আমার শিরোনাম নাই

এনাম মুরতাজা

বই : একপ্লেট বিরিয়ানি কেন্দ্র করে কিছু দাঁড়কাকের অমর আগ্রাসন

লেখক : এনাম মুরতাজা

প্রকাশনী : চিলেকোঠা পাবলিকেশন

পৃষ্ঠা : ১৩৯

সকালের ঘুমটা এত গভীর হয় যে সব আউলঝাউলা করে দেয়। সাতটায় ওঠার কথা থাকলে উঠি নয়টায়। আমার মনে হয় সকালে ঘুমজাগা মুখ সবচে অসুন্দর লাগে পুরুষদের। নারীরা যে কুণ্ডলি পাকিয়ে ঘুমায়, ঘুম থেকে উঠে এলোমেলো চুল চেহারায় ছড়িয়ে বসে, নিঃসার চেয়ে থাকে, সবটাই ওদের সুন্দর। সদ্যজন্মা হাঁসের বাচ্চার কুসুমকোমল হলুদ পশমের মতো নিষ্পাপতা কি আদরতা ওই আউলা চুলো মুখে লেপ্টে থাকে। আমি অবিবাহিত একলা তরুণ হিসাবে নারীদের ব্যাপারে আমার সমীকরণ ভুলও হতে পারে।

ঘুম থেকে উঠি সকাল আটটার পরই। বিছানায় অলস এপাশ-ওপাশ গড়িয়ে উঠতে উঠতে আরও পৌনে এক ঘণ্টা যায়। এইটা আসলে ঘুম হয় না। শুধুই আলসামি। দীর্ঘ ঘুমের পর চোখের নিচে নাকের ডগায় আর ঠোঁটের আশপাশে তেলতেলে একটা আর্দ্রতা ছড়িয়ে থাকে, এটা খুব বিরক্তিকর ক্লান্তিকর আর পাতলা গন্ধও ছড়ায়। এই ব্যাপারটাই শরীরে আরও আলসামি চাপিয়ে দেয়।

বাসি মুখ-কাপড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। আমার কাছে সহসা মনে হয়, এই যে মাথার খুশকি মাতালের মতো চুলকিয়ে মেজাজ খিচড়ে তুলছে, পুরা শরীরে বিদ্যুৎতরঙ্গের মত বাসি ক্লান্তি বিজবিজ করে ছড়িয়ে পড়ছে… এটাই জীবনের একটা সামগ্রিক চিত্র। শুধু আমার মতো নেতিবাদী বিচ্ছিন্ন তরুণই নয়, সমাজের যেকোনো মানুষের নিজস্ব কল্পিত জীবনের বাইরে আসলে জীবন হিসাবে যা ঘটে যায় তা এই আউলাঝাউলা ঘুমভাঙা অনুভূতির মতোই।

যে গল্পটা বলব সেটার ব্যাপারে আমার তেমন কিছু দাবি নাই। কারণ এই দুনিয়ায় কেউ কারও গল্প শোনার জন্যে বসে নাই। মানুষ নিজের গল্পটা যেটা আসলেই গল্প, আরেকজনকে হুবহু রূপে কখনোই শুনাতে পারে না। আর যে শোনে সে কথকের মতো করে গল্পের মৌলিক সুরটা ধরতেও পারে না। প্রত্যেকে অন্যের গল্পকে নিজের গল্পের সাথে ডিল করে দেখে ওগুলা তো গল্পই না। এভাবেই যুগে যুগে একজনের গল্প আরেকজনের কাছে অগল্প প্রমাণিত হয়ে আসছে।

বারান্দায় শুধু দাঁড়িয়ে থাকলেই চলে না। একটা রয়েল নেক্সট ধরিয়ে নেড়ে দেয়া কাপড় সরিয়ে সামনের গলিতে নজর দেই। শালা দেখ কামটা, প্রত্যেকদিন মহিলারা এখানে কল থেকে জল নিতে সিরিয়াল ধরে। এমনকি দুধ বিলিবণ্টন নিয়ে কাড়াকাড়ি আর হাউকাউ ছাড়া ভালো কোনো দৃশ্য সকালে কিছুতেই চোখে পড়বে না। এই গলির বাসাগুলা দেখলে গর্জিয়াস মনে হয় বাকি এখানকার পানিব্যবস্থা অথবা বাসিন্দাদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা খুবই নিচতলার।

এই দালান আর মানুষগুলার গায়ে একটা অদৃশ্য খাপছাড়া পোশাক আমি লক্ষ করি। এই শালি বাড়িওয়ালির কথাই ধর, জোর করে এত বেশি ভাড়ায় ঘরের চাবি ধরিয়ে দিল। ভাবসাব এমন, যেন-বা জলের মতো সস্তায় ঘর দিচ্ছে। কিন্তু বেসিনে গিয়ে যদি বাসিমুখে জলের ঝামটা মারো, মাইরি, জলের গন্ধে মনে হবে মেঝে থেকে কিছু একটা কিলবিল করে দেহে উঠে পড়ছে। চোখ-মুখের বাসি ভাব তো দূর হয়ই না, আমার বিরক্তি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। চায়ের তীব্র তৃষ্ণা পায়। এই উত্তাপ না গিললে মাথামগজ এখন আর কিচ্ছু কাজ করবে না।

মুখ না মুছেই ঘর থেকে বের হয়ে তালা লাগাতে যাই। তালাটা নতুন কিন্তু এঁটো হাতে চিট্টা হাতে ধরে ধরে শালারা মোটা কালো আবরণ ফেলে দিছে এর উপর। আমি কাদের সাথে বাস করি তা ভাবি! আমাদের পরিকল্পনা করা জীবনটাও দেখতে এই ময়লা তালার চেয়ে আলাদা কিছু? অথচ এই রুমমেটদেরকেই যদি জীবনের এই অপরিকল্পিত ছবির বীভৎসতা বর্ণনা করো, দেখবা তারা তোমাকে বিকারগ্রস্ত বা মনোবিকৃত বলছে।

আমার গল্পটায় সময়ের কোনো ধারাবাহিকতাও নাই, অধারাবাহিকতাও নাই। মনে হয় সব দৃশ্য একই সময়ে ঘইটা যায় আমার। একটা মাত্র মুহূর্তের মোহনায় গল্পের নানান প্রত্যঙ্গ আইসা আছড়ে পড়ে। সব মিলেমিশে একসত্তা হয়ে ওঠে। তাই গল্পের কোন অংশকে আলাদা করে বলব বুঝি না। প্রত্যেকটা অংশেরই একটা একক রঙ আমার কাছে ধরা পড়ে।

আস্তে-ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামি। প্রায় প্রত্যেক তলার ফ্লাটগুলার দরজা হাট করে খোলা। কোথাও বাচ্চা চিৎকার করে। কোনোটায় দরজার সামনেই টেবিল পেতে খানাখাদ্যের আয়োজন করা হয়েছে, পুরা সিঁড়ি তাই ঘ্রাণে মৌ মৌ করে। কোনো ফ্ল্যাটে কারি মাশারির তেলাওয়াত বাজে। কোরান তেলাওয়াত তো সত্তাগতভাবেই সুন্দর। বাকি এই মাশারির গলা লেইমমার্কা লাগে। ওর কণ্ঠে থাকে মেয়েলি একটা আস্তর। ঘরের নারীরা তার তেলাওয়াত শুনবে উচ্চ আওয়াজে, ব্যাপারটা স্বাভাবিক সত্ত্বেও আমি এসবে মাথা ঘামাই কেন, ধুর।

অথবা এই পড়শিরা যদি সবকিছু খোলা রেখে ভাবে এগুলা চেয়ে দেখার কেউ নাই, সবাই যার যার ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় ব্যস্ত মগ্ন… সভ্যতার এই লগ্নে এসে যখন মানুষের সামষ্টিক মিলবদ্ধতা আর সম্পর্ক আচারের আলাদা কোনো আবেদন নাই তখন আমি শালা কোন চান্দুর সমস্যা বাঁধে!

তোমাকে ব্যাপারটা আরও খুলে বললে বুঝতে সুবিধা হবে। খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দেখো, তিনি রাতে অনাহারী ও দুঃখী মানুষের কষ্ট দেখতে মদিনার প্রত্যন্তে চলে যান প্রতি রাতে। এসব খুঁড়তে গিয়ে তিনি একরাতে কৌতূহলবশত একটা খুপরিতে ঢুকে পেয়ে যান মদ্যপকে মদ খাওয়া অবস্থায়। ব্যস, তাকে শাস্তি দেয়ার জন্যে তোড়জোড় শুরু করেন। লোকটা বলে, খলিফা! আমি অপরাধ করছি ঠিক আছে। কিন্তু মুমিনকে তো মুমিনের ঘরে ঢুকে তার দোষ তালাশ করতে আল্লা মানাও করেছেন। এইটা আপনি ঠিক করলেন? ওমর এইটা শুনে কেঁদে দেন।

ওই যুগটায় ছিল মানুষের সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রবণতা, ছিল সংঘবদ্ধ একটা ভ্রাতৃত্ব ও শক্তি। সামাজিক অপরাধকে বড় করে দেখা হতো। দেওয়া হতো তীব্র শাস্তি। কিন্তু ব্যক্তিগত পাপগুলাকে ব্যক্তি আর আল্লার মোয়ামালা হিসাবে সাধারণত ছেড়ে দেয়া হতো।

আমাদের চোদনা সভ্যতায় চিত্রটা পুরা উল্টা। মানুষ এখন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত জিনিস খুঁড়ে বেরই করে না, সমাজে এইসব গোপন পাপগুলাকে ক্ষমার অযোগ্য ব্যাপার হিসাবে রাষ্ট্র করে দেয়। আর এখানে সামাজিক পাপ বলে কিছু নাই। প্রকাশ্যে মদের বার চলে, চলে চাঁদাবাজি, চলে ন্যাংটামি অশ্লীলতার বহর… এসবই লঘু ব্যাপার। বিলাতি জাতে উঠতে গেলে স্ট্যাইল হিসাবে এইসব মেনে নিতে হবে, আরও শিথিলভাবে দেখতে হবে।

সিঁড়ি বেয়ে গলিতে নামতেই একটা উনিশ বছর বয়সী মেয়ে আমার সামনে পড়ে। আমার বিপরীত দিকে যায়। কোনো নারীর দিকে তাকানোর এখন মোটেও ইচ্ছা নাই। ওর গায়ের রঙ বাঙালি শংকরের কোন শ্রেণিতে ফেলা যায় বা ওর কাঁধ মাংসল না চিকন ঢালু বা ওর স্তন পুরুষ্টু না ঢিলা বা ওর চোখের মণিতে শান্ত মায়াবী দীঘির ছায়া নাকি ফলার মতো তীক্ষ্ণ কাম আছে, তা নিয়ে গবেষণা করার মোটেও ইচ্ছা নাই। তাকালাম না।

শুধু অনুমান করলাম ড্যাবড্যাব চোখে একটা মানবী আমাকে গিলে খায়। আসলে দেখার সুযোগ করে দিলে সুযোগ ছাড়বা কেন? একেবারে লুটেপুটে আস্বাদন কর। মাখনের মতো জিহ্বায় তুমুল নাড়াচাড়া করে উপভোগ কর। তাইলে চোখের খাদ্য হওয়া থেকে বাঁচার জন্যে আমাদের চেয়ে থাকাই সই, কও? আমরা একটা হারামি যুগে বাস করি। হ্যাঁ, অসাধুর সাথে হারামিগিরি না করলে টিকে থাকা দায়, বিশ্বাস কর।

আমি রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখার ফজিলত বা জরুরত বলছিলাম মৃদুলকে, গতকাল বিকালে। আমি, মৃদুল আর সাদ্দাম নদীর তীরে বিকালে হাওয়া খেতে বের হই। হাঁটি। চা খাই। চায়ের দোকানে যাওয়ার আগের বাঁকটা ঘুরতেই চোখে পড়ে এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে এদিকে এগিয়ে আসে। আমি মৃদুলকে এই মেয়ের আর্টটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি, স্বল্প বয়সেই ওর দেহটা একটু পুষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত ও যে কাম দৃষ্টিতে তাকাল, এটা ওর বয়সের সাথে বেখাপ্পা আর এই নজরে বেশি কোনো আর্ট নাই। তৃতীয়ত, ওর হাঁটার দ্রুততায় বালখিল্য এলোমেলো আর উদাস ভাব আছে। তাই সে বোঝে না এমন দৈহিক কাঠামো নিয়ে কত সন্তর্পণে হাঁটা উচিত। এত দ্রুত হাঁটলে তো মিয়া বুকটা প্রচণ্ড দোলাদুলি করে। আর গিমাসানো ঘামেল কপালে চুলের উন্নাসিক লেপ্টালেপ্টি রাস্তার যে কোনো পুরুষ বা নারীকে থমকিয়ে দিতে পারে।

আমার একথা শুনে মৃদুল যেটা করে সেটা হলো, আস্তাগফিরুল্লা বলে সামনে গিয়ে একটা ছেলেকে ধরে কয় ভাই চলেন আপনার সাথে হাঁটব; এর সাথে চললে আমার ইমান টিকবে না। তো আমি মৃদুল আর সাদ্দামের জ্বালায় ভালো করে চা-ই খেতে পারি না। মৃদুল তো বলে তোর আকিদাই ঠিক নাই। সাদ্দাম কয় হালা রাস্তাঘাটে এগুলা আলাপ মানুষের কানে গেলে আমাদের সবাইরে ধোলাই দিবে।

ওদেরকে বোঝাই যে, এটা মানুষের জীবনের ফাজলামি মুহূর্ত। ফাজলামিকে সিরিয়াস দেখ কেন? এভাবে মেয়ে দেখা যদিও পাপ কিন্তু এটা ওর কামদৃষ্টির ফেরত হিসাবে প্রাপ্য ছিল। তুমি চাও একটা অমন নারীর শকুন-নজরের একতরফা শিকার হতে? পাপকে বৈধ মনে করে করলে কারও আকিদা নষ্ট হইতে পারে। আমি তো আর পাপকে বৈধ মনে করে করছি না। এটা যে পাপ তার অনুতাপবোধ আমার ভিতর আছে, কিন্তু হারামি কালটাই আমাকে হারামি ব্যবহার করতে বাধ্য করে।

আর এখান থেকে তোমরা তো একটা সূক্ষ্ম শিক্ষাও বাইর করতে পারো নাকি? ধরো, তোমার কোনো ছোট বোন-টোন থাকলে তাদেরকে তালিম দিলা যে এইসব বয়সে কীভাবে সাবধানে আস্তে-ধীরে হাঁটতে হবে। হা হা।

ওরা একে একে আমার পিঠে দুম করে কিল মারে। কথায় কথায় চিমটি আর কিল মারা যে মেয়েলি স্বভাব তা ওদেরকে বলতে চেয়েও থেমে যাই। নাইলে আমার কিল খাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।

আমি মনে হয় একটু পাতলা আলাপে চলে যাচ্ছি। যাক, এই মৃদুলটা দিনদিন আমার কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। সদ্যগজা মোচ, একটু দাড়ির ঘনত্ব আর স্ফিত পেটের আদলে ও একটা গিয়ানি ভারিক্কি ভাব নিয়ে কথাবার্তা চালাতে চায়। কিন্তু ও যে একটা শিশু তা আমি ছাড়া আর কে বেশি জানে!

বয়সের কারণে কি টুটাফাটা এলেমের কারণে সামনাসামনি এরা আমাকে প্রচুর সমীহ করে। আপনি সম্বোধন করে। আমি বুঝি না এতদিনের ক্লাসমেট হওয়া সত্ত্বেও কোন দুঃখে আপনি সম্বোধন করে। আমি দেবতা নাকি, শালা?

অবশ্য মৃদুল আজকাল একটু-আধটু তুমি কওয়াও শিখেছে। ওর তুমি কওয়ার দেখাদেখি সাদ্দামও একটু উদ্বুদ্ধ হয় তুমি কইতে। বিশেষ করে যখন আমাকে নসিহত দেয়ার ভঙ্গিতে কথা বলে। কিন্তু আমার চিন্তাভাবনার বিরোধিতা কথাবার্তায় এত ব্যাঙ্গাত্মকভাবে প্রকাশ করে যে, আমি অন্তত মৃদুলের সাথে হাঁটতে বাইর হইলে আমার প্রতি ওর শিশুসুলভ অযৌক্তিক ব্লেইম উপেক্ষা করে চুপচাপ থাকব নিয়ত করি, কিন্তু পারি না। ওর ভিতর কী একটা আকর্ষণ আছে যা আমাকে টেনে কথা বলতে বাধ্য করে। ওর স্বভাবের এই মনস্তাত্ত্বিক রুক্ষতা আর বৈরিতার জন্যে ওর নাম নির্দ্বিধায় মৃদুল কেটে কাঠেল দেয়া যায়।

তো, গতকাল সন্ধ্যায়ই চা খাওয়ার পর ওলামা পার্কে আমরা দাঁড়িয়ে নদীর কালো ঢেউয়ের পারে বাড়ি খাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। নদীকে আমি খাদক অথবা উৎপাদক হিসাবে চিনতাম। কিন্তু সমস্ত ঐতিহাসিক ভাঙনের আগ্রাসন আর সবুজ শ্যামলা উৎপাদনের আদিম সুরবাদক আমি এই নদীর তরঙ্গের ভাঁজে খুঁজে ব্যর্থ হই। সে তার সমস্ত ছন্দ আর অস্তিত্ব নিয়ে মাটির অতলে বা শূন্যের গহ্বরে বিসর্জিত হতে চায়। কিছু মানুষ হুদাই ওদের বাড়ির নর্দমার ড্রেনটার মুখ এই নদীর দিকে ছেড়ে দিছে। তাই ময়লা ড্রেনগুলার তরল জোয়ারই নদীর অবশিষ্ট প্রাণটুকু টিকিয়ে রাখে। অথবা এর নাম দেয়া যায় নকল জলের নদী। এখানে দাঁড়িয়ে আমার বিরক্তি তীব্র হয়ে ওঠে। সেই সাথে এই মৃদুলটা ঘ্যানর ঘ্যানর করে আমার চিন্তাভাবনার প্রতি নানান খোটাব্যঞ্জক মন্তব্যে কান লাল করে ছাড়ে যে, আমি নিম্নপাড়ায় ঘুরি, আমি লেগুনা-টেম্পু ড্রাইভারদের সাথে আলাপ-আড্ডা মারি, আমি জাতহীন ময়লা টংয়ের দোকানে বসে নারীর হাতের চা খাই, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি সব তলায় মিশে চিত্রগুলা আঁকতে চাই। আমি খু্ঁজি সমাজচাকার আর্ট। আমি মানুষে মানুষে সম্পর্কের মনস্তত্ত্ব কিংবা সভ্যতা-বিবর্তনের সূত্রগুলা এই গলিতে ওই গলিতে হাতড়াই। আমি ওর মতো দেবতাগিরির পবিত্র খোলস ছেড়ে কেন অপবিত্রদের সাথে উঠি-বসি? কেন একাডেমিক বইপত্তরে ওর মতো ডুব দিয়ে থাকি না? আমি ওকে বলি, দেখ, বঞ্চনার শিরোনাম নিয়ে থাকতে ভালো লাগে। আমি বঞ্চিত এটা আমার কাছে মনে হয় মহান শিরোনাম।

– হে হে হে। তোমার কী এত বঞ্চনা বাপ। তোমারে তো এত বৈষম্যের শিকার দেখি না। নাকি নিজের উপর বঞ্চিতের শিরোনাম চাপায়ে নিতেছ বঞ্চিত না হয়েও। এটা মিথ্যা না?

– আহহা। এখানে দল তো দুটাই নাকি? হয়তো জালেম নয়তো মজলুম। আমি যদি উচ্চ জাতের এইসব জালেমরে ঘৃণা করি, ওদেরকে তাল না দিয়ে মজলুমিয়তের ঘোষণা দেই, সমস্যা কী? তাতে বরং প্রকৃত মজলুমদের দল ভারী হইল। ওরা বুকে আরেকটু সাহস পাইল।

– হা হা হা। তুমি যেই জিনিস নও সেটা তুমি বাজার-ঘাটে দাবি করে বেড়াও। ব্যাপারটা হাস্যকর না? তোমারে তো মানসিক হাসপাতালে দিতে হবে দেখি শিগগির! মনোবিশেষজ্ঞ খুঁজব কও?

(এই ফাঁকে সাদ্দাম সুযোগে একটু হেসে নেয় হে হে হা হা করে। হ ভাই জরুরি পাঠায়ে দাও ওরে)

– তোমরা সোদ্দাম হাসাহাসি করতেছ। ব্যাপারটা একটু ঠান্ডা মাথায় বোঝো। আমার কি তাইলে কোনো শিরোনামই থাকা উচিত নয়? নো মজলুম, নো জালেম। বাহ। আর আমি জীবনেও বুঝি কোনো বৈষম্যের শিকার হই নাই? হয়তো আমার বঞ্চনার সাথে সমাজের এইসব প্রচলিত প্রকাশ্য মজলুমদের বৈষম্যের অমিল আছে! কিন্তু আমি এতটুকু বুঝি, জীবনে অতীতে কখনও বঞ্চনার শিকার হইছিলাম তাই তার প্রতিশোধ আমারে নিতে হবে বর্তমানের মজলুমদের লগে তাল দিয়ে, তাদের সাথে মিশে এবং বঞ্চনার শিরোনাম নিয়ে বাস করে। ব্যস। ওদের বঞ্চনার প্রতিশোধ নেয়ার মধ্য দিয়েই আমারও বৈষম্যের প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যাবে। আমি এভাবে সান্ত্বনা পাব। আমার কাছে সব বৈষম্যের রঙ এক। পুরানা-নতুন, পুরুষ-নারী, ধনী-গরিব, শহর-গ্রামভেদে যাবতীয় জুলুমের মোহনা এক। জুলুমের রঙের ভিন্নতা নাই। জুলুমের রঙ হইল জুলুম।

– এইসব উগ্রতা আর যুক্তি দিয়ে সমাজে চলা যায় না, ভাই।

– আচ্ছা ভাই। আমার কোনো শ্রেণি নাই। জাত নাই। নামঠিকানা নাই। মাইনা নিলাম। মানসিক রোগীর শিরোনাম হলো মানসিক রোগী। এর বাইরে তাকে আর অন্য শ্রেণিতে ফেলা যায় না।

প্রিয় বন্ধু, আসো, এইবার গল্পের মূলকথায় ঢোকা যাক। এখন সবার আগে এক কাপ চা খাওয়া অতীব জরুরি। চিন্তাভাবনা সব উল্টাপাল্টা গতিতে চলছে। বাসা থেকে নেমে গলিতে উঠার পর বালসাল ইরোটিক আলাপ আর আমার শিরোনাম আছে কিনা এই ফালতু ক্যাচাল ভাবতে ভাবতে আরসিন গেইটের এখানে গরিবদের চায়ের দোকানে চলে আসি। কোন চান্দু মৃদুল আমাকে উপহাস করবে, আমার হাঁটার ভুল ধরবে, এক কাঁধ কতটুকু বাঁকিয়ে হাঁটি বা আমি এই কাছিম গতির হাঁটনে কতটুকু ঝিমাই… তার তৃতীয় শ্রেণির এসব উপহাস গায়ে মাখলে আমরা আমাদের গল্প তো আর আগাইতে পারব না!

ধীরে সুস্থে টংয়ের কোনায় একটা আসনে বসি। এই আসন খালি হতে হতে একটা রেডিমেড শিঙাড়া যেটা পলিথিন দিয়ে মরিচসহ প্যাকেট করা, দাঁড়িয়েই চিবিয়ে শেষ করি। আদা ছাড়া শুধু লিকার-চিনি চায়ের উষ্ণতায় ঠোঁট লাগিয়ে সুখের হাওয়ায় কল্পনার ডানাঝাঁপটা দেখি। দেখি বেনামি গাছ থেকে বেনামি ফল পতনের দৃশ্য। ছোট্ট পেয়ারার সমান সাইজ। পড়েই ফেটে হা হা করে লাল দাঁত বের করে উপহাস করে। এর ভিতর থেকে একটা পানসা মিষ্টি বা আঁশটে গন্ধ বের হয়। ফাটা ফলটার চারপাশে মাছি ভোঁ ভাঁ করে। গাছ ও ফল দুটাই আমাকে আবিষ্ট করে রাখে যতক্ষণ চা খাই।

গতকাল রাতে যখন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এইদিককার পুরান ঢাকাইয়া মেটে রাস্তায় টাখনুসমেত জলের উপর কৈশোরীয় উদ্দীপনায় দৌঁড়ঝাপ করে এই টংয়ের সামনে এসে জ্যাবজ্যাব শরীরে দাঁড়িয়ে রং চা চাই, পাশে মজদুর কিসিমের এক লোককে গাছটার নাম জিজ্ঞাস করি। আমার ভিতর দুয়েকদিন ধরেই এই গাছটার নাম জানার জন্যে উশখুশ চলে। কিন্তু হালায় একবার কয় আমগাছ আরেকবার কয় তালগাছ আরও হাবিজাবি। ও কি আমার সাথে ফাজলামি করছে? আমি আরও ভালো করে ইশারা দিয়ে বলি, এই যে, মাথার উপরের গাছটা, দেখে কও? বলে এটা তো বটগাছ। বটগাছের এইরকম ফল ধরে আর পড়ে বলে আমার জানা নাই। ফল পড়াপড়ি দেখতে দেখতে সুখে আমার ঝিমুনি চলে আসে।

মৃদুল কথাটা মিথ্যা কয় নাই। জাগায়-বেজাগায় ঝিমিয়ে পড়া রোগের মতো হয়ে যাচ্ছে আমার। চোখ বন্ধ হতেই দেখি তুমুল উদ্যমে একটা কনস্ট্রাকশনের কাজ চলে। দোতলা মতন একটা দালান। খালি পিলার আর ছাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র। কোনো দেয়াল নাই। বাইর থেকে ভিতরে কি হচ্ছে স্পষ্ট দেখা যায়। দালানটা আসলে কীসের বা এখানে নির্মাণের কী ধরনের কাজ চলে কিছুই বুঝে আসে না আমার। শুধু দেখি নিচতলায় অনেকগুলা চুলা জ্বলে যার আগুনের জিহ্বার ডগা একতলা ফুটা করে উপরে ওঠার অনন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। চুলাগুলা অস্বাভাবিক রকমের বড় বড়, একেকটায় বুঝি গোটা এক নগরের খাবারের আয়োজন করা যাবে এমন বড় পাতিল চড়ানো সম্ভব!

এখানে কী হচ্ছে ব্যাপারটা আরও গভীরভাবে বুঝতে নজরকে আরও তীক্ষ্ম করি, অমনিই চাঅলা রানে টোকা দেয় ভাই কি ঘুমায়ে গেলেন? দিনেদুপুরে চা খাইয়া কেউ ঘুমায় মিয়া? আসলেই তো। আমিও বেশ লজ্জা পেলাম। সবাই কেমন তাকিয়ে আছে ভাবতেই আমার নিচে ডেবে যেতে ইচ্ছা করে। দ্রুত বিল চুকিয়ে কোনোরকম সেখান থেকে সটকে পড়ে বাঁচি। কারও মুখেই তাকাই না। হনহন করে পাঁচতলা বেয়ে উঠে পড়ি বাসায় কখন বুঝতে পারি না।

কান ঝা ঝা করে। কিন্তু মাথায় ঝিমুনিটার ঝিমঝিম একটা লেশ এখনও রয়ে গেছে। বিছানার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসি। বইটা পড়তে একটুও ইচ্ছা করে না। শুধু নাড়িচাড়ি। এর ভিতরেই আবার আসে ঝিমুনি। হ্যাঁ, আবার একই দৃশ্য একই স্ট্রাকচার ঝিমুনির ভিতর দেখি।

আমি আরও গভীরভাবে খেয়াল করি যে, শুধু প্রথম তলায় নয় দ্বিতীয় তলাতেও ওইরকম বড় বড় অনেক চুলা। কিন্তু সেগুলা জ্বলে না। প্রত্যেকটা চুলার সাথে একজন করে জাদরেল পাচক আর তাদের অধীনে দশ-বিশজন করে শাগরেদকে কাজ করতে দেখা যায়। দ্বিতীয় তলার চুলায় বিশাল সব পাতিলা বসানো আবার পাচকরা সেগুলা নাড়াচাড়াও করে বড় বড় হাতা আর খুন্তি নাড়িয়ে। উপরে ওরা কী রান্না করে ঠিক বুঝে আসে না। চুলায় আগুন জ্বলে না আবার ডেকচিতে অদ্ভুতভাবে কীসব তরিতরকারি রান্নার ফালতু কোশেশ করে! আর উপরের এদের শারীরিক গড়ন স্পষ্ট আর চেনাচেনা লাগে আমার কাছে।

উপর তলায় আগুন না জ্বললেও নিচের চুলাগুলা তুমুলভাবে জ্বলে। আর নিচের পাচকরা অনেকটা মিশমিশে ফ্যাকাশে আদলের, অদৃশ্য মহান মানবের মতো বড় বড় হাত-পা সত্ত্বেও দেখতে মোটেও অসুন্দর লাগে না। ওদের আশপাশে নুরানি আবেশ ছড়িয়ে আছে। সমস্যা শুধু গায়ের রঙের অস্পষ্টতা আর মিশমিশে ভাবটা। ওদের রক্ত-মাংস কি শূন্য দিয়ে গড়া? বা ফাঁকা বাতাস? বা অতীতের চাপা পড়া প্রত্নতাত্ত্বিক অজানা ধূসর ধুলা? একতলার চুলাগুলাতে কোনো পাতিলও চড়ানো নাই। অথচ দাউ দাউ আগুন জ্বলে। এতটুকু দেখে সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ঝিমুনি ভাঙে। মস্তিষ্কের নিউরন দপদপ জ্বলে। এই দৃশ্য এতই দুর্বোধ্য যে, আগামাথা কিছুই বুঝতে পারি না।

বারান্দায় গিয়ে বসলাম। মগজে চলে চরম উথালপাতাল। একটা সিগার ধরাই। কনস্ট্রাকশনের কাজের সাথে এইসব চুলা জ্বলা না জ্বলার কোনো সূত্রই বুঝে আসে না। একতলার লোকজন পুরানা কোনো কালের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এখানে? নাইলে ওদের আদল এত শূন্য কাঠামোর উপর দাঁড়ানো কেন, বড়-বড় হাত-পা থেকে নুর ছড়ানোর ব্যাপারটা আর রান্না করার প্রয়োজনীয়তা না থাকা কি এটাই প্রমাণ বহন করে যে, তারা অতীতের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া লোক? আর উপরের ওরা নতুন যুগের? ভাবতে ভাবতে সিগার হাতেই আবার ঝিমিয়ে পড়ি।

এবার সরাসরি নিজেকে দোতলার এক পাচকের আওতায় শাগরেদ হিসাবে আবিষ্কার করি। এমনকি আমার সাথি হিসাবে মৃদুল সাদ্দাম ওরাও আছে। আমি এবার পুরাপুরি বিহ্বল হয়ে যাই। এখান থেকে নিচতলার চুলার দাউদাউ আগুন স্পষ্ট দেখা যায়। আমি পুড়ে যাওয়ার প্রচণ্ড ভয় পাই। পায়ের নিচের ছাদটা যেন নিটোল স্ফটিক একটা। আমার হঠাৎ অনুভব হয় বা আমাদেরকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানানো হইতেছে, নিচে ওসব আসলে আগুন নয়, ওসব আসলে জ্ঞানের আলো, অহির ফোয়ারা। তাই কোনো মতেই পায়ের নিচে যারা আছে তাদের বা নিচের আগুনের অসম্মান করা চলবে না।

আর উপরে আগুন জ্বলছে না কেন সে ব্যাপারে জিগ্যাস করলে একেকজনকে একেকরকম বলতে শুনি। কেউ বলে আমাদেরকে চেষ্টা করে যেতে হবে নিচের আগুন উপরে স্থানান্তর করার। মানে রান্নাবান্নার ব্যাপারে যেসব বইপত্তর আছে সেগুলা খুব আন্তরিকতার সাথে একনাগাড়ে অধ্যয়ন করে যেতে হবে, বিশেষ করে নিচের পাচকদের বইগুলা গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। পড়া ছাড়া কোনো প্রকার বিরতি বা ছুটি নেয়া চলবে না। এ ব্যাপারে উর্দু একটা ডায়ালগ আমাদেরকে শোনানো হয় যার অর্থটা দাঁড়ায়, আমরা বইয়ের পাতার উপর মরে যাব। আর বইয়ের পাতাগুলা হবে আমাদের কবরের কাফন।’ তাইলেই একসময় নিচের মুরুব্বিদের আত্মার নজর পড়বে আমাদের উপর। তাদের রুহের নুরই উপরের চুলা ধরিয়ে দিতে সক্ষম হবে।

আমি বিতর্কে যাই, আমরা এই স্বশরীরি আগুন সরাসরি নিচ থেকে নেয়ার ব্যবস্থা না করে উনাদের রুহের নুর দিয়ে আগুন ধরানোর কাম চালাব কেন? এটা তো দীর্ঘ অপেক্ষার ব্যাপার। আমি তাকে রিম বান্নার এই গানটা শুনিয়ে দেই, ত-লা ইনতিযারি ইয়া হাবিবি।

আমার এই উপহাস সে গায়ে মাখল কি না তা বুঝে না উঠতেই আরেকজন কয়ে ওঠে, আরে নাহ, এখানে তো আগুন জ্বলেই পাগলা। রুহানি আগুন। অদৃশ্য। আর আমাদের এই মহান পাচকগণ হইলেন নিচের মহান আত্মাগুলার আত্মিক প্রতিনিধি। একমাত্র এই প্রতিনিধিগণই ডেকের নিচের আগুন দেখতে পারেন আত্মিক চোখ দিয়ে।

আমি বলি, ও আচ্ছা, ব্যাপারটা তাইলে আত্মার তলে তলেই ঘটে যায়! আমাদের অজান্তে!

ছেলেটা তখন বলে, এই তুমি কেমন ছেলে হ্যাঁ, বেয়াদবের মতো আমার কথার ব্যঙ্গ কর! আমি প্রমাণ হিসাবে তোমাকে দেখাতে পারি যে, এইসব ডেগে কত হরেকরকম রুচিময় খাবার আছে। গরুর রেজালা। মুরগির ফ্রাই, ঝোল। সুস্বাদু ইলিশ ভাজা থেকে পাঙ্গাসের পানসা মিষ্টি ঝোল। আছে ডিমসিদ্ধ কারি থেকে আলুভর্তা, ডাল অথবা মিষ্টিকুমড়ার লাবড়া। এইসব কি আগুন ছাড়াই রান্না হয়ে গেছে ব্যাটা?

আমি বলি, আরে ব্যঙ্গ করলাম কই, আমি যে ব্যাপারটা জানতাম না সেটাই প্রকাশ করলাম। আমি তো তোমার পক্ষেই আছি। তবে আমার আরও একটা বিষয়ে একটু কৌতূহল জাগে, তুমি এর জবাবটা দাও না! কৌতূহলটা হলো এইসব খানাখাদ্যের এত ব্যবস্থা কীভাবে হচ্ছে যেখানে নিচের ওদের চুলায় পাতিলই নাই? আমরা খাব আর নিচের ওরা খাবে না কেন? তাছাড়া এইসব গরু আর মুরগি খালি আমাদের দোতলার পাচকদেরই খেতে দেখি কেন? শাগরেদরা কী দোষ করসে?

সে তখন বলে উনাদের ব্যাপারে মুখ সামলে কথা বল। আর তুমি এই সহজ অঙ্কটা বুঝ না কেন? এই যে আমরা সমাজের এত জ্ঞানের সেবা করে দিতেছি, মানুষের জীবনাদর্শ বাতলে দিতেছি, তো তাদের ধনীদের উপর আমাদের জন্যে কিছু হক আর অধিকার সৃষ্টি হয় না? তাই বছরের শেষে তাদের মোট সম্পদের পোটলায় (চাই সেটা দিনার দিরহামের হোক বা ডলারের) জোরেশোরে কয়েকটা ক্যাচা মারে, ফলে সেখান থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ তলানি বা ময়লা ঝরে পড়ে। এটাকে যাকাত ব্যবস্থাও বলা হয়ে থাকে। সেগুলা আমাদের টুকিয়ে নেয়াই তাদের উপর বর্তানো আমাদের হক। এর উপর ভিত্তি করেই মূলত আমাদের এইসব রন্ধনশালা গইড়া উঠছে। আমরা এটার আরেকটা ভালো নাম দিছি লিল্লাহ বোর্ডিং। আল্লার নামে খোলা বোর্ডিং; যেখানে দরিদ্র শাগরেদদের খাবারের ফ্রি ব্যবস্থা করা হয় সরাসরি আল্লার হোটেলে।

আর উস্তাদরা ভালোমন্দ খাবে না তো হালা তুমি খাবা? তুমি রান্নার কোন চুলটা শিখছো শুনি? আমাদের পাচকশালার বিশাল এমন কী উন্নতি করছো তুমি যে গরু-মুরগি খাবা, হ্যাঁ? রান্নাবান্নার ব্যাপারে তুমি তো শিশু অবলা, তোমার পেটে ওসব ভালো খাদ্য সইবে না। তোমার এই অধিকার নাইকা।

তর্কাতর্কিতে আমার মাথা ভীষণ ধরে যায়। সাথে পায় পানির তৃষ্ণা। আসলে প্রশ্নে প্রশ্ন উঠবে। এখানে যে আমরা মানুষের টাকার পোটলা থেকে ঝরা ময়লা খাই তা অপমানকর কিংবা একসাথে সমাজবদ্ধ থাকলে, একই ছাদের নিচে থাকলে কেউ ভালো খাওয়া, কেউ মন্দ খাওয়ার দৃশ্য একটা অত্যন্ত অসামাজিক দৃশ্য, তা এই বর্বর মূর্খদের তুমি কীভাবে বুঝাবা?

মৃদুলকে বলে কোনোমতে এককোনা থেকে এক ঢোক জলের ব্যবস্থা করতে পারি। কারণ এখানে আমরা নড়াচড়া করতে পারি না। সারাক্ষণ পাচকদের নজরদারিতে থাকতে হয়। এই ঘেরাটোপের ভিতরেই একে একে কেটে যায় ছয় বছর। প্রত্যেক বছর রান্না শেখার বইখাতা আমাদের চেইঞ্জ হয়। আরও মোটা মোটা বই আসে। এই সপ্তম বছরের শুরুতে তো আমরা বইগুলা উঠাতেই আমাদের হেগে-মুতে বান লেগে দেয়ার মতো অবস্থা হয়। বহন করব কখন? এগুলার ব্যাখ্যাগ্রন্থও নাকি আছে আরও বিশাল বিশাল। এসবই নিচতলার বড় বড় মাহের পাচকদের স্বকলমে জন্ম দেয়া গভীর তত্ত্ব।

আমাদের প্রত্যেক দলকে প্রত্যেকদিন একজন করে পাচক পাল্টাতে হয়। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষকের সাথে আমাদের মোলাকাত হয়। আমরা বিভিন্ন রুচি ও মননের তালিম আর সান্নিধ্যে যোগ্য হতে থাকি!

যদিও এইসব বইয়ের খালি শুরুর দিকেই একটু লম্বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে উনারা আমাদেরকে পড়ান। বাকি বইয়ের শয়ে শয়ে পৃষ্ঠা আমাদেরকে খালি রিডিং পড়িয়ে যান। অত ব্যাখ্যায় যান না। এভাবে প্রত্যেকটা পাতা চোখ বুলিয়ে বুলিয়ে বই শেষ করলে নাকি নিচতলার আত্মাদের একটা আত্মিক আলো অর্জন করা যায়, যেটা দিয়ে আমরা নিজেরাই (যখন পাচক হিসাবে তালিম দেয়ার দায়িত্ব পাব) এগুলা ব্যাখ্যা করার যোগ্যতা হাসিল করতে সক্ষম হব। আর ব্যাখ্যাগ্রন্থ পড়া তো বিলাসিতা।

সবচে বড় কথা আমাদেরকে পাচকদের চূড়ান্ত তাজিম লেহাজ করে চলতে হয়। এমনকি উনাদেরকে যখন কার্যদিবসের শুরুতে, চুলার কাছে এনে চেয়ারে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়, তখন উনাদেরকে বার্ধক্যের ভারের কারণে উনাদের কামরা থেকে এখান পর্যন্ত আট-দশজন শাগরেদ ধরাধরি করে নিয়ে আসে। সবার বুকই তখন ভয়ে থরথর কাঁপে। কোনোরকম অসংলগ্ন আচরণ যাতে প্রকাশ না পায়। উনারা খুব ধীরে ধীরে ধাপ ফেলে। তাই দেখা যায় আসার পথটাতেই দুমিনিটের জায়গায় লাগে বিশমিনিট।

আর উনাদের ধীরগতির মন্থর আলাপ-অধ্যাপনা, যা বার্ধক্যের তোড়ে জিহ্বা বেয়ে ভেঙে ভেঙে বের হয়, যা স্পষ্ট হোক বা অস্পষ্ট, অধীর আগ্রহে উনাদের মুখপানে চেয়ে শুনতে থাকতে হবে। এতে খুব বরকত আর আত্মিক একটা নুর হাসিল হয়।

এ ব্যাপারে আধুনিকমনা কিছু শাগরেদ বাজে মন্তব্যও করতে চায়, এতে আমাদের সময় নষ্ট হয় না? আমরা তো আরও বেশি কিছু তালিম নিতে পারি। কেন, একটু কম বয়সি শাগরেদদের শেখানোর দায়িত্বটা দিয়ে দিলেই তো হয়, যাদের মেধা বেশি সৃজনশীল ও উর্বর? এখন আপনারা বুড়া পাচকরা একটু আল্লা বিল্লা করেন না! যেমন শেখ সাদি করেছিলেন। আর এই শাগরেদ হালারপোতগো কাম নাই, পড়াশোনা নাই, সারাক্ষণ পাচকগণের পিছে নেউটে থাকে, এত লোক লাগে নাকি ধরা-নেওয়া করতে?

এখানে শাগরেদদের মৌলিকভাবে দুটা ভাগ আমি দেখি। একদল হইল ঐতিহ্যবাদী। তাদের মতে পুরাতনরা রান্নাবান্নার ব্যাপারে যা যা বলে গেছে তাই অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে। নতুন কোনো কলাকৌশল চিন্তা করাও হবে চূড়ান্ত বেয়াদবি ও বিদ্রোহের নামান্তর।

দ্বিতীয় দলটা হইল অধুনাবাদী। বিদ্রোহী মননের। তারা রান্নাবান্নার জন্যে শুধু পুরাতন তথ্যের উপরই নির্ভর করতে চায় না। একধাপ এগিয়ে আধুনিক রান্নার কলাকানুন বিস্তারিত অধ্যয়ন করতে আমাদের পাচকদের চোখের অগোচরে প্রগতিশীল বিভিন্ন পাচকশালায় ভর্তিও হয়ে আছে গোপনে। যেটা আমাদের নিয়মে বহিষ্কারযোগ্য অপরাধ। এবং তারা নাকি এইসব নতুন নতুন নিয়মকানুনের আদলে পুরানা সূত্রগুলা ভেঙে সাজাতে চায়। শুধু আমিই এই দু’ দলের মধ্যে খচ্চর জাতের হয়ে থুবড়ে পড়ে আছি। কোনো দলেই আমি ভালোমতো নাই। আমি যেমন নতুনবাদীদের সাথে তাল মিলিয়ে এই চার-দেয়াল টপকে গোপনে আমার কাজের পরিধি বাড়াই। কিছুটা স্বাধীনতার স্বাদ নিতে চাই। অথবা আমার নিজস্ব পেটের দায় বলেও তো একটা কথা আছে, আমারও তো শখ জাগে নতুন ব্যাপারগুলা হাত দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখি, জীবনের একটা কালে তো বাপের হোটেলও অসহনীয় হয়ে ওঠে বা হোটেল নিজেই সন্তানকে অসহনীয় ভাবতে থাকে… সেজন্যে তৃতীয় শ্রেণির কাজ একটা টিউশনি হাতে নেই।

দুধশিশু থেকে অবলা নাদুসনুদুস বিভিন্ন কিশোরকে আমি সকাল-সন্ধ্যা নানান জাতের রান্নাবান্নার পদ্ধতি শেখাই। তাদের বাপ-মা দয়াদাক্ষিণ্য করে যে মালটু্কু দেয় সেটা দিয়ে একটু স্বাধীনভাবে একমাস নেশাপানির খরচটুকু চলে যায়। তারা আমাকে অর্থটা বেতন হিসাবে দেয়, নাকি ফেরেশতা বা দেবতা বা পোপ মনে করে গুরুদক্ষিণা হিসাবে দেয় যার মাধ্যমে পরলোকে সহজে মাফ পেয়ে পুলসিরাত পার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা চিলকে ওঠে, নাকি বেতন আর সাধু-দক্ষিণা দুই কাজই এক অর্থ দিয়ে চালিয়ে নিতে চায়, আমি ব্যাপারটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাই! কিন্তু আমি বিদ্রোহবাদীদের সাথে তাল মিলিয়ে কখনোই ওসব বিলাতি পাচকশালায় পড়তে যাইনি কাগুজে সার্টিফিকেট হাসিল করতে। ব্যাপারটা আমার তবিয়তের সাথেই যায় না। আমি পুরাতন মহান আত্মাদের কিছু থিওরির এতটাই ভালোবাসায় পড়ে গেছি যে, সেগুলা আত্মস্থ করা ছেড়ে কোনো আধুনিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হব তা ভাবতেই জি ঘাটে। অধুনা শাগরেদরা দেখা যায় নতুন ব্যাপারগুলা চর্চা করতে করতে ওদের থেকে একটা সময় বাপদাদাদের এলেমের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ পায়, ব্যাপারটা আমার কাছে খারাপ লাগে।

আমি আবার পুরাপুরি ঐতিহ্যবাদী দলেরও কেউ হতে পারি নাই। অতীতবাদীদের সবচে বড় গোঁড়ামি হলো এইসব উস্তাদদের আলাপ ও মতের বাইরে একচুলও তারা নড়বে না। পূর্বসূরিদেরকে বুঝতে হলে সবচে যে ভাষায় পারদর্শিতা দরকার সেই আরবি ভাষাটাই এরা ভালো করে পারে না। এরা কেবল উস্তাদরা যা কইছে সেটাই তোতাপাখির মতো বকবক করতে পারে। উস্তাদরা নিজেদের লেকচার থেকে কি একটা গাইড বানায়ে এদেরকে দিছে, এরা এটা ছাড়া আর কিছুই পড়ে না। সারাক্ষণ এটা নিয়েই পড়ে থাকে। এদের মনে নতুন কোনো প্রশ্ন জাগে না। পাছে প্রশ্ন করলে যদি উস্তাদের বেয়াদবি হয়ে যায়?

তো, আমি খেয়াল করে দেখি দোতলার পাচকগণ, যারা নিজেদের লেকচারগুলাকেই নোট বানিয়ে ছেড়ে দিছেন শাগরেদদের মাঝে তারা মনে করেন “এইসব গিয়ান বাড়ানো কমানো যায় না। পুরান কলা-কানুনের উপর নিজস্ব চিন্তাভাবনা করে নতুন কিছু মেলানো যায় না।” আমি যতটুকু পূর্বসূরিদের বইপত্র পড়েছি, দেখেছি তারা তাদের কালে পুরাতন ব্যাপারগুলার সাথে বহুত কিছুই জোড়াতালি লাগাতেন। সেই হিসাবে দোতলার শিক্ষকরা যতই দাবি করুক তারা ঐতিহ্যবাদী কিন্তু তারা মূলত পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে না। তেমনিভাবে পুরানবাদী শাগরেদরাও যতই গলাবাজি করুক না কেন তাদেরও একই হুকুম।

আমার বাপ-মা নাইয়ের মতো একটা অবস্থা। পাঁচসাতটা বছর চরম বিপাকে আর ঘেরাটোপের উত্তেজনায় কাটিয়ে দেই। যেহেতু আমি কোনো দলেই নাই আবার সব দলের কিছু কিছু ব্যাপার আমার ভিতর আছে, কারো সাথেই আমার ভালো করে মেলে না। প্রথমে যা একটু খাতির হয় দুদিন পর যখন তর্কে জড়াই সটকে পড়ে সব। আমি নাম-ঠিকানাহীন একঘরে মাল হয়ে যাই। যখন যার ইচ্ছা হয় উষ্টা দিয়ে যায়। যেন রাস্তার ধারে মাটিতে চাপা পড়া ময়লা পলিথিনটা, যেটা মাটির উপর একটু মাথা বের করে আছে, আমার এই আগাছার মতো অসুন্দর উঁকি মারা পথিকের পছন্দ হয় না, তাই কষে লাত্থি মেরে রাস্তা সাফ করে।

সাত সাতটা বছর এই কনস্ট্রাকশনের ছাদের নিচে মুখ গুঁজে কেটে দিচ্ছি অথচ আমার সাথিরা আমাকে মারে গুঁতা। প্রাক্তন বন্ধু আর পাচকরাও মারে উষ্টাগুঁতা। এইসব লাবড়া ডাল ভর্তা খেয়ে না খেয়ে আমি শুকিয়ে অনেক কাঠি হয়ে যাই।

ছ্যাপ ফেলার মতো সময় পাওয়া যায় এমন অল্প বিরতিতে যতবারই বাড়ি যাই ততবারই আম্মা বলে তোর শইলে গোশত কই? হায় হায় আমার ছেলে না খেয়ে হাড়হাড্ডি হয়ে গেল! ধোঁয়া ছাই কালি আর কয়লার মাঝে কাজ করতে করতে চোখের নিচে আর চাপায় গভীর কালসিটে দাগ পড়ে যায়। আয়নায় দেখলে মনে হয় একটা কালো ভূত বা কঙ্কাল।

কনস্ট্রাকশনের এই অদৃশ্য চার দেয়ালের বাইরের জগতে তো আমি একেবারে আনাড়ি। বাইর হলে সবাই আমার দিকে চেয়ে হয়তো করুণা প্রকাশ করে, বাড়িঅলা, গাড়িঅলা, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, ব্যবসায়ী, রিকশাঅলা সবার চোখ বেয়ে করুণার কণা বেয়ে পড়ে আমার উপর!

আমি হয়তো আমার কনস্ট্রাকশনের সাথিসঙ্গী সবাইকেই আমার মতো সৃজনশীল মেধাবী ভাবি বা তাদেরকে এমন করে চিন্তা করাতে আমার ভিতর একরকম উগ্র জিদ কাজ করে। আমি কারও সাথেই সম্পর্ক ভালো রাখি না বা রাখতে পারি না। উস্তাদদের সাথেও আজ পর্যন্ত সম্পর্ক গড়ে তোলা হলো না। উনারা আমাকে পথে চলাফেরার সময় মাঝেমধ্যে দেখলেই বলেন, তুমি কি বাবা আমাদের পাচকশালার কোনো শাগরেদ? আগে তো দেখি নাই কখনও! আমি রাস্তায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে উন্নাসিক বা ভবঘুরে হাঁটতে থাকি। পাচকশালায় লাগাতার গরহাজিরি পড়তে থাকে। রাস্তার সাথেই আমার বেশি চেনজানা আর বন্ধুত্ব গইড়া ওঠে।

আমি রন্ধনখানায় ঢুকতে পারি না, বন্ধুদের কাছেও যেতে পারি না এমনকি বাড়িতে যাওয়ারও তেমন উপায় নাই। আমার এই কালো জীবনাচারে সবাই হতাশ। আমার ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে ঘরে-বাইরে সবাই আশঙ্কিত, নারাজ। আমার কাছে আমার সত্তাটাকে একটা সাদামাটা শূন্য মনে হয়। আমি জীবিত না মৃত সেটা আমার জন্যে সহসাই কঠিন একটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আমি বুঝি যে, প্রতিদিন একবার করে মরা উচিত আমাদের। না মরলে জীবনটা যে আমাদের কল্পিত স্বপ্নের বাইরে এলোপাতাড়ি আর্টে বয়ে গেল তা অনুধাবন করা সম্ভব হবে না কিছুতেই।

মানুষ চোদনা জীবনের সন্ধ্যায় দাঁড়িয়েও জীবনের ব্যাপারে অসম্ভব সব স্বপ্ন দেখে যায় অথচ বোঝে না বিগত জীবনটা তার কল্পিত মানচিত্রের বাইরে ভিন্নভাবে চিত্রিত হয়ে চোখের সামনেই তিলে তিলে পার হয়ে গেছে। মৃদুল এখন আমাকে কথায় কথায় বলে তোর কোনো জীবন আছে, স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ? তোর তো কোনো উস্তাদের সাথেই পরিচিতি নাই, কেউ তোকে চেনে না তোর কোনো মুরব্বি নাই, কারও কথা শোনোস না, ভবিষ্যৎ অন্ধকার অন্ধকার, ধ্বংস আর ধ্বংস; এসব বাক্য আমার আর গায়ে লাগে না।

আমি ঠুস করে ঝিমুনি থেকে পড়ে যাই বারান্দায়। কপালের কোনায় হালকা আঘাত লেগে জ্বলুনি ওঠে। বারান্দায় জলনিষ্কাশনের ছিদ্রের আশপাশে জমে থাকা পাতলা জল মাথার একপাশ ভিজিয়ে দেয়। সিগারটা পড়েছে একটা ফ্যানের কাগুজে প্যাকেটের উপর। একজায়গায় পুড়ে ছিদ্রমতন হয়ে গেছে।

আমাদের স্বপ্ন আর কল্পনার আগামাথা কি বাহিত জীবনকে ছুঁতে পেরেছে? আমি কি একসময় সাত আকাশছেদী স্বপ্ন দেখি নাই উস্তাদদের মতো একজন মহান পাচক হওয়ার? খুব জানতোড় আর আন্তরিক অধ্যয়ন কি কোমর বেঁধে শুরু করি নাই মাত্র সাত বছর আগেও? আমাদের জীবনে বয়সের কি এমন ছেদ পড়ল যে রঙিন স্বপ্নগুলার প্রতি এত উন্নাসিক হয়ে গেলাম? আর স্বপ্নগুলা আমাদের হাতে ধরা দেয়ার ন্যূনতম ক্ষীণ সম্ভাবনাও কি বাকি আছে? আমার সাথিসঙ্গী আমার উপর নিরাশ ও চূড়ান্ত নারাজ। তারা মাত্র আমার একটাই শিরোনাম দিতে রাজি। তা হলো, তোর শিরোনাম নাই!

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷