আজাদির সন্তান (দ্বিতীয় কিস্তি)

সাব্বির জাদিদ

আজাদির সন্তান (প্রথম কিস্তি)

না চাইলেও রায়হানের সাথে প্রায় দিনই মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে আদনান। আজ দিয়ে কতবার যে হলো এই ঠুকোঠুকি, আদনান মনে করতে পারে না। অথচ প্রতিটি হাঙ্গামার পর আয়নায় মুখ দেখতে দেখতে ও প্রতিজ্ঞা করে, আর কখনো লড়বে না। এইসব লড়াইয়ে মুখের ওপর নখের আঁচড় আর শার্টের বোতাম ছেঁড়া ব্যতীত কোনো লাভ হয় না। উল্টো সব দোষ চাপে আদনানের ঘাড়ে। মা বলেন, বড় ভাইয়ের সাথে মারামারি করিস, তোর লজ্জা করে না! মায়ের মুখে বড় ভাই শব্দযুগল উচ্চারিত হতেই হেসে ফেলে আদনান। কী আমার বড় ভাই! কয়েক মিনিট আগে ভূমিষ্ঠ হলেই সে বড় ভাই হয়ে যায়?

আদনান মারামারি করতে চায় না। কিন্তু পরিস্থিতি এমনভাবে মারামারির প্রেক্ষাপট নির্মাণ করে প্রত্যেকবার, না লড়ে আর উপায় থাকে না। এই যেমন আজ, স্কুল থেকে ফিরে ও আপেল-বাগান পাহারা দিচ্ছিল। ক্যালেন্ডারে অক্টোবরের পয়লা তারিখ পড়তেই ওদের বাগানের আপেলগুলো পেকে লাল হয়ে ওঠে। তখন চোখ ফেরানো যায় না। সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে লাল টুকটুকে মসৃণ ফলগুলো। একবার ইচ্ছে করে দেখতে আরেকবার ইচ্ছে করে ছুঁতে। আদনান চোখ ভরে দেখে এবং হাত ভরে ছোঁয়। বাগানের কোল ঘেঁষে বহমান শিশনাগ খালের কুলকুল ধ্বনি তখন অলৌকিক বাজনা বাজায়। আর দূরে সবুজের মুখরতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক অপার্থিব পর্বত। এমন স্বর্গীয় সৌরভ ছড়িয়ে থাকে চারপাশে—আদনানের মন ভালো হয়ে যায়। তবে এই মায়াবী সৌন্দর্যের ভেতর কদর্যতাও হানা দেয় মাঝে মাঝে। পাড়ার দরিদ্র দুষ্টু ছেলেরা তক্কে তক্কে থাকে আপেল চুরির। সুযোগ পেলেই ডাল ভেঙে লাপাত্তা। আপেল পাকার মৌসুম এলে তাই বাড়তি কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হয় আদনানদের পরিবারে। এই মৌসুমি ফল বিক্রির টাকায় যে ওদের সংসারের চাকায় গতি আসে।

আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে ও যখন দাদাজির দোকান অতিক্রম করছিল, দাদাজি চিৎকার করে বলেছিলেন, খেয়ে বাগানে চলে যা। কয়েকদিন ভালো করে পাহারা দিতে হবে।

জি যাচ্ছি বলে আদনান যেমন সাড়া দিয়েছিল, তেমনি দাদাজানের মুদি দোকানের সামনে সাইকেলের ওপর থেকে ও লম্বা পা নামিয়ে দিয়েছিল মাটিতে। ইদানীং ওর এই এক অভ্যাস হয়েছে। কারণে অকারণে সাইকেল থেকে মাটিতে পা নামিয়ে দেয়া। গেল বছর ও যখন ক্লাশ এইটের ছাত্র, তখনও সাইকেলে বসা ওর পা এতটা সহজে মাটি স্পর্শ করত না। লম্বা হচ্ছে আদনান। বড়ও। ওর পা এখন সাইকেলের সিট থেকে অনায়াসে মাটি ছুঁচ্ছে। আর দেড় ক্লাশ পড়লেই ও কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। হুট করে ওর এই যে বড় হয়ে যাওয়া—সবাইকে দেখিয়ে ও আনন্দ পাচ্ছে।

বাড়ির সবাই ব্যস্ত। বাবা গুরিহাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ান। মা ঘর সামলান। দাদাজান দোকান চালান। ছোটবোন নুরজাহান সংসারের ধার ধারে না। একটি রাখাল আছে, তার কাজ ভেড়া চরানো। রইল বাকি আদনান আর রায়হান। ওরা দুজন একই মায়ের গর্ভ থেকে একই দিনে পৃথিবীতে আসা দুই ভাই। রায়হান এসেছে কয়েক মিনিট আগে আর আদনান কয়েক মিনিট পরে। জন্মদিন অভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও, মায়ের জরায়ু ছিড়ে বেরিয়ে আসার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ায় রায়হানের ছোট আদনান। অন্তত মায়ের কাছে। আর একারণে দুই ভাই মারামারিতে জড়ালে, দোষ যারই থাকুক, মায়ের বকুনি বরাদ্দ থাকে আদনানের জন্য। এ সময় আদনানের খুব আফসোস হয়। জন্ম নেবার যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ার আফসোস।

আপেল-বাগানে একটি পাথরের ওপর বসে ছিল আদনান। অক্টোবরের দুই তারিখ আজ। উপত্যকায় শীত বাড়তে শুরু করেছে। পর্বতগুলো সাদা হচ্ছে। দু একদিনের ভেতর শ্রীনগর থেকে রাজধানী বদলি হবে জম্মুতে। রাজ্যের সকল নথিপত্র পিঁপড়ার সারির মতো দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে তোলা হবে। অতঃপর সেই কনভয় সেনাবাহিনীর প্রহরায় যাত্রা করবে শ্রীনগর থেকে জম্মু। তখন রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সে এক বিরাট কর্মযজ্ঞ! রাজধানী স্থানান্তরের এই গল্প দাদাজানের মুখে শুনেছে আদনান। কখনো দেখার ভাগ্য হয়নি। আদনান ভাবে, কোনো একবার রাজধানী বদলের ওই দিনে বানিহাল টানেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। তারপর বিস্ময়ভরা চোখে গুণবে কনভয়ের লরিগুলো।

বাগানের শেষ প্রান্তে নুরজাহানের বয়সি দুটো মেয়ে ঘুরঘুর করছিল। মেয়ে দুটোর চাহনি সন্দেহজনক। ওদের মলিন বেশভোষ আর পাজামার ভেজা প্রান্ত আদনানের সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তুলল। সম্ভবত শিশনাগ খাল পার হয়ে এসেছে। নিশ্চয় আপেল চুরির ধান্দা। আদনান মেয়ে দুটোকে ডাকল। একটুক্ষণ ওরা পরস্পরে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে জড়তামাখা পায়ে সেই পাথর খণ্ডের দিকে আসতে লাগল, যে পাথরের ওপর বসে ছিল আদনান। ঢোলা ময়লা জামার ভেতর ঢলঢল করছিল ওদের রুগ্ন শরীর। তবে কাশ্মীরের চিরায়ত নারীদের মতো মুখের রঙ গোলাপি সাদা। খাড়া নাক। চোখের মণি বাদামি। আদনানের এক স্যার কাশ্মীরি মেয়েদের নাকের তীক্ষ্ণতাকে প্রকাশ করেন ‘উদ্ধত’ শব্দ দ্বারা। স্যারের কাছ থেকে ধার করে আনা সেই শব্দ মনে মনে আওড়াল আদনান—দারিদ্র্য তোমাদের নাকের ঔদ্ধত্যকে সংকুচিত করতে পারেনি। মুখে বলল, তোমাদের নাম কী?

যে মেয়েটির মাথায় বেগুনি হিজাব, সে বলল, আমার নাম আলেয়া। আর যার মাথায় গোলাবি হিজাব, সে জানাল, ওর নাম আতিকা।

বাড়ি কোথায়?

মেয়ে দুটো পূর্ব দিকে হাত ইশারা করে একসঙ্গে বলল, বাতেকান গ্রামে।

ওখানে কী করছিলে?

ওরা এবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। ওদের বাদামি চোখে অব্যক্ত কোনো ব্যথার ছায়া চিনারের শুকনো পাতার মতো জেগে রইল। কয়েকবারের জেরার পর ওরা যা জানাল তা এই : সম্পর্কে ওরা চাচাতো বোন। ওদের দাদিজান অসুস্থ। বেশিদিন বাঁচবার আশা নেই। দাদিজানের আপেল খাওয়ার শখ হয়েছে। কিন্তু ওদের গাঁয়ে কারো আপেল বাগান নেই এবং আল্লাহ ওদের বাবাদের এমন দরিদ্র্য বানিয়েছেন, মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের শখ পূরণের সঙ্গতিও তাদের নেই। আর এ কারণেই তারা বাতেকান থেকে ছুটে এসেছে এই আপেল বাগানে। যদি মালিককে বলে দুটো আপেল চেয়ে নিতে পারে।

মেয়ে দুটোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছিল আদনানের। ওদের জায়গায় নুরজাহানকে কল্পনা করে ও নিজের বাবাকে ধন্যবাদ দিল। ওর বাবাও যদি এদের বাবার মতো হতদরিদ্র কৃষক হতো, তবে নুরজাহানকেও হয়তো অন্যের কাছে হাত পাততে হতো। ভাগ্যিস আদনানের বাবা একটি চাকরি করেন এবং তার যথেষ্ট স্থাবর সম্পত্তি আছে। মেয়ে দুটোর হাতে দুই থোকা পাকা আপেল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল আদনান। ইচ্ছা করলে ওরা দুপুরবেলা নির্জন বাগান থেকে আপেল চুরি করতে পারত। কিন্তু ওরা তা করেনি। দাদাজান চৌর্যবৃত্তিকে ভীষণ ঘৃণা করেন। বলেন, আজ কেউ আপেল চুরি করলে কাল সে ব্যাংক ডাকাতি করবে। আপেল চুরির সুযোগ দিয়ে কাউকে ডাকাত বানানো যাবে না। তবে যে কোনো দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য দাদাজানের হৃদয়ের দুয়ার সব সময় উন্মুক্ত। নাতি হিসেবে সেই মমতার উত্তরাধিকার কিঞ্চিৎ হলেও লাভ করেছে আদনান। মেয়ে দুটোর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে ওর হৃদয় আর্দ্র হয়ে উঠল। লাফ দিয়ে ডাল নুইয়ে ও এক থোকা আপেল পাড়তে যাবে, তখনই দৃশ্যপটে উদিত হলো রায়হান। আদনানের কয়েক মিনিটের বড় ভাই সে, অথচ এমন গর্জন দিল, মনে হলো যেন সে আদনানের পিতৃতুল্য অভিভাবক। সে হুংকার ছেড়ে বলল, কার হুকুমে আপেল পাড়ছিস? জানিস না সম্পূর্ণ পেকে ওঠার আগে আপেল পাড়া বারণ? বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ নেই এখানে অথচ বছরের প্রথম ফল তুই ছিঁড়তে লেগেছিস।

আদনান ডালটাকে নুইয়ে রেখেই মেয়ে দুটোর দাদিজানের কথা বলল। ওদের দাদির অসুস্থতা এবং আপেল খাওয়ার শখের কথা বলল। কিন্তু রায়হানের মন তাতে নরম হলো না। উল্টো সে আতিকাদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল। এবং একই রকম হুংকার ছেড়ে বলল, আপেল খাওয়ার শখ হয়েছে কিনে খেতে পারিস না! আবার কখনো এই বাগানে দেখলে খবর আছে তোদের। যা ভাগ!

আচমকা ধমকের মুখে পড়ে মেয়ে দুটো কেঁপে উঠল সন্ত্রস্ত ছাগলছানার মতো। ওদের ম্লান মুখের অবশিষ্ট ঔজ্জ্বল্যটুকু দপ করে নিভে গেল। একবার আদনানের দিকে চেয়ে ওরা সবুজ ঘাসের প্রান্তরে পা রাখল, একটু আগে যে ঘাস মাড়িয়ে ওরা এসেছিল। আদনান ছুটে গেল ওদের সামনে—একটু দাঁড়াও। আমি তোমাদের আপেল দিচ্ছি। ওই গুণ্ডাটার কথা শুনে মন খারাপ করো না।

আমাকে গুণ্ডা বললি কেন? মুঠ পাকিয়ে মারতে ছুটে এল রায়হান।

এইটুকু মেয়েদের সাথে যে দুর্ব্যবহার করে, সে গুণ্ডা নয়তো কী! এই, তোমরা যাবে না।

আমি তাড়িয়ে দিচ্ছি আর তুই কিনা ওদের থাকতে বলিস! এতবড় স্পর্ধা তোর! বলেই আদনানের শার্টের কলার চেপে ধরল রায়হান আর আদনান সজোরে ধাক্কা মারল ভাইকে। আদনানের ধাক্কায় দূরে ছিটকে পড়ল রায়হান, তবে তার আগে পটপট করে ছিঁড়ে গেল আদনানের শার্টের দুটো বোতাম। ছেঁড়া ওই বোতামের দিকে চেয়ে মায়ের রাগী এবং বিরক্ত মুখটা ভেসে উঠল আদনানের চোখে। আজ রাতে মায়ের বকুনি অবধারিত। আদনান যখন মায়ের কথা ভাবছিল, ততক্ষণে পতনের ধাক্কা সামলে নিয়েছে রায়হান। দ্বিগুণ ক্রোধ এবং শক্তি নিয়ে ও আবার ছুটে এল আদনানের কাছে। ততক্ষণে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে আদনানও। এবার শুরু হলো ধস্তাধস্তি। আপেল বাগানে, সবুজ ঘাসের প্রান্তরে একবার রায়হান আদনানের গায়ের ওপর ওঠে তো আরেকবার আদনান রায়হানের গায়ের ওপর ওঠে। পাশেই কুলকুল শব্দে বয়ে চলে শিশনাগ। পাথরের ওপর দাঁড়ানো একটি মাছরাঙা শিশনাগকে সামনে নিয়ে ধ্যান করে জলের। মাথার ওপর উড়তে থাকে এক জোড়া চিল। দুধের ভারে ফুলন্ত বাঁট নিয়ে হেঁটে যায় একটি গাভি, পেছনে তার পুষ্ট সন্তান। প্রকৃতির এই পটভূমিকায় যুদ্ধরত আদনান আর রায়হানের ফরসা মুখ পাকা চেরির মতো লাল। কপালে, নাকের নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম। জংলি লতার মতো অপরিপাট্য চুল। ওদের মারামারি ততক্ষণ চলে, যতক্ষণ না দুজনই চূড়ান্ত রকমের ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একটু পর, সন্তান নিয়ে গাভিটি যখন দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়, মারামারির ধকল সামলাতে দুজন দুই প্রান্তে পা ছড়িয়ে বসে। ওরা এমনভাবে হাঁপায়, ওদের বুকের ওঠানামা দেখে যুদ্ধক্লান্ত ঘোড়ার কথা মনে পড়ে। একটু জিরিয়ে নিয়ে ওরা আবার মারামারির প্রস্তুতি গ্রহণ করলে আপেল বাগানের প্রবেশ পথে দেখা যায় তারিক ও অজিত সিংয়ের মুখ। দুজনই আদনানের বন্ধু। ক্রিকেট খেলার সাথি। একই মহল্লায় বাড়ি। নামের গায়েই লেগে আছে ওদের ধর্মপরিচয়ের ছাপ—অজিত হিন্দু, তারিক মুসলমান। তবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের ছাপ ওদের বন্ধুত্বে পড়েনি কখনো। ওরা শুধু বন্ধুই নয়, পারিবারিকভাবেও ওরা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ। আজ এই অবেলায়, শান্ত নিবিড় আপেল বাগানে, একই মাতৃভর্গ থেকে জন্ম নেয়া দু ভাইয়ের যুদ্ধংদেহি অবস্থান সচকিত করে তোলে দুই বন্ধুকে। ওরা ছুটে আসে। ওরা দুই ভাইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রতিহত করে আরও একটি অত্যাসন্ন যুদ্ধ। দু ভাইকে দু প্রান্তে সরিয়ে দিয়ে ওরা চিৎকার করে বলে, তোমরা ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করছ কেন!

রায়হান এর প্রত্যুত্তর করে না কোনো। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বাগান ত্যাগ করে আর আদনানের তখন মনে পড়ে মেয়ে দুটোর কথা, যাদের কারণে মারামারির সূত্রপাত। ওর ধারণা হয়, আতিকারা হয়তো পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, দাঁড়িয়ে মারামারি দেখছে। সেই ভাবনা থেকে ও পেছন ফিরে আতিকাদের সঙ্গে কথা বলতে যায়, কিন্তু ওর চোখ জনশূন্য বাগানে হোঁচট খায়। আশাহত হয়ে চলে গেছে ওরা। ওদের খুঁজতে আদনান তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়। দেখে, পাজামার ঝুল উঁচু করে জেগে থাকা পাথরে পা রেখে শিশনাগ খাল পার হচ্ছে মেয়ে দুটো। নিজেকে এত তুচ্ছ আর ছোট লাগে আদনানের, লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। ওরা নিশ্চয় বাড়ি গিয়ে বাবা-মার কাছে সব বলে দেবে। আপেল দেয়া নিয়ে গুরিহাকার দুই ভাই লড়াই করেছে শুনে ওদের বাবা মা নিশ্চয় খুব অবাক হবে। পরিচয় জানতে পারলে ওদের পরিবার ছোট হয়ে যাবে বাতেকানের মানুষের কাছে। রায়হানের ওপর এত রাগ হয় আদনানের, ইচ্ছা করে ভেড়া জবাই করা ছুরি দিয়ে ওর গলা কেটে দিতে!

আজ আবার কী নিয়ে লাগল? ওই মেয়ে দুটোই বা কারা? কৌতূহল চেপে রাখতে পারে না তারিক।

ওরা ওদের অসুস্থ দাদির জন্য আপেল চাইতে এসেছিল। আমি দিতে গেছি, তাতেই ক্ষেপে গেছে রায়হান। রাগে ফুঁসতে থাকে আদনান। ক্রোধে ওর গলার স্বর এঁকেবেঁকে যায়।

শান্ত হও। জানোই তো, রায়হান একটু অন্যরকম। অজিত কাঁধে হাত রাখে ওর।

আদনান কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে উঁচু কণ্ঠে বলে, অন্যরকম অন্যরকম করেই ওর সব অন্যায় আড়াল করা হয়, সবসময়।

আমরা একটা কাজ করতে পারি। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কৃত্রিম গাম্ভীর্য তৈরি করে বলে তারিক?

কী কাজ? জিজ্ঞেস করে অজিত।

আমরা গোপনে ওদের বাড়িতে আপেল পৌঁছে দিতে পারি।

কিন্তু ওদের বাড়ি তো চিনি না।

নাম জিজ্ঞেস করিসনি?

হ্যাঁ।

তাহলে তো হলোই। নাম জানা থাকলে মানুষ খোঁজা কোনো ব্যাপার না।

সিদ্ধান্ত হলো—পরদিন বিকেলে ওরা আতিকাদের বাড়িতে গোপনে আপেল পৌঁছে দেবে।

 

আজাদির সন্তান (তৃতীয় কিস্তি)

বিজ্ঞাপন

Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
জাবের আ'রেফিন
জাবের আ'রেফিন
1 year ago

চলবে মানি। পাটিয়ে ছাড়বে…..

Aman
Aman
1 year ago

সিএনজিতে বসে পড়ছি। আমার গন্তব্য শেষ হওয়ার আগেই লেখা শেষ। তবে মোহ এখনো শেষ হয়নি তা হয়তো টেনে গল্পের শেষ অব্দি!

স্বত্ব © ২০২৩, যোগাযোগ | ই মেইল : jogajogbd.org@gmail.com

যোগাযোগ-এ প্রকাশিত কোনো লেখা, ছবি কিংবা শিল্পকর্ম লেখক অথবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা অবৈধ৷