য ইলুমিনাতি ট্রিলোজি : দ্য আই ইন দ্যা পিরামিড’ বইটি। তিন খণ্ডের ঢাউস এই থ্রিলার তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সাথে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আধুনিক মানুষের মন ও মস্তিষ্কে আঠারো শতকে হারিয়ে যাওয়া ইলুমিনাতিদের বসবাস।


তথ্যসূত্র

https://www.bbc.com/future/article/20170809-the-accidental-invention-of-the-illuminati-conspiracy

https://www.britannica.com/video/230845/did-you-know-The-Illuminati

https://www.nationalgeographic.com/history/history-magazine/article/profile-adam-weishaupt-illuminati-secret-society

https://www.britannica.com/topic/illuminati-group-designation

https://www.britannica.com/facts/illuminati-group-designation

https://www.vox.com/2015/5/19/8624675/what-is-illuminati-meaning-conspiracy-beyonce

https://www.iflscience.com/what-is-the-illuminati-and-does-it-still-exist-63359

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Pamar
Pamar
9 months ago

Great read! I appreciate the way you explained everything.

আমান
আমান
7 months ago

পড়া হলো

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷