আল্লামা ইকবালকে ‘শায়ের-ই মাশরিক’ বা প্রাচ্যের কবি উপাধীতে ভূষিত করা হয়। পাকিস্তান দর্শনের প্রবক্তা হিসেবে তাঁকে রাজনৈতিক চিন্তক বলেও আখ্যায়িত করা হয়। তবে তাঁর আরেকটা পরিচয়ও প্রণিধানযোগ্য— তিনি একজন কুরআন-গবেষক, কুরআন-প্রেমিক। তাঁর চিন্তা ও দর্শনের অনেকখানিই কুরআনের ভাষ্য থেকে উৎসারিত। এজন্য তাঁকে অনেকে ‘শায়ের-ই কুরআন’ বা কুরআনের কবি বলে আখ্যায়িত করেন।
আল্লামা ইকবাল কবিতায় প্রধানত মানুষের চিন্তা ও কর্মের শুদ্ধি কামনা করেছেন। কাব্যের মাধ্যমে ঘুমন্ত জাতিকে জাগ্রত করার প্রয়াস পেয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি কুরআনের বাণী ও ভাষ্য থেকে আহরিত তত্ত্বকে কাব্যে রূপায়িত করে কবিতা-প্রেমীদের জন্য রসোত্তীর্ণ করেছেন।
আল্লামা ইকবাল কুরআন দ্বারা যত বেশি প্রভাবিত হয়েছেন, অন্য কোনো গ্রন্থ ও ব্যক্তি দ্বারা এত প্রভাবিত হন নি। ইকবালের অনেক চিন্তা ও দর্শন যে কুরআন থেকে উৎসারিত, এটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে এক কবিতায় তিনি লেখেন—
گر دلم آئینہ بے جوہر است
در بحرفم غیر قرآں مضمر است
پردہ ناموس فکرم چاک کن
ایں خیاباں را ز خارم پاک کن
تنگ کن رخت حیات اندر برم
روز محشر خوار و رسوا کن مرا
بے نصیب از بوسہ ی پا کن مرا
যদি আমার দিলের আয়না মুক্তা থেকে মুক্ত থাকে,
যদি আমার পঙক্তিতে কুরআন-ভিন্ন কিছু ব্যক্ত হয়,
তাহলে আপনি আমার চিন্তার ভ্রান্তি প্রকাশ করে দিন,
যেন এই ফুলের বিছানা (পৃথিবী) আমার কাঁটা দ্বারা বিদ্ধ না হয়,
আমার জীবনযাপনকে সংকীর্ণ করে দিন,
জাতিকে আমার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন,
হাশরের দিনে আমাকে আপনার পদচুম্বন থেকে বঞ্চিত করে লাঞ্চিত করুন।
(আরযে হাল, আসরারে খুদী)
কী দুঃসাহস ও আত্মবিশ্বাস! ইকবাল দাবি করেছেন, তাঁর কাব্য কুরআনের ভাষ্য থেকে উৎসারিত। তিনি নিজের জন্য কুরআন-ভিন্ন অন্য কিছু দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়তর মনে করেছেন। আরো মনে করেছেন, এর শাস্তি হিসেবে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত হওয়া এবং নবীজির পদচুম্বন-বঞ্চিত হওয়া যৌক্তিক।
আল্লামা ইকবালের এই দাবির সত্যতা দেখি, তাঁর বিখ্যাত খুদী-তত্ত্বের মধ্য দিয়ে। খুদী-তত্ত্বের সারকথা হলো— ব্যক্তিত্বের বিকাশ, মানুষের মহিমা, জমিনে আল্লাহর প্রতিনিধিরূপে মানুষের ক্ষমতায়ন, আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথানত না করা, যেহেতু আসমান-জমিনের সবকিছু মানুষের উপকারার্থে সৃষ্ট। এই তত্ত্ব তিনি গ্রহণ করেছেন কুরআন থেকে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু নিজ অনুগ্রহে, চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য ইহাতে রহিয়াছে নিদর্শন।’ (কুরআন, ৪৫:১৩) আল্লামা ইকবালের খুদী-তত্ত্ব এই আয়াতেরই ব্যাখ্যা। এই আয়াতে আল্লাহ জানিয়েছেন, মানুষ কত সম্মানীয়। আসমান-জমিনের সবকিছু যে মানুষের উপকারার্থে সৃজিত, সে মানুষ পৃথিবীর কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে পূজা করতে পারে না। আল্লামা ইকবালের খুদী-তত্ত্বের সারকথাও এটাই। (দ্রষ্টব্য: ‘আসরারে খুদী : আল্লামা ইকবালের চোখে ইনসানে কামেল — আবুল কাসেম আদিল)
ইকবাল নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করতেন। শেষ বয়সে যখন নিশ্চল হয়ে পড়েন, তখনও তিনি কুরআন অধ্যয়ন করতেন এবং মসনবীয়ে রুমি পাঠ করতেন। কুরআন পাঠ করতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে যেতেন। কখনো কখনো তিনি কেঁদে ফেলতেন। এমনকি অশ্রুতে কুরআনের পৃষ্ঠা ভিজে যেত। (কুরআন আওর ইকবাল) এর মধ্য দিয়ে ইকবালের মধ্যে আমরা সাচ্চা কুরআন-প্রেমিকের অবস্থাই দেখতে পাই।
আল্লামা ইকবাল কুরআন-প্রেম পেয়েছেন পারিবারিকভাবে। ইকবালের পিতা তাঁকে একবার বলেছিলেন, কুরআন এরকমভাবে পড়বে, পড়ার সময় যেন এই অনুভূতি হয়, কুরআন তোমার ওপর নাযিল হচ্ছে। পিতার এ কথা ইকবালের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। (ইকবাল আওর কুরআন) পিতার উপদেশই ব্যক্ত হয়েছে ইকবালের কবিতায়—
ترے ضمیر پہ جب تک نہ ہو نزول کتاب
گرہ کشا ہے نہ رازی، نہ صاحب کشاف
তোমার হৃদয়ে যদি কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ না হয়,
রাযী এবং কাশশাফ-প্রণেতাও কিতাবের দুর্বোধ্যতা দূর করতে পারবেন না।
(ইকবাল আওর কুরআন)
উপর্যুক্ত পঙক্তির রাযী হলেন ফখরুদ্দীন আর-রাযী। তিনি বিখ্যাত মুফাসসির ও দার্শনিক। কাশশাফ-প্রণেতা হলেন আবুল কাসিম মাহমূদ বিন উমর আয-যামাখশারী। তিনি ছিলেন মধ্যযুগের মুসলিম পণ্ডিত, যুক্তিবাদী ধর্মতত্ত্ববিদ ও মুফাসসির। তাঁর বিখ্যাত তাফসীর-গ্রন্থ কাশশাফ সর্বযুগে সমাদৃত। আল্লামা ইকবাল বলতে চাইছেন, তোমার হৃদয়ে যদি আল্লাহর কিতাব নাযিল না হয়, কুরআন-পাঠে যদি তোমার ওপর নাযিল হওয়ার অনুভূতি না হয়— তাহলে তুমি এই কিতাব যথার্থ অনুধাবন করতে পারবে না। এমনকি রাযী এবং যামাখশারীর মতো মহাপণ্ডিত ও বিখ্যাত মুফাসসিরও তোমাকে কুরআনের যথার্থ মর্ম অনুধাবন করাতে সক্ষম হবেন না।
আল্লামা ইকবাল মনে করতেন, কুরআনের ব্যাখ্যা করা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এর জন্য জ্ঞানের গভীরতা, আরবী ভাষায় পাণ্ডিত্য ও সতর্কদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হওয়া জরুরি। অযোগ্যদের কুরআনের ব্যাখ্যায় অবতীর্ণ হওয়া তিনি অনুচিত মনে করতেন। এই বিষয়টি নিয়ে খুবই বিচলিত ছিলেন। তিনি বলেন, এই হিসেবে কুরআন এক মজলুম গ্রন্থ যে, যার দুনিয়ায় কোনো কাজ করার যোগ্যতা নেই, সে কুরআনের ব্যাখ্যায় অবতীর্ণ হয়। অথচ এটি খুবই স্পর্শকাতর ও সতর্কতার বিষয়। (ইকবাল আওর কুরআন)
আল্লামা ইকবাল নিজেও যেমন কুরআন-প্রেমিক ছিলেন, তেমনি মুসলিম উম্মাহকেও তিনি কুরআন-প্রেম ধারণ ও লালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কুরআন-চর্চাকে মুসলমানের সম্মান ও মর্যাদার কারণ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি মনে করতেন— যতদিন মুসলমান কুরআন-চর্চা করেছে, কুরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করেছে, কুরআন অনুযায়ী জীবনযাপন করেছে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুরআনের নির্দেশ মান্য করেছে— ততদিন মুসলমান বিজয়ীরূপে পৃথিবী শাসন করেছে, ততদিন মুসলমানের সম্মান ও মর্যাদা ছিল সুউচ্চ, জ্ঞানগত ও কর্মগত অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। অন্যদিকে বর্তমানে কুরআন-চর্চা পরিত্যাগ করা, কুরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা না করা ও কুরআনের নির্দেশ-বর্জিত জীবনযাপন করার কারণে মুসলমান নির্যাতিত ও নিগৃহীত হচ্ছে। তিনি বলেন—
وہ زمانے میں معزّز تھے مسلماں ہو کر
اور تم خوار ہوئے تارکِ قُرآں ہو کر
তারা সে যুগে সম্মানীয় ছিল মুসলমান হয়ে,
তোমরা অপদস্থ হচ্ছ কুরআন ত্যাগ করে।
(জাওয়াবে শিকওয়াহ, বাঙ্গে দারা)
কুরআনে নিমগ্ন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আল্লামা ইকবাল বলেন,
قرآن ميں ہو غوطہ زن اے مرد مسلماں
اللہ کرے تجھ کو عطا جدت کردار
কুরআনে ডুব দাও হে মুসলিম সম্প্রদায়,
আল্লাহ তোমাকে উৎকর্ষ দান করবেন।
(সিয়াসিয়াতে মাশরিক ও মাগরিব, যরবে কালীম)
কুরআনের বাণী চিরন্তন, শাশ্বত, স্থায়ী ও সুদূর প্রসারী; কুরআন সর্বকালে, সর্বযুগে, সর্বস্থানে জাতি-গোত্র-বংশ নির্বিশেষে সবার জন্য আলোকবর্তিকারূপে বিরাজমান আছে এবং থাকবে। যারা কুরআনকে এ যুগের জন্য অনুপযোগী মনে করে, তাদেরকে আল্লামা ইকবাল দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রত্যাখান করেছেন। তাদেরকে ভর্ৎসনা করে আল্লামা ইকবাল বলেন—
خود بدلتے نہیں، قُرآں کو بدل دیتے ہیں
ہُوئے کس درجہ فقیہانِ حرم بے توفیق!
ان غلاموں کا یہ مسلک ہے کہ ناقص ہے کتاب
کہ سِکھاتی نہیں مومن کو غلامی کے طریق!
তারা (কুরআন অনুযায়ী) নিজে পরিবর্তন হয় না, কুরআনের অর্থ বিকৃত করে।
সম্মানীয় ধর্মবেত্তাগণ কতটুকু অক্ষম যে,
যারা কুরআনকে অপূর্ণ মনে করে
তাদেরকে (আল্লাহর) দাসত্বের পদ্ধতি শেখাতে পারেন না।
(ইজতিহাদ, যরবে কালীম)
একবার তিনি একজন অমুসলিম কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, ‘আপনাদের নবী মুহাম্মাদের প্রতি কি শুধু কুরআনের মর্ম নাযিল হয়েছে, নাকি মর্ম-বাক্য দুই-ই নাযিল হয়েছে?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘মর্ম-বাক্য দুই-ই নাযিল হয়েছে।’ লোকটি উপহাস করে বলল, ‘আপনি একজন জ্ঞানী মানুষ হয়ে এটি বিশ্বাস করেন, বাক্যগুলো হুবহু এভাবে এসেছে!’ ইকবাল প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘এটি আমার বিশ্বাসই নয়, অভিজ্ঞতাও। আমার ওপর যদি কবিতা মর্ম-বাক্যসহ অবতীর্ণ হতে পারে, নবীর ওপর কুরআন মর্ম-বাক্যসহ কেন নয়?’ (ইকবাল আওর কুরআন)
এ কথার মর্ম একজন প্রকৃত কবি সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবেন। কবিতা শুধু সচেতন চিন্তার কাজ নয়। কবিতা লৌকিক বিষয় নয়। হৃদয়ে ভাবের তরঙ্গ দোলা দিলেই সার্থক কবিতা লেখা যায়। এই ভাবের তরঙ্গ কবির ইচ্ছাধীন নয়। সামান্য কবিতার ক্ষেত্রে যদি এরূপ হয়, ঐশী প্রত্যাদেশের ক্ষেত্রে কেন নয়! আল্লামা ইকবাল সংক্ষিপ্ত বাক্যে বিষয়টি সুন্দর করে বুঝিয়েছেন।
আল্লামা ইকবাল তাঁর দীর্ঘ অধ্যয়ন ও চিন্তার আলোকে কুরআন বিষয়ে একটি বই লেখার ব্যাপারে মনস্থির করেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি অনেককে তাঁর দৃঢ় সংকল্পের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কারণে শেষমেশ বইটি লিখতে পারেন নি। এ নিয়ে তাঁর খেদ ও হতাশা ছিল। (ইকবাল আওর কুরআন) বইটি লেখা হলে আমরা একজন কবি, চিন্তক, দার্শনিকের চোখ দিয়ে কুরআন পড়ার সৌভাগ্য লাভ করতাম।
মোদ্দাকথা, আল্লামা ইকবালের কাব্য-সাহিত্য গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এ বিষয়টা প্রস্ফুটিত হয় যে, ইকবালের চিন্তা নির্মাণে কুরআনের ভূমিকা ব্যাপক। তিনি পৃথিবীকে দেখতেন কুরআনের দৃষ্টি দিয়ে। কুরআনের বাণী তাঁর কলমে কাব্যরূপ পেয়েছে।
আল্লামা ইকবাল যে কুরআনের নিমগ্ন পাঠক ছিলেন, তাঁর কাব্যে কুরআনের উদ্ধৃতির ব্যাপকতা থেকে অনুমান করা যায়। ইকবাল-গবেষক ড. আকবর হুসাইন কুরাইশী পাকিস্তানের ইকবাল অ্যাকাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘মুতালায়া তালমীহাত ও ইশারাতে ইকবাল’ গ্রন্থে উদ্ধৃতিসমেত ইকবালের কাব্যে ব্যবহৃত কুরআনের শব্দ-বাক্য-মর্ম উদ্ধৃত করেছেন। অন্যদিকে আরেকজন ইকবাল-গবেষক ড. গোলাম মুস্তফা খান ইকবালের কুরআনিক উদ্ধৃতি নিয়ে দীর্ঘ কলেবরের স্বতন্ত্র একটি বই রচনা করেছেন। আটশ’ পৃষ্ঠার ঢাউস সাইজের ‘ইকবাল আওর কুরআন’ গ্রন্থটিও ইকবাল অ্যাকাডেমি পাকিস্তান কর্তৃক প্রকাশিত।
কলেবর বৃদ্ধি ও পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতির ভয়ে বেশি উদ্ধৃতি দিচ্ছি না। পাঠক সমীপে আল্লামা ইকবালের কাব্যে কুরআনের উদ্ধৃতির অল্প কিছু নমুনা পেশ করা হলো।
تو زمان و مكاں سے رشته بپا
طائر سدره آشنا هوں ميں
তুমি সময় ও স্থানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখ,
আমি ‘সিদরাতুল মুনতাহার পাখির’ ঠিকানা জানি।
(আকল ও দিল, বাঙ্গে দারা)
আল্লামা ইকবাল এক কবিতায় কবিসুলভ কল্পনার সাহায্যে মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের পারস্পরিক সংলাপ রচনা করেন। তাতে মস্তিষ্ক তার বড়ত্ব ও মাহাত্ম বর্ণনা করে, পক্ষান্তরে হৃদয় তার ক্ষমতা সম্পর্কে বিবরণ পেশ করে। উপর্যুক্ত পঙক্তিতে হৃদয় তার প্রতিপক্ষ মস্তিষ্ককে সম্বোধন করে বলছে— তুমি সময় ও স্থানে আবদ্ধ। অন্যদিকে আমি সিদরাতুল মুনতাহার ঠিকানা জানি, ফলে কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়া সেখানে পৌঁছাতে পারি।
এখানে হৃদয়ের শক্তিমত্তা দেখানো হচ্ছে। হৃদয় যুক্তিবোধের ধার না ধেরে কল্পনায় যে-কোনো স্থানে, এমনকি সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছে যেতে পারে। কবিতায় আলোচ্য ‘সিদরাতুল মুনতাহার পাখি’ হলেন শ্রেষ্ঠ চার ফেরেশতার একজন জিবরীল (আ.)। এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সে (রাসূল সা.) তাহাকে (জিবরীলকে) আরেকবার দেখিয়াছিল সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে।’ (কুরআন, ৫৩:১৩-১৪)
আল্লামা ইকবাল ‘ আদমের কাহিনি’ (সারগুযাশতে আদম) শিরোনামে লেখেন,
سنے کوئی مری غربت کی داستاں مجھ سے
بھلایا قصۂ پیمان اولیں میں نے
لگی نہ میری طبیعت ریاض جنت میں
پیا شعور کا جب جام آتشیں میں نے
رہی حقیقت عالم کی جستجو مجھ کو
دکھایا اوج خیال فلک نشیں میں نے
ملا مزاج تغیر پسند کچھ ایسا
کیا قرار نہ زیر فلک کہیں میں نے
…
کبھی میں ذوق تکلم میں طور پر پہنچا
چھپایا نور ازل زیر آستیں میں نے
کبھی صلیب پہ اپنوں نے مجھ کو لٹکایا
کیا فلک کو سفر چھوڑ کر زمیں میں نے
কেউ কি আমার ভ্রমণ-কাহিনি শুনবে?
আমাকে আমার প্রতিশ্রুতি ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আমার স্বভাব জান্নাতের বাগিচার উপযোগী ছিল না;
প্রেমের শরাব পান করার ফলে
সৃষ্টিজগতের তাৎপর্যের অনুসন্ধিৎসা জাগ্রত হলো,
আকাশের অধিকর্তার উচ্চতা আমাকে দেখানো হলো।
পেলাম আমি পরিবর্তনকামী মানসিকতা,
আকাশের নিচে আমি কোনো স্থিরতা পেলাম না।
…
কখনো আমি কথপোকথনের তাড়নায় তূরে পৌঁছালাম,
আস্তিনে ভরে নিলাম চিরন্তন নূর।
কখনো স্বজনেরাই আমাকে শূলে চড়িয়েছে,
জমিন ছেড়ে ভ্রমণ করেছি আসমানে।
(সারগুযাশতে আদম, বাঙ্গে দারা)
আল্লামা ইকবাল এই কবিতায় আমাদের আদিপিতা আদম (আ.)-এর জবানে মানবসভ্যতার ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। কীভাবে মানুষ পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করতে করতে সভ্যতার বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে, যুগে যুগে মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতি কেমন ছিল— এসবের খণ্ড খণ্ড বিবরণ দিয়েছেন। তিনি এই কবিতায় মানবসভ্যতার ইতিহাসের আরো কিছু বিষয় অবতারণা করেছেন। আমাদের এই রচনার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এখানে উদ্ধৃত করিনি। মানবসভ্যতার ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কুরআন-বর্ণিত কিছু ইতিহাসও তুলে এনেছেন। এখানে তিনি আদম (আ.)-এর জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার কথা এবং আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি ভুলিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার বিবরণ কুরআনে এভাবে এসেছে— এবং আমি বলিলাম, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হইও না; হইলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।’ কিন্তু শয়তান উহা হইতে তাহাদের পদস্খলন ঘটাইল এবং তাহারা যেখানে ছিল সেখান হইতে তাহাদিগকে বহিষ্কৃত করিল। আমি বলিলাম, ‘তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নামিয়া যাও, পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রহিল।’ (কুরআন, ২:৩৫-৩৬)
প্রতিশ্রুতি ভুলিয়ে দেওয়া সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ বলেন— স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক আদম-সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাহার বংশধরকে বাহির করেন এবং তাহাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নহি?’ তাহারা বলে, ‘হ্যাঁ অবশ্যই আমরা সাক্ষী রহিলাম।’ ইহা এইজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন বল, ‘আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম।’ (কুরআন, ৭:১৭২)
এই কবিতায় তিনি আলোচনা করেছেন, তূর পাহাড়ে মূসা (আ.)-এর আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যলাভ ও কথপোকথনের বিষয়ে; এছাড়া ঈসা (আ.)-কে নিজ সম্প্রদায় কর্তৃক শূলে চড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন— মূসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হইল এবং তাহার প্রতিপালক তাহার সহিত কথা বলিলেন, তখন সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখিব।’ তিনি বলিলেন, ‘তুমি আমাকে কখনই দেখিতে পাইবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ কর, উহা স্বস্থানে স্থির থাকিলে তবে তুমি আমাকে দেখিবে।’… (কুরআন, ৭:১৪৩)
ঈসা (আ.)-কে ইহুদিরা শূলে চড়ালে আল্লাহ তাঁকে আসমানে তুলে নিয়ে রক্ষা করেন। কিন্তু হত্যাচেষ্টাকারীদের ভ্রম হয় যে, ঈসা (আ.) নিহত হয়েছেন। (দ্রষ্টব্য: কুরআন, ৪:১৫৭)
তূর পাহাড়ের কুরআন-বর্ণিত ঘটনা প্রসঙ্গে আল্লামা ইকবাল অন্য কবিতায় লেখেন—
آڑ بيٹھے كيا سمجھ كے بھلا طور پر كليم
طاقت هو ديد كي تو تقاضا كرے كوئى
কী মনে করে ‘কথক’ তূর পাহাড়ে গো ধরে বসে থাকলেন,
(অথচ) সক্ষমতা থাকলেই শুধু সাক্ষাতের বায়না ধরা সঙ্গত।
(বাঙ্গে দারা)
মূসা (আ.)-এর উক্তিরূপে আরেক কবিতায় ইকবাল বলেন—
شوخى سى هے سوال مكرر ميں اے كليم
شرط رضا يه هے كه تقاضا بھى چھوڑ دے
কথক (মূসা), পুনঃপুনঃ দেখার আবদার করছি, অথচ
প্রতিপালকের আনুগত্যের দাবি হলো, দাবি করাও ছেড়ে দেওয়া।
(বাঙ্গে দারা)
আল্লাহপাকের সঙ্গে কথা বলায় কোনো বিশেষত্ব নেই, বিশেষত্ব আছে সাক্ষাৎলাভে। আরেক কবিতায় মূসা (আ.)-এর উক্তিরূপে লেখেন—
خصوصيت نهيں كچھ اس ميں اے كليم ترى
شجر، حجر بھى خدا سے كلام ترتے هيں
সাক্ষাৎলাভে তোমার বিশেষত্ব কোনো নেই, কথক,
বৃক্ষ-প্রস্তরও খোদার সাথে কথা বলতে পারে।
(বাঙ্গে দারা)
মূসা (আ.) শেষমেষ আল্লাহপাকের দিদার লাভ করতে পারেন নি, শুধু কথপোকথনের সৌভাগ্য লাভ করেন। ইকবালও মূসার মতো নিজের মধ্যে আল্লাহপাকের দিদার লাভের আকুতি অনুভর করেন। কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে দিদার কামনা করার সাহস করেন না। কামনার ব্যর্থতা প্রকাশ করে বলেন—
صدائے لن تراني سن كے اے اقبال ميں چپ هوں
تقاضوں كى كهاں طاقت هے فرقت كے مارے ميں
ইকবাল, ‘দেখতে পারবে না’ ধ্বনি শুনে আমি চুপ আছি।
বিচ্ছেদ-কালে আকাঙ্ক্ষার ক্ষমতা কতটুকু!
(বাঙ্গে দারা)
এক কবিতায় ইকবাল লেখেন,
ہزار چشمہ ترے سنگ راہ سے پھوٹے
خودی میں ڈوب کے ضرب کلیم پیدا کر
তোমার আঘাতে পাথর থেকে হাজার ঝরনা সৃষ্টি হোক,
নিজের মধ্যে ডুব দিয়ে ‘কথকের’ উদাহরণ সৃষ্টি করো।
(যরবে কালীম)
উপর্যুক্ত পঙক্তিতে কুরআনের দু’টি বিষয় উদ্ধৃত হয়েছে। মূসা (আ.)-এর ‘কথক’ উপাধীলাভ সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। পদাঘাতে ঝরনা সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ বলেন, স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করিল, আমি বলিলাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।’ ফলে উহা হইতে দ্বাদশ প্রস্রবণ প্রবাহিত হইল। (কুরআন, ৬০)
আল্লামা ইকবাল প্রিয়নবীর সাহাবা কিরামকে আদর্শ মানুষ ও অনুসরণীয় বলে মনে করতেন। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগের মানুষদের মতো হতে চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন—
عطا اسلاف كا جذب دروں كر
شريك زمرۂ “لا يحزنوں” كر
خرد كي گتھياں سلجھا چكا ميں
مرے مولا مجھے صاحب جنوں كر!
পূর্বসুরীদের মতো প্রেম দান করুন;
দুশ্চিন্তামুক্তদের মধ্যে শামিল রাখুন।
জ্ঞানের দুশ্চিন্তার আমি সুরাহা করেছি;
প্রভু আমার, আমাকে প্রেমিক পুরুষ বানান।
(বালে জিবরীল)
উপর্যুক্ত পঙক্তিতে দুশ্চিন্তামুক্ত অর্থে যে শব্দবন্ধটি তিনি ব্যবহার করেছেন, তা হুবহু কুরআন থেকে আহরিত। কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘জানিয়া রাখ! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হইবে না। (কুরআন, ১০:৬২)
আল্লামা ইকবাল মুসলমানদের স্পেন-বিজয় ও সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের প্রশংসা করতে গিয়ে কামনা করেন, তাঁর যুগের মুসলমানরাও যেন তদ্রূপ শক্তি, সাহস, বীরত্ব ও বুদ্ধিমত্তা লাভ করতে পারেন। এক পর্যায়ে তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন—
دل مرد مومن میں پھر زندہ کر دے
وہ بجلی کہ تھی نعرۂ لا تذر میں
মর্দে মুমিনের দিলে ফের পয়দা করুন—
সে বিদ্যুৎ, যা সুপ্ত ছিল ‘অবশিষ্ট রেখো না’ প্রার্থনায়।
(তারিক কি দুয়া, বালে জিবরীল)
এই পঙক্তিতে ইকবাল ‘অবশিষ্ট রেখো না’ শব্দবন্ধে কুরআনে বর্ণিত নবী নূহ (আ.)-এর প্রার্থনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। নূহ (আ.) কয়েকশ’ বছর মানুষকে দীনের প্রতি আহ্বান করে যখন বুঝতে পারলেন, অবশিষ্টরা ঈমান আনবে সে ধরনের সম্ভাবনা নেই, তখন তিনি দোয়া করলেন— ‘হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরগণের মধ্য হইতে কোন গৃহবাসীকে অব্যাহতি দিও না।’ (কুরআন, ৭১:২৬) তদ্রূপ যখন অত্যাচারী কাফিরগোষ্ঠী মুসলিম সম্প্রদায়কে চারদিক থেকে চেপে ধরেছে, তখন আল্লামা ইকবাল কামনা করছেন, মর্দে মুমিনদের মধ্যে যেন সেই শক্তিমত্তা তৈরি হয়, যা ছিল নূহ (আ.)-এর প্রার্থনায়।
আল্লামা ইকবাল ছিলেন একত্ববাদের ঝাণ্ডাবাহী শিরক-বিরোধী সাচ্চা মুসলিম। তিনি ‘তাওহীদ’ কবিতায় একত্ববাদের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন— তাওহীদ ছিল মুসলমানদের শক্তির উৎস, অথচ তা আজ ধর্মতত্ত্বের শাস্ত্রীয় আলাপ ছাড়া কিছুই নয়। মুসলিমদের শক্তি-সামর্থ সম্পর্কে আজ তারা নিজেরাই অজ্ঞাত। আফসোস, শক্তির এই উৎস সম্পর্কে মোল্লা ও ফকীহ কেউই সচেতন নন। জাতি কী, জাতির নেতৃত্বদান বলতে কী বোঝায়— বেচারা দুই রাকাতের ইমাম কী বোঝে এসবের! মোদ্দাকথা, আল্লামা ইকবাল তাওহীদের মর্মকথা ধারণ না করার জন্য নিজের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। এ নিয়ে এমনকি ধর্মীয় নেতাদের ব্যর্থতার প্রসঙ্গেও কথা বলেন। এই কবিতারই একাংশে সূরা ইখলাসের শব্দ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন—
ميں نے اے مير سپه! ايرى سپه ديكھى هے
قل ھو الله كى شمشير سے خالى هيں نيام
হে সেনাপতি, আমি তোমার সৈন্যদল দেখেছি,
তলোয়ারের খাপে ‘ক্বুল হুয়াল্লাহর’ তলোয়ার নেই।
(তাওহীদ, যরবে কালীম)
শিরক থেকে মক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন—
آہ! اے مرد مسلماں تجھے کيا ياد نہيں
حرف ‘لا تدع مع اللہ الھاً آخر’
হায়, মর্দে মুসলমান, তুমি কি বিস্মৃত হয়েছ,
‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহকে ডেকো না’ নির্দেশবাণী?
(লাহোর ও করাচি, যরবে কালীম)
শেষ লাইনের ‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহকে ডেকো না’ বাক্য সরাসরি কুরআনের আয়াতের অংশ। কুরআনে আল্লাহ বলেন, তুমি আল্লাহর সহিত অন্য ইলাহকে ডাকিও না, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁহারই এবং তাঁহারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে। (কুরআন, ২৮:৭৭)
আল্লামা ইকবাল দৈশিক জাতীয়তাবাদের বিরোধী ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন রচনায় এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তিনি বারবার উম্মাহ ও মিল্লাতের কথা বলেছেন— যা দেশ, ভূখণ্ড ও সীমানা-নিরপেক্ষ। তিনি ভূখণ্ডভিত্তিক জাতীয়তার ধারণার বিপরীতে ইসলামের উম্মাহ-ধারণাকে তুলনা করে বলেন—
تفريق ملل حكمت آفرنگ كا مقصود
اسلام كا مقصود فقط ملت آدم!
ইউরোপের রাজনীতি হলো জাতিতে জাতিতে বিভেদ,
ইসলামের উদ্দেশ্য স্রেফ আদমজাতির একত্ব।
(মক্কা আওর জেনেভা, যরবে কালীম)
কুরআনে এই কথাই বারবার ঘোষিত হয়েছে। কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী সবাই আদম-সন্তান। দেশ ও ভূখণ্ড দ্বারা মানুষের মর্যাদা নিরূপিত হতে পারে না। স্থান ও ভূখণ্ড শুধু পারস্পরিক পরিচয়ের জন্য। আল্লাহ বলেন— হে মানুষ! আমি তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি এক পুরুষ ও এক নারী হইতে, পরে তোমাদিগকে বিভক্ত করিয়াছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাহাতে তোমরা একে অপরের সহিত পরিচিত হইতে পার। (কুরআন, ৪৯:১৩)
আল্লামা ইকবালের চিন্তা নির্মাণ ও মনীষা গঠনে কুরআনের ভূমিকা ব্যাপক। নিজের রচনায় তিনি কুরআন থেকে এত বেশি শব্দ-বাক্য-মর্ম আহরণ করেছেন, এই স্বল্পদৈর্ঘ নিবন্ধে এর বিবরণ দেওয়া সম্ভব নয়। এই বিষয়ে স্বতন্ত্র একটি বই-ই রচিত হতে পারে। তাহলে বাঙালি পাঠকরা ইকবাল-কাব্যের সুষমার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে।
আল্লামা ইকবাল কবিতার জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁর কবিতায় কুরআনের বাণীর নির্যাস গ্রহণের মাধ্যমে কবিতার রসগ্রাহীদের মধ্যে কুরআনের প্রচারে ভূমিকা রেখেছেন। এর মধ্য দিয়ে কুরআনের প্রতি তাঁর ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশও ঘটিয়েছেন। আল্লাহ কুরআন-প্রেমিক এই কবিকে পরকালে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন।
তথ্যসূত্র:
- কুল্লিয়াতে ইকবাল
- ইকবাল আওর কুরআন
- মুতালায়া তালমীহাত ও তাশরীহাতে ইকবাল
- কুরআনের অনুবাদ: ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনূদিত ‘আল-কুরআনুল কারীম’
কবিতার অনুবাদ : আবুল কাসেম আদিল
Ma sha allah